উৎস:
ইসলাহী নেসাব: হুকুকুল ইসলাম
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (র:)

আল্লাহ তাআলার হকসমূহ
বান্দার দায়িত্বে সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রধান হক হলো মহান আল্লাহর। যিনি অস্তিত্ব দান ও অস্তিত্ব ধারণের জন্য নানারকমের নেয়ামত বান্দাকে দান করেছেন। গোমরাহী থেকে বের করে হিদায়াতের দিকে এনেছেন। সঠিক হিদায়াত অনুপাতে আমল করার বিনিময়ে নানাপ্রকারের নেয়ামত দানের আশা দিয়েছেন। বান্দার দায়িত্বে আল্লাহর হকসমূহ এই-
১. কুরআন ও হাদীসের বর্ণনামতে আল্লাহ তাআলার জাত ও সিফাত তথা সত্তা ও গুণাবলী সম্পর্কে আকীদা পোষণ করবে।
২. আকীদা, আমল, মুয়ামালা-লেনদেন ও আখলাক-নীতি-চরিত্রের ক্ষেত্রে তার পছন্দনীয় বিষয়সমূহ গ্রহণ করবে এবং তার অপছন্দীয় বিষয়সমূহ পরিত্যাগ করবে।
৩. আল্লাহ তাআলার সন্ত্তষ্টি ও ভালোবাসাকে অন্য সবার সন্ত্তষ্টি ও ভালোবাসার উপর প্রাধান্য দিবে।
৪. যার সাথে ভালোবাসা বা বিদ্বেষ রাখবে এবং যার প্রতি দয়া করবে বা দয়া করবে না, সব আল্লাহর ওয়াস্তে করবে।

নবী ও ফেরেশতাগণের হকসমূহ
মহান আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলী এবং তার পছন্দ ও অপছন্দের পরিচয় নবীগণের মধ্যস্থতায় আমরা লাভ করেছি। তাদের নিকট ফেরেশতাগণ ওহী এনেছেন। একইভাবে দুনিয়া ও আখিরাতের উপকারী ও অপকারী বহু বিষয়ের জ্ঞান আমরা নবীগণের মাধ্যমে লাভ করেছি এবং অনেক ফেরেশতা আমাদের উপকারী কাজসমূহে নিয়োজিত রয়েছেন এবং আল্লাহর হুকুমে তারা সে সমস্ত কাজ সম্পাদন করছেন, তাই নবী ও ফেরেশতাগণের হক আল্লাহর হকের অন্তর্ভুক্ত। বিশেষতঃ মুহাম্মাদুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দয়া আমাদের উপর সর্বাধিক। তাই তার হকও সর্বাধিক। তার মধ্য থেকে কিছু হক এই-

মহানবী (সাঃ)এর কয়েকটি হক-
১. তার রিসালাতের (রাসূল হওয়ার) উপর বিশ্বাস রাখবে।
২. সমস্ত বিধানের ক্ষেত্রে তার আনুগত্য করবে।
৩. তার আযমত ও মুহাব্বত তথা শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা অন্তরে পোষণ করবে।
৪. তার উপর দরুদ পাঠ করবে।

ফেরেশতাদের হকসমূহ
১. তাদের অস্তিত্বের বিশ্বাস রাখবে।
২. তাদেরকে নিষ্পাপ মনে করবে।
৩. তাদের নাম এলে ‘আলাইহিস সালাম’ বলবে।
৪. দুর্গন্ধময় জিনিস খেয়ে মসজিদে যাওয়া (যেমন, কাঁচা রসুন, পেঁয়াজ, মুলা, পান, তামাক ইত্যাদি একইভাবে মসজিদে কেরোসিন তেল জ্বালানো ও ম্যাচ জ্বালানোর দ্বারা গন্ধ ছড়িয়ে থাকে, এগুলো থেকেও বিরত থাকবে-মুফতি শফী’) মসজিদে বায়ু নির্গত করার দ্বারা ফেরেশতাদের কষ্ট হয়ে থাকে, এ থেকে বিরত থাকবে। আরো যে সমস্ত জিনিস দ্বারা ফেরেশতাদের কষ্ট ও ঘৃণা হয়, সেগুলো থেকে বিরত থাকাকে জরুরী মনে করবে। যেমনঃ ছবি রাখা, শরীয়তসম্মত প্রয়োজন ছাড়া কুকুর পালা, মিথ্যা বলা, অলসতাবশতঃ ফরয গোসল না করে নাপাক অবস্থায় থাকা-যার ফলে নামাযও নষ্ট হয়, শরীয়তসম্মত বা প্রাকৃতিক প্রয়োজন ছাড়া উলঙ্গ হওয়া, যদিও নির্জনে হোক না কেন।

সাহাবা ও নবী পরিবারের হকসমূহ
সাহাবায়ে কেরাম ও নবী পরিবারের লোকদের যেহেতু হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে দ্বীন ও দুনিয়া উভয় দিকের সম্পর্কে রয়েছে, তাই তার হকের মধ্যে এদের হকসমূহও অন্তর্ভুক্ত। সেগুলো এই-
১. তাদের আনুগত্য করবে।
২. তাদের প্রতি ভালোবাসা রাখবে।
৩. তাদের ন্যায়-নিষ্ঠাবান ও পরহেযগার হওয়ার বিশ্বাস রাখবে।
৪. তাদেরকে যারা ভালোবাসে তাদেরকে ভালোবাসবে এবং তাদের প্রতি যারা বিদ্বেষ পোষণ করে তাদের সাথে বিদ্বেষ রাখবে।

আলেম ও পীর-মাশায়েখের হকসমূহ
যাহের ও বাতেন তথা শরীয়ত ও তরীকতের আলেমগণ যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উত্তরাধিকারী ও স্থলাভিষিক্ত, তাই তাদের হকসমূহও হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হকের অন্তর্ভুক্ত। তাদের হকসমূহ এই-
১. মুজতাহিদ, ফকীহ, মুহাদ্দিস, আলেম, উস্তাদ, তরীকতের পীর-মাশায়েখ ও দ্বীনি কিতাবসমূহের লেখকদের জন্য কল্যাণের দু’আ করতে থাকবে।
২. শরীয়তসম্মত নিয়মে তাদের অনুসরণ করবে।
৩. তাদের মধ্যে যারা জীবিত আছেন, তাদের সঙ্গে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার আচরণ করবে। তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে না এবং বিরোধিতা করবে না।
৪. সামর্থ্য অনুযায়ী এবং প্রয়োজন অনুপাতে তাদের আর্থিক সহযোগিতা করবে।