তাকদীরে বিশ্বাস ও তাওয়াক্কুল

উৎস:
ইসলাহী নেসাব: হায়াতুল মুসলিমীন
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (র:)
তাকদীর অর্থাৎ, ভাগ্যের উপর বিশ্বাস পোষণ করা এবং তাওয়াক্কুল অর্থাৎ, মহান আল্লাহর প্রতি আস্থাশীল হওয়ার মধ্যে নিম্নবর্ণিত উপকার সমূহ নিহিত রয়েছে-
ক. যতবড় বিপদ বা পেরেশানীর ঘটনাই ঘটুক না কেন অন্তর মজবুত থাকবে এবং বুঝবে যে, এটিই আল্লাহর ফায়সালা ছিলো। এর বিপরীত হতেই পারতো না। তিনি যখন চাবেন এ বিপদ প্রতিহত করবেন।
খ. এ কথা বুঝে আসলে বিপদ দূর হতে বিলম্ব হলেও অস্থির, হতাশ ও মনোবল হীন হবে না।
গ. তাছাড়া যখন এ কথা বুঝে আসবে, তখন বিপদ দূর করার জন্য এমন কোন পন্থা বা কৌশল সে অবলম্বন করবে না, যার দ্বারা মহান আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন। বরং সে মনে করবে যে, আল্লাহ না চাইলে তো বিপদ দূর হবে না। তাহলে আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করবো কেন?
ঘ.উপরন্তু এ কথার বুঝ থাকলে সব ধরনের চেষ্টা ও তাদবীরের সঙ্গে এ ব্যক্তি দু’আও করতে থাকবে। কারণ, সে মনে করবে যে, আল্লাহর ইচ্ছায়ই এ বিপদ দূর হতে পারে তাই তাঁর কাছেই দু’আ করার মধ্যে উপকারের অধিক আশা রয়েছে। আর দু’আয় নিমগ্ন হওয়ার ফলে মহান আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি পাবে, যা সকল শান্তির মূল।
ঙ. উপরন্তু যখন প্রত্যেক কাজে এ বিশ্বাস থাকবে যে, আল্লাহ তাআলার ইচ্ছাতেই সবকিছু হয়ে থাকে, তখন কোন কাজের সফলতায় নিজের কোন চেষ্টা বা বুদ্ধির জন্য অন্তরে অহংকার ও গরিমা সৃষ্টি হবে না।
উপরোক্ত সমস্ত উপকারিতার সারকথা এই যে, এ ব্যক্তি সফলতায় শোকর করবে এবং ব্যর্থতায় ধৈর্য ধরবে। তাকদীরে বিশ্বাস ও তাওয়াক্কুলের এ সমস্ত ফায়দার কথাই মহান আল্লাহ এ আয়াতে সংক্ষেপে বর্ণনা করেছেন-
’ যেন তোমরা যা পাও নাই তার জন্য দুঃখিত না হও এবং তিনি তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তার জন্য উল্লসিত না হও।’ (সূরা হাদীস-২৩)
তাকদীরে বিশ্বাস এবং আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করার অর্থ এই নয় যে, তাকদীরের বাহানা দিয়ে শরীয়তসম্মত প্রয়োজনীয় চেষ্টাও ত্যাগ করবে। বরং এমন ব্যক্তি দুর্বল চেষ্টাকেও হাতছাড়া করবে না এবং এতেও সে আশা রাখবে যে, আল্লাহ তাআলা এর মধ্যেও সফলতা দান করার ক্ষমতা রাখেন। তাই কখনও সাহস হারাবে না। কিন্তু কেউ কেউ না বুঝে এ ভুলটি করে থাকে।
দ্বীন তো অনেক বড় জিনিস দুনিয়ার জরুরী কাজসমূহেও এমন হীন মনোবল হওয়ার নিন্দা হাদীস শরীফে এসেছে। হযরত আউফ বিন মালিক (রাযিঃ) বর্ণনা করেন- নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি মোকদ্দমার রায় প্রদান করলেন, তখন পরাজিত লোকটি বলতে লাগলো-
(আল্লাহর ইচ্ছা আর আমার ভাগ্য)
হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন- আল্লাহ তাআলা হীনমনোবলকে অপছন্দ করেন। বুদ্ধিমত্তার সাথে কাজ করো(অর্থাৎ, চেষ্টা ও তাদবীরে কমতি করো না)। তারপরও যখন কোন কাজ তোমার আয়ত্তের বাইরে চলে যায় তখন বলো-
(অর্থাৎ, আল্লাহর ইচ্ছা ও আমার ভাগ্য) (আবু দাউদ)
তাকদীর ও তাওয়াক্কুলের উপকারিতা তুলে ধরা এবং এতদসংক্রান্ত ভ্রান্তি থেকে বাঁচানোর জন্য এ কথাগুলো আলোচনা করা হলো। এখন এতদসংক্রান্ত হাদীসসমূহ লেখা হচ্ছে।
১. হযরত যাবের (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
’ তোমাদের কেউ ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাকদীরের উপর বিশ্বাস আনবে। তার ভালোর উপরও এবং মন্দের উপরও। এমনকি সে বিশ্বাস করবে যে, যা ঘটার ছিলো তা তার থেকে সরে যাওয়ার ছিলো না এবং যা সরে যাওয়ার ছিলো তা তার উপর পতিত হওয়ার ছিলো না।’ ( তিরমিযী)
২. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, আমি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পিছনে ছিলাম। তিনি আমাকে বললেন, হে বৎস! আমি তোমাকে কয়েকটি বিষয়ের উপদেশ দিচ্ছি-
’ আল্লাহর প্রতি মনোযোগী হও। তিনি তোমাকে রক্ষা করবেন। আল্লাহর প্রতি খেয়াল রেখো, তাহলে তাঁকে নিজের সম্মুখে( অর্থাৎ, নিকটে) পাবে। যখন তোমার কিছু চাইতে হয়, তখন আল্লাহর কাছে চাও। যদি সাহায্য প্রার্থনা করতে হয়, তাহলে আল্লহার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করো এবং একথা বিশ্বাস করো যে, যদি সবাই এ ব্যাপারে একমত হয় যে, তোমাকে কোন কিছু দ্বারা উপকৃত করবে, তাহলে কথনই তোমার উপকার করতে পারবে না, তবে এমন জিনিস ছাড়া, যা আল্লাহ তোমার জন্য লিখে দিয়েছেন। আর যদি তারা সকলে এ বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ হয় যে, তোমাকে কোন কিছু দ্বারা ক্ষতি করবে তাহলে তোমাকে কখনই ক্ষতি করতে পারবে না, তবে এমন জিনিস দ্বারা, যা আল্লাহ তাআলা তোমার জন্য লিখে রেখেছেন।’ (তিরমিযী)
৩. হযরত আবুদ দারদা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে-
’ আল্লাহ তাআলা সমস্ত বান্দার পাঁচটি বিষয়ের ফায়সালা করে দিয়েছেন। তার বয়সের, তার রিযিকের, তার আমলের, তার কবরের জায়গার এবং পরিণামে সে ভাগ্যবান হবে, না হতভাগা।’
(আহমাদ, বাযযার, কাবীর ও আওসাত)
৪ হযরত মুয়াবিয়া (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
’ এমন কোন বিষয়ে অগ্রসর হয়ো না, যার সম্পর্কে তোমার ধারণা হয় যে, আমি অগ্রসর হলে তা অর্জন করতে পারবো যদিও আল্লাহ তা ভাগ্যে না লিখে থাকেন এবং এমন কোন বিষয় থেকে পিছু হটো না, যার ব্যাপারে তোমার এ ধারণা হয় যে, আমি পিছপা হলে তা সরে যাবে যদিও তা আল্লাহ ভাগ্যে লিখে থাকেন।’ (কাবীর ও আওসাত)
ফায়দা: এ উভয় ধারণাই ভ্রান্ত। বরং যে জিনিস ভাগ্যে নেই তা সম্মুখে অগ্রসর হলেও লাভ হবে না। বিধায় এ ধারণায় অগ্রসর হওয়া অর্থহীন। একইভাবে যে জিনিস ভাগ্যে রয়েছে, তা পিছপা হওয়ার দ্বারা এবং দূরে থাকার দ্বারা পরিবর্তিত হবে না। তাই এ ধারণায় দূরে থাকা অর্থহীন।
৫. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
’ নিজের লাভজনক জিনিসকে চেষ্টার মাধ্যমে অর্জন করো। আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও এবং সাহস হারিয়ো না। আর কোন বিষয় তোমার উপর এসে পড়লে এরূপ বলো না যে, যদি আমি এরূপ করতাম, তাহলে এমন এমন হতো। (তবে এমন সময়ে) এরূপ বলো- আল্লাহ তাআলা এটিই ভাগ্যে রেখেছিলেন এবং যা তার মঞ্জুর হয়েছে তিনি তাই করেছেন।’ (মুসলিম)
এ পর্যন্ত উদ্ধৃত হাদীসসমূহ জামউল ফাওয়ায়িদ কিতাব থেকে নেওয়া হয়েছে। এসব হাদীসে বেশীর ভাগ তাকদীরের( ভাগ্য সম্পর্কে) বর্ণনা ছিলো। সামনে ঐ সমস্ত আয়াত ও হাদীস রয়েছে, যেগুলোতে বেশীর ভাগ তাওয়াক্কুলের এবং কিছু কিছু তাকদীরের বর্ণনা রয়েছে।
৬. আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-
’ পরামর্শ করার পর যখন আপনি একদিকে সিদ্ধান্ত স্থির করে ফেলেন, তখন আল্লাহ তাআলার উপর ভরসা করে সে কাজ সম্পন্ন করুন। যারা আল্লাহর উপর ভরসা করে, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ভালোবাসেন।’( সূরা আল-ইমরান ১৫৯)
ফায়দা: এর চেয়ে বড় সম্পদ আর কি হতে পারে যে, আল্লাহর উপর ভরসাকারীদেরকে তিনি ভালোবাসেন। যার প্রতি আল্লাহর ভালবাসা রয়েছে, তার সফলতার বিষয়ে কার সন্দেহ থাকতে পারে?
এ আয়াত দ্বারা এ কথাও জানা গেলো যে, তাওয়াক্কুল তথা আল্লাহর উপর ভরসা রাখার সাথে সাথে চেষ্টা তাদবীরেরও নির্দেশ রয়েছে। কেননা পরামর্শ তো তাদবীরের জন্যই হয়ে থাকে। তবে চেষ্টার উপর ভরসা করা যাবে না। বরং চেষ্টা করে ভরসা আল্লাহর উপরই রাখতে হবে।
৭. আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
তারা এমন(ভালো) লোক যে, (যখন) কতক লোক তাদের বললো যে, তারা (মক্কার কাফেররা) তোমাদের( সঙ্গে যুদ্ধ করার) জন্য (বহু) সাজ-সরঞ্জাম সংগ্রহ করেছে, তাই তাদেরকে ভয় করো। তখন তাদের বিশ্বাস আরো দৃঢ়তর হয়ে যায় এবং তারা বলে,(সর্বকার বিপদে) আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট এবং সবকাজে তিনিই ভরসাস্থল।(এই ভরসা করাই তাওয়াক্কুল) অতঃপর মুসলমানগণ ফিরে এলো আল্লাহর অনুগ্রহ নিয়ে, তাদের কিছুই অনিষ্ট হলো না। তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির অনুগত হয়েছিলে (এ কারণেই তারা এতো নিয়ামত পেয়েছেন)। বস্তুতঃ আল্লাহর অনুগ্রহ অনেক বিরাট।’(সূরা আলে ইমরান-১৭৩-১৭৪)
ফায়দা ঃ এসব আয়াতে একটি ঘটনার দিকে ইঙ্গিত রয়েছে, যার মধ্যে সাহাবা (রাযিঃ) এর দ্বীন ও দুনিয়ার উভয় দিকের ফায়দা হয়। আল্লাহ তাআলা এ কথা বলেছেন যে, এ উভয়বিধ দৌলত তাঁরা তাওয়াক্কুলের সুবাদে পেয়েছে।
৮. আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
’ ( হে মুহাম্মাদ! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি বলে দিন যে, আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্য যা লিখে রেখেছেন, তা ভিন্ন অন্য কোন বিপদাপদ আমাদের উপর আসতে পারে না। তিনি আমাদের প্রভু (প্রকৃত মালিক, তাই তিনি যা কিছু সাব্যস্ত করবেন, তাতে সন্তÍষ্ট থাকাই আমাদের কর্তব্য)। সমস্ত মুসলমানের যাবতীয় কাজের জন্য আল্লাহর উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করা কর্তব্য। আরো বলে দিন যে, (আমাদের জন্য যেমন সুখের অবস্থা ভালো, তেমনি কষ্টের অবস্থাও ভালো। কেননা, এই কষ্টের বিনিময়ে আমাদের মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে এবং গুনাহ মাফ হবে, কাজেই) তোমরা আমাদের জন্য দু’টি ভালো জিনিসের মধ্যে একটির জন্য অপেক্ষা করছো কি?’ (সূরা তাওবা-৫২)
ফায়দা: এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, তাওয়াক্কুলের ফায়দা এই যে, কোন অপছন্দীয় ঘটনা ঘটলেও তাতে পেরেশানী হয় না, বরং তাকেও ভালোই মনে হয়ে থাকে। দুনিয়াতে তা প্রকাশ না পেলেও আখিরাতে অবশ্যই প্রকাশ পাবে। যা আমাদের মূল বাড়ী এবং সেই কল্যাণই চিরদিন কাজে আসবে।
৯. আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
’ এবং মূসা আলাইহিস সালাম ( বণী ইসরাঈলদিগকে ফেরাউনের অত্যাচারের ভয়ে ভীত দেখে) বললেন- হে আমার জাতি! যদি তোমরা( খাঁটি মনে) আল্লাহর উপর ঈমান এনে থাকো, তাহলে( নিশ্চিন্তে ) তাঁর উপর ভরসা করো, যদি তোমরা (তাঁর) অনুগত হয়ে থাকো। তারা আরয করলো, আমরা আল্লাহর উপর ভরসা করলাম। (তারপর তারা আল্লাহর নিকট দু’আ করলো) হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে এই জালেমদের অত্যাচারের শিকার বানাবেন না এবং নিজ রহমতে আমাদেরকে এই কাফিরদের থেকে মু্ক্তি দিন। (অর্থাৎ, যতদিন পর্যন্ত তাদের রাজত্ব অদৃষ্টে আছে, ততদিন পর্যন্ত তারা যেন আমাদের উপর কোন অত্যাচার করতে না পারে। তারপর তাদের অধীনতার নাগপাশ হতে যেন মুক্তিলাভ করতে পারি) (সূরা ইউনুস ৮৪)
ফায়দা: এ আয়াত দ্বারা জানা গেলো যে, তাওয়াক্কুল সহ দু’আ অধিক কবুল হয়ে থাকে।
১০. ’ যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার উপর তাওয়াক্কুল করে, আল্লাহ তাআলাই তার সমস্ত কাজ ঠিক করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।’ (কাজ ঠিক করে দেওয়া যাহেরী ও বাতেনী উভয়ভাবে হতে পারে। আবার শুধু বাতেনীভাবেও হতে পারে) (সূরা তালাক-৩)
ফায়দা: লক্ষ্য করো! আল্লাহ তাআলা তাওয়াক্কুলের উপর কেমন বিস্ময়কর ওয়াদা করেছেন। আধ্যাত্মিক সংশোধন তাৎক্ষণিকভাবে তো জানা যায় না, তবে খুব সত্বরই তা বুঝে আসে।
১১. হযরত সাআদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
’ মানুষের সৌভাগ্যের ব্যাপার হলো- আল্লাহ তাআলা তার জন্য যা নির্ধারণ করেছেন তার উপর সন্তুষ্ট থাকবে। আর মানুষের বঞ্চনা এই যে, আল্লাহর নিকট কল্যাণ কামনা পরিত্যাগ করবে এবং এটিও মানুষের বঞ্চনা যে, আল্লাহ তাআলা তার ভাগ্যে যা রেখেছেন তার উপর অসন্তুষ্ট থাকবে।’ (আহমাদ,তিরমিযী)
১২. হযরত আমর ইবনুল আস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
’ মানুষের অন্তর (সম্পর্কের) প্রত্যেক ময়দানে শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত থাকে। যে নিজের অন্তরকে প্রত্যেক শাখার পিছনে ছুটায়, সে যে কোন ময়দানে ধ্বংস হোক না কেন আল্লাহ তার মোটেও পরোয়া করেন না। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার উপর ভরসা করে আল্লাহ তাআলা সব শাখাতেই তার জন্য যথেষ্ট হন। (ইবনু মাজা)
ফায়দা: তার কোন পেরেশানী ও জটিলতা হয় না।
হাদীস দু’টি মিশকাত শরীফে রয়েছে।
১৩. হযরত ইমরান বিন হুসাইন (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
’ যে ব্যক্তি (আন্তরিকভাবে) কেবলই আল্লাহর হয়, আল্লাহ তাআলা তার সকল দায়িত্বের সমাধান করেন এবং তাকে এমন জায়গা থেকে রিযিক দেন, যা তার ধারণায়ও থাকে না। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার হয়, আল্লাহ তাআলা তাকে দুনিয়ার হাতেই ন্যস্ত করেন। (আবুশ শাইখ)
হাদীসটি ’তারগীব ও তারহীব’ কিতাবে রয়েছে।
১৪. হযরত আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লামকে এক বেদুঈন প্রশ্ন করলো-
’ উটনি বেঁধে রেখে তাওয়াক্কুল করবো, নাকি ছেড়ে দিয়ে?
তখন তিনি বললেন- ’ উটনি বেঁধে রেখে তাওয়াক্কুল করো।’ (তিরমিযী)
ফায়দা: অর্থাৎ, তাওয়াক্কুলের মধ্যে চেষ্টা- তাদবীরের নিষেধাজ্ঞা নেই। হাত দ্বারা তাদবীর
করবে, আর অন্তর দ্বারা আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করবে এবং তাদবীরের উপরে ভরসা করবে না।
১৫. হযরত আবু খুযামা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো- ঔষধ ও ঝাড়ফুঁক কি ভাগ্য পরিবর্তন করে? তিনি বললেন, এটিও ভাগ্যেরই অন্তর্ভুক্ত। (তিরমিযী, ইবনু মাজা)
ফায়দা: অর্থাৎ, এটিও ভাগ্যে রয়েছে যে, অমুক ঔষধ বা ঝাড়ফুঁক দ্বারা উপকার হবে।
হাদীসটি ইরাকীর তাখরীজের মধ্যে রয়েছে।
ফলাফল: হে মুসলমানগণ! এ সমস্ত আয়াত ও হাদীস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করো। যত বড় জটিলতাই আসুক না কেন, মন ছোট করবে না। দ্বীনের ব্যাপারে কাঁচা হবে না। আল্লাহ তাআলা সাহায্য করবেন।
Leave a Reply