অন্যান্য অঙ্গের সাথে সম্পৃক্ত ঈমানের শাখাসমূহের বর্ণনা – ৩

উৎস:
ইসলাহী নেসাব: ফুরুউল ঈমান
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (র:)
হিজরত বা দেশত্যাগ করা
হযরত আবু সা’য়ীদ খুদরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘অল্পদিনের মধ্যেই এমন অবস্থা হবে যে, মুসলমানের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মাল হবে বকরী-যেগুলোর পিছে পিছে সে পাহাড়ের চূড়ায় এবং বৃষ্টির স্থানমসূহে ঘুরবে এবং নিজের দ্বীন নিয়ে ফিৎনা থেকে পালিয়ে বেড়াবে।’ (বুখারী)
হযরত আমর ইবনুল আস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘হিজরত তার পূর্বের কৃত সমস্ত গুনাহকে ধ্বংস করে দেয়।’ (মুসলিম)
ফায়দাঃ কোন শহর, মহল্লা বা জনগোষ্ঠীতে যদি দ্বীন ধ্বংস হওয়ার আশংকা দেখা দেয়, তাহলে শক্তি থাকলে সেখান থেকে পৃথক হয়ে যাওয়া ওয়াজিব। তবে যদি লোকটি আলেম ও অন্যদের জন্য অনুসরণীয় হয় এবং তার নিকট মানুষের ধর্মীয় প্রয়োজন দেখা দেয় তাহলে তাদের মধ্যে অবস্থান করবে এবং ধৈর্যধারণ করবে। আর যদি এমন হয় যে, কেউ তার নিকট কিছু জিজ্ঞাসাই করে না এবং তাদের সংশোধনেরও আশা নেই, এমতাবস্থায়ও তাদের থেকে পৃথক হয়ে যাওয়া উত্তম।
মান্নত পুরো করা
হযরত আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনের মান্নত করে, তাহলে তার তা পালন করা উচিত। আর যদি তার নাফরমানী করার মান্নত করে, তাহলে তা পুরো করবে না।’ (বুখারী)
অর্থাৎ, যে মান্নত শরীয়ত সম্মত হবে তা পুরো করবে, আর যেটা শরীয়ত বিরোধী হবে তা পুরো করা জায়েয নেই। যেমন, কেউ মান্নত মানলো-আমার ছেলে সুস্থ হলে নৃত্যানুষ্ঠান করবো। এটি অন্যায় মান্নত, এটা পুরো করা জায়েয নেই।
কিছু প্রচলিত ও নিষিদ্ধ মান্নত
এ যুগে অনেক মাকরুহ ও বিদআত কাজের মান্নত করা হয়। অশিক্ষিত মানুষ বিশেষতঃ নারীরা এতে বেশী লিপ্ত। ইমাম হুসাইন (রাযিঃ) এর নামে ফকীর বানানো, কারো নামে টিকি রাখা বা বালা পরানো, কারো মাযারে গেলাফ পাঠানো, শাইখ সুদ্দুর নামে পাঁঠা পালা, খোদায়ী রাত পালন করা। মুশকিল কুশার নামে রোযা রাখা, এ জাতীয় আরো অনেক অনর্থক কাজ প্রচলিত ও প্রসিদ্ধ রয়েছে, যেগুলোর শরীয়তে কোন ভিত্তি নেই। বরং সম্পূর্ণরুপে বা আংশিকভাবে শরীয়তে এগুলোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। বড়ই বিস্ময়ের ব্যাপার যে, কতক শিক্ষিত মানুষও এ সমস্ত প্রথার সহযোগী ও সমর্থক। বিশেষ করে শাইখ সুদ্দুর নামের পাঁঠাকে হালাল ও পবিত্র মনে করে, এ রকম লোক তো অনেক আছে।
বন্ধুগণ! পবিত্র কুরআনের মধ্যে পরিষ্কার শব্দ বিদ্যমান রয়েছে। ‘ইহলাল’ আরবী ভাষার শব্দ। এর অর্থ অভিধানে দেখা উচিত। হালাল ও হারাম ফিকহের মাসআলা, তাই ফিকহের কিতাব ‘দুররে মুখতার’ ইত্যাদিতে এগুলো দেখা দরকার। কতক তাফসীরের কিতাবে ‘ইহলাল’ শব্দের তাফসীর করা হয়েছে-‘জবাই করা’। ঐ যুগের লোকদের অভ্যাস অনুপাতে এ অর্থ করা হয়েছে।
কোন কোন আয়াতে ‘হারাম’ শব্দ ব্যবহার করে (এ সকল প্রথা) নিষেধ করা হয়েছে। এর দ্বারা যে সমস্ত কারণে হারাম হয়, সে সকল হারাম হওয়ার হেতুতে লিপ্ত হওয়া (থেকে নিষেধ করা) উদ্দেশ্য। হারাম বিশ্বাস করা উদ্দেশ্যে নয়, বিষয়টি ভালো করে বুঝে নাও। অর্থাৎ, বিষয়টি আমলী ইতেকাদী নয়।
শপথ পুরা করা ও তার আদবসমূহ
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
‘তোমরা তোমাদের শপথের হিফাযত করো।’ (সূরা মায়িদা-৮৯)
শপথ বা কসম হিফাযত করার মধ্যে কয়েকটি বিষয় রয়েছে-
১. আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে শপথ করবে না।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি-
‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে কসম খায়, সে মুশরিক হয়ে যায়।’
এখানে মুশরিক দ্বারা আমলী মুশরিক উদ্দেশ্য। অর্থাৎ, এটা মুশরিকদের কাজ। বর্তমানে অনেক বাবাই সন্তানের নামে কসম করে। এ ব্যাপারে খুবই সতর্ক থাকা উচিত। কেউ কেউ আবার এভাবে শপথ করে যে, আমি যদি মিথ্যুক হই তাহলে যেন আমার ঈমান নসীব না হয়। এভাবে কসম খাওয়ার ব্যাপারেও কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। হাদীস শরীফে আছে-
‘যে বললো যে, আমি ইসলাম থেকে মুক্ত, সে যদি মিথ্যুক হয় তাহলে তো তার ঈমান চলে যাবে। আর যদি সত্যবাদী হয় তবুও নিরাপদে ইসলামে ফিরে আসবে না।’ (আবু দাউদ)
২. আল্লাহর নামে কসম খেলে সত্য কসম খাবে। হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘কেবলমাত্র সত্যবাদী হলে আল্লাহর নামে কসম খাও।’ (আবু দাউদ, নাসায়ী)
৩. বেশী কসম খাবে না। এতে আল্লাহর নামের অসম্মান হয়। আল্লাহ তাআলা সূরায়ে ‘নূন’ এর মধ্যে অধিক কসম করাকে মন্দ স্বভাব বলে উল্লেখ করেছেন।
৪. শরীয়তসম্মত কোন কসম খেলে তা পুরো করবে। আর যদি শরীয়ত বিরোধী বিষয়ে কোন কসম খেয়ে থাকে, যেমন, কোন গুনাহের কাজের জন্য কসম খেলো, যথাঃ অমুকের উপর জুলুম করবো। বা এমন কসম খেলো, যার দ্বারা অন্যের হক নষ্ট হয়, যথাঃ শপথ করলো যে, বাপ- ভাই বা অন্য কোন মুসলমানের সাথে কথা বলবে না, বা অমুক হকদারকে কিছু দেবে না। তাহলে এমন কসমকে ভেঙ্গে ফেলবে।
আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘যে ব্যক্তি কোন বিষয়ে কসম খেলো, তারপর অন্য বিষয় এর চেয়ে ভালো দেখতে পেলো, তাহলে নিজের কসমের কাফফারা দিয়ে সেই ভালো কাজটি করবে।’ (মুসলিম)
৫. কারো হক নষ্ট করার জন্য ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে কসম খাবে না। তবে যদি তার উপর জুলুম হয়, তাহলে এভাবে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে কসম খাওয়া জায়িয আছে। যেমনঃ তোমার কাছে যায়েদ কিছু টাকা পায়। এখন তুমি এমনভাবে কসম খেতে চাচ্ছো যেন মিথ্যাও না হয় আবার টাকাও দিতে না হয়। তাই তুমি বললে-আমার নিকট তোমার টাকা নেই। আর তোমার উদ্দেশ্য হলো-এই মুহূর্তে তোমার পকেটে নেই। এ রকম ‘হিলা’ করা অর্থাৎ, ঘুরিয়ে কথা বলা গুনাহ। তবে যদি কোন জালেম, চোর, ডাকাত তোমার ঘরের গুপ্তধন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, তখন এ রকমভাবে ঘুরিয়ে কসম খাওয়া যে, আমার নিকট তো একটি আধুলিও নেই, আমাকে কেন বিরক্ত করছো? এটা জায়েয আছে। বরং অধিকাংশ গবেষক আলেমের মতে এমন সময়ে পরিষ্কার মিথ্যা বলাও জায়েয আছে।
হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘শপথকারীর নিয়্যত অনুপাতে শপথ হবে।’ (মুসলিম)
কাফফারার প্রকারসমূহ
কাফফারা কয়েক প্রকার-
১. কসমের কাফফারা
২. হত্যার কাফফারা
৩. যিহারের কাফফারা
৪. রমাযানের কাফফারা
এ সবকটি প্রকারই কুরআন ও হাদীসে উল্লেখিত আছে।
কসমের কাফফারাঃ কসম ভেঙ্গে গেলে হয় দশজন মিসকিনকে দু’বেলা পেট ভরে খাবার খাওয়াবে, কিংবা তাদেরকে একজোড়া করে কাপড় দিবে, বা একটি গোলাম আযাদ করবে। এ তিনিটির যেটি ইচ্ছা করতে পারবে। আর তিনটির কোনটিই যদি করার ক্ষমতা না থাকে, তাহলে একাধারে তিনটি রোযা রাখবে। অনেক লোক খাবার খাওয়ানোর সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তিনটি রোযা রাখে, এটি জায়েয নয়। এতে কাফফারা আদায় হবে না। যদি দশজন মিসকিনকে খানা খাওয়ানোর পরিবর্তে প্রত্যেককে আধা ‘সা’ গম- যা আশি তোলার সেরের পৌনে দুই সের হয়- দেয় বা তার দাম দেয় তবুও জায়েয আছে।
হত্যার কাফফারাঃ অনিচ্ছাকৃত খুন হলে ‘দিয়্যাত’ অর্থাৎ, রক্তপণ ছাড়া (যার বিধান ও পরিমাণ বিস্তারিতভাবে ফিকহের কিতাবসমূহে রয়েছে) একটি গোলাম আযাদ করা ওয়াজিব। আর যদি সে ক্ষমতা না থাকে তাহলে একাধারে দুইমাস রোযা রাখবে। এভাবে তাওবা পরিপূর্ণ হবে।
যিহারের কাফফারাঃ নিজের স্ত্রীকে নিজের জন্য চিরস্থায়ীভোবে হারাম কোন নারীর কোন সম্মানিত অঙ্গের সঙ্গে তুলনা করাকে ‘যিহার’ বলে। এরুপ করলে ঐ স্ত্রী তার জন্য কাফফারা দেওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সময়ের জন্য হারাম হয়ে যায়। যিহারের কাফফারা হলো-একটা গোলাম আযাদ করবে। সে ক্ষমতা না থাকলে একাধারে দুইমাস রোযা রাখবে। সে ক্ষমতাও না থাকলে ষাটজন মিসকিনকে দু’বেলা করে পেটভরে খাবার খাওয়াবে। তাহলে ঐ স্ত্রী তার জন্য যথারীতি হালাল হয়ে যাবে।
রমাযানের কাফফারাঃ বিনা ওযরে স্বেচ্ছায় কোন রোযা ভাঙ্গলে রোযার কাযা ছাড়া কাফফারাও দিতে হবে। এ কাফফারা ও তার ক্রম ঠিক যিহারের কাফফারার মত।
বিঃদ্রঃ- কাফফারার রোযা একাধারে রাখা শর্ত। ওযরবশতঃ বা বিনা ওযরে মাঝখানে যদি একটি রোযাও ছুটে যায় তাহলে আবার নতুন করে রোযা আরম্ভ করতে হবে। তবে মহিলাদের জন্য হায়েয আসা একটি গ্রহণযোগ্য ওযর। তবে শর্ত হলো, পাক হওয়ার সাথে সাথে অবিলম্বে রোযা আরম্ভ করতে হবে। পাক হওয়ার পর যদি একদিনও গাফলতী করে তাহলে আবার নতুন করে রোযা আরম্ভ করতে হবে। নেফাস গ্রহণযোগ্য ওযর নয়। অর্থাৎ, নেফাস থেকে মুক্ত হওয়ার পর আবার নতুন করে রোযা আরম্ভ করতে হবে।
শরীর ঢাকা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও কিয়ামত দিবসের উপর ঈমান রাখে, সে যেন বিবস্ত্র হয়ে বাথরুমে প্রবেশ না করে।’ (তিরমিযী)
‘মুয়াবিয়া বিন হাইদা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের দেহের গুপ্তাঙ্গ কখন ঢেকে রাখবো এবং কখন এমনিই রাখবো? তিনি বললেন, নিজের স্ত্রী ও দাসী ছাড়া সবার থেকে নিজের গুপ্তাঙ্গকে ঢেকে রাখবে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন-কখনো এক ব্যক্তি আরেক ব্যক্তির নিকট থাকে? (অর্থাৎ, এক জায়গায় থাকার ফলে সবসসময় সতরের হেফাযত করা মুশকিল) তিনি বললেন-তোমার দ্বারা যদি সম্ভব হয় যে, কেউ তোমার সতর না দেখুক তাহলে এমনটিই করবে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন-কখনো মানুষ একাকী থাকে (তখন কি হুকুম)? তিনি বললেন- তখন আল্লাহকে লজ্জা করা উচিত।’ (তিরমিযী)
পর্দার অতি জরুরী কিছু বিধান
বিবস্ত্র হয়ে বাথরুমে যেতে নিষেধ করার কারণ হলো, সেখানে একাধিক মানুষ একত্রে গোসল করে। তাই তাদের সঙ্গে পর্দা ওয়াজিব। আর দাসীর সঙ্গে পর্দা না করার যে অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তার দ্বারা ঐ সমস্ত দাসীকে বুঝানো হয়নি, যেগুলো ভারতের অনেক ধনীর ঘরে পাওয়া যায়। কারণ, শরীয়তের বিধান মত তারা স্বাধীন। তাদের থেকে জোরপূর্বক খেদমত নেওয়াও জায়েয নেই এবং তাদের সঙ্গে নির্জনে একত্রিত হওয়া ও সহবাস করারও অনুমতি নেই। এরা সম্পূর্ণরুপে স্বাধীন পরনারীর মত। তাদের সঙ্গে চাকরদের মত আচরণ করতে হবে। তাদের সন্ত্তষ্টির ভিত্তিতে তাদের থেকে খেদমত নিতে হবে। (চাই বেতন দিয়ে সন্ত্তষ্ট করা হোক, বা খাবার দিয়ে, বা কাপড় দিয়ে।) যার সঙ্গে ইচ্ছা তারা বিবাহ বসতে পারে। যেখানে ইচ্ছা, যখন ইচ্ছা চলে যেতে পারে। তাদের উপর জোর খাটানোর কারো অধিকার নেই।
উপরোক্ত হাদীস দ্বারা আরো জানা গেলো যে, নির্জনে ও বিনা প্রয়োজনে উলঙ্গ হওয়া জায়েয নেই। (চাই পুরো শরীর হোক বা শরীরের এমন কিছু অংশ হোক, যা মানুষের সামনে ঢেকে রাখা ওয়াজিব।) আল্লাহ তাআলা এবং ফেরেশতাদেরকে লজ্জা করা উচিত। ফিকহের কিতাবের মধ্যে শরীর ঢাকার মাসআলাসমূহ বিস্তারিতভাবে লেখা আছে। এখানে এতটুকু পরিমাণ বোঝা জরুরী যে, পুরুষের জন্য নাভী থেকে নিয়ে হাঁটু পর্যন্ত শরীর ঢাকা জরুরী, আর নারীদের জন্য মাথা থেকে নিয়ে পা পর্যন্ত। হাঁ, যাকে কোন প্রয়োজনে পরপুরুষের সম্মুখে আসতে হয় তার জন্য চেহারা, দুই হাত কব্জি পর্যন্ত এবং দুই পা গিরার নীচ পর্যন্ত খোলা রাখা জায়িয আছে। এ অবস্থায় যদি কেউ তাকে কুদৃষ্টিতে দেখে তাহলে যে দেখবে সে গুনাহগার হবে, এ মহিলার কোন দোষ হবে না। তবে এ ছাড়া সম্পূর্ণ শরীর মোটা কাপড় দ্বারা ঢাকা উচিত। আর এই কাপড়ও চাকচিক্যময় না হয়ে সাদামাটা হওয়া ভালো। সুগন্ধি লাগিয়ে পরপুরুষের সামনে আসা উচিত না। যতদূর সম্ভব অলংকারাদি ঢেকে রাখবে। পরপুরুষের সঙ্গে বেশী কথা বলবে না। বিশেষ করে খোলামেলাভাবে ও রসাত্মকভাবে কথা বলবে না।
সারকথা হলো, প্রয়োজনের কারণে যেটুকু জায়েয তা প্রয়োজন পরিমাণের অতিরিক্ত করা নিষেধ।
হে পুরুষ ও নারীগণ! এসব বিষয়ে খুব সতর্ক থাকো। দেখো! আল্লাহ ও রাসূল তোমাদের প্রতি অত্যন্ত করুণাময়। যেসব জিনিস থেকে তারা নিষেধ করেছেন, সেগুলো মানার দ্বারা তোমাদেরই পুরোপুরি লাভ। এ যুগে না শরীরের পর্দা রয়েছে, না আওয়াজের। যার ফলে দেখো! নানা প্রকার সমস্যা দেখা দিতেছে। আল্লাহ তাআলা তাওফীক দিন।
কুরবানী
হযরত যায়েদ বিন আরকাম (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে-
‘সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন- হে আল্লাহর রাসূল! এই কুরবানী কী জিনিস? তিনি বললেন-তোমাদের পিতা ইবরাহীম (আঃ) এর সুন্নাত। তারা জিজ্ঞাসা করলেন- আমরা এতে কি পাই? তিনি বললেন-প্রত্যেকটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকী। তারা জিজ্ঞাসা করলেন-হে আল্লাহর রাসূল! লোমওয়ালা পশুর মধ্যে কি পাই? তিনি বললেন-তাতেও প্রত্যেক লোমের বিনিময়ে একটি করে নেকী হয়।’ (আহমাদ, ইবনে মাজা)
কুরবানীর চামড়ার অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে মাদরাসা পরিচালকদের ভ্রান্তি
কুরবানীর ফযীলত সম্পর্কে আরো অনেক হাদীস বর্ণিত আছে। কুরবানীর গোশত ও চামড়া মালিক তার ইচ্ছামত নিজের কাজেও লাগাতে পারে, কাউকে হাদিয়াও দিতে পারে, বা দানও করতে পারে। কিন্ত্ত বিক্রি করে তার অর্থ নিজের কাজে লাগানো জায়েয নেই। যদি কুরবানীর চামড়া বিক্রি করে তাহলে যাকাতের হকদাররা এর হকদার হবে। মালিকের প্রতিনিধি ও উকিল হয়ে যে ব্যক্তি কাজ করবে তারও এ নিয়ম মেনে চলা উচিত।
অধিকাংশ মাদরাসা পরিচালক কুরবানীর চামড়ার টাকা যেখানে মাদরাসার প্রয়োজন হয়, সেখানে ব্যয় করে। এটি অসতর্ক কাজ। শুধুমাত্র যাকাত ব্যয়ের ক্ষেত্রসমূহ তা ব্যয় করা উচিত।
মৃত ব্যক্তির গোসল, কাফন-দাফন ও জানাযার নামায
হযরত জাবের (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘তোমাদের কেউ তার ভাইয়ের কাফন দিলে সে যেন ভালো কাফন দেয়।’ (মুসলিম)
হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘যে ব্যক্তি সওয়াবের উদ্দেশ্যে এবং ঈমানের কারণে কোন মুসলমানের জানাযার সঙ্গে যায় এবং তার সঙ্গে থেকে তার নামায পড়ে এবং দাফনের কাজ শেষ করে সে ব্যক্তি দুই ‘কীরাত’ সওয়াব নিয়ে ফেরে। একেকটি কীরাত উহুদ পাহাড়ের সমান। আর যে ব্যক্তি জানাযা নামায পড়ে দাফনের পূর্বে চলে আসে, সে এক ‘কীরাত’ সওয়াব পাবে।’ (বুখারী, মুসলিম)
ফায়দাঃ অধিকাংশ মানুষ জানাযার নামাযে অংশ নিতে ও তার সঙ্গে কবরস্থানে যেতে অলসতা করে। ফলে অনেক বড় সওয়াব থেকে তারা বঞ্চিত হয়। এই অলসতার ফলে এমন পরিণতিও হয় যে, কোন কোন জানাযার সঙ্গে অতি কষ্টে চারজন মানুষ পাওয়া যায়। কবরস্থান দূরে হলে লাশ সেখানে নেওয়া বড় বিপদ হয়ে যায়।
বন্ধুগণ! এটি সমস্ত মুসলমানের কর্তব্য। এতে ত্রুটি করলে কোন এক ব্যক্তি গুনাহগার হবে না। সবাইকে জিজ্ঞাসা করা হবে।
ফায়দাঃ জানাযার নামাযের যে সমস্ত দু’আ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে প্রমাণিত হয় যে, আমি সেগুলো এখানে উদ্ধৃত করছি। জানাযার নামাযে এগুলো পড়া সুন্নাতের অনুসরণ, মাইয়্যেতের উপকার এবং মুসল্লির অধিক সওয়াবের কারণ হবে।
Leave a Reply