উৎস:
ইসলাহী নেসাব: সাফাইয়ে মুয়ামালাত
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (র:)

’শিরকাত’ বা অংশীদারিত্ব দুই প্রকারের হয়ে থাকে। একটিকে বলে ‘শিরকাতে ইমলাক’। যেমন, এক ব্যক্তি মারা গেলো এবং তার পরিত্যাক্ত সম্পত্তিতে কয়েকজন শরীক হলো। বা দুই জনে টাকা দিয়ে একটি জিনিস খরিদ করলো। বা এক ব্যক্তি দুই ব্যক্তিকে যৌথভাবে দান করলো। এ ধরনের অংশীদারিত্বের হুকুম হলো, এক অংশীদার অন্য অংশীদারের অনুমতি ছাড়া ঐ জিনিসের মধ্যে কোনরুপ হস্তক্ষেপ করা জায়েয নেই।

অংশীদারিত্বের দ্বিতীয় প্রকারকে বলে ‘শিরকাতে উকূদ’। অর্থাৎ, দুই ব্যক্তি পরস্পরে চুক্তিবদ্ধ হলো যে, আমরা দুইজন যৌথভাবে ব্যবসা করবো। এ প্রকারের অংশীদাদরিত্বের বিধান নিম্নরুপ-

মাসআলাঃ এ প্রকারের অংশীদারিত্বকে ‘শিরকাতে ইনান’ও বলে। অর্থাৎ, দুই ব্যক্তি অল্প অল্প টাকা জমা করে একমত হলো যে, এ টাকা দিয়ে কাপড়, শস্য বা অন্য কিছু ক্রয় করে ব্যবসা করবো। এক্ষেত্রে মূলধন মুদ্রা জাতীয় হওয়া শর্ত। তা টাকা হোক, স্বর্ণমুদ্রা হোক বা পয়সা হোক। তাই দুই ব্যক্তি যদি মুদ্রা ছাড়া অন্য কোন জিনিস একত্রিত করে যৌথ ব্যবসা করতে চায় তাহলে এ অংশীদারিত্ব সঠিক হবে না।

মাসআলাঃ ‘শিরকাতে ইনানে’র মধ্যে একজনের মাল বেশী হওয়া এবং আরেক জনের কম হওয়া এবং লাভের অংশীদারিত্ব পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে হওয়া জায়েয আছে। অর্থাৎ, যদি এরুপ শর্ত করে যে, মালের পরিমাণ কমবেশি হলেও লাভ সমান সমান ভাগ হবে বা মালের পরিমাণ সমান সমান হলেও লাভ তৃতীয়াংশ হিসাবে ভাগ হবে, তাও জায়েয আছে।

মাসআলাঃ ‘শিরকাতে ইনানে’র মধ্যে প্রত্যেক অংশীদারের শরীকানাভুক্ত সম্পদের মধ্যে ব্যবসা সংক্রান্ত সবধরনের হস্তক্ষেপ করা জায়েয আছে। তবে চুক্তি বিরোধী কোন হস্তক্ষেপ না হওয়া শর্ত। এক্ষেত্রে এক শরীকের ঋণ অন্য শরীকের কাছে চাওয়া যাবে না।

মাসআলাঃ ‘শিরকাতে ইনান, স্থির হওয়ার পর কোন কিছু ক্রয় করার পূর্বেই যদি যৌথ সম্পদ পুরোটা বা একজনেরটা ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে এ ‘শিরকাত’ বাতিল হয়ে যাবে। আর যদি একজনও কোন কিছু ক্রয় করে থাকে আর অন্যের সম্পদ নষ্ট হয়ে যায় তাহলে ‘শিরকাত’ বাতিল হবে না। খরিদকৃত মাল উভয়ের বলে গণ্য হবে। এবং এ মালের মধ্যে উভয় অংশীদারের যে পরিমাণের অংশ রয়েছে সে হারে অপর শরীক থেকে ক্রয়মুল্য উসুল করা হবে। উদাহরণস্বরুপ একজনের ছিলো দশ টাকা এবং আরেক জনের ছিলো পাঁচ টাকা। দশ টাকার মালিক মাল ক্রয় করেছে এবং পাঁচ টাকার মালিকের টাকা হারিয়ে গেছে। এক্ষেত্রে পাঁচ টাকার মালিক ক্রয়কৃত মালের এক তৃতীয়াংশের অংশীদার। তাই দশ টাকার মালিক তার থেকে দশ টাকার এক তৃতীয়াংশ তিন টাকা পাঁচ আনা চার পয়সা নিয়ে নিবে। এবং আগামীতে এ মাল যৌথ মালিকানা হিসেবে বিক্রি হবে।

মাসআলাঃ ‘শিরকাতে ইনানে’র মধ্যে উভয় ব্যক্তির মাল মিশ্রিত করা জরুরী নয়। শুধু মৌখিক ‘ইজাব-কবুলে’র মাধ্যমেও ’শিরকাত’ সম্পন্ন হবে।

মাসআলাঃ লভ্যাংশ আংশিক হারে নির্ধারণ করতে হবে। অর্থাৎ, অর্ধেক অর্ধেক বা তৃতীয়াংশ হারে। কিন্তু যদি এরুপ নির্ধারণ করে যে, একজন একশ’ টাকা পাবে আর বাকিটা অপরজন পাবে তাহলে জায়েয হবে না।

মাসআলাঃ আরেক প্রকারের অংশীদারিত্ব আছে যাকে ‘শিরকাতে সানায়ি’ এবং ‘শিরকাতে তাকাব্বুল’ বলে। যেমন, দু’জন দর্জি বা রংমিস্ত্রি পরস্পরে চুক্তি করলো যে, আমাদের যার কাছে যে কাজ আসবে আমরা সে কাজ নিয়ে নেবো এবং পারিশ্রমিক যা পাবো তা অর্ধেক অর্ধেক, তৃতীয়াংশ বা চতুর্থাংশ হিসেবে ভাগ করে নেবো-এটাও জায়েয আছে।

মাসআলাঃ কোন এক শরীক কাজ নিলে তা করে দেওয়া উভয়ের উপরই জরুরী হবে। যেমন, এক শরীক সেলাই করার জন্যে একটি কাপড় নিলো তাহলে অর্ডারদাতা এর নিকট থেকেও কাজ বুঝে নিতে পারবে এবং এর শরীকের দ্বারাও সেলাই করিয়ে নিতে পারবে। এমনিভাবে যে অর্ডার গ্রহণ করেছে সেও পারিশ্রমিক চাইতে পারবে এবং তার শরীকও চাইতে পারবে। একইভাবে অর্ডার গ্রহণকারীকে পারিশ্রমিক দেওয়ার দ্বারা যেমন মালিক দায়মুক্ত হয়ে যাবে, তেমনিভাবে তার শরীককে দেওয়ার দ্বারাও দায়মুক্ত হয়ে যাবে।

মাসআলাঃ আরেক প্রকারের অংশীদারিত্ব আছে ‘শিরকাতে উজুহ’। অর্থাৎ, শরীকদ্বয়ের কাছে না মূলধন আছে, না পেশা ও কারবার আছে। শুধুমাত্র পরস্পরে সিদ্ধান্ত নিলো যে, দোকানদারদের থেকে বাকিতে মাল এনে উভয়ে বিক্রি করবো। এ ক্ষেত্রেও উভয় শরীক পরস্পরের উকিল তথা প্রতিনিধি বলে গণ্য হবে এবং যে হারে অংশীদার হবে সে হারে লভ্যাংশের হকদার হবে। অর্থাৎ, ক্রয়কৃত জিনিসে যদি অর্ধেক অর্ধেক হিসেবে অংশীদারিত্ব নির্ধারণ করে তাহলে লভ্যাংশও অর্ধেক অর্ধেক হারে ভাগ করবে, আর যদি ক্রয়কৃত জিনিসে তৃতীয়াংশ হিসেবে অংশীদারিত্ব নির্ধারণ করে তাহলে লভ্যাংশও তৃতীয়াংশ হিসেবে ভাগ করবে।