মনের একাগ্রতা সৃষ্টির বর্ণনা

উৎস:
ইসলাহী নেসাব: কসদুস সাবীল
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (র:)
যিকিরকারী ব্যক্তির এমন সব কাজ ও কথা থেকে দূরে থাকা উচিত, যার দ্বারা মন পেরেশান ও বিক্ষিপ্ত হয়। কারণ, মনের প্রশান্তি ও স্থীরতা অনেক বড় দৌলত। মনের একাগ্রতা নষ্টকারী অনেক বিষয় রয়েছে। তার মধ্যে কিছু এই-
এক. নিজের অসতর্কতার ফলে স্বাস্থ্য খারাপ করা। তাই শারীরিক সুস্থতার খুব হেফাযত করবে। মস্তিষ্ককে সজীব রাখার এবং মনকে শক্তিশালী করার যিকির করবে। এজন্য ঔষধ এবং খাদ্য উভয়টি ব্যবহার করবে। খাদ্য এত কম গ্রহণ করবে না যে, শরীর দুর্বল ও শুষ্ক হয়ে যায়। আবার এত বেশীও খাবে না যে, বদ হজম হয়। কারণ, এতেও স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যায়।
বেশী স্ত্রী সহবাস করবে না। এতেও দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসমূহ বিশেষত মন ও মস্তিষ্ক দুর্বল হয়ে যায়। তাই তীব্র চাহিদা সৃষ্টি না হলে স্ত্রী সহবাস করবে না।
সত্যিকার অর্থে ক্ষুধা না লাগলে আহার করবে না। আর কিছুটা চাহিদা অবশিষ্ট থাকতে আহার করা বন্ধ করে দিবে।
ঘুমানোর ক্ষেত্রে, মধ্যম পর্যায়ে ঘুমাবে। এত বেশী ঘুমাবে না যে, অলস হয়ে পড়ে। আবার এতো কমও ঘুমাবে না যে, শুষ্ক হয়ে যায়।
দুই. বিনা প্রয়োজনে উন্নত খাবারের চিন্তায় লিপ্ত হওয়াও মনকে পেরেশান করে।
তিন. মনকে পেরেশান করার তৃতীয় কারণ সাজসজ্জায় লিপ্ত থাকা। এ ব্যাপারে কবি বলেছেন-
অর্থঃ এত সাজসজ্জা আর পেট পালার চিন্তার পরিণতিতে দ্বীন বিদায় নিবে। অর্থাৎ, পরিপূর্ণ দ্বীনদারী থাকবে না।
তবে একেবারে অপরিষ্কার ও অপরিচ্ছন্ন থাকাও খারাপ। কারণ, এর ফলেও দিল ময়লা হয়। সাদামাটাভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবে। তবে চিন্তা-ভাবনা ছাড়া যদি ভালো খাবার ও ভালো পোশাক পাওয়া যায় এবং এর ফলে নফসের মধ্যে কোন মন্দ চরিত্র সৃষ্টি হওয়ার ভয় না থাকে তাহলে এটিকে আল্লাহর নেয়ামত মনে করে ব্যবহার করবে এবং শোকর আদায় করবে।
চার. চতুর্থ বিষয় সম্পদের লোভ এবং সম্পদ সঞ্চয়ের চিন্তায় পড়া বা নিজের নিকট যে সম্পদ আছে তা অনর্থক খরচ করে শেষ করা। এতদুভয় কারণেই দিল পেরেশান হয়। লোভী মানুষ তো সর্বদা এ চিন্তায়ই লেগে থাকবে, আর অমিতব্যয়ী ব্যক্তি সম্পদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরিণতিতে পেরেশানীতে লিপ্ত হবে, বা অন্যের মালের প্রতি তাকিয়ে থাকবে।
পাঁচ. পঞ্চম বিষয় কারো সাথে বন্ধুত্ব বা শত্রুতায় জড়ানো। বন্ধু তাকে ঘিরে ধরে তার সময় নষ্ট করবে। আর শত্রু তাকে কষ্ট দিয়ে পেরেশানীতে ফেলবে।
এভাবে আরো যে সমস্ত বিষয় পেরেশানীর কারণ হয়, অথচ তা জরুরী নয়, সেগুলো থেকে যতদূর সম্ভব খুব দূরে থাকবে। তবে পেরেশানীর কাজ না করা সত্ত্বেও যদি কোন পেরেশানী দেখা দেয়, বা শরয়ী প্রয়োজনে কাজ করার ফলে পেরেশানী দেখা দেয়- যেমন, কোন সুদখোর ব্যক্তি তাকে কিছু দিলে সে তা নিতে অস্বীকার করলো, ফলে ঐ ব্যক্তি তার শত্রু হয়ে গেলো-তাহলে এ ধরনের পেরেশানীতে তার আধ্যাত্মিকতার কোন ক্ষতি হবে না। এ ধরনের পেরেশানীতে পড়লে অস্থির হবে না। আল্লাহ তাআলার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখবে এবং তার উপর ভরসা রাখবে, তিনি তার সাহায্য করবেন। এমনকি এমতাবস্থায় কষ্টে আক্রান্ত হলেও এর মধ্যে আল্লাহর হিকমত আছে মনে করে তার উপর রাজি থাকবে। এতে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য ও সন্ত্তষ্টি আরো অধিক লাভ হবে।
Leave a Reply