ধার নেওয়ার বর্ণনা

উৎস:
ইসলাহী নেসাব: সাফাইয়ে মুয়ামালাত
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (র:)
ধার প্রদানকারী যদি কোন সময় নির্ধারণ করে ধার দেয়-যেমন বললো যে, এক মাসের জন্যে তোমাকে এটি ধার দিচ্ছি। একথা বললেও মেয়াদ পুরা হওয়ার পূর্বে তার যখন ইচ্ছা ফেরত নিতে পারবে। ধার গ্রহণকারী বাধা দিতে পারবে না।
মাসআলাঃ ধারের বিধানও আমানতের মতোই। অর্থাৎ, পরিপূর্ণ সতর্কতা অবলম্বন করা সত্ত্বেও নষ্ট হয়ে গেলে জরিমানা ওয়াজিব হবে না। আর অসতর্কতার কারণে নষ্ট হলে জরিমাানা ওয়াজিব হবে।
মাসআলাঃ ধার প্রদানকারী ব্যবহারের নির্দিষ্ট কোন পদ্ধতি বা মেয়াদ নির্ধারণ করে দিলে ধার গ্রহণকারীর জন্যে এর বিপরীত করা জায়েয নেই।
মাসআলাঃ কোন ব্যক্তি যদি অন্য কাউকে বাড়ি বানানোর জন্যে খালি জমি ধার দেয় এবং এর জন্যে যদি মেয়াদ নির্ধারণ করা না হয়, তাহলে যে কোন সময় বাড়ি ভেঙ্গে দিয়ে তার জমি খালি করে নিতে পারবে এবং বাড়ির মালিককে ভাঙ্গা বাড়ির দাম দিয়ে দেওয়াও জায়েয আছে।
আর যদি কোন মেয়াদ নির্ধারণ করে দিয়ে থাকে-যেমন, দশ বছরের জন্যে ধার দিয়েছিলো-এখন যদি দশ বছরের মধ্যে জমি খালি করাতে চায়, তাহলে জমির মালিক হওয়ার কারণে তার এ অধিকার থাকবে এবং ধারগ্রহীতার কর্তব্য হবে জমি খালি করে দেওয়া। কিন্তু যেহেতু সে একে ধোঁকা দিয়ে এর ক্ষতি করেছে তাই সে গুনাহগার হবে এবং ক্ষতির পরিমাণ টাকা জমির মালিক বাড়ির মালিককে দিতে হবে। ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের পদ্ধতি এই যে, অক্ষত বাড়ির মূল্য দেখবে, এরপর ভাঙ্গা বাড়ির মাল-সামানার মূল্য দেখবে। তারপর এ দু’য়ের মধ্যে যে ব্যবধান হয়, সে পরিমাণ টাকা জমির মালিক থেকে নিয়ে বাড়ির মালিককে দেওয়া হবে। যেমন, অক্ষত বাড়ির দাম একশ’ টাকা এবং ভাঙ্গা বাড়ির সামানার দান পঞ্চাশ টাকা। তাহলে জমির মালিক থেকে পঞ্চাশ টাকা নিয়ে তা বাড়ির মালিককে দিবে এবং এ সমস্ত সামানার মালিকও বাড়িওয়ালাই হবে।
জমির মালিক যদি বাড়ি ভাঙ্গানো এবং ভিত্তি উৎপানকে জমির জন্যে ক্ষতিকর মনে করে এবং বাড়ির দাম দিয়ে বাড়ি সহ জমি নিয়ে নিতে চায়, তাহলে তার সে অধিকারও থাকবে। বাড়ির মালিকের জন্যে অহেতুক বাড়ি উচ্ছেদ করে তার জমিকে ক্ষতিগ্রস্ত করা জায়েয হবে না।
বাগান বা একটি গাছ লাগানোর জন্যে যদি জমি ধার দেয় সে ক্ষেত্রেও এ সমস্ত বিধানই প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ, ফসল কাটার পূর্বেই যদি তাগাদা দিতে থাকে তাহলে তার বিধান এই যে, ফসল কাটার পূর্ব পর্যন্ত খালি করানোর অধিকার নেই। তবে যেদিন থেকে সে জমি ফিরিয়ে নেওয়ার তাগাদা আরম্ভ করেছে, সেদিন থেকে জমি খালি করে দেওয়া পর্যন্ত সময়ের ভাড়া প্রচলিত পরিমাণে ফসলের মালিক থেকে নিয়ে জমির মালিককে দিবে। যেন উভয়ে ক্ষতি থেকে রক্ষা পায়।
Leave a Reply