উৎস:
ইসলাহী নেসাব: হায়াতুল মুসলিমীন
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (র:)

যে পুরুষ বা নারীর বিবাহ করতে কোন প্রতিবন্ধকতা নেই, তার জন্য কখনও কল্যাণকররুপে এবং কখনও আবশ্যকরুপে বিবাহ করাই মূল বিধান। এ পসঙ্গে হাদীস শরীফে এসেছে-

১. হযরত ইবনে আবি নুজাইহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
‘অভাবী অভাবী ঐ পুরুষ, যার স্ত্রী নেই। লোকেরা নিবেদন করলো- সে যদি অনেক সম্পদশালী হয় (তবুও কি অভাবী)? তিনি ইরশাদ করলেন- (হাঁ) যদিও সে অনেক সম্পদশালী হয়। (পুনরায়) তিনি ইরশাদ করলেন- অভাবী অভাবী ঐ নারী, যার স্বামী নেই। লোকেরা নিবেদন করলো, যদিও সে অনেক সম্পদশালী হয় (তবুও কি সে অভাবী)? তিনি ইরশাদ করলেন, (হাঁ) যদিও সে অনেক সম্পদশালী হয়।’ (রাযীন)

ফায়দা: কারণ, সম্পদের যে উদ্দেশ্য অর্থাৎ, শান্তিময় নিশ্চিন্ত জীবন। তা স্ত্রীহীন পুরুষের লাভ হয় না এবং স্বামীহীন নারীর লাভ হয় না। আর অভিজ্ঞতায়ও তাই দেখা যায়। তাছাড়া বিবাহে দ্বীন ও দুনিয়ার বহুবিধ কল্যাণ রয়েছে।

২. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, আমাদেরকে লক্ষ্য করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন-
‘হে যুবকদল! তোমাদের মধ্যে যে ঘর- সংসারের বোঝা বহন করায় সাহসী (অর্থাৎ, স্ত্রীর হক আদায় করতে সক্ষম) তার বিবাহ করা উচিত। কারণ, বিবাহ দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থানকে সংযত রাখে। (অর্থাৎ, কুদৃষ্টি ও কুকর্ম থেকে সহজে বাঁচা সম্ভব হয়) । (সিহাহ সিত্তাহ)

ফায়দা: এটি যে একটি ধর্মীয় উপকারিতা তা স্পষ্ট হলো। আর পার্থিব উপকারিতা প্রথম হাদীসের মধ্যে উল্লেখিত হয়েছে। আর কিছু সম্মুখে উল্লেখ করা হচ্ছে।

৩. হযরত আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
‘নারীদেরকে বিবাহ করো। তারা তোমাদের জন্য সম্পদ নিয়ে আসবে।’ (বাযযার)

ফায়দা: এ বিষয়টি তখন হয়ে থাকে, যখন স্বামী-স্ত্রী উভয়ে বিচক্ষণ এবং পরস্পরে হিতাকাংখী হয়। কারণ, এমতাবস্থায় পুরুষ নিজ দায়িত্বে ব্যয়ভার বৃদ্ধি পেয়েছে বুঝে অধিক উপার্জনের চেষ্টা করবে, আর নারী বাড়ীর এমন ব্যবস্থাপনা করবে, যা পুরুষ করতে পারে না। এমতাবস্থায় শান্তি ও চিন্তামুক্ত জীবন অবশ্যম্ভাবী। আর সম্পদের উপকারিতাও এটিই। তাই স্ত্রী সম্পদ আনার অর্থ এটিই।

৪. হযরত আবু হরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো- কোন নারী সর্বোত্তম? তিনি ইরশাদ করলেন-
‘এমন নারী, যাকে দেখলে স্বামীর (মন) আনন্দিত হয়। কোন নির্দেশ দিলে তা পালন করে এবং নিজের ও সম্পদের ব্যাপারে কোন অপছন্দীয় কাজ করার মাধ্যমে স্বামীর বিরুদ্ধাচরণ করে না।’ (নাসায়ী)

ফায়দা: আনন্দ, আনুগত্য ও ঐক্য কত বড় উপকার!

৫. হযরত আলী (রাযিঃ) থেকে (দীর্ঘ একটি হাদীসে) বর্ণিত আছে যে, হযরত ফাতিমা (রাযিঃ) এর হাতে এবং বুকে যাঁতা পেষা এবং পানি বহনের কারণে দাগ পড়ে যায়। ঝাড়ুর ধুলা ও চুলার ধোঁয়ায় কাপড় ময়লা হয়ে যায়। কোন এক জায়গা থেকে কিছু দাসী আসে। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট একজন দাসী চান। তখন তিনি ইরশাদ করেন-
‘হে ফাতিমা! আল্লাহকে ভয় করো, নিজের প্রভুর (নির্দেশিত ফরয) কর্তব্য পালন করো এবং নিজের পরিবারের লোকদের কাজ করতে থাকো।’ (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী)

ফায়দা: হযরত ফাতিমা (রাযিঃ) থেকে বড় কোন নারী আছে যে, সে ঘরের কাজ করবে না। তাই ঘরের কাজ করা কত বড় কল্যাণকর।

৬. হযরত মা’কাল বিন ইয়াসার (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘এমন নারীকে বিবাহ করো, যে প্রেমময়ী এবং (অধিক) সন্তান প্রসবা (সে বিধবা হলে পূর্বের বিবাহ দ্বারা এটি অনুমান করা যাবে আর কুমারী হলে তার সুস্বাস্থ্য এবং তার বংশের বিবাহিতা নারীদের অবস্থা থেকে তা অনুমান করা যাবে)। কারণ, আমি তোমাদের আধিক্য দ্বারা অন্যান্য উম্মাতের উপর গর্ব করবো (যে, আমার উম্মত এত বেশী) (আবু দাউদ, নাসায়ী)

ফায়দা: সন্তান হওয়াও কত বড় উপকার। পার্থিব জীবনেও-কারণ, তারা মা-বাবার সর্বাধিক সেবাকারী, সাহায্যকারী, অনুগত ও কল্যাণকামী হয় (যেমনটি সচরাচর দেখা যায়)। আর মৃত্যুর পর তার জন্য দু’আও করে। (মিশকাত, মুসলিম)

আর যদি পরবর্তীতেও সৎ প্রজন্ম অব্যাহত থাকে, তাহলে তার ধর্ম পথের পথিক বংশধর বহুকাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। (দ্বিতীয় রূহ, নম্বর ৫) এবং কিয়ামত দিবসেও-কারণ, যারা শিশুকালে মারা গেছে, তারা তার ক্ষমার ব্যবস্থা করবে। (কিতাবুল জানায়িয) এবং যারা বালেগ হয়ে সৎকর্মশীল হবে তারাও সুপারিশ করবে (তৃতীয় রূহ, নম্বর ৬ ও ৭)। সবচেয়ে বড় কথা হলো-এর দ্বারা মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি হয়। ফলে দুনিয়াতেও শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং কিয়ামত দিবসে আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনন্দিত হয়ে গর্ব করবেন। বিধায় বিবাহ না করা এতগুলো কল্যাণকে বিনষ্ট করা। আর যদি কোন দেশে শরীয়তসম্মত দাসী পাওয়া যায়, তাহলে এ সমস্ত কল্যাণ লাভের ক্ষেত্রে তারাও স্ত্রীতুল্য। যাই হোক, যুক্তিসঙ্গত অপারগতা ছাড়া স্ত্রীহীন জীবনযাপন করার নিন্দা হাদীস শরীফে এসেছে। ইরশাদ হচ্ছে-

৭. হযরত আবু যর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, হযরত উকাফ বিন বাশীর তামীমী (রাযিঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে এলেন। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন- হে উকাফ! তোমার কি স্ত্রী আছে? তিনি উত্তর দিলেন-নেই। তিনি ইরশাদ করলেন- দাসীও নেই। তিনি উত্তর দিলেন-দাসীও নেই। তিনি ইরশাদ করলেন- আল্লাহর অনুগ্রহে তুমি কি সম্পদশালী? তিনি বললেন- আল্লাহর অনুগ্রহে আমি সম্পদশালী। তিনি ইরশাদ করলেন- তাহলে তো তুমি এমতাবস্থায় শয়তানের ভাই। তুমি খৃষ্টান হলে তাদের পাদ্রীদের অন্যতম হতে। তারপর বললেন- ‘আমাদের (মুসলমানদের) পন্থা বিবাহ করা। (কিংবা শরীয়তসম্মত ভাবে দাসী রাখা)। তোমাদের মধ্যে সর্বনিকৃষ্ট হলো, স্ত্রীহীন লোক। শয়তানের নিকট সৎলোকেদের উপর প্রভাব সৃষ্টিকারী নারীদের চেয়ে বড় কোন হাতিয়ার নেই। তবে যারা বিবাহিত, তারা নোংরা বিষয় থেকে নির্মল ও পবিত্র।’ (আহমাদ)

এটা তখন, যখন মনে নারীর চাহিদা থাকবে। কারণ, তখন হালাল ব্যবস্থা না থাকলে হারামের যে ভয় থাকবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। দ্বীন ও দুনিয়ার উপরোক্ত উপকারসমূহ তখনই লাভ হবে, যখন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা থাকবে। আর ভালোবাসা জন্মায় তখন, যখন পরস্পরের হক আদায় করতে থাকে। তাছাড়া শরীয়তে এ সমস্ত হক আদায়ের নির্দেশও রয়েছে। তাই কয়েকটি বড় হকের উল্লেখ করা হচ্ছে। অন্যান্য হক এর দ্বারাই বোঝা যাবে।

স্ত্রীর হকসমূহ:

৮. হযরত আবু মুসা আশআরী (রাযিঃ) থেকে (দীর্ঘ একটি হাদীসে) বর্ণিত আছে যে, হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন এক ব্যক্তির শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করলেন, যার নিকট একজন দাসী ছিলো। সে তাকে উত্তমরূপে (ধর্মীয়) জ্ঞান ও শিষ্টাচার শিক্ষা দিয়েছিলো।
(আইনে মিশকাত, বুখারী, মুসলিম)

ফায়দা: স্ত্রীর হক যে বাঁদীর অধিক, তা বলাই বাহুল্য। বিধায় স্ত্রীকে ইলমে দ্বীন শিক্ষা দেওয়ার ফযীলত অনেক বেশী হবে এটাই স্বাভাবিক। চতুর্থ রূহে এতদসংক্রান্ত কুরআনের নির্দেশ উল্লেখিত হয়েছে।

৯. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘নারীদের সঙ্গে সদাচরণের উপদেশ (দিচ্ছি, তোমরা তা) গ্রহণ করো। কারণ, নারী পাঁজরের বাঁকা হাড় দ্বারা তৈরী হয়েছে। তাই তোমরা তাকে সোজা করতে চাইলে ভেঙ্গে ফেলবে। আর তাকে ভেঙ্গে ফেলা হলো, তালাক দেওয়া। আর যদি তাকে তার অবস্থায় ছেড়ে দাও, তাহলে সে বাঁকাই থাকবে। বিধায় তাদের বিষয়ে সদাচরণের উপদেশ গ্রহণ করো।’ (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী)

ফায়দা: সোজা করার অর্থ হলো, তার কোন কাজই তোমার মনের বিরুদ্ধে হবে না- এ প্রচেষ্টা কখনই সফল হবে না। পরিণতিতে তালাকের পর্যায়ে চলে আসবে। তাই সাধারণ বিষয়সমূহ না ধরা চাই। তাছাড়া অধিক কঠোরতা বা অবহেলা করলে স্ত্রীর মনে কখনো শয়তান ধর্মপরিপন্থী কথা তুলে ধরে। এদিকে সর্বাধিক লক্ষ্য রাখা উচিত।

১০. হযরত হাকিম বিন মুয়াবিয়া (রাযিঃ) স্বীয় পিতা হতে বর্ননা করেন যে, আমি আরয করলাম, হে আল্লাহর রাসূল!
‘আমাদের উপর আমাদের স্ত্রীদের হক কি? তিনি ইরশাদ করলেন, তাদর হক হলো, যখন তোমরা খাবে, তাদেরকেও খাওয়াবে। যখন তোমরা (কাপড়) পরবে, তাদেরকেও পরাবে। তাদের মুখমন্ডলে প্রহার করবে না। (অর্থাৎ, অপরাধ করলেও মুখে আঘাত করবে না, আর বিনা অপরাধে মারা তো সর্বত্রই নিন্দনীয়) তাকে অভিশাপ করবে না, তাকে পরিত্যাগ করবে না। তবে ঘরের মধ্যে (অর্থাৎ, রুষ্ট হয়ে ঘরের বাইরে যাবে না)।’ (আবু দাউদ)

১১. হযরত আবদুল্লাহ বিন যাম’আ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘তোমদের কেউ যেন তার স্ত্রীকে ক্রীতদাসের ন্যায় প্রহার না করে। তারপর হয়ত দিন শেষে তার সঙ্গে সহবাস করবে। (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী)

ফায়দা: অর্থাৎ, তখন কোন মুখে তার সামনে যাবে।

১২. হযরত উম্মে সালামা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে- ‘আমি ও মায়মূনা (রাযিঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় হযরত ইবনে উম্মে মাকতুম (রাযিঃ) (অন্ধ সাহাবী) এলেন। (ঘটনাটি আমাদের উপর পর্দার নির্দেশ হওয়ার পরে ঘটে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন- তোমরা দু’জন পর্দার মধ্যে চলে যাও। আমরা নিবেদন করলাম- তিনি কি অন্ধ নন? তিনি আমাদেরকে দেখবেন না। তিনি ইরশাদ করলেন- ‘তোমরাও কি অন্ধ? তোমরা কি তাকে দেখো না।’ (তিরমিযী, আবু দাউদ)

ফায়দা: এটিও বিবির হক। তাকে না-মাহরাম লোক থেকে এমনভাবে পর্দা করাবে যে, এ তাকে দেখবে না এবং সেও একে দেখবে না। এতে করে স্ত্রীর ধর্মও সংরক্ষতি থাকবে। কারণ, অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে যে, নিজের জন্যে খাস লোকের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর হয়, আর সাধারণ লোকের সঙ্গে সম্পর্ক হয় দুর্বল। তাই পর্দায় থাকার কারণে স্বামীর সাথে সম্পর্ক ও অধিক হবে। আর স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক যত ঘনিষ্ঠ হবে, তার হকও তত অধিক আদায় হবে। বিধায় পর্দায় অবস্থান করায় স্ত্রীর দুনিয়ার লাভও বেশী।

স্বামীর হকসমূহ:

১৩. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘আমি যদি কাউকে সিজদাহ করার নির্দেশ দিতাম তাহলে স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম স্বামীকে সিজদাহ করতে।’

ফায়দা: এ হাদীস দ্বারা স্বামীর কত বড় হক প্রমাণিত হলো!

১৪. হযরত ইবনে আবি আউফা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘সেই পবিত্র সত্তার শপথ! যার হাতে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রাণ, স্ত্রী ততক্ষণ পর্যন্ত স্বীয় প্রভুর হক আদায় করতে পারবে না, যতক্ষণ না সে নিজ স্বামীর হক আদায় করবে।’ (ইবনু মাজা)

ফায়দাঃ অর্থাৎ, শুধুমাত্র নামায রোযা করে একথা মনে করে বসবে না যে, আমি আল্লাহ তাআলার হক আদায় করেছি। স্বামীর হক আদায় করা ছাড়া ঐ হকও পরিপূর্ণ আদায় হবে না।

১৫. হযরত ইবনু উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘দুজন মানুষের নামায তার মাথার উপরে ওঠে না (অর্থাৎ, কবুল হয় না) ঐ গোলাম যে তার মনীব থেকে পলায়ন করেছে যতক্ষণ না সে তাদের নিকট ফিরে আসে। ঐ নারীর যে তার স্বামীর অবাধ্য হয়। যতক্ষণ না সে তা থেকে ফিরে আসে।’
(আওসাত, সগীর, তাবরানী)
এতক্ষণ পর্যন্ত বিবাহের গুরুত্ব ও তার হকসমূহের আলোচনা ছিলো। তবে যদি বিবাহের প্রতিবন্ধক জটিল কোন সমস্যা থাকে তাহলে বিবাহ করা পুরুষের জন্য জরুরী থাকে না, নারীর জন্যও জরূরী থাকে না। সম্মুখের হাদীসসমূহে এ ধরনের কিছু জটিলতার বর্ণনা রয়েছে।

১৬. হযরত আবু সা’য়ীদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, এক ব্যক্তি তার মেয়েকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট নিয়ে এসে নিবেদন করলো, এটি আমার মেয়ে। সে বিবাহ করতে অস্বীকার করছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেয়েটিকে বললেন: (বিবাহের বিষয়ে) তোমার বাবার কথা মেনে নাও। সে বললো, ঐ সত্তার শপথ যিনি আপনাকে সত্য ধর্ম দিয়ে প্রেরণ করেছেন। আমি বিবাহ করবো না যতক্ষণ না আপনি আমাকে বলেন যে, স্ত্রীর উপর স্বামীর হক কি? তখন তিনি কয়েকটি বড় বড় হকের কথা উল্লেখ করলেন। তখন মেয়েটি বললো: ঐ সত্তার শপথ, যিনি আপনাকে সত্যধর্ম দিয়ে পাঠিয়েছেন! আমি কখনো বিবাহ করবো না। তিনি ইরশাদ করলেন: প্রাপ্তবয়স্কা নারীর বিবাহ তার অনুমতি ছাড়া দিওনা। (বাযযার)

ফায়দা: মেয়েটির সমস্যা ছিলো, সে স্বামীর হক আদায় করতে পারবে না বলে আশংকা করছিলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বিবাহে বাধ্যও করেননি।

১৭. হযরত আউফ বিন মালিক আশজায়ী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে- ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- আমি এবং ঐ নারী, যার গন্ড (পরিশ্রমের ফলে)বিবর্ণ হয়ে গেছে, কিয়ামত দিবসে এমনভাবে (পাশাপাশি) অবস্থান করবো, যেমন মধ্যমা ও তর্জনী (পাশাপাশি অবস্থান করে)। অর্থাৎ, এমন নারী, যে বিধবা হয়েছে এবং সে প্রভাব-প্রতিপত্তি ও রুপ–গুণেরও অধিকারিণী (যাকে বিবাহ করার অনেক প্রার্থী আছে, কিন্ত্ত) সে নিজেকে এতীমদের সেবাযত্নের জন্য আবদ্ধ রাখলো। এমনকি তারা (বড় হয়ে) পৃথক হয়ে গেলো বা মরে গেলো।’ (আবু দাউদ)

ফায়দা: এটি তখন, যখন নারীর এ আশংকা হয় যে, অন্য জায়গায় বিবাহ করলে সন্তানরা ধ্বংস হয়ে যাবে। প্রথম হাদীসে প্রথম বিবাহের এবং দ্বিতীয় হাদীসে দ্বিতীয় বিবাহের সমস্যা তুলে ধরা হয়েছে। এ সমস্ত সমস্যা নারীদের ক্ষেত্রে। সম্মুখে পুরুষদের সমস্যা উল্লেখ করা হচ্ছে।

১৮. হযরত ইয়াহইয়া বিন ওয়াকিদ (রাযিঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- যখন একশ আশি বছর হবে, (অর্থাৎ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগ থেকে প্রায় পৌনে দু’শ বছর অতিক্রান্ত হবে, যখন ফেতনা প্রচুর পরিমাণে হবে-আর কোন কোন বর্ণনায় দু’শ বছরের কথা এসেছে- ভগ্নাংশ বাদ দিলে উভয় হাদীসের অর্থ একই দাঁড়ায়)। আমি (তখন) আমার উম্মতকে অবিবাহিত থাকার এবং জনমানবের সম্পর্ক পরিত্যাগ করে পর্বতচূড়ায় অবস্থান করার অনুমতি দিচ্ছি। (রাযীন)

ফায়দা: এ হাদীসের বিস্তারিত অর্থ সম্মুখে আসছে।

১৯. হযরত ইবনে মাসউদ ও হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-মানুষের উপর এমন এক সময় আসবে, যখন মানুষের ধ্বংস তার স্ত্রী, মাতা-পিতা ও সন্তান-সন্ততির হাতে থাকবে। কারণ, এরা তাকে অভাবের কারণে লজ্জা দিবে এবং এমন সব বস্ত্তর ফরমায়েশ করবে, যার বোঝা সে বহন করতে পারবে না। পরিণতিতে সে এমন সব কাজের মধ্যে প্রবেশ করবে, যার মধ্যে তার দ্বীন হাতছাড়া হবে। পরিশেষে এ ব্যক্তি ধ্বংস হবে।
(আইনে তাখরীজে ইরাকী)

ফায়দা: এ সমস্যার সারকথা স্পষ্ট যে, যখন দ্বীনের ক্ষতির আশংকা জোরালো হবে।

কিছু কিছু মানুষ আছে, যারা হীন মনোবলের কারণে বিবাহ করে না এবং অন্যের দ্বারস্থ হয়ে পড়ে থাকে তাদের সম্পর্কে নিম্নের হাদীস এসেছে।

২০. হযরত ইয়ায (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-পাঁচ ব্যক্তি জাহান্নামী- (তন্মধ্য থেকে) এক ঐ হীন মনোবল ব্যক্তি, যার (দ্বীনের) জ্ঞান নেই। যারা তোমাদের মধ্যে পরান্নভোজী হয়ে থাকে, না তারা পরিবার রাখে না, না সম্পদ রাখে। (মুসলিম)

স্ত্রীদের ন্যায় সন্তান-সন্ততিরও হক রয়েছে। সেগুলো পালনের হুকুমও এসেছে এবং সেগুলো পুরা করার দ্বারা আশাও করা যায় যে, তারা অধিকহারে মাতা-পিতার খেদমত করবে। তাদের হকসমূহের মধ্য থেকে দ্বীন সংক্রান্ত হকসমূহের উল্লেখ দ্বিতীয় রূহের ৪,৬ ও ৭ এবং তৃতীয় রূহের ৬ ও ৭ এ করা হয়েছে। তাদের পার্থিব হক এই যে, যে সমস্ত জিনিস দ্বারা পার্থিব উপকার ও শান্তি লাভ হয়, তাও তাদেরকে শিক্ষা দিবে।

২১. হযরত ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- নিজের পুত্রদেরকে সাঁতার কাটা এবং তীর চালনা শিক্ষা দাও এবং কন্যাদেরকে সূতা কাটা শিক্ষা দাও।’ (মাকাসিদ, বাইহাকী)

ফায়দা: এ তিন বিষয়ের নাম উদাহরণস্বরুপ উল্লেখ করা হয়েছে। উদ্দেশ্য হলো, যাবতীয় প্রয়োজনীয় বিষয় শিক্ষা দাও।

উপরোক্ত হাদীসসমূহ জামউল ফাওয়ায়িদ গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে। আর যে কয়টি হাদীস অন্য কিতাব থেকে নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর নামের সঙ্গে ‘আইন’ শব্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে।