উৎস:
ইসলাহী নেসাব: হুকুকুল ইসলাম
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (র:)

উস্তাদ ও পীরের হকসমূহ
উস্তাদ ও পীর যেহেতু আধ্যাত্মিক তা’লীম ও তারবিয়াত তথা শিক্ষা ও পরিচর্যার দিক থেকে পিতৃতুল্য, তাই তাদের সন্তান ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে তেমনই আচরণ করতে হবে, যেমন নিজের মা-বাপ ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে করা হয়।
অর্থঃ ‘আমি তোমাদের নিকট এর কোন বিনিময় চাচ্ছি না নিকট আত্মীয়দের সাথে সদাচরণ ব্যতীত।’ (সূরা শুরা-২৩)
এ আয়াতের একটি তাফসীর এ-ও করা হয়েছে (যা উপরে আলোচিত হয়েছে)। এ থেকে ‘সায়্যিদ’ বংশের লোকদের সম্মানের গুরুত্ব ও (তাদের সাথে) পদ্ধতিও বুঝে নিতে হবে। ছাত্র ও মুরীদ যেহেতু সন্তানতুল্য, তাই নিজের উস্তাদের ছাত্র বা নিজের পীরের যে সমস্ত মুরীদ রয়েছে তাদের মর্যাদাও নিজের পিতার সন্তানতুল্য। তাই তাদের হক ভাইয়ের হকের ন্যায় মনে করবে।

পবিত্র কুরআনে বর্ণিত (পাশের সাথী)-এর অন্তর্ভুক্ত এরা-ও।

ছাত্র ও মুরীদের হকসমূহ
ছাত্র ও মুরীদ যেহেতু সন্তানতুল্য, তাই মায়া, মমতা ও হৃদ্যতার ক্ষেত্রে তাদের হক সন্তানের হকের তুল্য।

স্বামী-স্ত্রীর হকসমূহ
স্বামীর দায়িত্বে স্ত্রীর হকসমূহ এই-
১. নিজের সামর্থ্য অনুপাতে তার ভরণপোষণে ত্রুটি করবে না।
২. তাকে দ্বীনি মাসআলাসমূহ শিক্ষা দিবে এবং নেক আমলের তাকিদ দিতে থাকবে।
৩. তার মাহরাম আত্মীয়ের সঙ্গে মাঝে মাঝে দেখা-সাক্ষাত করতে দিবে। তার নির্বুদ্ধিতামূলক আচরণে বেশীর ভাগ ধৈর্যধারণ করবে ও চুপ থাকবে। কখনও শাসন করার প্রয়োজন হলে মধ্যপন্থায় করবে।
স্ত্রীর দায়িত্বে স্বামীর হকসমূহ এই-
১. পরিপূর্ণরুপে তার আনুগত্য, খেদমত, আদব, মনোরঞ্জন ও মনোস্ত্তষ্টি রক্ষা করবে। তবে শরীয়ত পরিপন্থী বিষয়ে আপত্তি করবে।
২. তার সামর্থ্যের অধিক তার কাছে কিছু চাবে না।
৩. তার অনুমতি ছাড়া তার সম্পদ ব্যয় করবে না।
৪. তার আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে কঠোর ব্যবহার করবে না, যার ফলে স্বামীর মনে কষ্ট হয়। বিশেষ করে স্বামীর মা-বাপকে নিজের গুরুজন মনে করে আদব ও সম্মানের আচরণ করবে।

শাসক ও শাসিতের হকসমূহ
শাসক বলতে বাদশাহ, তার প্রতিনিধি এবং মনিব ও অন্যান্যরা উদ্দেশ্য, আর শাসিতের মধ্যে প্রজা, চাকর ও অন্যান্যরা অন্তর্ভুক্ত। তেমনি প্রভু ও ভৃত্যও এর অন্তর্ভুক্ত। শাসকের দায়িত্বে এ সমস্ত হক রয়েছে-
১. শাসিতের উপর কঠিন নির্দেশ প্রয়োগ করবে না।
২. শাসিতদের পরস্পরে ঝগড়া হলে ন্যায়বিচার করবে, কারো দিকে অন্যায়ভাবে পক্ষপাতিত্ব করবে না।
৩. সর্বতোভাবে তাদের রক্ষনাবেক্ষণ ও আরামের ব্যবস্থা করার ফিকিরে থাকবে। ন্যায়বিচারপ্রার্থীদের নিজের পর্যন্ত পৌঁছার সহজ ব্যবস্থা রাখবে।
৪. তাদের পক্ষ থেকে কোন ত্রুটি বা ভুল-ভ্রান্তি হলে বেশী বেশী ক্ষমা করবে।
শাসিতের দায়িত্বে হকসমূহ এই-
১. শাসকের কল্যাণ কামনা ও আনুগত্য করবে। তবে শরীয়তবিরোধী কাজে আনুগত্য নেই।
২. শাসকের পক্ষ থেকে মনবিরোধী কোন আচরণ দেখা দিলে ধৈর্যধারণ করবে। অভিযোগ ও বদদু’আ করবে না। হাঁ, তার মন-মেজাজ নরম হওয়ার জন্য দু’আ করবে। নিজে আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনের প্রতি যত্নবান হবে। যাতে করে আল্লাহ তাআলা শাসকশ্রেণীর মন নরম করে দেন। একটি হাদীসে এ বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে।
৩. শাসকের পক্ষ থেকে কোন আরাম ও সুবিধা পেলে তার কাছে তার দয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করবে।
৪. কৃপ্রবৃত্তির প্ররোচনায় তার অবাধ্য হবে না।
যেসব দেশে দাস পাওয়া যায়, তাদের জন্য বিধান হলো-দাস-দাসীর ভরণপোষণও ওয়াজিব। দাস-দাসীর জন্য মনিবের খেদমত ছেড়ে ভেগে যাওয়া হারাম। দাস-দাসী ছাড়া অন্যান্য শাসিত ও অধীনস্ত স্বাধীন। তারা অধীন ও শাসনভুক্ত থাকা পর্যন্ত হকের অধিকারী হবে। এর আওতা থেকে বের হয়ে গেলে শাসক ও শাসিত প্রত্যেকে স্বাধীন থাকবে।

শ্বশুরালয়ের আত্মীয়ের হকসমূহ
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বংশের নেয়ামতের সাথে শ্বশুরালয়ের সম্পর্ককেও উল্লেখ করেছেন। এতে জানা গেলো যে, শ্বশুর-শাশুড়ী, শালা-ভগ্নিপতি, জামাই-বউ এবং স্ত্রীর আগের ঘরের সন্তানেরও মূল্যায়ন রয়েছে। তাই এদের সাথেও বিশেষভাবে দয়া ও সদাচরণ করবে