উৎস:
ইসলাহী নেসাব: হায়াতুল মুসলিমীন
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (র:)

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন –
‘ঈমানদারগণ (পরস্পর) ভাই ভাই। (অন্যত্র ইরশাদ করেন) হে ঈমানদারগণ!
(তোমাদের) কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে…. এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে…তোমরা একে অপরে প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না… হে ঈমানদারগণ! তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাকো। নিশ্চয় কতক ধারণা গুনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না।তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা (গীবত) না করে।’ (সূরা হুজরাত-১১)

১. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘মুসলমানদেরকে (বিনা কারণে) গালি দেওয়া অনেক বড় গুনাহ এবং তার সঙ্গে (বিনা কারণে) লড়াই করা কুফুরী (এর কাছাকাছি)।’ (বুখারী ও মুসলিম)

২. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘যখন কোন ব্যক্তি (অন্য মানুষের দোষের প্রতি দৃষ্টি দিয়ে এবং নিজেকে নির্দোষ মনে করে অভিযোগ রুপে) বলে যে, মানুষ ধ্বংস হয়ে গেছে তাহলে এ ব্যক্তি সর্বাধিক ধ্বংসপ্রাপ্ত। (কারণ, সে মুসলমানদেরকে তুচ্ছ মনে করে)’ (মুসলিম)

৩. হযরত হুযায়ফা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি-
‘চোগলখোর (আইনগতভাবে বিনা শাস্তিতে) জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (বুখারী ও মুসলিম)

৪. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্নিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘কেয়ামতের দিন সর্বাধিক নিকৃষ্ট (অবস্থায়) ঐ ব্যক্তিকে পাবে, যার আচরণ দ্বিমুখী্। অর্থাৎ, যে এদের কাছে এলে এদের মত আর ওদের কাছে গেলে ওদের মত হয়ে সবার কাছে ভালো থাকার চেষ্টা করে।’ (বুখারী ও মুসলিম)

৫. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে-
‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- তোমরা কি জানো! গীবত কি জিনিস? সাহাবায়ে কেরাম নিবেদন করলেন-মহান আল্লাহ এবং তদীয় রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভালো জানেন। তিনি ইরশাদ করলেনঃ (গীবত হলো) নিজের (মুসলমান) ভাইয়ের আলোচনা এমনভাবে করা যে, (সে জানতে পারলে) তার কষ্ট হয়। জিজ্ঞাসা করা হলো, আচ্ছা বলুন তো, যে দোষের কথা আমি বলছি, তা যদি আমার (ঐ) ভাইয়ের মধ্যে বিদ্যমান থাকে(অর্থাৎ, আমি যদি প্রকৃত দোষের কথা বলি) তাহলে কি তা গীবত হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন- তুমি যা বলছো, তা যদি ঐ ব্যক্তির মধ্যে থাকে তাহলেই তুমি তার গীবত করলে। আর যদি তার মধ্যে সে দোষ না থাকে, যা তুমি বলছো তাহলে তুমি তার উপর অপবাদ দিলে।
(মুসলিম)

৬. হযরত সুফিয়ান বিন আসাদ হাযরামী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি-
‘অতি বড় খেয়ানত এই যে, তুমি তোমার মুসলমান ভাইকে এমন কোন কথা বললে যে, সে তোমাকে এ ব্যাপারে সত্যবাদী মনে করছে অথচ তুমি তাতে মিথ্যা বলছো।’
(আবু দাউদ)
৭. হযরত মুআয (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
যে ব্যক্তি তার (মুসলমান) ভাইকে কোন গুনাহের কারণে লজ্জা দিবে সে নিজে ঐ গুনাহ না করা পর্যন্ত তার মৃত্যু হবে না। (অর্থাৎ, এ লজ্জা দেওয়ার কারণে তার এই শাস্তি হবে। বিশেষ কোন কারণে তা প্রকাশ না পেলে সে ভিন্ন কথা। তবে হিতাকাংখী হয়ে উপদেশ দেওয়াতে কোন ভয় নেই।)

৮. হযরত ওয়াসেলাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘তোমার (মুসলমান) ভাইয়ের (দ্বীন বা দুনিয়ার কোন মন্দ) অবস্থার কারণে আনন্দ প্রকাশ করো না। (কারণ হতে পারে) এক সময় আল্লাহ তাআলা তার উপর রহমত করবেন, আর তোমাকে তাতে আক্রান্ত করবেন।’ (তিরমিযী)

৯. হযরত আবদুর রহমান বিন গনাম (রাযিঃ) এবং হযরত আসমা বিনতে ইয়াযীদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে সর্বাধিক নিকৃষ্ট তারা, যারা কুটনামী করে এবং বন্ধুদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটায়।’ (আহমাদ ও বাইহাকী)

১০. হযরত ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ননা করেন যে, তিনি ইরশাদ করেন-
‘তোমার (মুসলমান) ভাইয়ের সঙ্গে (অনর্থক) তর্ক করো না এবং তার সঙ্গে (এমন) ঠাট্টা করো না (যা তার কাছে অপছন্দ) এবং তার সঙ্গে এমন কোন প্রতিশ্রুতি দিও না, যা তুমি পুরা করবে না।’ (তিরমিযী)

ফায়দা: কোন সমস্যার কারণে যদি ওয়াদা পুরা না করতে পারে তাহলে সে অপারগ। এ প্রসঙ্গে যায়েদ বিন আরকাম (রাযিঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন-
‘কোন ব্যক্তি তার ভাইয়ের সঙ্গে ওয়াদা করলো এবং সে সময় ওয়াদা পুরা করার নিয়্যতও ছিলো, কিন্ত্ত ওয়াদা পুরা করতে পারলো না এবং (আসার ওয়াদা থাকলে) সময়মত আসতে পারলো না (অর্থাৎ, কোন সমস্যার কারণে এমনটি হলো) তাহলে এজন্য গুনাহ হবে না।’
(আবু দাউদ, তিরমিযী)

১১. ইয়ায মুজাশিয়ী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে-
‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- আল্লাহ তাআলা আমার নিকট অহী পাঠিয়েছেন যে, সকল মানব যেন বিনয় অবলম্বন করে। এমনকি কেউ যেন কারো উপর গর্ব না করে। এবং কেউ যেন কারো উপর জুলুম না করে। (কারণ গর্ব ও জুলুম অহংকার থেকেই হয়ে থাকে।) (মুসলিম)

১২. হযরত জারীর বিন আবদুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘আল্লাহ তাআলা এমন লোকের উপর রহম করেন না যে অন্য লোকের উপর রহম করে না।’ (বুখারী ও মুসলিম)

১৩. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘যে ব্যক্তি বিধবা ও দরিদ্রদের কাজে পরিশ্রম করে সে (সওয়াবের দিক দিয়ে) ঐ ব্যক্তির মত, যে জিহাদের কাজে পরিশ্রম করে।’ (বুখারী ও মুসলিম)

১৪. হযরত সাহাল বিন সা’দ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘আমি এবং ঐ ব্যক্তি যে কোন এতিমের দায়িত্ব বহন করে-সে এতিম তার (নিজের কিছু) হোক বা অন্যের হোক- আমরা উভয়ে জান্নাতে এমনভাবে থাকবো। একথা বলে তিনি তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুলী দ্বারা ইঙ্গিত করেন এবং ‍উভয়টার মধ্যে কিছুটা ফাঁকও রাখেন। (কারণ, যিনি নবী আর যিনি নবী নন এতদুভয়ের মাঝে পার্থক্য তো অবশ্যই থাকবে, কিন্ত্ত হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে জান্নাতে থাকা কি চাট্টিখানি কথা!)’ (বুখারী)

১৫. হযরত নু’মান বিন বাশীর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘তোমরা মুসলমানদেরকে পারস্পরিক সহমর্মিতা, পারস্পরিক প্রেম-ভালবাসা এবং পারস্পরিক স্নেহ-মমতায় এমন দেখতে পাবে, যেমন (জীবন্ত) দেহ। যখন দেহের কোন অঙ্গ ব্যথিত হয়, তখন সারাদেহ অনিদ্রায় ও রোগ যাতনায় তার সঙ্গী হয়ে থাকে।’ (বুখারী ও মুসলিম)

১৬. হযরত আবু মূসা (রাযিঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে বর্ণনা করেন যে, তাঁর নিকট কোন ভিক্ষুক বা অভাবী লোক এলে তিনি (সাহাবাদেরকে) বলতেন-
‘তোমরা এ লোকের পক্ষে ‍সুপারিশ করো, তাহলে তোমরা সওয়াব পাবে এবং আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসূলের মুখে যা চাবেন, নির্দেশ দিবেন। (অর্থাৎ, আমার মূখ দ্বারা তাই বের হবে, যা আল্লাহ দেওয়াতে চান, আর তোমরা মুফতে সওয়াব পেয়ে যাবে। এটা তখন, যখন যার নিকট সুপারিশ করা হবে, তার ‍উপর চাপ না হবে, যেমন এখানে হুযূর সাল্লাল্লাহু আালাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই সুপারিশ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করলেন।)’ (বুখারী ও মুসলিম)

১৭. হযরত আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে-
‘নিজের (মুসলমান) ভাইয়ের সাহায্য করো, সে জালেম হোক চাই মাজলুম হোক। এক ব্যক্তি নিবেদন করলো, ইয়া রাসূলুল্লাহ! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাজলুম হলে তো সাহায্য করবো ঠিক আছে, কিন্ত্ত জালেম হলে কিভাবে সাহায্য করবো? তিনি ইরশাদ করলেন, তাকে জুলুম থেকে বাধা দিয়ে। এটিই তোমার জালেমকে সাহায্য করা।’
(বুখারী ও মুসলিম)

১৮. হযরত ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। সে তার উপর জুলুম করবে না এবং কোন বিপদে পড়লে তাকে নিঃসঙ্গ ছাড়বে না। যে ব্যক্তি নিজের ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণের কাজে রত থাকে, আল্লাহ তা্আলা তার প্রয়োজন পুরা করতে থাকেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের কোন কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন তার কষ্ট দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দোষ গোপন রাখবে, আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন তার দোষ গোপন রাখবেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)

১৯. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, একটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘একজন মানুষের জন্য এ দোষই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলমান ভাইকে তুচ্ছ মনে করে। (অর্থাৎ, যদি কারো মধ্যে এই দোষ থাকে এবং অন্য কোন দোষের বিষয় নাও থাকে, তাহলেও তার দোষের অভাব নেই)। মুসলমানের সবকিছু অন্য মুসলমানের জন্য হারাম। তার জান, তার সম্পদ এবং তার মান। (অর্থাৎ, তার জানকে কষ্ট দেওয়া এবং তার সম্পদের ক্ষতি করা এবং তার সম্মানে আঘাত হানা কোনটিই জায়িয নেই। যেমন, তার দোষ প্রকাশ করা, তার গীবত করা ইত্যদি)।’(মুসলিম)

২০. হযরত আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘ঐ সত্তার শপথ, যার মুঠোয় আমার প্রাণ। কোন লোক (পূর্ণ) ঈমানদার হয় না, যতক্ষণ না সে নিজের (মুসলমান) ভাইয়ের জন্য ঐ জিনিস পছন্দ করে, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে।’ (বুখারী ও মুসলিম)

২১. হযরহ আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘ঐ ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না, যার প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে আশংকামুক্ত নয়্’ (অর্থাৎ, তার অনিষ্টের আশংকা লেগে থাকে।)’ (মুসলিম)

২২. হযরত ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘ঐ ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়, যে আমাদের ছোটদের প্রতি দয়া করে না এবং আমাদের বড়দেরকে সম্মান করে না এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করে না। (কারণ, এটিও মুসলমানের হক যে, উপযুক্ত সময়ে তাকে দ্বীনের কথা বলবে, তবে নম্র-ভদ্রভাবে ।)’
(তিরমিযী)
২৩. হযরত আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘যে ব্যক্তির সামনে তার মুসলমান ভাইকে দোষারোপ করা হয়, এবং সে তার সাহায্য করার ক্ষমতা রাখে, আর সে তার সাহায্য করে, তাহলে আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার সাহায্য করবেন। আর যদি সে সাহায্য না করে, অথচ সে সাহায্য করার ক্ষমতা রাখে, তাহলে দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহ তাআলা তাকে পাকড়াও করবেন।’
(শরহুস সুন্নাহ)
২৪. হযরত উকবা বিন আমের (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘যে ব্যক্তি কারো দোষ দেখলো, তারপর তা গোপন করলো (অর্থাৎ, অন্যদের নিকট প্রকাশ করলো না) তাহলে সে (সওয়াবের দিক থেকে) এমন হবে, যেমন কেউ জীবন্ত কবরস্থ মেয়ের প্রাণ রক্ষা করলো।’ (অর্থাৎ, কবর থেকে তাকে জীবিত বের করে আনলো)
(আহমাদ ও তিরমিযী)

২৫. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘তোমাদের প্রত্যেকে তার ভাইয়ের জন্য আয়নাস্বরুপ। তাই তার (ভাইয়ের) মধ্যে কোন নোংরা বিষয় দেখতে পেলে তা তার থেকে দূর করবে। (যেমন, আয়না চেহারার দাগ ও ময়লা এমনভাবে পরিষ্কার করে যে, শুধুমাত্র ময়লাযুক্ত লোকের নিকটই তা প্রকাশ করে, অন্য কারো নিকট তা প্রকাশ করে না। ঠিক তেমনি ঐ ব্যক্তিরও উচিত যে, তার দোষ গোপনে সংশোধন করে দিবে তাকে লাঞ্ছিত করবে না।’ (তিরমিযী)

২৬. হযরত আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘মানুষদেরকে তাদের মর্যাদায় রাখো। ‘অর্থাৎ, প্রত্যেকের সঙ্গে তার মর্যাদানুপাতে আচরণ করো, সবার সাথে এক সমান আচরণ করো না। (আবু দাউদ)

২৭. হযরত ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আাছে যে, তিনি বলেন যে, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি-
‘ঐ ব্যক্তি (পূর্ণ) ঈমানদার নয়, যে নিজে পেট পুরে খায়, আর তার পাশেই তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে।’ (বাইহাকী)

২৮. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্নিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘ঈমানদার ব্যক্তি আন্তরিকতা (ও সম্পর্ক) এর পাত্র। ঐ ব্যক্তির মধ্যে কল্যাণ নেই, যে কারো সাথে আন্তরিকতা রাখে না এবং তার সাথে কেউ আন্তরিকতা রাখে না।’ (অর্খাৎ, সবার প্রতি রুক্ষ এবং সবার থেকে পৃথক থাকে। কারো সাথেই তার বনিবনা হয় না। তবে দ্বীনের হেফাযতের জন্য কারো সাথে সম্পর্ক না রাখা বা কম রাখা এর অন্তর্ভুক্ত নয়।)
(আহমাদ, বাইহাকী)
২৯. হযরত আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘যে ব্যক্তি আমার উম্মাতের কারো প্রয়োজন-শুধুমাত্র তাকে খুশী করার নিয়তে পুরা করবে, সে আমাকে খুশী করলো। আর যে আমাকে খুশী করলো, সে আল্লাহ তাআলাকে খুশী করলো। আর যে আল্লাহকে খুশী করলো আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’
(বাইহাকী)

৩০. হযরত আনাস (রাযিঃ) থেকে আরো বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন –
‘যে ব্যক্তি কোন দুরাবস্থাগ্রস্ত লোকের সাহায্য করবে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য ৭৩ টি ক্ষমা লিখবেন। যার একটি ক্ষমা তার সমস্ত কাজ সারার জন্য যথেষ্ট হবে, আর ৭২ টি ক্ষমা কিয়ামত দিবসে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করবে।’ (বাইহাকী)

৩১. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘যথন কোন মুসলমান তার ভাইয়ের অসুখের খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য কিংবা এমনিই সাক্ষাতের জন্য যায়, তখন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- তুমিও পবিত্র, তোমার পথ চলাও পবিত্র, তুমি জান্নাতে নিজের জন্য জায়গা বানিয়ে নিয়েছো।’ (তিরমিযী)

৩২. হযরত আবু আইয়ুব আনসারী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘কারো জন্য তার ভাইয়ের সঙ্গে তিনদিনের অধিক এমনভাবে সম্পর্ক ছিন্ন করা হালাল নয় যে, দু’জনে মিলিত হলে একজন এদিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, আর আরেকজন ওদিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। এই দু’জনের মধ্যে উত্তম ঐ ব্যক্তি, যে আগে সালাম করে।’
(বুখারী ও মুসলিম)
৩৩. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘নিজেকে কুধারণা থেকে বাঁচাও। কারণ, সর্বাধিক মিথ্যা হলো, কারো সম্পর্কে কুধারণা করা। কারো গোপন বিষয় খুঁটিয়ে বের করো না। ভালো অবস্থারও না এবং মন্দ অবস্থারও না। ধোঁকা দেওয়ার জন্য কোন জিনিসের মূল্য বাড়িও না। পরস্পরে হিংসা করো না। বিদ্বেষ রেখো না। কারো অনুপস্থিতিতে গীবত করো না। হে আল্লাহর বান্দাগণ! সবাই ভাই ভাই হয়ে থাকো। অপর একটি বর্ণনায় আছে যে, পরস্পরের প্রতি ঈর্ষা করো না।’
(বুখারী ও মুসলিম)
৩৪. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘এক মুসলমানের উপর অপর মুসলমানের হক ছয়টি। (এ সময় ঐ ছয়টি বিষয়য়ের
আলোচনারই পরিস্থিতি ছিলো তাই এই ছয়টির কথা বলেছেন) জিজ্ঞাসা করা হলোঃ হে
আল্লাহর রাসূল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেগুলো কি? তিনি ইরশাদ করলেন-
১. তার সঙ্গে সাক্ষাত হলে তাকে সালাম করো।
২. সে তোমাকে দাওয়াত দিলে তা কবুল করো।
৩. সে তোমার কাছে কল্যাণ কামনা করলে তার কল্যাণ করো।
৪. হাঁচি দিয়ে ‘আলহামদুলিল্লাহ‘বললে উত্তরে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ বলো।
৫. অসুস্থ হলে খোঁজ-খবর নাও।
৬. মারা গেলে তার জানাযায় অংশগ্রহণ করো।

৩৫. হযরত সিদ্দীকে আকবর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘ঐ ব্যক্তি অভিশপ্ত, যে কোন মুসলমানকে কষ্ট দেয় বা তার সঙ্গে প্রতারণা করে।’
(তিরমিযী)
এ সকল হাদীস মিশকাতে রয়েছে। এগুলো তো সাধারণ মুসলমানদের বেশী বেশী ঘটার মত
অধিকারসমূহ। বিশেষ কারণের এবং বিশেষ অবস্থার বিশেষ অধিকারসমূহও রয়েছে, যেগুলো
আমি প্রয়োজন পরিমাণ ‘হুকুকুল ইসলাম‘পুস্তিকায় লিখে দিয়েছি। সবগুলো পালন করার
প্রতি সচেষ্ট হও। কারণ, এ ব্যাপারে খুব বেশী অবহেলা করা হচ্ছে। আল্লাহ তাআলা
তাওফীক দান করুন। আমীন।