যাকাত প্রদান করা

উৎস:
ইসলাহী নেসাব: হায়াতুল মুসলিমীন
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (র:)
যাকাতও নামাযের মত ইসলামের একটি স্তম্ভ। অর্থাৎ, অত্যন্ত মর্যাদাশালী একটি অবশ্যম্ভাবী নির্দেশ। অনেকগুলো আয়াতেই যাকাত দানের নির্দেশ, তার সওয়াব এবং না দেওয়ার শাস্তি উল্লেখিত হয়েছে। বেশীর ভাগ আয়াত এমন, যেগুলোতে নামাযের সঙ্গে যাকাতেরও নির্দেশ রয়েছে। এ সমস্ত আয়াত পবিত্র কুরআনে সহজেই পাওয়া যেতে পারে। যে আরবী জানে না, সে অনূদিত কুরআন শরীফে পেতে পারে। তাই এখানে শুধু হাদীসসমূহ লিখছি।
১. হযরত আবুদ দারদা (রাযিঃ) জনাব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি ইরশাদ করেন-
‘যাকাত ইসলামের সেতু বা উঁচু ভবন। (অর্থাৎ, যাকাত না দিলে ইসলামের উপর চলতে পারবে না বা ইসলামের নিম্ন শ্রেণীতে থাকবে।) (তাবরানী, আওসাত ও কাবীর)
ফায়দা: এ হাদীস দ্বারা যাকাতের অনেক গুরুত্ব প্রমাণিত হলো এবং যাকাত না দেওয়া যে, মুসলমানিত্বের কত ঘাটতি করে তা জানা গেলো।
২. হযরত জাবের (রাযিঃ) থেকে বর্নিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘যে ব্যক্তি তার সম্পদের যাকাত প্রদান করলো, তা থেকে তার মন্দ দিক কেটে গেলো। (অর্থাৎ, যাকাত না দেওয়ায় ঐ সম্পদে যে অকল্যাণ ও অপবিত্রতা প্রবেশ করে তা থাকলো না।)’ (তাবরানী, আওসাত, ইবনে খুযাইমা)
ফায়দা: এ হাদীস দ্বারা জানা গেলো যে, যে মালের যাকাত দেওয়া হয় না তার মধ্যে বরকত থাকে না। এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা ১৩ ও১৪ নম্বর হাদীসে আসছে।
৩. হযরত ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুনেছি, তিনি ইরশাদ করেন-
‘তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমান রাখে. তার উচিত নিজের সম্পদের যাকাত দেওয়া।’ (তাবরানী, কাবীর)
ফায়দা: এ হাদীস দ্বারা জানা গেলো যে, যাকাত না দেওয়ায় ঈমানের মধ্যে ঘাটতি থাকে।
৪. হযরত আবদুল্লাহ বিন মুয়াবিয়া (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘তিনটি কাজ এমন রয়েছে, যে ব্যক্তি সেগুলো করবে সে ঈমানের স্বাদ চাখবে। কেবলমাত্র আল্লাহর ইবাদত করবে এবং এ বিশ্বাস পোষণ করবে যে, আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য আর কেউ নেই এবং প্রতিবছর নিজের সম্পদের যাকাত এমনভাবে প্রদান করবে যে, তার মন এর উপর সন্ত্তষ্ট থাকে এবং এর জন্য উদ্বুদ্ধ করে। (অর্থাৎ, তাকে বাধা দেয় না)
ফায়দা: এর দ্বারা যাকাতের মর্যাদা পরিষ্কার হয়ে যায় যে, তাকে তাওহীদের সঙ্গে একত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। এবং এর প্রতিক্রিয়া এর দ্বারা স্পষ্ট হয় যে, এর দ্বারা ঈমানের স্বাদ বৃদ্ধি পায়।
৫. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘কোন স্বর্ণের মালিক এবং রুপার মালিক এমন নেই, যে তার হক (অর্থাৎ, যাকাত) দেয় না, কিন্ত্ত (তার অবস্থা এই যে,) কিয়ামতের দিন(ঐ ব্যক্তিকে আযাব দেওয়ার জন্য) ঐ স্বর্ণ-চাঁদির পাত তৈরী করা হবে, তারপর সেগুলোকে জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে, তারপর সেগুলো দ্বারা তার পাঁজর, কপাল ও পিঠে দাগ দেওয়া হবে। যখন ঐ (পাতগুলো) ঠান্ডা হতে যাবে, তখন পুনরায় সেগুলোকে উত্তপ্ত করা হবে। এটা এমন দিন হবে, যার একদিনের পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাজার বছর (অর্থাৎ, কিয়ামতের দিন)।’ (বুখারী ও মুসলিম)
৬. হযরত আলী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘আল্লাহ তাআলা মুসলমান সম্পদশালীদের উপর তাদের সম্পদে এ পরিমাণ হক অর্থাৎ, যাকাত ফরয করেছেন, যা তাদের গরীবদের জন্য যথেষ্ট হবে। গরীবদের খাদ্য ও পোশাকের কষ্ট যখনই হয়, সম্পদশালীদের (এই কর্মের) কারণেই হয়। (অর্থাৎ, তারা যাকাত না দেওয়ার কারণে) মনে রেখো! আল্লাহ তাআলা তাদের থেকে (এজন্য) কঠিন হিসাব গ্রহণকারী এবং মর্মন্ত্তদ শাস্তি প্রদানকারী।’ (তাবরানী, আওসাত ও সগীর)
অন্য একটি হাদীসে এর ব্যাখ্যায় এ কথাও বর্ণিত হয়েছে-
‘অভাবী লোকেরর কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার সমীপে সম্পদশালীদের বিরুদ্ধে এই বলে অভিযোগ করবে যে, তাদের উপর আপনি আমাদের যে হক ফরয করেছিলেন, তা তারা আমাদের নিকট পৌছায়নি। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে লক্ষ্য করে বলবেন- আমার মর্যাদা ও মহত্ত্বের শপথ! আমি তোমাদেরকে নিকটতম বানাবো এবং তাদেরকে দূরে সরিয়ে দেবো।’
(তাবরানী, সগীর ও আওসাত)
৭. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে- ‘আমাদেরকে নিয়মিত নামায আদায়ের এবং যাকাত প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যে ব্যক্তি যাকাত প্রদান করে না তার নামাযও (কবুল) হয় না।’ (তাবরানী, ইস্পাহানী)
অপর একটি বর্ণনায় তিনি ইরশাদ করেন-
‘যে ব্যক্তি নিয়মিত নামায আদায় করে, কিন্ত্ত যাকাত প্রদান করে না- সে (পূর্ণ) মুসলমান নয়। (যে, তার নেক আমল তার উপকারে আসবে।) (ইস্পাহানী)
ফায়দা: কিন্ত্ত এর অর্থ এই নয় যে, এরা নামাযও ছেড়ে দিবে। এরুপ করলে সেজন্য পৃথক শাস্তি হবে। বরং উদ্দেশ্য হলো, তারা যেন যাকাতও দেয়।
৮. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
‘যাকে আল্লাহ তাআলা সম্পদ দিয়েছেন এবং সে তার যাকাত প্রদান করে না, কিয়ামত দিবসে ঐ সম্পদ বিষাক্ত সাপে পরিণত করা হবে, যার উভয় চোখের উপর দু’টি বিন্দু থাকবে। (এমন সাপ অত্যাধিক বিষাক্ত হয়) এবং তার গলায় বেড়ীর মত পেঁচিয়ে দেওয়া হবে। সাপ তার উভয় চোয়াল কামড়ে ধরবে এবং বলবে- ‘আমি তোর সম্পদ। আমি তোর সঞ্চয়।’ তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (এর সত্যায়নে) এ আয়াত পাঠ করেন- এ আয়াতে সম্পদকে বেড়ীরুপে পরানো হবে একথা উল্লেখ রয়েছে।’
(বুখারী, নাসায়ী)
৯. হযরত আম্মারা বিন হাযম (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
(‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’- এর উপর ঈমান আনা ছাড়া) আল্লাহ তাআলা ইসলামে আরও চারটি জিনিস ফরয করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি তার মধ্য থেকে তিনটি জিনিস আদায় করবে, তা তাকে (পূর্ণ) কাজ দিবে না। যতক্ষণ না সব কয়টিই আদায় করবে। নামায, যাকাত, রমাযানের রোযা এবং বায়তুল্লাহ শরীফের হজ্জ।’ (আহমাদ)
ফায়দা: এ হাদীস দ্বারা একথাও জানা গেলো যে, যদি নামায, রোযা ও হজ্জ সব কয়টিই করে, কিন্ত্ত যাকাত না দেয় তাহলে এসব কয়টিও তার মুক্তির জন্য যথেষ্ট হবে না।
১০. হযরত আনাস বিন মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘যে যাকাত প্রদান করবে না, কিয়ামতের দিন সে দোযখে যাবে।’ (তাবরানী, সগীর)
১১. হযরত ইবনে উমর (রাযিঃ) বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘নামায তো এমন একটি বস্ত্ত, যা সবার সম্মুখে প্রকাশ পায় তা গ্রহণ করেছে- আর যাকাত গোপন জিনিস তা নিজে খেয়ে ফেলেছে (হকদারদেরকে দেয়নি) এমন লোক মুনাফিক।’ (বাযযার)
ফায়দা: অর্থাৎ, কিছু লোক এজন্য নামায পড়ে যে, না পড়লে সবাই জানতে পারবে। আর যাকাত এজন্য দেয় না যে, তা কেউ জানতে পারবে না।’ মুনাফিকরা এমনই করতো। অথচ উভয়টিই আল্লাহর হুকুম।
১২. হযরত বুরাইদা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে-
‘যে জাতিই যাকাত দেওয়া বন্ধ করে, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত করেন। অপর বর্ণনায় এরুপ এসেছে যে, আল্লাহ তাআলা তাদের উপর বৃষ্টি বন্ধ করে দেন।’
(তাবরানী, হাকীম, বাইহাকী)
১৩. হযরত আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘যে সম্পদের মধ্যে যাকাত মিশ্রিত থাকে, তা ঐ সম্পদকে ধ্বংস করে দেয়।’ (বাযযার, বাইহাকী)
ফায়দা: সম্পদের মধ্যে যাকাত মিশ্রিত থাকার অর্থ এই যে, তাতে যাকাত ফরয হলো, কিন্ত্ত তা থেকে যাকাত বের করা হলো না। এবং সম্পদ ধ্বংস হওয়ার অর্থ হলো, ঐ সম্পদ হাতছাড়া হয়ে যাবে, কিংবা তার বরকত চলে যাবে। যেমন সম্মুখের হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে।
১৪. হযরত উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লা্ল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘যখন কোন সম্পদ স্থলে বা জলে ধ্বংস হয়, তা যাকাত না দেওয়ার কারণেই হয়।’ (তাবরানী, আওসাত)
ফায়দা: যাকাত দেওয়া সত্ত্বেও কদাচিত যদি সম্পদ ধ্বংস হয়, তা মূলতঃ ধ্বংস নয়। কারণ, তার প্রতিদান আখিরাতে পাওয়া যাবে। আর যাকাত না দেওয়ার কারণে যা ধ্বংস হয়, তা শাস্তিস্বরুপ হয়। তার প্রতিদানের প্রতিশ্রুতি নেই।
১৫. হযরত আসমা বিন ইয়াযীদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, আমি এবং আমার খালা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে এমতাবস্থায় উপস্থিত হলাম যে, আমরা স্বর্ণের কাঁকন পরিহিত ছিলাম। তিনি আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন- তোমরা কি এর যাকাত দাও? আমরা নিবেদন করলামঃ না। তিনি ইরশাদ করেন-
‘তোমাদের কি এ ভয় হয় না যে, তোমাদেরকে আল্লাহ তাআলা আগুনের কাঁকন পরাবেন। এর যাকাত দিও।’ (আহমাদ)
উপরোক্ত হাদীসগুলো তারগীব ও তারহীব গ্রন্থে রয়েছে।
ফায়দা: উল্লেখিত হাদীসসমূহ দ্বারা নিম্নোক্ত বিষয়সমূহ প্রমাণিত হয়-
ক. যাকাত ফরয হওয়া এবং তার ফযীলত।
খ. যাকাত না দেওয়ার আপদ ও শাস্তি। দুনিয়াতে মাল ধ্বংস হওয়া বা বরকতহীনতা এবং আখিরাতে দোযখ।
গ. যে যাকাত প্রদান করে না, তার নামায, রোযা ইত্যাদিও কবুল হয় না।
ঘ. যে যাকাত দেয় না, তার অবস্থা মুনাফিকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ, যার বর্ণনা ১১ নম্বর হাদীসে এসেছে।
ঙ. যাকাত বান্দার হক সদৃশ হওয়া। যেমন ৬ নম্বর হাদীসের অধীনে এসেছে। এর দ্বারা যাকাতের গুরুত্ব অন্যান্য ইবাদতের চেয়ে অধিক বেড়ে যায়।
এখন যাকাত সংক্রান্ত কয়েকটি প্রয়োজনীয় বিষয় লিখছি।
প্রথম বিষয়: যে সব বস্ত্তর মধ্যে যাকাত ফরয হয় তা কয়েকটি
১. স্বর্ণ, চান্দি। তা মুদ্রা ও মোহররুপে হোক, বা কয়েন রুপে হোক। নিজের হাতে থাক, বা কারো দায়িত্বে এমন ঋণ থাক, যার প্রমাণ নিজের নিকট রয়েছে বা ঋণগ্রহীতা নিজেই স্বীকার করে। বা স্বর্ণ, চান্দির পাত্র, গহনা, জরি ইত্যাদিরুপে হোক। যদি শুধুমাত্র চান্দির বস্ত্ত হয়, আর ওজনে সাড়ে ৫২ তোলার সমান হয় কিংবা চান্দির সাথে কিছু স্বর্ণের জিনিসও থাকে আর স্বর্ণের দাম চান্দির ওজনের সঙ্গে মিলে সাড়ে ৫২ তোলার সমান হয়, তাহলে যেদিন থেকে এ সমস্ত জিনিসের মালিক হয়েছে, ঐ দিন থেকে ইসলামী (১চন্দ্রবর্ষ) বছর অতিবাহিত হলে তার চল্লিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত ফরয হবে। এটাই সতর্কতা যে, পঞ্চাশ ভরির সমানও যদি হয় তাহলে সোয়া ভরি যাকাত দিবে।
যেসব বস্ত্তর মধ্যে যাকাত ফরয হয় তার দ্বিতীয়টি হলো, ব্যবসার পণ্য। যখন তার মূল্য উপরোক্ত পরিমাণ হবে। এর মূল্যের পরিমাণ দ্বারা এ কথাও জানা গেলো যে, মুসলমানদের মধ্যে এমন লোক অনেক রয়েছে, যাদের উপর যাকাত ফরয। কারণ, এতটুকু গহনা বা ব্যবসার পণ্য থেকে খুব কম ঘরই খালি রয়েছে। কিন্ত্ত তারা এ ব্যাপারে গাফেল। তাই এ ব্যাপারে অবশ্যই লক্ষ্য করা উচিত।
তৃতীয় জিনিস, এমন উট, গরু, মহিষ, ভেড়া বা ছাগল, যেগুলোকে শুধুমাত্র দুধ ও বাচ্চা লাভের উদ্দেশ্যে প্রতিপালন করা হয় এবং সেগুলো মাঠে চড়ে বেড়ায়। যেহেতু এদেশে এ ধরনের পশু কম, তাই এ সবের যে পরিমাণের উপর যাকাত ফরয হয় তা লেখা হলো না। যার প্রয়োজন হয় (কোন হক্কানী) আলেমের নিকট জিজ্ঞাসা করে নিবে।
চতুর্থ জিনিস, উশরী জমিনের ফসল। এর মাসআলাও আলেমদের কাছে জিজ্ঞাসা করে নিবে।
পঞ্চম জিনিস, সদকায়ে ফিতর। যে সমস্ত লোকের উপর যাকাত ফরয, তাদের সবার উপর সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব। তাছাড়া এমন কিছু লোকের উপরও সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব, যাদের উপর যাকাত ওয়াজিব নয়। এ বিষয়টিও কোন আলেমের নিকট জিজ্ঞাসা করে নিবে। সদকায়ে ফিতর নিজের পক্ষ থেকে এবং বাবার জন্য নাবালেগ সন্তানদের পক্ষ থেকেও দিতে হবে।
যাকাতের সর্বাধিক হকদার নিজের দরিদ্র আত্মীয়-স্বজন। তারা নিজেদের এলাকায় বাস করুক বা অন্য এলাকায়। তারপর নিজের এলাকার অন্যান্য দরিদ্র লোক। তবে অন্য এলাকার লোক যদি অধিক দরিদ্র হয়, তাহলে তাদের হকই বেশী। যাদেরকে যাকাত দিবে তারা হাশেমী গোত্র অর্থাৎ, সায়্যিদ ইত্যাদি না হতে হবে। এবং যাকাত প্রদানকারীর মাতা-পিতা, দাদা-দাদী, নানা-নানী, সন্তান, স্বামী-স্ত্রী না হতে হবে। কাফন বা মসজিদের কাজে এগুলো লাগানো জায়িয নেই। তবে মৃত ব্যক্তির আপনজনদেরকে দিতে পারবে। কিন্ত্ত কাফনের কাজে লাগানো বা না লাগানো তাদের এখতিয়ার থাকবে। একইভাবে সব সংগঠন বা সব মাদ্রাসায় এগুলো দেওয়া ঠিক নয়। যতক্ষণ না সংগঠন বা মাদ্রাসার লোকদের নিকট জিজ্ঞাসা করে নিবে যে, তোমরা কোন পন্থায় যাকাত ব্যয় করো। তারপর কোন আলেমের নিকট জিজ্ঞাসা করবে যে, এই পন্থায় ব্যয় করলে যাকাত আদায় হয় কিনা।
মুসলমানদের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীন অধিকাংশ পেরেশানীর কারণ দারিদ্রতা। যাকাত তার অনেকটাই সমাধান করতে পারে। সম্পদশালীরা যদি অপচয়-অপব্যয় না করে, স্বাস্থ্যবানেরা যদি পরিশ্রম করে, আর অসহায় লোকেরা যদি যাকাতের সাহায্য পেতে থাকে তাহলে মুসলমানদের মধ্যে একজনও অনাহারীও অনাবৃত থাকবে না।
৬ নম্বর হাদীসে খোদ হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উক্তিতেই এ বিষয়টি পরিষ্কার উল্লেখ রয়েছে।
Leave a Reply