আমল-ইবাদত

উৎস:
ইসলাহী নেসাব: তা’লীমুদ্দীন
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (র:)
আমল-ইবাদত:
১. মন না চাইলেও উত্তমভভাবে ওযু করো।
২. সবসময় ওযুর সাথে থাকার চেষ্টা করো।
৩. আগের ওযু থাকলেও নতুন ওযু করা উত্তম।
৪. ’মযী’ বের হলে গোসল ওয়াজিব হয় না, লজ্জাস্থান ধুয়ে (ওযু করে) নামায পড়ে নিবে।
৫. সন্দেহের দ্বারা ওযু ভাঙ্গে না। যতক্ষণ পর্যন্ত ওযু ভঙ্গকারী কোন কারণ নিশ্চিতভাবে পাওয়া না যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত ওযু ভাঙ্গবে না।
৬. ঝিমানোর দ্বারা বা নামাযের অবস্থায় ঘুমানোর দ্বারা ওযু নষ্ট হয় না।
৭. পেশাব-পায়খানার সময় কিবলার দিকে মুখ বা পিঠ দিয়ে বসো না।
৮. ডান হাত দিয়ে ইস্তিঞ্জা করো না।
৯. বিনা প্রয়োজনে ঢিলা তিনটির কম নিও না।
১০. অপবিত্র বস্ত্ত, হাড্ডি ও কয়লা দ্বারা ইস্তিঞ্জা করো না।
১১. পেশাব থেকে না বাঁচলে কবর আযাব হয়।
১২. যাতায়াতের পথে বা ছায়ায় পায়খানা করো না।
১৩. পায়খানায় যাওয়ার সময় আল্লাহ ও রাসূলের নাম লেখা আংটি খুলে ফেলো।
১৪. খোলা ময়দান হলে এমন জায়গায় পায়খানা করতে বসো, যেখানে কেউ দেখবে না এবং বসার পূর্ব মুহূর্তে কাপড় উঠাও।
১৫. এমন জায়গায় পেশাব করো, যেখান থেকে ছিটা আসবে না।
১৬. কোন গর্তের মধ্যে পেশাব করো না, কারণ, গর্ত থেকে কষ্টদায়ক কোন প্রাণী তোমাকে কষ্ট দিতে পারে।
১৭. পায়খানা করার সময় পিছন দিকে আড়াল থাকা চাই, অন্য কিছু না থাকলে বালুর স্তুপ করে নিবে।
১৮. গোসলখানায় পেশাব করো না, সেখানে পায়খানা করাতো আরো নোংরা কাজ।
১৯. পায়খানা করার সময় কথা বলো না।
২০. পায়খানায় যাওয়ার পূর্বে দু’আ পড়ে নিবে এবং বের হওয়ার পর দু’আও পড়ে নিবে।
২১. ঢিলার পরে পানিও ব্যবহার করো।
২২. দাঁড়িয়ে পেশাব করো না।
২৩. যতদূর সম্ভব প্রত্যেক নামাযের সময় মেসওয়াক করো।
২৪. ঘুম থেকে উঠে ভালোভাবে হাত ধোয়ার পূর্বে পানির মধ্যে হাত দিওনা।
২৫. পায়ের গোড়ালীতে পানি পৌঁছানোর ব্যাপারে অধিক যত্নবান হও।
২৬. ওযুর সময় হাত-পায়ের আঙ্গুল ও দাড়ি খিলাল করো।
২৭. ওযুর সময় এরূপ সন্দেহ করো না যে, আল্লাহ জানে, পানি নাপাক নয় তো, অমুক অঙ্গে পানি পৌঁছলো কি পৌঁছলো না, অমুক অঙ্গ তিনবার ধুয়েছি কি ধুই নাই।
২৮. ওযু করার সময় পানি নষ্ট করো না।
২৯. আংটি পরিহিত থাকলে তা নেড়ে পানি পৌঁছাও।
৩০. গোসল এই নিয়মে করো-প্রথমে দুই হাত পাক করো। তার পরে শরীরের নাপাকী ধুয়ে ফেলো। তারপর ওযু করো। তারপর তিনবার মাথা ধোও। তারপর সমস্ত শরীরে তিনবার পানি ঢালো।
৩১. গোসলের পর পুনরায় ওযুর প্রয়োজন নেই।
৩২. নাপাক অবস্থায় (গোসল ফরয হওয়া অবস্থায়) যদি কেউ ঘুমোতে চায় বা খাবার থেতে চায় বা পুনরায় স্ত্রী সহবাস করতে চায়, তাহলে ওযু ইস্তিঞ্জা করে নেওয়া উত্তম, তবে ওযু না করলেও গুনাহ নেই।
৩৩. আবদ্ধ পানি যত বেশীই হোক না কেন, বিনা প্রয়োজনে তাতে পেশাব করো না।
৩৪. রৌদ্র-তপ্ত পানি ব্যবহার করলে শ্বেত রোগ হওয়ার আশংকা রয়েছে।
৩৫. জুমুআর দিন গোসল করা সুন্নাত। মৃত ব্যক্তিকে গোসল দানকারীর জন্য গোসল করা উত্তম।
নামায:
১. উত্তম সময় নামায পড়ো। উত্তমভোবে রূকু-সিজদা করো। যতদূর সম্ভব খুশু-খুযুর সাথে নামায আদায় করো।
২. সন্তানের বয়স সাত বছর হলে তাকে নামায পড়ার জন্য হুকুম করো। বয়স যখন দশ বছর হবে তখন পিটিয়ে নামায পড়াও।
৩. নিয়মিতভাবে নামায পড়ো।
৪. ইশার পূর্বে ঘুমিও না এবং ইশার পর গল্প না করে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাও। যাতে তাহাজ্জুদ বা ফজর নামায নষ্ট না হয়।
৫. আসরের সময় নাজুক সময়। বিলম্ব না করে তাড়াতাড়ি নামায পড়ে নাও।
৬. যদি ঘটনাচক্রে ঘুমিয়ে পড়ো বা ভুলে যাও, ফলে নামায কাযা হয়ে যায়, তাহলে ঘুম ভাঙ্গার সাথে সাথে বা স্মরণ হওয়ামাত্র নামায পড়ে নাও। অন্য সময়ের জন্য ফেলে রেখোনা, তবে মাকরুহ সময় হলে তা পার হতে দাও।
৭. আযানের পর মানুষকে নামাযের জন্য ডেকো না। আযান তো ডাকার জন্যই, তবে ঘুমন্ত ব্যক্তিকে জাগিয়ে দেওয়ার দোষ নেই।
৮. যে ব্যক্তি আযান দিবে, তাকেই ইকামত দিতে দেওয়া উত্তম। তাকে অসন্ত্তষ্ট করে অন্য কেউ ইকামত দিবে না।
৯. সাত বছর আযান দিলে দোযখ থেকে মুক্তির ওয়াদা এসেছে।
১০. নামাযের জন্য দৌড়িয়ে যেয়োনা। কারণ, শ্বাস জোরে ওঠানামা করায় মনের স্থিরতা থাকবে না।
১১. আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময় দু’আ কবুল হয়।
১২. যতদূর থেকে মসজিদে নামায পড়তে যাবে, তত বেশী সওয়াব হবে।
১৩. মসজিদে প্রবেশকালে প্রথমে ডান পা দিয়ে এই দু’আ পড়ো-
আল্লাহুম্মাফ তাহলী আবওয়াবা রাহমাতীকা এবং
বের হওয়াব সময় প্রথমে বাম পা বের করে এই দূ’আ পড়ো-
আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদলিকা।
১৪. মসজিদে গিয়ে মাকরূহ সময় না হলে দু’রাকআত তাহিয়্যাতুল মসজিদ নামায পড়া উত্তম।
১৫. মসজিদে গিয়ে হৈচৈ করো না। হুক্কা, তামাক, রসুন, কাঁচা পিয়াজ ও মুলা জাতীয় দুর্গন্ধময় জিনিস খেয়ে মসজিদে যেয়ো না। সেখানে থুথু ফেলো না। বায়ু ছেড়ো না, এতে ফেরেশতাদের কষ্ট হয়। মসজিদে কোন কিছু বেচাকেনা করো না। মসজিদে অশ্লীল কবিতা আবৃত্তি করো না। কাউকে প্রহারের শাস্তি দিও না। কারণ, পেশাব করে ফেলতে পারে। মসজিদে দুনিয়ার কথাবার্তা বলো না।
১৬. এমন কাপড় পরিধান করে বা এমন জায়াগায় নামায পড়ায় ভালো নয়, যার কারুকার্যের উপর আকৃষ্ট হয়ে মন বিক্ষিপ্ত হয়।
১৭. নামাযীর সামনে কোন কিছুর আড়াল থাকতে হবে। অন্যকিছু না থাকলে একটি লাঠি বা কোন উঁচু জিনিস রেখে দিবে। জিনিসটি ডান বা বাম ভ্রূ বরাবর রাখবে, যেন মূর্তিপূজকদের সাথে সাদৃশ্য না হয়।
১৮. নামাযের ইমাম হলে নামায বেশী দীর্ঘ করো না। কারণ, মুক্তাদীদের মধ্যে সবধরণের লোক থাকে। কারো যেন কষ্ট না হয়। তাহলে জামাআত থেকে মন উঠে যাবে।
১৯. নামাযের রুকু, সিজদা ও অন্যান্য সমস্ত রুকুন ধীরস্থিরভাবে আদায় করো।
২০. নামাযের মধ্যে কাপড় গুটানো বা চুল ঠিক করা ঠিক নয়।
২১. নামাযের মধ্যে হাতের উপর ভর দিয়ে উঠো না।
২২. ফরয নামায পড়ে সেখান থেকে সরে গিয়ে সুন্নাত ও নফল পড়া উত্তম।
২৩. নামাযের মধ্যে এদিক সেদিক তাকিও না। উপর দিকে দৃষ্টি দিও না। যতদূর সম্ভব হাই থামিয়ে রাখো। বারবার পাথর ও মাটি হটাইও না। ফুঁ দিও না। নামাযে যাওয়ার সময় নামায পরিপন্থী কোন কাজ করো না। সিজদার জায়গায় দৃষ্টি রাখো।
২৪. জামাআতের সাথে নামায পড়ো। জামাআত ছাড়ার ব্যাপারে মারাত্মক ধমকি এসেছে। তবে শক্ত কোন ওজর হলে জামাআত মাফ হয়ে যায়।
২৫. ক্ষুধা তীব্র হলে বা পেশাব পায়খানার চাপ হলে প্রথমে এগুলো সেরে নাও, তারপর নামায পড়ো।
২৬. ইমাম হলে দু’আর মধ্যে সমস্ত মুক্তাদীকে শরীক করো, অর্থাৎ, সবার জন্য দু’আ করো।
২৭. মসজিদে আযান হয়ে গেলে সেখান থেকে কখনোই যাবে না। তবে সংক্ষিপ্ত প্রয়োজন সারার জন্য গিয়ে সাথে সাথে ফিরে এলে দোষ নেই।
২৮. কাতার খুব সোজা করো এবং খুব মিলে মিলে দাঁড়াও। প্রথমে প্রথম কাতার, তারপর দ্বিতীয় কাতার, তারপর তৃতীয় কাতার পুরা করো। ইমামের উভয় দিকে সমান সংখ্যক মুক্তাদী থাকা উচিত।
২৯. বেশীর ভাগ মুক্তাদী যু্ক্তিসঙ্গত কোন কারণে ইমামের প্রতি অসন্ত্তষ্ট থাকলে তার ইমামতি করা উচিত নয়। ইমামতির ক্ষেত্রে অজুহাত দেখিও না। অর্থাৎ, একজন আরেক জনের উপর চাপিয়ে দিয়ে নিজেকে বাঁচিও না। এটিও কিয়ামতের একটি আলামত।
৩০. ইমাম হলে মুক্তাদীদের থেকে উঁচু স্থানে দাঁড়িও না।
৩১. ইমামের আগে রুকু, সিজদা বা অন্য কোন কাজ করো না।
৩২. যদি এমন সময় জামাআতে আসো যে, ইমাম সিজদা বা বৈঠকে আছে, তাহলে তার দাঁড়ানোর অপেক্ষা করো না, অবিলম্বে নামাযে শরীক হয়ে যাও।
৩৩. তাহাজ্জুদ পড়ার চেষ্টা করো। এর অনেক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে।
৩৪. এত অধিক পরিমাণ নফল ও ওযিযা আদায় করো না, যা পুরা করতে পারবে না।
৩৫. নামায পড়তে পড়তে ক্লান্ত হলে বা ঘুমের চাপ হলে কিছু্ক্ষণ আরাম করে তারপর নামাযে রত হও।
৩৬. ঘুমানোর পূর্বে ওযু করে নাও এবং আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে ঘুমিয়ে যাও।
৩৭. ঘরের মধ্যেও কিছু নফল নামায পড়ার অভ্যাস রাখো।
৩৮. জুমুআর দিন অধিক হারে দরুদ শরীফ পড়ো।
৩৯. গোসল করে পোশাক পরিবর্তন করে সুগন্ধি লাগিয়ে তাড়াতাড়ি জুমুআর নামাযে যাও। মানুষের কাঁধ ডিঙ্গিয়ে যেয়ো না। কা্উকে তুলে দিয়ে তার জায়গায় বসো না। জোর করে দু’ব্যক্তির মাঝে ঢুকে বসো না। খুৎবার সময় কথা বলো না। এমনভাবে বসো না যে, ঘুম আসে। ঘুম প্রবল হলে জায়গা পরিবর্তন করো।
৪০. সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ লাগলে সে সময় নামায পড়ো। আল্লাহর নিকট দু’আ করো, দান-খয়রাত করো, গুনাহ মাফ চাও, গোলাম আযাদ করো।
৪১. ঈদগাহতে এক পথ দিয়ে যাও, অন্যপথ দিয়ে আসো।
৪২. যার কুরবানী করার ইচ্ছা আছে, তার জন্য চাঁদ দেখার পর থেকে কুরবানী করার আগ পর্যন্ত নখ, চুল ইত্যাদি না কাটা মুস্তাহাব।
৪৩. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষ থেকেও কুরবানী করা উত্তম। এতে ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়।
৪৪. নতুন বৃষ্টিতে বরকত হয়, সেই পানি নিজের দেহে নেওয়া উত্তম।
৪৫. ইস্তিস্কার নামায অর্থাৎ, অনাবৃষ্টির সময় বৃষ্টি প্রার্থনার জন্য নামায পড়তে যাওয়ার সময় মলিন কাপড় পরে কান্নাকাটি ও নিজেদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে করতে যাবে।
জানাযা নামাযের আলোচনা:
১. মানুষ মৃত্যুমুখী হলে তার নিকট বসে উচ্চস্বরে কালিমায়ে তায়্যিবা পড়তে থাকো।
২. কাফনের কাপড় একদম কম দামী বা খুব বেশী দামী দিও না। মধ্যম ধরনের দাও।
৩. পুরতন বিপদ বা দুঃখের কথা স্মরণ হলে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাযিউন পড়ো। তাহলে পূর্বে যেমন সওয়াব পেয়েছো, আবারো ঐরুপ সওয়াব পাবে।
৪. বিপদ যত ছোটই হোক না কেন ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাযিউন পড়ো। এতে সওয়াব পাবে। মাঝে মাঝে করবস্থানে যাও, এতে দুনিয়ার ভালোবাসা হ্রাস পায় এবং আখিরাতের কথা স্মরণ হয়। বিশেষতঃ জুমুআর দিন মা-বাবার কবর যিয়ারত করা উত্তম।
যাকাত ও দানের বিবরণ:
১. অগ্রিম যাকাত দেওয়াও দুরস্ত আছে।
২. ব্যবহারের অলংকার ও স্বর্ণ-চাঁদির লেস ও কারুকার্যেরও যাকাত আছে।
৩. যতদূর সম্ভব এমন লোকদেরকে যাকাত দাও, যারা আত্মমর্যাদার কারণে কারো কাছে হাত পাতে না।
৪. অল্প জিনিস দান করতে লজ্জা করো না। যা তাওফীক হয় তাই দাও।
৫. যাকাত দিয়ে সমস্ত কর্তব্য শেষ হয়ে গেছে, এরূপ মনে করো না। ধনসম্পদের মধ্যে আরো অনেক হক রয়েছে। প্রয়োজন হলে সেগুলো আদায় করতে হয়। আত্মীয়-স্বজনদেরকে দান করলে দু’ধরনের সওয়াব হয়-এক, দান করার, দুই, আত্মীয়তা রক্ষা করার।
৬. প্রতিবেশী গরীব হলে তরকারীর ঝোল বাড়িয়ে দিয়ে তাদেরকেও সেখান থেকে দাও। ভিক্ষুককে কিছু হলেও দাও, তা যতই কম হোক না কেন।
৭. স্ত্রী স্বামীর মাল থেকে অভাবীকে এতটুকু পরিমাণ দিতে পারে, যা স্বামী জানলে অসন্ত্তষ্ট হবে না।
৮. কোন জিনিস কাউকে দান করলে এবং সে তা বিক্রি করলে তোমার জন্য তার থেকে ঐ জিনিস ক্রয় না করা উত্তম। হতে পারে তোমার জন্য ছাড় দিবে। এটা এক প্রকারের দানা করে ফিরিয়ে নেওয়ার শামিল।
রোযা সংক্রান্ত আলোচনা:
১. রোযা অবস্থায় অশ্লীল কথা বলো না। হৈচৈ করো না। কেউ ঝগড়া করলেও তুমি বলে দাও- আমি রোযা রেখেছি আমাকে মাফ করো।
২. চাঁদ দেখে কখনোই অনুমানের ভিত্তিতে বলো না যে, এটি অমুক দিনের চাঁদ, সে হিসাবে আজকে এত তারিখ। মানুষ যখন চাঁদ দেখবে তখন থেকেই হিসাব করবে।
৩. স্বামী বাড়ীতে থাকা অবস্থায় স্ত্রী তার অনুমতি ছাড়া নফল রোযা রাখবে না।
৪. মাঝে মাঝে নফল রোযাও রাখো।
৫. রোযা অবস্থায় কেউ দাওয়াত করলে তাকে খুশি করার জন্য তার বাড়ীতে যাও। তার জন্য দু’আ করো। আর রোযা না থাকলে সেখানে আহার করো।
৬. রমাযান শরীফের দশ দিন বাকী থাকতে ইবাদতের পরিমাণ বাড়ানোর চেষ্টা করো।
কুরআন তিলাওয়াত:
১. কুরআন শরীফ চালু পড়তে না পারলে ঘাবড়ে গিয়ে পড়া ছেড়ে দিও না। নিয়মিত পড়তে থাকো। কারণ, এমন ব্যক্তি দ্বিগুণ সওয়াব লাভ করে।
২. ঘুমানোর সময় ‘কুল হুওয়াল্লাহ’, কুল আউযুবিরাব্বিল ফালাক’ ও ‘কুল আউযুবিরাব্বিন নাস’ পড়ে উভয় হাতের মাঝে ফুঁ দিয়ে যতদূর সম্ভব সারাশরীরে হাত বুলাও। এভাবে তিনবার করে তারপর ঘুমাও।
৩. কুরআন পড়া শিখে থাকলে তা নিয়মিত তিলাওয়াত করতে থাকো অন্যথায় ভুলে যাবে, ফলে মারাত্মক গুনাহগার হবে।
৪. যতক্ষণ পর্যন্ত ভালো লাগে কুরআন তিলাওয়াত করো, আর যখন বিরক্তি লাগে, তখন বন্ধ করে দাও, যে তিলাওয়াতে অভ্যস্ত তার জন্য এ কথা। তা না হলে অনভ্যস্ত কাজ করতে স্বভাবই বিরক্তি লাগে। তাই এদিকে ভ্রূক্ষেপ করবে না। বরং জোর করে পড়ে পড়ে অভ্যাস করবে। হাঁ, অভ্যাস হয়ে যাওয়ার পর তার জন্যও উপরের নিয়মই প্রযোজ্য।
৫. কুরআন শরীফ এমন সুরে পড়ো, যেন বুঝা যায়-তুমি আল্লাহর ভয়ে ভীত। সর্বাধিক সুন্দর সুর এটিই।
দু’আ, যিকির ও ইস্তিগফার:
১. দু’আ করার সময় নিম্নের বিষয়গলোর প্রতি খেয়াল রেখো-
ক. খুব আবেগ-আগ্রহের সাথে দু’আ করো।
খ. গুনাহের জিনিস চেয়ো না।
গ. দু’আ কবুল হতে দেরী হলে বিরক্ত হয়ে দু’আ করা ছেড়ে দিও না।
ঘ. কবুল হওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস রাখো।
২. রাগ হয়ে নিজের জানমাল, সন্তান ইত্যাদির উপর অভিসম্পাত করো না। কারণ, তখন দু’আ কবুল হওয়ার মুহূর্ত হলে এমনটি হয়ে যেতে পারে।
৩. যখন এবং যেখানেই বসে বা শুয়ে দুনিয়ার কথাবার্তা বলো, সেখানে অল্প হলেও আল্লাহর যিকির এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর দরুদ শরীফ পড়ো। কোন বৈঠক যেন যিকির থেকে খালি না থাকে। অন্যথা ঐ বৈঠকই বিপদের কারণ হবে।
৪. বেশীর ভাগ সময় আঙ্গুলের গিরায় অযিফা গণনা করো। তবে তাসবীহ রাখাও জায়িয আছে।
৫. বেশী বেশী করে আল্লাহর নিকট গুনাহ মাফ চাও, তাহলে সমস্ত জটিলতা সমাধা হয়ে যাবে এবং ধারণাতীতভাবে রিযিক লাভ হবে।
৬. কুপ্রবৃত্তির কারণে গুনাহ হয়ে গেলে এ কথা ভেবে তাওবা করতে বিলম্ব করো না যে, হয়ত আমার তাওবা ঠিক থাকবে না, আবার গুনাহ হয়ে যাবে। বরং অবিলম্বে খাঁটি মনে তাওবা করো। যদি ঘটনাচক্রে তাওবা ভেঙ্গে যায়, তাহলে পুনরায় তাওবা করো।
৭. বিশেষ বিশেষ সময়ের বিশেষ কিছু দু’আ লিখে দেওয়া হলো-
ক. ঘুমানোর সময় দু’আ পড়া।
খ. ঘুম থেকে জেগে দু’আ পড়া।
গ. সকালবেলা দু’আ পড়া।
ঘ. সন্ধ্যাবেলায় দু’আ পড়া।
ঙ. স্ত্রী সহবাসের পূর্বে দু’আ পড়া।
চ. কাফির বাহিনীর বিরুদ্ধে বদ’দুআ করতে হলে দু’আ পড়া।
ছ. কারো বাড়ীতে মেহমান হলে পানাহার শেষে দু’আ পড়া।
জ. চাঁদ দেখে দু’আ পড়া।
ঝ. কাউকে বিপদগ্রস্ত দেখলে দু’আ পড়া।
ঞ. কেউ বিদায় হওয়ার কালে তাকে লক্ষ্য করে দু’আ পড়া।
ট. কাউকে বিবাহের মুবারকবাদ দেওয়ার জন্য দু’আ পড়া।
ঠ. কোন্ বিপদ আসলে দু’আ পড়া।
হজ্জ ও যিয়ারত:
১. হজ্জ ফরয হলে তাড়াতাড়ি আদায় করা উচিত। কারণ, আল্লাহ জানে আবার কোন বাধা সৃষ্টি হয়।
২, যথেষ্ট পরিমাণ টাকা সহ হজ্জে যাওয়া উচিত।
৩. হজ্জ করে সম্ভব হলে পবিত্র মদীনায় গিয়ে রওযা শরীফ যিয়ারত করে ধন্য হবে।
৪. যদি এ পরিমাণ টাকা থাকে, যার দ্বারা হজ্জ করা সম্ভব, কিন্ত্ত মদীনায় যাওয়া সম্ভব নয়, তাহলে ফরয হজ্জ আদায় করে নাও, পরবর্তীতে সামর্থ্য হলে মদীনা তাইয়্যেবা যেও। হজ্জ করা থেকে বিরত থেকো না।
৫. বাড়ীতে আসার আগ পর্যন্ত হজ্জকারীর দু’আ কবুল হয়। তাই তার সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে
তাকে সালাম দাও, মুসাফাহা করো এবং নিজের গুনাহ মাফের জন্য তার দ্বারা দু’আ করাও।
শপথ ও মান্নত:
১. আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে কখনো শপথ করো না। যেমন, বেটা, বাপ বা অন্য কোন মাখলুকের নামে শপথ করা। কারো এরূপ অভ্যাস হয়ে থাকলে এবং মুখ দিয়ে বের হয়ে গেলে সাথে সাথে কালিমা পড়ে নিবে।
২. কখনোই এরূপ শপথ করো না যে, আমি যদি মিথ্যুক হই তাহলে যেন বেঈমান হয়ে যাই- যদিও তুমি সত্যবাদী হওনা কেন। আর যদি মিথ্যুক হয়ে থাকো তাহলে এরূপ শপথ করা তো মারাত্মক ব্যাপার।
৩. রাগান্বিত অবস্থায় যদি এমন কোন শপথ মুখ দিয়ে বের হয়ে যায়, যা পুরা করলে শরীয়ত পরিপন্থী কাজ করতে হবে। যেমন-শপথ করলে যে, আমি আমার আব্বার সাথে কথা বলবো না, বা এ জাতীয় অন্য কোন শপথ, তাহলে এরূপ শপথ ভেঙ্গে ফেলো এবং কাফফারা দাও। এরুপ মনে করো না যে, শপথ ভঙ্গ করলে গুনাহ হবে। কারণ, এরূপ ক্ষেত্রে শপথ ভঙ্গ না করায় আরো অধিক গুনাহ হবে।
৪. কারো হক নষ্ট করার জন্য ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে কসম খেয়ো না। কারণ, হকদার ব্যক্তি শপথের যে অর্থ বুঝবে সেটাই গন্য হবে।
৫. বিপদে আক্রান্ত হয়ে মান্নত মানা, আর এমনিতে কানা কড়িও আল্লাহর নামে দান না করা বড়ই কৃপণতার পরিচয়। এ যেন আল্লাহকে ফুসলানো। নাউযুবিল্লাহ। কবিতা-
‘যারা আল্লাহকে একটি সিজদা করে এবং নবীর উপর একবার দরুদ পড়ে প্রতারিত করতে চায় তুমি তাদের দলভুক্ত হয়ো না।’
অর্থঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পাপসমূহ এবং আমাদের অন্যায় কাজসমূহ ক্ষমা করুন। আমাদের পদসমূহ দৃঢ় রাখুন এবং কাফির জাতির বিরুদ্ধে আমাদের সাহায্য করুন। হে আল্লাহ! আমাদেরকে সরল সঠিক পথের দিশা দিন এবং আমাদেরকে মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আমীন।