কুরবানী করা

উৎস:
ইসলাহী নেসাব: হায়াতুল মুসলিমীন
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (র:)
যে ব্যক্তির উপর যাকাত ফরয, তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। কার উপর যাকাত ফরয হয়, তার বর্ণনা চতুর্দশতম রূহের শেষাংশে বর্ণিত হয়েছে। এমন কিছু লোকের উপরও কুরবানী করা ওয়াজিব হয়, যার উপর যাকাত ফরয নয়। এ বিষয়টি কোন আলেমের নিকট থেকে জিজ্ঞাসা করে জেনে নিবে। যে ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়, সেও যদি কুরবানী করে, কিংবা নিজের অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের পক্ষ থেকে কুরবানী করে, সেও অনেক সওয়াব পায়। যদি কোন মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানী করে, তাহলে ঐ মৃত ব্যক্তিও প্রচুর সওয়াব পায়। এতদসংক্রান্ত কিছু আয়াত এবং হাদীস লেখা হচ্ছে।
আয়াতসমূহ:
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
‘আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কুরবানী নির্ধারণ করেছি, যাতে তারা আল্লাহর দেওয়া চতুষ্পদ জন্ত্ত (অর্থাৎ, গরু, উট, ছাগল, ভেড়া) জবাই করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।’
(সূরা হাজ্জ-৩৪)
অন্য আয়াতে এ সমস্ত পশু হালাল হওয়ার বিধান বর্ণিত হয়ে সেগুলোর নাম এভাবে এসেছে।
‘(তিনি সৃষ্টি করেছেন) আটটি নর ও মাদী। ভেড়ার মধ্যে দুই প্রকার (অর্থাৎ, নর ও মাদী) ভেড়ার মধ্যে দুম্বাও অন্তর্ভুক্ত) এবং ছাগলের মধ্যেও একইভাবে দুই প্রকার এবং উটের মধ্যেও একইভাবে দুই প্রকার এবং গরুর মধ্যেও একইভাবে দুই প্রকার (এবং গরুর মধ্যে মহিষও অন্তর্ভুক্ত)।’ (সূরা আনআম-১৩৩-১৩৪)
অন্যত্র আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
‘এবং কুরবানীর উট ও গরুকে আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর (দ্বীনের) নিদর্শন বানিয়েছি। (কারণ, এগুলো কুরবানী করার দ্বারা আল্লাহ তাআলার বড়ত্ব এবং দ্বীনের শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ পায়। এছাড়া এ সমস্ত পশুর মধ্যে তোমাদের আরো অনেক ফায়দা রয়েছে। (যেমন, দুনিয়াতে এগুলো নিজেরা খাওয়া যায় এবং অন্যদেরকে খাওয়ানো যায় এবং আখিরাতে সওয়াব পাওয়া যায়।) (সূরা হজ্জ-৩৬)
এর একটু পর আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-
‘এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্ত্ত পৌঁছে তাঁর কাছে তোমাদের মনের তাকওয়া (এবং ইখলাস)।… সুতরাং ইখলাসের অধিকারীদেরকে সুসংবাদ শুনিয়ে দিন।’ (সূরা হজ্জ-৩৭)
ফায়দা: ক. এতে জানা গেলো যে, পূর্ববর্তী উম্মতের উপরও কুরবানী ছিলো।
খ. যদিও ছাগল ও ভেড়াও কুরবানীর পশু, তাই এগুলোও দ্বীনের চিহ্ন ও প্রতীক। কিন্ত্ত আয়াতের মধ্যে বিশেষভাবে উট ও গরুর কথা উল্লেখ করার কারণ এই যে, এগুলো কুরবানী করা ছাগল ও ভেড়া কুরবানী করার চেয়ে উত্তম। আর যদি পূর্ণ গরু বা উট না করে তার এক সপ্তমাংশ কুরবানী করে, তখন যদি এই সপ্তমাংশ এবং একটি পূর্ণ বকরী বা ভেড়া মূল্য ও গোশতের পরিমাণের দিক থেকে সমপরিমাণের হয়, তাহলে যার গোশত উন্নত হবে সেটিই শ্রেষ্ঠ হবে। আর যদি মূল্য ও গোশতের দিক থেকে সমপরিমাণের না হয় তাহলে যেটি বেশী হবে সেটি উত্তম হবে।
(শামী, তাতারখানিয়া)
গ. কুরবানীর ক্ষেত্রে ইখলাস এই যে, কেবলমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্ত্তষ্টির জন্য এবং সওয়াব লাভের জন্য কুরবানী করবে।
২. আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
‘অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কুরবানী করুন।’ (সূরা কাউসার-২)
ফায়দা: এ আয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কুরবানী করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যে কাজের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাকীদ করা হয়েছে, তা আমাদের থেকে কী করে মাফ হতে পারে? যেমন, একই সাথে উল্লেখিত নামাযও সমগ্র উম্মতের উপর ফরয।
হাদীসসমূহ:
৩. হযরত আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘কুরবানীর দিন আল্লাহ তাআলার নিকট মানুষের কোন আমল কুরবানীর চেয়ে অধিক প্রিয় নয়। কুরবানীর জীব কিয়ামতের দিন, তার শিং, পশম ও খুর সহকারে হাজির হবে। (অর্থাৎ, এসব কিছুর বিনিময়ে সওয়াব পাবে। (কুরবানীর) রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বে আল্লাহ তাআলার নিকট একটি বিশেষ মর্যাদায় পৌঁছে যায়। তাই তোমরা হৃষ্টচিত্তে কুরবানী করো। (অনেক অর্থ ব্যয় হওয়ার কারণে মন খারাপ করো না।)’
(ইবনু মাজা, তিরমিযী, হাকীম)
৪. হযরত যায়েদ বিন আরকাম (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে-
‘সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন-হে আল্লাহর রাসূল! এই কুরবানী কি জিনিস? তিনি ইরশাদ করলেন, তোমাদের (বংশীয় বা আধ্যাত্মিক) পিতা ইবরাহীম আলাইহিস সালামের আদর্শ। তাঁরা নিবেদন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এতে আমরা কি পাই? তিনি ইরশাদ করলেন, প্রত্যেক পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকী। তাঁরা নিবেদন করলেন, যদি ঘন পশম (যেমন, উল) (ধারী জীব) হয়? তিনি ইরশাদ করলেন- প্রত্যেক পশমের বদলেও একটি করে নেকী।’ (হাকীম)
৫. হযরত আলী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘হে ফাতেমা! উঠো এবং (জবাইয়ের সময়) তোমার কুরবানীর নিকট উপস্থিত থাকো। কারণ, কুরবানীর প্রথম ফোঁটা মাটিতে পতিত হওয়ার সাথে সাথে তোমার সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। মনে রেখো! কিয়ামতের দিন তার (পশুর) রক্ত ও গোশত আনা হবে এবং তোমার (আমলের) পাল্লায় সত্তর গুণ বৃদ্ধি করে রাখা হবে। (এবং ঐ সবের বিনিময়ে সওয়াব দেওয়া হবে)। আবু সায়ীদ (রাযিঃ) নিবেদন করলেন- হে আল্লাহর রাসূল!এ (সওয়াব) কি বিশেষভাবে মুহাম্মাদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বংশধরদের জন্য? কারণ, তাঁরা কোন কিছুর সঙ্গে বিশিষ্ট হওয়ার উপযুক্তও। নাকি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বংশধর এবং সমস্ত মুসলমানের জন্য ব্যাপক? তিনি ইরশাদ করলেন- মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বংশধরদের জন্য (এক প্রকারের বিশিষ্ট) এবং সাধারণভাবে সমস্ত মুসলমানের জন্য (ইসফাহানী)
ফায়দা: এক প্রকারের বিশিষ্ট হওয়ার অর্থ এমন মনে হয়, পবিত্র কুরআনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিবিদের জন্য ইরশাদ হয়েছে যে, তাদের নেককাজের সওয়াবও অন্যদের দ্বিগুণ এবং গুনাহের শাস্তিও দ্বিগুণ। অতএব পবিত্র কুরআন দ্বারা তার স্ত্রীদের জন্য এবং এ হাদীস দ্বারা তার সন্তানদের জন্যও এ বিধান প্রমাণিত হয়। আর এর ভিত্তিতেই তাদের অধিক শ্রেষ্ঠত্বও রয়েছে।
৬. হযরত হুসাইন বিন আলী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘যে ব্যক্তি হৃষ্টচিত্তে কুরবানী করে এবং তার কুরবানীতে সওয়াবের নিয়ত করে, ঐ কুরবানী সে ব্যক্তির জন্য দোযখের প্রতিবন্ধক হবে।’ (তাবরানী, কাবীর)
৭. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘যে ব্যক্তির কুরবানী করার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী করলো না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’ (হাকীম)
ফায়দা: এ হাদীস দ্বারা কুরবানী না করার কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কি পরিমাণ অসন্ত্তষ্টি ফুটে ওঠে! কোন মুসলমান কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অসন্ত্তষ্টি সইতে পারে? আর এ অসন্ত্তষ্টি ঐ ব্যক্তির ক্ষেত্রে, যার উপর কুরবানী ওয়াজিব। যার সামর্থ্য নেই, তার ক্ষেত্রে নয়। উপরোক্ত হাদীসসমূহ তারগীব গ্রন্থে রয়েছে।
৮. হযরত জাবের (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে-
‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় হজ্জ পালনকালে নিজের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে
একটি গরু কুরবানী করেন।’ অপর একটি হাদীসে আছে যে, কুরবানীর ঈদের দিন হযরত আয়েশা (রাযিঃ) এর পক্ষ থেকে গরু কুরবানী করেন।’ (মুসলিম)
ফায়দা: একটি গরু সকল স্ত্রীর পক্ষ থেকে কুরবানী করেছেন তা আবশ্যক নয়। বরং সম্ভাবনা রয়েছে যে, শুধুমাত্র সাতজনের পক্ষ থেকে করেছেন।
উট ও বকরী পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া সত্ত্বেও গরু কুরবানী করাকে ঘটনাচক্রে মনে করার কোন কারণ নেই, তাই সম্ভাবনা রয়েছে যে, ইহুদীরা যে বাছুর পূজা করে, সেই শিরকের বিলুপ্তি সাধনের জন্য তিনি বিশেষভাবে গরু কুরবানী করেছেন।
কোন কোন বর্ণনায় গরুর গোশত ব্যাধি (অর্থাৎ, ক্ষতিকর) হওয়ার কথা এসেছে, তা শরীয়তের বিধানরুপে নয়, রোগীর পরহেয (বাছ) রুপে বলা হয়েছে। যেমন, দশম রূহের নয় নম্বর হাদীসের অধীনে হযরত আলী (রাযিঃ) কে খেজুর খেতে বারণ করার বিষয় বর্ণিত হয়েছে। ‘হালীমী’ বলেনঃ এর কারণ এই যে, আরব শুষ্ক দেশ এবং গরুর গোশতও শুষ্ক। ‘মাকাসেদের’ লেখক বলেন- এটি যেন আরবওয়ালাদের জন্য বিশেষ নির্দেশ। তিনি আরো বলেন যে, উলামায়ে কেরাম এ ব্যাখ্যাটি পছন্দ করেছেন।
৯. হযরত হানাশ (রাযি) থেকে বর্ণিত আছে যে, আমি হযরত আলী (রাযিঃ) কে দেখেছি, তিনি দু’টি দুম্বা কুরবানী করলেন এবং বললেন-
‘এর একটি আমার পক্ষ থেকে আর অপরটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষ থেকে। আমি তাঁর সঙ্গে (এ ব্যাপারে) কথা বললাম। তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে এ নির্দেশ দিয়েছেন। আমি এটি কখনো পরিত্যাগ করবো না।’
ফায়দা: আমাদের উপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনেক বড় হক রয়েছে। আমরা যদি প্রতিবছর তাঁর পক্ষ থেকেও একটি অংশ কুরবানী করি তা এমন বড় কথা নয়।
১০. হযরত আবু তালহা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (নিজের পক্ষ থেকে একটি দুম্বা কুরবানী করলেন এবং) অপর একটি দুম্বা জবাই করার সময় বললেন-
‘এটি আমার উম্মতের ঐ ব্যক্তির পক্ষ থেকে, যে আমার উপর ঈমান আনলো এবং যে আমাকে বিশ্বাস করলো।’ (মুসেলী, কাবীর ও আওসাত)
উপরোক্ত হাদীসসমূহ জামউল ফাওয়ায়িদ গ্রন্থে রয়েছে।
ফায়দা: ক. এ হাদীসের উদ্দেশ্য হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মাতকে সওয়াবের মধ্যে শামিল করেছেন। এর অর্থ এই নয় যে, সবার পক্ষ থেকে কুরবানী হয়ে গেছে। এখন কারো দায়িত্বে কুরবানী করা জরুরী নয়।
খ. ভাববার বিষয় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরবানীর মধ্যে উম্মতকে স্মরণ রাখলেন। আর তাঁর উম্মত যদি তাঁকে স্মরণ না করে এবং একটি অংশও তাঁর পক্ষ থেকে কুরবানী না করে তাহলে বড় পরিতাপের বিষয়।
১১. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘নিজের কুরবানীর পশুকে (খাওয়ায়ে ও পান করিয়ে) খুব শক্তিশালী করো। কারণ, সেগুলো পুলসিরাতে তোমাদের বাহন হবে।’ (কানযুল উম্মাল)
ফায়দা: আলিমগণ বাহন হওয়ার দু’টি অর্থ বর্ণনা করেছেন। একটি হলো, কুরবানীর পশু নিজেই বাহন হবে। আর যদি অনেকগুলো পশু কুরবানী করে থাকে, তাহলে হয় সবগুলোর পরিবর্তে একটি অতি উন্নত বাহন পাবে। অথবা একেকটি গন্তব্যে একেকটি পশুর উপর আরোহণ করবে।
দ্বিতীয় অর্থ এই হতে পারে যে, কুরবানীর বরকতে পুলসিরাত অতিক্রম করা এত সহজ হবে, যেন ঐ পশুর উপর সওয়াব হয়েই পুলসিরাত পার হচ্ছে।
কানযুল উম্মাল গ্রন্থে এ মর্মে একটি হাদীস রয়েছে যে, সর্বোৎকৃষ্ট কুরবানী ঐটি, যা উৎকৃষ্টমানের এবং খুব মোটা।
অপর একটি হাদীসে আছে যে, আল্লাহ তাআলার নিকট অধিক প্রিয় কুরবানী, উন্নতমানের মোটা তাজা কুরবানী।
কুরবানী করতে বাধা দিলে কি করবে:
কিছু অত্যাচারী লোক কুরবানী করতে বিশেষত: গরু কুরবানীর বিষয়ে মুসলমানদের সঙ্গে কলহ-বিবাদ করে। কখনো ঠিক কুরবানীর মুহূর্তে মুসলমানদের উপর চড়াও হয়ে মুসলমানদের জন্য জায়েয বরং ওয়াজিব কুরবানী পরিত্যাগ করতে বাধ্য করে। যা কিনা সম্পূর্ণরুপে তাদের বাড়াবাড়ি। উপরোল্লেখিত আয়াত ও হাদীসসমূহে বিশেষভাবে গরু হালাল হওয়া, তার কুরবানীর ফযীলত এবং স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের গরু কুরবানী করার বিষয়ও উল্লেখিত হয়েছে। তাই মুসলমানগণ ধর্মের উপরে তাদের এই আগ্রাসনকে সহ্য করে না। তারা এর জন্য জান দেয়। এ ব্যাপারে তারা সম্পূর্ণরুপে নিরপরাধ। তাই এ বিষয়ে সঠিক মাসআলা বুঝে নেওয়া উচিত।
এক্ষেত্রে যেভাবে দৃঢ়তা পোষণ করা জায়িয- একইভাবে কোথাও এমন দৃঢ়তা কৌশল ও কল্যাণবিরোধী হলে শরীয়তে অন্য পন্থা গ্রহণ করাও জায়েয আছে। তা হলো, এমন ক্ষেত্ত্রে ধৈর্যধারণ করবে, কুরবানী করা থেকে বিরত থাকবে এবং অবিলম্বে প্রশাসনকে অবহিত করে তাদের সহযোগিতা নিবে। তারপর কুরবানীর সময় থাকাকালীন অর্থাৎ, যিলহজ্জের ১২ তারিখের মধ্যে এর যথোপযুক্ত বিহিত করা হলে কুরবানী করবে। আর এ মেয়াদ অতিক্রান্ত হওয়ার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরবর্তী বছর থেকে কুরবানী করবে এবং এ বছরের কুরবানীর মূল্য অভাবগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ করে দিবে। যদি পূর্ব থেকে জানা যায় যে, ঝগড়া হবে, তাহলে দশম রূহে উল্লেখিত ব্যবস্থাটি গ্রহণ করবে। অর্থাৎ, কোন বিরুদ্ধবাদীর পক্ষ থেকে কোন হাঙ্গামা দেখা দিলে প্রশাসনের মধ্যস্থতায় তা প্রতিহত করবে। তখন তারা পরিস্থিতি সামাল দিবে অথবা তোমাদেরকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুমতি দিবে। আর যদি খোদ সরকারের পক্ষ থেকেই কোন অঘটন দেখা দেয়, তাহলে শালীনভাবে তাকে অবহিত করবে। তারপরও যদি সন্তোষজনক বিহিত না হয় তাহলে ধৈর্যধারণ করবে। কাজ, কথা কিংবা কলম দ্বারা মোকাবেলা করবে না। আর মহান আল্লাহর সমীপে মুসীবত দূর হওয়ার জন্য দু’আ করবে। আর যদি কোথাও জালেমরা আত্মসমর্পনেও সন্ত্তষ্ট না হয়, প্রাণসংহার করেতই আগ্রাসন চালায়, তাহলে এর মোকাবেলার জন্য অবিচল হয়ে দাঁড়ানো সর্বাবস্থায় মুসলমানদের উপর ফরয। এমনকি মুসলমানরা শক্তিতে দুর্বল হলেও। সারকথা হলো, যতদূর সম্ভব শান্তি-শৃংখলার সঙ্গে ফেতনা-ফাসাদ প্রতিহত করবে। আর কেউ যদি এরপরও মাথায় চড়েই বসে তাহলে মৃত্যুর জন্য প্রস্ত্ততি না নিয়ে উপায় কি? শাইখ সা’দী (রহঃ) বলেন-
‘যখন জীবন রক্ষার আর কোন উপায়ই থাকে না, তখন তলোয়ার হাতে নেওয়ায় কোন দোষ নেই।
শত্রু যদি সন্ধি করতে চায়, তাহলে তোমরা তা অস্বীকার করো না। আর যদি যুদ্ধই করতে চায়, তাহলে তোমরাও পিছু হটো না।
Leave a Reply