পাক-নাপাক ও পবিত্রতা

উৎস:
ইসলাহী নেসাব: আগলাতুল আওয়াম
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (র:)
পাক-নাপাক
মাসআলা-১: কিছু কিছু মহিলার মধ্যে প্রসিদ্ধ আছে যে, কাক বা অন্য কোন পাখী কলসের মধ্যে ঠোঁট চুবালে ঐ কলসের মধ্যে এ পরিমাণ পানি ভরবে যে, পানি গড়িয়ে বাইরে পড়ে যায়, তাহলে তা পাক হয়ে যাবে। এ কথার কোন ভিত্তি নাই। যে জীবের এঁটে (উচ্ছিষ্ট) মাকরূহ বা নাপাক, সেই জীব মুখ দিলে পানি গড়িয়ে ফেললেও একই রকম মাকরূহ বা নাপাক থেকে যায়। আর যদি ঐ জীবের এঁটে(উচ্ছিষ্ট) পাক হয় তাহলে এরুপ করার কোন প্রয়োজন নাই।
মাসআলা-২: কোন কোন সাধারণ মানুষ বলে থাকে যে, পানির মধ্যে নখ ডুবে গেলে তা ব্যবহার করা মাকরূহ। এটি নিছক ভুল কথা। তবে নখের মধ্যে ময়লা জমা হয়ে থাকলে এমন করা পরিচ্ছন্নতার পরিপন্থী।
মাসআলা-৩: সাধারণ লোকদের মধ্যে প্রসিদ্ধ আছে যে, প্রদীপের তেল নাপাক, কিন্তু এটা একেবারেই ভিত্তিহীন কথা। হয়তো সতর্কতামূলকভাবে কেউ এ কথা এ কারণে বলেছে যে, মানুষ জায়গায় অজায়গায় প্রদীপ রেখে দেয়। ফলে এমনও ঘটে থাকে যে, কুকুর বা অন্য কোন নাপাক প্রাণী তা চাটে। তাই কেউ হয়তো ঐ তেল ব্যবহারে সতর্কতার পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ এটাকে নিশ্চিত নাপাকই সাব্যস্ত করে নিয়েছে। কতক সাধারণ মানুষ থেকে এর এ কারণও শোনা গেছে যে, এ তেল যেহেতু জ্বলে, তাই নাপাক হয়ে যায়। অথচ নাপাক হওয়ার মধ্যে জ্বলার কোন দখল নাই। মোটকথা, দাবী ও দলীল দুইটাই ভিত্তিহীন।
মাসআলা-৪: হুক্কার পানিকেও সাধারণ মানুষ নাপাক মনে করে থাকে। যদিও পরিচ্ছন্নতার খাতিরে তা থেকে বেঁচে থাকা জরুরী, কিন্তু এতে নাপাক প্রমাণিত হয় না।
মাসআলা-৫: কতক সাধারণ মানুষ মনে করে যে, কাপড়, পাত্র বা অন্য কোন জিনিসের সাথে যদি কুকুরের ছোয়া লাগে তাহলে ঐ জিনিস নাপাক হয়ে যায়। এটি ভুল কথা। তবে লালা লাগলে নাপাক হয়ে যায়।
ওযু-গোসল
মাসআলা-১: প্রসিদ্ধ আছে যে, কারো খোলা সতরের উপর নজর পড়লে ওযু ভেঙ্গে যায়। এটি নিছক ভুল কথা।
মাসআলা-২: প্রসিদ্ধ আছে যে, শূকর দেখলে ওযু ভেঙ্গে যায়। এ কথার কোন ভিত্তি নেই।
মাসআলা-৩: প্রসিদ্ধ আছে যে, পেশাব-পায়খানায় ব্যবহৃত পানির(পাত্রে) বাঁচা অংশ (অবশিষ্ট) দিয়ে ওযু করা উচিত নয়। এটি নিছক ভুল কথা।
মাসআলা-৪: কেউ কেউ বলে যে, যে ওযু দ্বারা জানাযার নামায পড়েছে, সে ওযু দ্বারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের কোন নামায পড়বে না। এটিও নিছক ভুল কথা।
মাসআলা-৫: কিছু কিছু মহিলা মনে করে যে, বাইরে বের হলে ওযু নষ্ট হয়ে যায়। এটি একান্তই ভুল কথা, তবে বিনা প্রয়োজনে বাইরে বের হওয়া অন্যায়।
তায়াম্মুম ও মাসাহ
মাসআলা-১: কিছু কিছু মানুষ কাপড় বা বালিশের উপর বেশী ধুলা না থাকলেও তায়াম্মুম করে। এটি একেবারেই ঠিক নয়।
হায়েয ও নিফাস
মাসআলা-১: প্রসিদ্ধ আছে যে, প্রসূতি যতক্ষণ গোসল করবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত তার হাতের কিছু খাওয়া যাবে না। এটিও ভুল কথা। হায়েয ও নিফাস অবস্থায় হাত নাপাক থাকে না।
মাসআলা-২: কতক সাধারণ মানুষ বলে যে, চল্লিশ দিন পর্যন্ত প্রসবাগারে স্বামীর যাওয়া উচিত নয়। এ কথার কোন ভিত্তি নেই।
মাসআলা-৩: সাধারণ লোকেরা বলে যে, যে মহিলা হায়েয অবস্থায় বা প্রসূতি অবস্থায় মারা যাবে তাকে দুইবার গোসল দিতে হবে। এটি নিছক ভিত্তিহীন কথা।
মাসআলা-৪: সাধারণ মহিলারা প্রসবাগারে চল্লিশ দিন পর্যন্ত নামায পড়া জায়েয মনে করে না। যদি তার আগেই পবিত্র হয়ে যায় তবুও না। এটি সম্পূর্ণ দ্বীনের পরিপন্থী কথা। চল্লিশ দিন নিফাসের সর্বোচ্চ মেয়াদ। এর সর্বনিম্ন মেয়াদের কোন সীমা নেই। যখনই পাক হবে সাথে সাথে গোসল করে নামায আরম্ভ করবে। একইভাবে চল্লিশ দিনেও যদি স্রাব বন্ধ না হয়, তাহলে চল্লিশ দিন পর নিজেকে নিজে পাক মনে করে(গোসল করে) নামায আরম্ভ করে দিবে।
Leave a Reply