হাদীসের আলোকে ফরজ-নফল রোযার গুরুত্ব, ফযীলত ও আনুষঙ্গিক বিষয়াবলী

উৎস: রিয়াদুস সালেহীন
بَابُ وُجُوْبِ صَوْمِ رَمَضَانَ
وَبَيَانِ فَضْلِ الصِّيَامِ وَمَا يَتَعَلَّقُ بِهِ
রমযানের রোযা ফরয, তার ফযীলত ও আনুষঙ্গিক জ্ঞাতব্য বিষয়াবলী
মহান আল্লাহ বলেন,
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٨٣
أَيَّامٗا مَّعۡدُودَٰتٖۚ فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوۡ عَلَىٰ سَفَرٖ فَعِدَّةٞ مِّنۡ أَيَّامٍ أُخَرَۚ وَعَلَى ٱلَّذِينَ يُطِيقُونَهُۥ فِدۡيَةٞ طَعَامُ مِسۡكِينٖۖ فَمَن تَطَوَّعَ خَيۡرٗا فَهُوَ خَيۡرٞ لَّهُۥۚ وَأَن تَصُومُواْ خَيۡرٞ لَّكُمۡ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ١٨٤ شَهۡرُ رَمَضَانَ ٱلَّذِيٓ أُنزِلَ فِيهِ ٱلۡقُرۡءَانُ هُدٗى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَٰتٖ مِّنَ ٱلۡهُدَىٰ وَٱلۡفُرۡقَانِۚ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ ٱلشَّهۡرَ فَلۡيَصُمۡهُۖ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوۡ عَلَىٰ سَفَرٖ فَعِدَّةٞ مِّنۡ أَيَّامٍ أُخَرَۗ ١٨٥ (البقرة: ١٨٣، ١٨٥)
অর্থাৎ হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য সিয়ামের (রোযার) বিধান দেওয়া হল, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা সংযম-শীল হতে পার। (রোযা) নির্দিষ্ট কয়েক দিনের জন্য। তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে বা সফর অবস্থায় থাকলে অন্য দিনে এ সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আর যারা রোযা রাখার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও রোযা রাখতে চায় না (যারা রোযা রাখতে অক্ষম) তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খাদ্য দান করবে। পরন্তু যে ব্যক্তি খুশীর সাথে সৎকর্ম করে, তা তার জন্য কল্যাণকর হয়। আর যদি তোমরা রোযা রাখ, তাহলে তা তোমাদের জন্য বিশেষ কল্যাণ-প্রসূ; যদি তোমরা উপলব্ধি করতে পার। রমযান মাস, এতে মানুষের দিশারী এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী-রূপে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। অতএব তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ মাস পাবে, সে যেন এ মাসে অবশ্যই রোযা পালন করে। আর যে অসুস্থ অথবা মুসাফির থাকে, তাকে অন্য দিনে এ সংখ্যা পূরণ করতে হবে। (সূরা বাকারাহ ১৮৩- ১৮৫ আয়াত)
1/1223 وَعَن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «قَالَ اللهُ – عَزَّ وَجَلَّ -: كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ لَهُ إِلاَّ الصِّيَام، فَإِنَّهُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ، وَالصِّيَامُ جُنَّةٌ، فَإِذَا كَانَ يَومُ صَوْمِ أَحَدِكُمْ فَلاَ يَرْفُثْ وَلاَ يَصْخَبْ فَإِنْ سَابَّهُ أَحَدٌ أَوْ قَاتَلَهُ فَلْيَقُلْ: إنِّي صَائِمٌ . وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَخُلُوْفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللهِ مِنْ رِيحِ المِسْكِ . لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ يَفْرَحُهُمَا: إِذَا أَفْطَرَ فَرِحَ بِفِطرِهِ، وَإِذَا لَقِيَ رَبَّهُ فَرِحَ بِصَوْمِهِ». متفقٌ عَلَيْهِ، وهذا لفظ روايةِ البُخَارِي.
وفي روايةٍ لَهُ: «يَتْرُكُ طَعَامَهُ، وَشَرَابَهُ، وَشَهْوَتَهُ مِنْ أَجْلِي، الصِّيَامُ لِي وَأنَا أَجْزِي بِهِ، وَالحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا».
وفي رواية لمسلم: «كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ يُضَاعَفُ، اَلْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا إِلَى سَبْعِمِئَةِ ضِعْفٍ . قَالَ الله تَعَالَى: إِلاَّ الصَّوْمَ فَإِنَّهُ لِي وَأنَا أَجْزِي بِهِ؛ يَدَعُ شَهْوَتَهُ وَطَعَامَهُ مِنْ أَجْلِي. لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ: فَرْحَةٌ عِنْدَ فِطْرِهِ، وَفَرْحَةٌ عِنْدَ لِقَاءِ رَبِّهِ . وَلَخُلُوفُ فِيهِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللهِ مِنْ رِيحِ المِسْكِ».
১/১২২৩। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মহান আল্লাহ বলেন, ‘আদম সন্তানের প্রতিটি সৎকর্ম তার জন্যই; কিন্তু রোযা স্বতন্ত্র, তা আমারই জন্য, আর আমিই তার প্রতিদান দেব।’ রোযা ঢাল স্বরূপ অতএব তোমাদের কেউ যেন রোযার দিনে অশ্লীল না বলে এবং হৈ-হট্টগোল না করে। আর যদি কেউ তাকে গালি-গালাজ করে অথবা তার সাথে লড়াই-ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, ‘আমি রোযা রেখেছি।’ সেই মহান সত্তার শপথ! যার হাতে মুহাম্মদের জীবন আছে, নিঃসন্দেহে রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মৃগনাভির সুগন্ধ অপেক্ষা বেশী উৎকৃষ্ট। রোজাদারের জন্য দু’টি আনন্দময় মুহূর্ত রয়েছে, তখন সে আনন্দিত হয়; (১) যখন সে ইফতার করে (ইফতারের জন্য সে আনন্দিত হয়)। আর (২) যখন সে তার প্রতিপালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, স্বীয় রোযার জন্য সে আনন্দিত হবে।” (বুখারী ও মুসলিম, এই শব্দগুলি বুখারীর)
বুখারীর অন্য বর্ণনায় আছে, ‘সে (রোজাদার) পানাহার ও যৌনাচার বর্জন করে একমাত্র আমারই জন্য। রোযা আমার জন্যই। আর আমি নিজে তার পুরস্কার দেব। আর প্রত্যেক নেকী দশগুণ বর্ধিত হয়।’
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, “আদম সন্তানের প্রত্যেক সৎকর্ম কয়েকগুণ বর্ধিত করা হয়। একটি নেকী দশগুণ থেকে নিয়ে সাতশত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘কিন্তু রোযা ছাড়া। কেননা, তা আমার উদ্দেশ্যে (পালিত) হয়। আর আমি নিজেই তার পুরস্কার দেব। সে পানাহার ও কাম প্রবৃত্তি আমার (সন্তুষ্টি অর্জনের) উদ্দেশ্যেই বর্জন করে।’ রোজাদারের জন্য দু’টি আনন্দময় মুহূর্ত রয়েছে। একটি আনন্দ হল ইফতারের সময়, আর অপরটি তার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাৎকালে। আর নিশ্চয় তার মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মৃগনাভির সুগন্ধ অপেক্ষা অধিক উৎকৃষ্ট।”
2/1224 وَعَنْه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَنْ أَنْفَقَ زَوْجَيْنِ فِي سَبِيلِ اللهِ نُودِيَ مِنْ أَبْوَابِ الجَنَّةِ، يَا عَبْدَ اللهِ هَذَا خَيرٌ، فَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الصَّلاَةِ دُعِيَ مِنْ بَابِ الصَّلاَةِ، وَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الجِهَادِ دُعِيَ مِنْ بَابِ الجِهَادِ، وَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الصِّيَامِ دُعِيَ مِنْ بَابِ الرَّيَّانِ، وَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الصَّدَقَةِ دُعِيَ مِنْ بَابِ الصَّدَقَةِ». قَالَ أَبُو بَكْرٍ: بِأَبي أَنْتَ وَأُمِّي يَا رَسُولَ اللهِ ! مَا عَلَى مَنْ دُعِيَ مِنْ تِلْكَ الأَبْوَابِ مِنْ ضَرورةٍ، فَهَلْ يُدْعَى أَحَدٌ مِنْ تِلْكَ الأَبوَابِ كُلِّهَا ؟ فَقَالَ: «نَعَمْ، وَأَرْجُو أنْ تَكُونَ مِنْهُمْ».متفقٌ عَلَيْهِ
২/১২২৪। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জোড়া বস্তু ব্যয় করে, তাকে জান্নাতের দরজাসমূহ থেকে ডাকা হবে, ‘হে আল্লাহর বান্দাহ! এ দরজাটি উত্তম (এদিকে এস)।’ সুতরাং যে নামাযীদের দলভুক্ত হবে, তাকে নামাযের দরজা থেকে ডাক দেওয়া হবে। আর যে মুজাহিদদের দলভুক্ত হবে। তাকে জিহাদের দরজা থেকে ডাকা হবে। যে রোযাদারদের দলভুক্ত হবে, তাকে ‘রাইয়ান’ নামক দরজা থেকে আহ্বান করা হবে। আর দাতাকে দানের দরজা থেকে ডাকা হবে।” এ সব শুনে আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমার মাতা-পিতা আপনার জন্য কুরবান হোক, যাকে ডাকা হবে, তার ঐ সকল দরজার তো কোন প্রয়োজন নেই। (কেননা মুখ্য উদ্দেশ্য হল, কোনভাবে জান্নাতে প্রবেশ করা।) কিন্তু এমন কেউ হবে কি, যাকে উক্ত সকল দরজাসমূহ থেকে ডাকা হবে?’ তিনি বললেন, “হ্যাঁ। আর আশা করি, তুমি তাদের দলভুক্ত হবে।” (বুখারী ও মুসলিম)
3/1225 وَعَنْ سَهلِ بنِ سَعدٍ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «إنَّ في الجَنَّةِ بَاباً يُقَالُ لَهُ: الرَّيَّانُ، يَدْخُلُ مِنْهُ الصَّائِمُونَ يَومَ القِيَامَةِ، لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أحدٌ غَيْرُهُمْ، يقال: أيْنَ الصَّائِمُونَ ؟ فَيَقُومُونَ لاَ يَدخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ، فَإذَا دَخَلُوا أُغْلِقَ فَلَمْ يَدْخُلْ مِنْهُ أَحَدٌ». متفقٌ عَلَيْهِ
৩/১২২৫। সাহল ইবনে সায়াদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “জান্নাতের মধ্যে এমন একটি দরজা আছে, যার নাম হল ‘রাইয়ান’; সেখান দিয়ে কেবল রোযাদারগণই কিয়ামতের দিনে প্রবেশ করবে। তারা ছাড়া আর কেউ সেদিক দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা করা হবে, ‘রোযাদাররা কোথায়?’ তখন তারা দণ্ডায়মান হবে। (এবং ঐ দরজা দিয়ে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে) তারপর যখন তাদের সর্বশেষ ব্যক্তি প্রবেশ করবে, তখন দরজাটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। আর সেখান দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।” (বুখারী ও মুসলিম)
4/1226 وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدرِي رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «مَا مِنْ عَبْدٍ يَصُومُ يَوْماً فِي سَبِيلِ اللهِ إِلاَّ بَاعَدَ اللهُ بِذَلِكَ اليَوْمِ وَجْهَهُ عَنِ النَّارِ سَبْعِينَ خَرِيفَاً». متفقٌ عَلَيْهِ
৪/১২২৬। আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে (অর্থাৎ জিহাদ-কালীন বা প্রভুর সন্তুষ্টি অর্জন-কল্পে) একদিন রোযা রাখবে, আল্লাহ ঐ একদিন রোযার বিনিময়ে তার চেহারাকে জাহান্নাম হতে সত্তর বছর (পরিমাণ পথ) দূরে রাখবেন।” (বুখারী ও মুসলিম)
5/1227 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَاناً وَاحْتِسَاباً، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ» متفقٌ عَلَيْهِ
৫/১২২৭। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি ঈমান সহকারে নেকীর আশায় রমযানের রোযা পালন করে, তার অতীতের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।” (বুখারী ও মুসলিম)
6/1228 وَعَنْه رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «إِذَا جَاءَ رَمَضَانُ، فُتِحَتْ أَبْوَاب الجَنَّةِ، وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ النَّارِ، وَصُفِّدَتِ الشَّيَاطِينُ». متفقٌ عَلَيْهِ
৬/১২২৮। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মাহে রমযানের আগমন ঘটলে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানদেরকে শৃঙ্খলিত করা হয়।” (বুখারী ও মুসলিম)
7/1229 وَعَنْهُ: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «صُومُوا لِرُؤْيَتِهِ، وَأَفْطِرُوا لِرُؤيَتِهِ، فَإِنْ غَبِيَ عَلَيْكُمْ، فَأَكْمِلُوا عِدَّةَ شَعْبَانَ ثَلاَثِينَ». متفقٌ عَلَيْهِ، وهذا لفظ البخاري .
وفي رواية لمسلم: «فَإِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ فَصُومُوا ثَلاَثِينَ يَوْماً»
৬/১২২৯। উক্ত রাবী হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখ এবং চাঁদ দেখে রোযা ছাড়। যদি (কালক্রমে) তোমাদের উপর আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয় (এবং চাঁদ দেখতে না পাওয়া যায়), তাহলে শা’বান (মাসের) গুণতি ত্রিশ পূর্ণ করে নাও।” (বুখারী ও মুসলিম, শব্দাবলী বুখারীর)
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, “তোমাদের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে ত্রিশ দিন রোযা রাখ।”
بَابُ الْجَوْدِ وَفِعْلِ الْمَعْرُوْفِ وَالْإِكْثَارِ مِنَ الْخَيْرِ
فِيْ شَهْرِ رَمَضَانَ وَالزِّيَادَةِ مِنْ ذٰلِكَ فِي الْعَشْرِ الْأَوَاخِرِ مِنْهُ
মাহে রমযানে অত্যাধিক সৎকর্ম ও দান খয়রাত করা তথা এর শেষ দশকে আরও বেশী সৎকর্ম করা প্রসঙ্গে
1/1230 وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَجْوَدَ النَّاسِ، وَكَانَ أَجْوَدَ مَا يَكُونُ فِي رَمَضَانَ حِيْنَ يَلْقَاهُ جِبْريلُ، وَكَانَ جِبْرِيلُ يَلْقَاهُ فِي كُلِّ لَيْلَةٍ مِنْ رَمَضَانَ فَيُدَارِسُهُ القُرْآنَ، فَلَرَسُولُ اللهِ، حِيْنَ يَلْقَاهُ جِبرِيلُ أَجْوَدُ بِالخَيْرِ مِن الرِّيحِ المُرْسَلَةِ. متفقٌ عَلَيْهِ
১/১২৩০। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমস্ত লোকের চেয়ে অধিক দানশীল ছিলেন। আর মাহে রমযানে যখন জিবরাঈল তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন, তখন তিনি আরও বেশী বদান্যতা প্রদর্শন করতেন। জিবরাঈল মাহে রমযানের প্রত্যেক রজনীতে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং তাঁর কাছে কুরআন পুনরাবৃত্তি করতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরাঈলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে অবশ্যই কল্যাণবহ মুক্ত বায়ু অপেক্ষা অধিক দানশীল ছিলেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)
2/1231 وَعَنْ عَائِشَة رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا دَخَلَ العَشْرُ أَحْيَا اللَّيْلَ، وَأَيْقَظَ أَهْلَهُ، وَشَدَّ المِئْزَرَ . متفقٌ عَلَيْهِ
২/১২৩১। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘(রমযানের) শেষ দশক প্রবেশ করলে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং রাতে জাগতেন এবং পরিবার-পরিজনদেরকেও জাগাতেন। আর (ইবাদতের জন্য) কোমর বেঁধে নিতেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)
بَابُ النَّهْيِ عَنْ تَقَدُّمِ رَمَضَانَ بِصَوْمٍمبَعْدَ نِصْفِ شَعْبَانَ إِلَّا لِمَنْ وَصَلَهُ بِمَا قَبْلَهُ، أَوْ وَافَقَ عَادَةً لَّهُ بِأَنْ كَانَ عَادَتُهُ صَوْمَ الْاِثْنَيْنِ وَالْخَمِيْسِ فَوَافَقَهُ
অর্ধ শা’বানের পর রমযানের এক-দু’দিন আগে থেকে রোযা রাখা নিষেধ। তবে সেই ব্যক্তির জন্য অনুমতি রয়েছে যার রোযা পূর্বের রোযার সাথে মিলিত হয়ে অথবা সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখতে অভ্যস্ত হয়ে ঐ দিনে পড়ে
1/1232 عَن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «لاَ يَتَقَدَّمَنَّ أَحَدُكُم رَمَضَانَ بِصَوْمِ يَوْمٍ أَوْ يَوْمَيْنِ، إِلاَّ أَنْ يَكُونَ رَجُلٌ كَانَ يَصُومُ صَومَهُ، فَليَصُمْ ذَلِكَ اليَوْمَ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/১২৩২। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের কেউ যেন রমযান মাসের এক বা দু’দিন আগে (শা’বানের শেষে) রোযা পালন শুরু না করে। অবশ্য সেই ব্যক্তি রোযা রাখতে পারে, যে ঐ দিনে রোযা রাখতে অভ্যস্ত।” (বুখারী ও মুসলিম)
1/1233 وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم :«لاَ تَصُومُوا قَبْلَ رَمضَانَ، صُومُوا لِرُؤيَتِهِ، وَأَفْطِرُوا لِرُؤيَتِهِ، فَإِنْ حَالَتْ دُونَهُ غَيَايَةٌ فَأَكْمِلُوا ثَلاثِينَ يَوْماً». رواه الترمذي، وقال: حديث حسنٌ صحيح
২/১২৩৩। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা রমযানের পূর্বে রোযা রেখো না। তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখ এবং চাঁদ দেখে রোযা ছাড়। আর যদি তার সামনে কোন মেঘ আড়াল করে, তবে (মাসের) ত্রিশ দিন পূর্ণ কর।” (তিরমিযী, হাসান সহীহ)
3/1234 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «إِذَا بَقِيَ نِصْفٌ مِنْ شَعْبَانَ فَلاَ تَصُومُوا». رواه الترمذي، وقال: حديث حسن صحيح
৩/১২৩৪। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন শা’বান মাসের অর্ধেক বাকী থাকবে, তখন তোমরা রোযা রাখবে না।” (তিরমিযী, হাসান সহীহ)
4/1235 وَعَنْ أَبي اليَقَظَانِ عَمَّارِ بن يَاسِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: مَنْ صَامَ اليَوْمَ الَّذِي يُشَكُّ فِيهِ، فَقَدْ عَصَى أَبَا القَاسِمِ صلى الله عليه وسلم . رواه أَبُو داود والترمذي، وقال: حديث حسن صحيح
৪/১২৩৫। আবূ ইয়াক্বাযান আম্মার ইবনে ইয়াসির রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি সন্দেহের দিনে রোযা রাখল, সে অবশ্যই আবুল কাসেম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাফরমানী করল।’ (আবূ দাউদ, তিরমিযী, হাসান সহীহ)
بَابُ مَا يُقَالُ عِنْدَ رُؤْيَةِ الْهِلَالِ
নতুন চাঁদ দেখলে যা বলতে হয়
1/1236 عَن طَلحَةَ بنِ عُبَيدِ اللهِ رضي الله عنه: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ إِذَا رَأَى الهلاَلَ، قَالَ: «اَللهم أَهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالأَمْنِ وَالإيمانِ، وَالسَّلاَمَةِ وَالإسْلاَمِ، رَبِّي وَرَبُّكَ اللهُ، هِلالُ رُشْدٍ وخَيْرٍ» . رواه الترمذي، وقال :حديث حسن
১/১২৩৬। ত্বালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নতুন চাঁদ দেখতেন তখন এই দো‘আ পড়তেন,
“আল্লা-হুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল আমনি অলঈমা-নি অসসালা-মাতি অলইসলা-ম, রাববী অরাববুকাল্লা-হ, (হিলালু রুশদিন অখায়র)।”
অর্থ- হে আল্লাহ! তুমি ঐ চাঁদকে আমাদের উপর উদিত কর নিরাপত্তা, ঈমান, শান্তি ও ইসলামের সাথে। (হে চাঁদ) আমার ও তোমার প্রতিপালক আল্লাহ। (হেদায়েত ও কল্যাণময় চাঁদ!) (তিরমিযী-হাসান, কিন্তু বন্ধনী-ঘেরা শব্দগুলি তিরমিযীতে নেই।)
بَابُ فَضْلِ السُّحُوْرِ وَتَأْخِيْرِهِ مَا لَمْ يَخْشَ طُلُوْعَ الْفَجْرِ
সেহরি খাওয়ার ফযীলত। যদি ফজর উদয়ের আশংকা না থাকে, তাহলে তা বিলম্ব করে খাওয়া উত্তম
1/1237 عَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم :«تَسَحَّرُوا ؛ فَإِنَّ فِي السُّحُورِ بَرَكَةً». متفقٌ عَلَيْهِ
১/১২৩৭। আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা সেহরি খাও। কেননা, সেহরিতে বরকত নিহিত আছে।” (বুখারী ও মুসলিম)
2/1238. وَعَنْ زَيدِ بنِ ثَابِتٍ رضي الله عنه، قَالَ: تَسَحَّرْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، ثُمَّ قُمْنَا إِلَى الصَّلاَةِ . قِيلَ: كَمْ كَانَ بَينَهُمَا ؟ قَالَ: قَدْرُ خَمْسِينَ آيةً . متفقٌ عَلَيْهِ
২/১২৩৮। যায়েদ ইবনে সাবেত রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সেহরি খেয়েছি, অতঃপর নামাযে দাঁড়িয়েছি।’ তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, ‘ওই দুয়ের (নামায ও সেহরির) মাঝখানে ব্যবধান কতক্ষণ ছিল?’ তিনি বললেন, ‘(প্রায়) পঞ্চাশ আয়াত পড়ার মত সময়।’ (বুখারী ও মুসলিম)
3/1239 وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: كَانَ لِرَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم مُؤَذِّنَانِ: بِلاَلٌ وَابْنُ أُمِّ مَكْتُومٍ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «إِنَّ بِلاَلاً يُؤَذِّنُ بِلَيْلٍ، فَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يُؤَذِّنَ ابْنُ أُمِّ مَكْتُومٍ». قَالَ: وَلَمْ يَكُنْ بَيْنَهُمَا إِلاَّ أَنْ يَنْزِلَ هَذَا وَيَرْقَى هَذَا. متفقٌ عَلَيْهِ
৩/১২৩৯। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দু’জন মুয়াজ্জিন ছিলেন; বিলাল ও ইবনে উম্মে মাকতূম। একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “বিলাল যখন রাতে আযান দেবে, তখন তোমরা পানাহার (সেহরি ভক্ষণ) কর; যতক্ষণ পর্যন্ত না ইবনে উম্মে মাকতূম আযান দেবে।” (ইবনে উমার) বলেন, ‘আর তাঁদের উভয়ের আযানের মাঝে এতটুকু ব্যবধান ছিল যে, উনি নামতেন, আর ইনি ছড়তেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)
* ((আলেমগণ বলেন, ‘ইনি নামতেন এবং উনি চড়তেন’-এর অর্থ হল, বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু ফজরের পূর্বে (সেহরির) আযান দিতেন, অতঃপর দো‘আ ইত্যাদির মাধ্যমে অপেক্ষা করে ফজর উদয় হওয়া লক্ষ্য করতেন। সুতরাং তিনি ফজর উদয় নিকটবর্তী লক্ষ্য করলে তিনি নেমে (অন্ধ সাহাবী) ইবনে উম্মে মাকতূমকে খবর দিতেন। তিনি ওযু ইত্যাদি করে প্রস্তটি নিতেন। অতঃপর (নির্দিষ্ট উঁচু জায়গায়) চড়ে আযান দিতে শুরু করতেন।))
4/1240 وَعَنْ عَمرِو بنِ العَاص رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «فَصْلُ مَا بَيْنَ صِيَامِنَا وصِيَامِ أَهْلِ الكِتَابِ، أَكْلَةُ السَّحَرِ». رواه مسلم
৪/১২৪০। আমর ইবন আস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমাদের রোযা ও কিতাব-ধারীদের (ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদের) রোযার মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, সেহরি খাওয়া।” (মুসলিম)
بَابُ فَضْلِ تَعْجِيْلِ الْفِطْرِ وَمَا يُفْطِرُ عَلَيْهِ وَمَا يَقُوْلُهُ بَعْدَ الْإِفْطَارِ
সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে দেরী না করে ইফতার করার ফযীলত, কোন খাদ্য দ্বারা ইফতার করবে ও তার পরের দো‘আ
1/1241 عَن سَهلِ بنِ سَعدٍ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «لاَ يَزَالُ النَّاسُ بِخَيْرٍ مَا عَجَّلُوا الفِطْرَ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/১২৪১। সাহাল ইবনে সায়াদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যতদিন পর্যন্ত মুসলমানেরা শীঘ্র ইফতার করবে ততদিন তারা কল্যাণের মধ্যে থাকবে।” (বুখারী ও মুসলিম)
2/1242 وَعَنْ أَبي عطِيَّةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَ قَالَ: دَخَلْتُ أَنَا وَمَسْرُوقٌ عَلَى عَائِشَة رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، فَقَالَ لَهَا مَسْرُوق: رَجُلاَنِ مِنْ أَصْحَابِ مُحَمَّدٍ، كِلاَهُمَا لاَ يَألُو عَنِ الخَيْرِ ؛ أَحَدُهُمَا يُعَجِّلُ المَغْرِبَ وَالإِفْطَارَ، وَالآخَرُ يُؤَخِّرُ المَغْرِبَ وَالإِفْطَارَ ؟ فَقَالَتْ: مَنْ يُعَجِّلُ المَغْرِبَ وَالإِفْطَارَ ؟ قَالَ: عَبْدُ اللهِ – يعني: ابن مسعود – فَقَالَتْ: هَكَذَا كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَصْنَعُ . رواه مسلم
২/১২৪২। আবূ আত্বিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ও মাসরূক আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার নিকট উপস্থিত হলাম। মাসরুক তাঁকে বললেন, ‘মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহচরদের মধ্যে দু’জন সহচর কল্যাণের ব্যাপারে আদৌ ত্রুটি করেন না। তাঁদের একজন মাগরিব ও ইফতার সত্বর সম্পাদন করেন এবং অপরজন মাগরিব ও ইফতার দেরীতে সম্পাদন করেন।’ এ কথা শুনে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কে মাগরিব ও ইফতার সত্বর করেন?’ তিনি বললেন, ‘আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু।’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপই করতেন।’ (মুসলিম)
3/1243 وَعَنْ أَبي هُريرَةَ رضي الله عنهقالَ: قالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قال اللهُ عَزَّ وَجَلَّ: { أَحَبُّ عِبَادِي إِليَّ أَعْجَلُهُمْ فِطْراً } رواه الترمذي وقالَ: حَديثٌ حسنٌ .
৩/১২৪৩। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমার বান্দাদের মধ্যে যারা দ্রুত ইফতার করে তারাই আমার নিকট বেশি পছন্দনীয়। হাদিসটি দুর্বল (তিরমিযী হাদিসটিকে হাসান বলেছেন)
4/1244 وَعَنْ عُمَرَ بنِ الخَطَّابِ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «إِذَا أَقْبَلَ اللَّيْلُ مِنْ هَاهُنَا، وَأَدْبَرَ النَّهَارُ مِنْ هَاهُنَا، وَغَرَبَتِ الشَّمْسُ، فَقَدْ أَفْطَر الصَّائِمُ». متفقٌ عَلَيْهِ
৪/১২৪৪। উমার ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন রাত্রি এ (পূর্ব) দিক থেকে আগমন করবে এবং দিন এ (পশ্চিম) দিক থেকে প্রস্থান করবে এবং সূর্য ডুবে যাবে, তখন অবশ্যই রোজাদার ইফতার করবে।” (বুখারী ও মুসলিম)
5/1245 وَعَنْ أَبي إِبرَاهِيمَ عَبدِ اللهِ بنِ أَبي أَوفَى رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: سِرْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، وَهُوَ صَائِمٌ، فَلَمَّا غَرَبَتِ الشَّمْسُ، قَالَ لِبَعْضِ القَوْمِ: «يَا فُلاَنُ انْزِلْ فَاجْدَحْ لَنَا»، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، لَوْ أَمْسَيْتَ ؟ قَالَ: «انْزِلْ فَاجْدَحْ لَنَا» قَالَ: إِنَّ عَلَيْكَ نَهَاراً، قَالَ: «انْزِلْ فَاجْدَحْ لَنَا» قَالَ: فَنَزَلَ فَجَدَحَ لَهُمْ فَشَرِبَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم، ثُمَّ قَالَ:«إِذَا رَأَيْتُمُ اللَّيْلَ قَدْ أَقْبَلَ مِنْ هَاهُنَا، فَقَدْ أَفْطَرَ الصَّائِمُ» وَأشَارَ بِيَدِهِ قِبَلَ المَشْرِقِ . متفقٌ عَلَيْهِ
৫/১২৪৫। আবূ ইব্রাহীম আব্দুল্লাহ ইবনে আবূ আওফা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, (একবার) আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহচর্যে পথ চলছিলাম, তখন তিনি রোজাদার ছিলেন। অতঃপর যখন সূর্য অস্ত গেল, তখন তিনি সফররত সঙ্গীদের একজনকে বললেন, “হে অমুক! বাহন থেকে নেমে আমাদের জন্য ছাতু ঘুলে দাও।” সে বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! যদি আর একটু সন্ধ্যা করতেন (তাহলে ভাল হত।)’ তিনি বললেন, “তুমি বাহন থেকে নামো এবং আমাদের জন্য ছাতু ঘুলে দাও।” সে বলল, ‘এখনো দিন হয়ে আছে।’ তিনি আবার বললেন, “তুমি নামো এবং আমাদের জন্য ছাতু ঘুলে দাও।” বর্ণনাকারী বলেন, সুতরাং সে নেমে তাঁদের জন্য ছাতু ঘুলে দিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পান করলেন এবং বললেন, “যখন তোমরা প্রত্যক্ষ করবে যে, রাত্রি এ (পূর্ব) দিক থেকে এসে পড়েছে, তখন অবশ্যই রোজাদার ইফতার করবে।” আর সেই সাথে তিনি পূর্বদিকে ইঙ্গিত করলেন। (বুখারী ও মুসলিম)
6/1246 وَعَنْ سَلْمَانَ بنِ عَامِرِ الضَّبِّيِّ الصَّحَابيِّرضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «إِذَا أَفْطَرَ أَحَدُكُمْ، فَلْيُفْطِرْ عَلىٰ تَمْرٍ، فَإِنْ لَمْ يَجِدْ، فَلْيُفْطِرْ عَلىٰ مَاءٍ فَإِنَّهُ طَهُوْرٌ» .
৬/১২৪৬। সালমান ইবনু আমির আয-যাববী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি যখন ইফতার করে তখন তার উচিত খুরমা-খেজুর দিয়ে ইফতার করা। তবে সে যদি খুরমা-খেজুর না পায় তাহলে পানি দিয়ে যেন ইফতার করে, কেননা পানি হচ্ছে পাক-পবিত্র। (তিরমিযি) হাদিসটি দুর্বল। দেখুন: দয়ীফ আবূ দাউদ, তিরমিযী)
7/1247 وَعَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يُفْطِرُ قَبْلَ أَنْ يُصَلِّي عَلَى رُطَبَاتٍ، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ رُطَبَاتٌ فَتُمَيْرَاتٌ، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تُمَيْرَاتٌ حَسَا حَسَوَاتٍ مِنْ مَاءٍ . رواه أَبُو داود والترمذي، وقال:حديث حسن
৭/১২৪৭। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায পড়ার আগে কতিপয় টাটকা পাকা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। যদি টাটকা পাকা খেজুর না পেতেন, তাহলে শুকনো কয়েকটি খেজুর যোগে ইফতার করতেন। যদি শুকনো খেজুরও না হত, তাহলে কয়েক ঢোক পানি পান করতেন।’ (আবূ দাউদ, তিরমিযী হাসান)
ইমাম নাওয়াবী শিরোনামায় দুর কথা উল্লেখ করেছেন, কিন্তু তার হাদিসটি উল্লেখ করেননি। হাদিসটি নিম্নরূপ:-
عَنِ ابنِ عُمَرَ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا أَفْطَرَ قَال: «ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوقُ وَثَبَتَ الأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ». رواه أبو داود
ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইফতার করতেন, তখন এই দো‘আ বলতেন,
“যাহাবায যামা-উ অবতাল্লাতিল উরুক্বু অষাবাতাল আজরু ইন শা-আল্লাহ।”
অর্থাৎ পিপাসা দূরীভূত হল, শিরা-উপশিরা সতেজ হল এবং ইন শাআল্লাহ সওয়াব সাব্যস্ত হল। (আবূ দাউদ)
ُ أَمْرِ الصَّائِمِ بحِفْظِ لِسَانِهِ وَجَوَارِحِهِ عَنِ الْمُخَالَفَاتِ والْمُشَاتَمَةِ وَنَحْوِهَا
পরিচ্ছেদ – ২২৩: রোজাদার নিজ জিভ ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলিকে রোযার পরিপন্থী ক্রিয়াকলাপ তথা গালি-গালাজ ও অনুরূপ অন্য অপকর্ম থেকে বাঁচিয়ে রাখবে।
1/1248 عَن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «إِذَا كَانَ يَوْمُ صَوْمِ أَحَدِكُمْ، فَلاَ يَرْفُثْ وَلاَ يَصْخَبْ، فَإِنْ سَابَّهُ أَحَدٌ أَوْ قَاتَلَهُ، فَلْيَقُلْ: إنِّي صَائِمٌ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/১২৪৮। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন তোমাদের কারো রোযার দিন হবে, সে যেন অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ না করে ও হৈ-হট্টগোল না করে। আর যদি কেউ গালাগালি করে অথবা তার সাথে লড়াই ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে যে, ‘আমি রোজাদার।” (বুখারী ও মুসলিম)
2/1249 وَعَنْهُ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ: صلى الله عليه وسلم«مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّورِ وَالعَمَلَ بِهِ فَلَيْسَ للهِ حَاجَةٌ فِي أَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ». رواه البخاري
২/১২৪৯। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন কোন ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলা ও তার উপর আমল করা পরিহার না করল, তখন আল্লাহর কোন দরকার নেই যে, সে তার পানাহার ত্যাগ করুক।” (বুখারী)
بَابُ فِي مَسَائِلَ مِنَ الصَّوْمِ
রোযা সম্পর্কিত কিছু জ্ঞাতব্য বিষয়
1/1250 عَن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «إِذَا نَسِيَ أَحَدُكُمْ، فَأَكَلَ، أَوْ شَرِبَ، فَلْيُتِمَّ صَوْمَهُ، فَإنَّمَا أطْعَمَهُ اللهُ وَسَقَاهُ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/১২৫০। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন কোন ব্যক্তি ভুলবশত: কিছু খেয়ে বা পান করে ফেলবে, তখন সে যেন তার রোযা (না ভেঙ্গে) পূর্ণ করে নেয়। কেননা, আল্লাহই তাকে খাইয়েছেন এবং পান করিয়েছেন।” (বুখারী ও মুসলিম)
2/1251 وَعَنْ لَقِيطِ بنِ صَبِرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، أَخْبِرْنِي عَنِ الوُضُوءِ ؟ قَالَ: «أَسْبِغِ الوُضُوءَ، وَخَلِّلْ بَيْنَ الأَصَابِعِ، وَبَالِغْ فِي الاسْتِنْشَاقِ، إِلاَّ أَنْ تَكُونَ صَائِماً». رواه أَبُو داود والترمذي، وقال: حديث حسن صحيح
২/১২৫১। লাক্বীত্ব ইবনে সাবেরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নিবেদন করলাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! ওযু সম্পর্কে আমাকে বলুন।’ তিনি বললেন, “পূর্ণাঙ্গরূপে ওযু কর। আঙ্গুলগুলোর মধ্যবর্তী জায়গাগুলো খিলাল কর। সজোরে নাকে পানি টেনে (নাক ঝাড়ো); তবে রোযার অবস্থায় নয়।” (অর্থাৎ রোযার অবস্থায় বেশি জোরে নাকে পানি টানা চলবে না।) (আবূ দাউদ, তিরমিযী হাসান)
3/1252 وَعَنْ عَائِشَة رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يُدْرِكُهُ الفَجْرُ وَهُوَ جُنُبٌ مِنْ أَهْلِهِ، ثُمَّ يَغْتَسِلُ وَيَصُومُ . متفقٌ عَلَيْهِ
৩/১২৫২। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘(কখনো কখনো) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ভোর এভাবে হত যে, তিনি স্ত্রী-মিলন হেতু অপবিত্র অবস্থায় থাকতেন। অতঃপর তিনি গোসল করতেন এবং রোযা করতেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)
4/1253 وَعَنْ عَائِشَة وَأُمِّ سَلَمَةَ رَضِيَ الله عَنهُمَا، قَالَتَا: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يُصْبِحُ جُنُباً مِنْ غَيْرِ حُلُمٍ، ثُمَّ يَصُومُ . متفقٌ عَلَيْهِ
৪/১২৫৩। আয়েশা ও উম্মে সালামাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিনা স্বপ্নদোষে (স্ত্রী সহবাস-জনিত) অপবিত্র অবস্থায় ভোর করতেন, তারপর রোযা পালন করতেন। (বুখারী ও মুসলিম)
بَابُ بَيَانِ فَضْلِ صَوْمِ الْمُحَرَّمِ وَشَعْبَانَ وَالْأَشْهُرِ الْحُرُمِ
মুহাররম, শা’বান তথা অন্যান্য হারাম (পবিত্র) মাসে রোযা রাখার ফযীলত
1/1254 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَال رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم«أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ رَمَضَانَ: شَهْرُ اللهِ المُحَرَّمُ، وَأَفْضَلُ الصَّلاَةِ بَعدَ الفَرِيضَةِ: صَلاَةُ اللَّيْلِ» . رواه مسلم
১/১২৫৪। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মাহে রমযানের পর সর্বোত্তম রোযা, আল্লাহর মাস মুহাররম। আর ফরয নামাযের পর সর্বোত্তম নামায রাতের (তাহাজ্জুদ) নামায।” (মুসলিম)
2/1255 عَن عَائِشَة رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ: لَمْ يَكُنِ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَصُومُ مِنْ شَهْرٍ أَكْثَرَ مِنْ شَعْبَانَ، فَإِنَّهُ كَانَ يَصُومُ شَعْبَانَ كُلَّهُ . وفي رواية: كَانَ يَصُومُ شَعْبَانَ إِلاَّ قَلِيلاً . متفقٌ عَلَيْهِ
২/১২৫৫। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাবান মাস চাইতে বেশি নফল রোযা অন্য কোন মাসে রাখতেন না। নিঃসন্দেহে তিনি পূর্ণ শাবান মাস রোযা রাখতেন।’
অন্য বর্ণনায় আছে, ‘অল্প কিছুদিন ছাড়া তিনি পূর্ণ শা‘বান মাস রোযা রাখতেন।’ (বুখারী-মুসলিম)
3/1256 وعن مجِيبَةَ البَاهِلِيَّةِ عَنْ أَبِيهَا أَوْ عمِّها، أَنَّهُ أَتى رَسولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، ثُمَّ انطَلَقَ فَأَتَاهُ بعدَ سَنَة، وَقَد تَغَيَّرتْ حَالهُ وَهَيْئَتُه، فَقَالَ: يا رَسُولَ اللهِ أَمَا تعْرِفُنِي ؟ قَالَ: «وَمَنْ أَنتَ ؟» قَالَ: أَنَا البَاهِلِيُّ الذي جِئتك عامَ الأَوَّلِ . قَالَ: «فَمَا غَيَّرَكَ، وقَدْ كُنتَ حَسَنَ الهَيئةِ ؟ » قَالَ: ما أَكلتُ طعاماً منذ فَارقْتُكَ إِلاَّ بلَيْلٍ . فَقَال رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم :«عَذّبْتَ نَفسَكَ»، ثُمَّ قَالَ: «صُمْ شَهرَ الصَّبرِ، ويوماً مِنْ كلِّ شَهر» قال: زِدْنـي، فإِنَّ بي قوَّةً، قَالَ: «صُمْ يَوميْنِ» قال: زِدْني، قال: «صُمْ ثلاثَةَ أَيَّامٍ» قالَ: زِدْني . قال: «صُمْ مِنَ الحُرُمِ وَاتْرُكْ، صُمْ مِنَ الحرُم وَاترُكْ، صُمْ مِنَ الحرُمِ وَاتْرُكُ» وقالَ بِأَصَابِعِهِ الثَّلاثِ فَضَمَّهَا، ثُمَّ أَرْسَلَهَا . رواه أبو داود . «و شهرُ الصَّبرِ»: رَمضانُ .
৩/১২৫৬। মুজীবাহ আল-বাহিলিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে তার বাবা বা চাচার সূত্রে বর্ণিত, তার বাবা বা চাচা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হন। অতঃপর তিনি চলে যান এবং একবছর পর পুনরায় উপস্থিত হন। তার অবস্থা ও চেহারা-সুরাত সে সময় (অনেক) পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! আমাকে কি আপনি চিনতে পারছেন না? জবাবে তিনি বললেন, কে তুমি? তিনি বলেন, আমি হলাম সেই বাহিলী, আপনার নিকট প্রথম বছরে এসেছিলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার এ পরিবর্তন কিভাবে হল, তোমার চেহারা-সুরত না বেশ সুন্দর ছিল? বাহিলী উত্তর দেন, আপনার নিকট হতে বিদায় নেয়ার পর থেকে আমি প্রতি রাতে ব্যতীত আর কখনো খাদ্য গ্রহণ করিনি (প্রতিদিন রোযা রেখেছি)। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নিজের জীবনকে তুমি কষ্ট দিয়েছ। অতঃপর বললেন, রমজানে রোযা রাখো, এরপর প্রতি মাসে একদিন করে (রোযা রাখো)। বাহিলী বলল, আরও বেশি করে দিন, কারণ আমার ভিতর এর শক্তি আছে। জবাবে বললেন, ঠিক আছে, প্রতি মাসে দু‘দিন করে। বাহিলী বলেন, আমি অধিক সামর্থ্য রাখি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তবে প্রতি মাসে তিনদিন করে। বাহিলী বলেন, আরও বেশী করুন। জবাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হারাম মাসগুলোয় (যিলক্বদ, যিলহাজ্জ, মুহাররাম ও রজব) রোযা রাখো ও ছেড়ে দাও, হারাম মাসগুলোয় রোযা রাখো ও ছেড়ে দাও, হারাম মাসগুলোয় রোযা রাখো ও ছেড়ে দাও। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর নিজের তিন আঙ্গুল দিয়ে তিনি ইশারা করেন, প্রথমে সেগুলোকে মিলিত করেন, তারপর ছেড়ে দেন (অর্থাৎ তিনদিন রোযা রাখো এবং তিনদিন খাও।
بَابُ فَضْلِ الصَّوْمِ وَغَيْرِهِ فِي الْعَشْرِ الْأَوَّلِ مِنْ ذِي الْحِجَّةِ
যুলহজ্জের প্রথম দশকে রোযা পালন তথা অন্যান্য পুণ্যকর্ম করার ফযীলত
1/1257 وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رضي الله عنه رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم :«مَا مِنْ أَيَّامٍ، العَمَلُ الصَّالِحُ فِيهَا أَحَبُّ إِلَى اللهِ مِنْ هَذِهِ الأَيَّام» يعني أَيَّامَ العَشرِ . قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ، وَلاَ الجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللهِ ؟ قَالَ: «وَلاَ الجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللهِ، إِلاَّ رَجُلٌ خَرَجَ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ، فَلَمْ يَرْجِعْ مِنْ ذَلِكَ بِشَيءٍ». رواه البخاري
১/১২৫৭। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “এই দিনগুলির (অর্থাৎ যুল হিজ্জার প্রথম দশ দিনের) তুলনায় এমন কোন দিন নেই, যাতে কোন সৎকাজ আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়।” লোকেরা বলল, ‘আল্লাহর পথে জিহাদও নয় কি?’ তিনি বললেন, “আল্লাহর পথে জিহাদও নয়। তবে কোন (মুজাহিদ) ব্যক্তি যদি তার জান মালসহ বের হয়ে যায় এবং তার কোন কিছুই নিয়ে আর ফিরে না আসে।” (অর্থাৎ শাহাদত বরণ করে, তাহলে হয়তো তার সমান হতে পারে।) (বুখারী)
بَابُ فَضْلِ صَوْمِ يَوْمِ عَرَفَةَ وَعَاشُوْرَاءَ وَتَاسُوْعَاءَ
আরাফা ও মুহাররম মাসের নবম ও দশম তারিখে রোযা রাখার ফযীলত
1/1258 وَعَنْ أَبي قَتَادَةَ رضي الله عنه، قَالَ: سُئِلَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ صَومِ يَوْمِ عَرَفَةَ، قَالَ: «يُكَفِّرُ السَّنَةَ المَاضِيَةَ وَالبَاقِيَةَ» رواه مسلم
১/১২৫৮। আবূ কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আরাফার দিনে রোযা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে উত্তরে তিনি বললেন, “তার পূর্বের এক বছর ও পরের এক বছরের গোনাহ মোচন করে দেয়।” (মুসলিম)
2/1259 وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رضي الله عنه رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صَامَ يَومَ عَاشُورَاءَ وَأَمَرَ بِصِيامِهِ. متفقٌ عَلَيْهِ
২/১২৫৯। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশুরার (মুহাররম মাসের দশম) দিনে স্বয়ং রোযা রেখেছেন এবং ঐ দিনে রোযা রাখতে আদেশ করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)
3/1260 وَعَنْ أَبي قَتَادَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم سُئِلَ عَنْ صِيامِ يَوْمِ عَاشُورَاءَ، فَقَالَ: «يُكَفِّرُ السَّنَةَ المَاضِيَةَ». رواه مسلم
৩/১২৬০। আবূ কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আশুরার দিনে রোযা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে উত্তরে তিনি বললেন, “তা বিগত এক বছরের গুনাহ মোচন করে দেয়।” (মুসলিম)
4/1261 وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رضي الله عنه رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم «لَئِنْ بَقِيتُ إِلَى قَابِلٍ لأَصُومَنَّ التَّاسِعَ». رواه مسلم
৪/১২৬১। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আগামী বছর যদি আমি বেঁচে থাকি, তাহলে মুহাররম মাসের নবম তারিখে অবশ্যই রোযা রাখব।” (অর্থাৎ নবম ও দশম দু’দিন ব্যাপী রোযা রাখব।) (মুসলিম)
بَابُ اِسْتِحْبَابِ صَوْمِ سِتَّةِ أَيَّامٍ مِّنْ شَوَّالٍ
শাওয়াল মাসের ছ’দিন রোযা পালনের ফযীলত
1/1262 عَن أَبي أَيُّوبَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهُ سِتّاً مِنْ شَوَّالٍ، كَانَ كَصِيَامِ الدَّهْرِ». رواه مسلم
১/১২৬২। আবূ আইয়ূব আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি রমযানের রোযা পালনের পর শওয়াল মাসের ছয়দিন রোযা রাখল, সে যেন সারা বছর রোযা রাখল।” (মুসলিম)
بَابُ اِسْتِحْبَابِ صَوْمِ الْاِثْنَيْنِ وَالْخَمِيْسِ
সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখার ফযীলত
1/1263 عَنْ أَبي قَتَادَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم سُئِلَ عَنْ صَومِ يَوْمِ الاِثْنَيْنِ، فَقَالَ: «ذَلِكَ يَومٌ وُلِدْتُ فِيهِ، وَيَومٌ بُعِثْتُ، أَوْ أُنْزِلَ عَلَيَّ فِيهِ». رواه مسلم
১/১২৬৩। আবূ কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সোমবার দিনে রোযা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, “ওটি এমন একটি দিন, যেদিন আমার জন্ম হয়েছে, যেদিন আমি (নবীরূপে) প্রেরিত হয়েছি অথবা ঐ দিনে আমার প্রতি (সর্বপ্রথম) ‘অহী’ অবতীর্ণ করা হয়েছে।” (মুসলিম)
২/১২৬৪। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “(মানুষের) আমলসমূহ সোম ও বৃহস্পতিবারে (আল্লাহর দরবারে) পেশ করা হয়। তাই আমি ভালবাসি যে, আমার আমল এমন অবস্থায় পেশ করা হোক, যখন আমি রোযার অবস্থায় থাকি।”(তিরমিযী হাসান) ইমাম মুসলিমও এটি বর্ণনা করেছেন, তবে তাতে রোযার উল্লেখ নেই।
3/1265 وَعَنْ عَائِشَة رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَت: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَتَحَرَّى صَومَ الاِثْنَيْنِ وَالخَمِيس . رواه الترمذي، وقال: حديث حسن
৩/১২৬৫। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোম ও বৃহস্পতিবারে রোযা রাখার জন্য সমধিক সচেষ্ট থাকতেন।’ (তিরমিযী হাসান)
بَابُ اِسْتِحْبَابِ صَوْمِ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ مِّنْ كُلِّ شَهْرٍ وَالْأَفْضَلُ صَوْمُهَا فِيْ أَيَّامِ الْبِيْضِ. وَهِيَ الثَّالِثَ عَشَرَ وَالرَّابِعَ عَشَرَ وَالْخَامِسَ عَشَرَ. وَقِيْلَ: الثَّانِيْ عَشَرَ وَالثَّالِثَ عَشَرَ وَالرَّابِعَ عَشَرَ، وَالصَّحِيْحُ الْمَشْهُوْرُ هُوَ الْأَوَّلُ.
প্রত্যেক মাসে তিনটি করে রোযা রাখা মুস্তাহাব
প্রতি মাসে শুক্ল পক্ষের ১৩,১৪ ও ১৫ তারিখে রোযা পালন করা উত্তম।। অন্য মতে ১২,১৩, ও ১৪ তারিখে। প্রথমোক্ত মতটিই প্রসিদ্ধ ও বিশুদ্ধ।
1/1266 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: أَوْصَانِي خَلِيلِي صلى الله عليه وسلم بِثَلاَثٍ: صِيَامِ ثَلاَثَةِ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ، وَرَكْعَتَي الضُّحَى، وَأَنْ أُوتِرَ قَبْلَ أَنْ أنَامَ . متفقٌ عَلَيْهِ
১/১২৬৬। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তিনটি কাজের অসিয়ত করেছেন; প্রত্যেক মাসে তিনটি করে রোযা পালন করা। চাশতের দু’ রাকআত নামায আদায় করা এবং নিদ্রা যাবার পূর্বে বিতির নামায পড়া।’ (বুখারী, মুসলিম)
2/1267 وَعَنْ أَبي الدَّردَاءِ رضي الله عنه، قَالَ: أَوصَانِي حَبِيبِي صلى الله عليه وسلم بِثَلاَثٍ لَنْ أَدَعَهُنَّ مَا عِشْتُ: بِصِيَامِ ثَلاثَةِ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ، وَصَلاَةِ الضُّحَى، وَبِأَنْ لاَ أَنَامَ حَتَّى أُوْتِرَ . رواه مسلم
২/১২৬৭। আবূ দরদা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমার প্রিয় বন্ধু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এমন তিনটি কাজের অসিয়ত করেছেন, যা আমি যতদিন বেঁচে থাকব, কখনোই ত্যাগ করব না; প্রতি মাসে তিনটি করে রোযা পালন করা, চাশতের নামায পড়া এবং বিতির না পড়ে নিদ্রা না যাওয়া।’ (মুসলিম)
3/1268 وَعَنْ عَبدِ اللهِ بنِ عَمْرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ الله عَنهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «صَوْمُ ثَلاَثَةِ أيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ صَوْمُ الدَّهْرِ كُلِّهِ». متفقٌ عَلَيْهِ
৩/১২৬৮। ‘আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনে ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “প্রতি মাসে তিনটি করে রোযা রাখা, সারা বছর ধরে রোযা রাখার সমান।”(বুখারী, মুসলিম)
4/1269 وَعَنْ مُعَاذَةَ العَدَوِيَّةِ: أَنَّهَا سَأَلَتْ عَائِشَة رَضِيَ اللهُ عَنهَا: أَكَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَصُومُ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ ثَلاَثة أيَّامٍ ؟ قَالَت: نَعَمْ . فقلتُ: مِنْ أيِّ الشَّهْرِ كَانَ يَصُومُ ؟ قَالَت: لَمْ يَكُنْ يُبَالِي مِنْ أيِّ الشَّهْرِ يَصُومُ . رواه مسلم
৪/১২৬৯। মুআযাহ আদাভিয়্যাহ কর্তৃক বর্ণিত, তিনি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা কে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আল্লাহর রসূল কি প্রতি মাসে তিনটি করে রোযা রাখতেন?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ।’ আমি বললাম, ‘মাসের কোন কোন দিনে রোযা রাখতেন?’ তিনি বললেন, ‘মাসের যে কোন দিনে রোযা রাখতে তিনি পরোয়া করতেন না।’ (মুসলিম)
5/1270 وَعَنْ أَبي ذَرٍّ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «إِذَا صُمْتَ مِنَ الشَّهْرِ ثَلاَثاً، فَصُمْ ثَلاَثَ عَشْرَةَ، وَأَرْبَعَ عَشْرَةَ، وَخَمْسَ عَشْرَةَ». رواه الترمذي، وقال: حديث حسن
৫/১২৭০। আবূ জর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “প্রত্যেক মাসে (নফল) রোযা পালন করলে (শুক্লপক্ষের) ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে পালন করো।” (তিরমিযী হাসান)
6/1271 وَعَنْ قَتَادَةَ بنِ مِلْحَانَ رضي الله عنه، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَأمُرُنَا بِصِيَامِ أيَّامِ البِيضِ: ثَلاَثَ عَشْرَةَ، وَأَرْبَعَ عَشْرَةَ، وَخَمْسَ عَشْرَةَ . رواه أَبُو داود
৬/১২৭১। ক্বাতাদাহ ইবনে মিলহান রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে শুক্লপক্ষের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোযা রাখার জন্য আদেশ করতেন।’ (আবূ দাউদ)
7/1272 وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رضي الله عنه رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لاَ يُفْطِرُ أَيَّامَ البِيضِ فِي حَضَرٍ وَلاَ سَفَرٍ . رواه النسائي بإسنادٍ حسن
৭/১২৭২। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে ও সফরে কোথাও শুক্লপক্ষের (তিন) দিনের রোযা ছাড়তেন না।’ (নাসাঈ হাসান সূত্রে)
بَابُ فَضْلٍ مَّنْ فَطَّرَ صَائِمًا
وَفَضْلِ الصَّائِمِ الَّذِيْ يُؤْكَلُ عِنْدَهُ، وَدُعَاءِ الْأَكْلِ لِلْمَأْكُوْلِ عِنْدَهُ
রোজাদারকে ইফতার করানোর ফযীলত এবং যে রোজাদারের নিকট কিছু ভক্ষণ করা হয় তার ফযীলত এবং যার নিকট ভক্ষণ করা হয় তার জন্য ভক্ষণকারীর দো‘আ.
1/1273 عَن زَيدِ بنِ خَالِدٍ الجُهَنِيِّ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَنْ فَطَّرَ صَائِماً، كَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِهِ، غَيْرَ أنَّهُ لاَ يُنْقَصُ مِنْ أَجْرِ الصَّائِمِ شَيْءٌ». رواه الترمذي، وقال: حديث حسن صحيح
১/১২৭৩। যায়েদ ইবনে খালেদ জুহানী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে (রোজাদারের) সমান নেকীর অধিকারী হবে। আর তাতে রোজাদারের নেকীর কিছুই কমবে না।” (তিরমিযী হাসান সহীহ)
2/1274 وَعَنْ أُمِّ عُمَارَةَ الأَنْصَارِيَّةِ رَضِيَ اللَّه عَنْهَا، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم دَخَلَ عَلَيْهَا، فَقَدَّمَتْ إِلَيْهِ طَعَاماً، فَقَالَ: كُلِيْ» فَقَالَتْ: إِنِّيْ صَائِمَةٌ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «إِنَّ الصَّائِمَ تُصَلِّيْ عَلَيْهِ الْمَلَائِكَةُ إِذا أُكِلَ عِنْدَهُ حَتّىٰ يَفْرَغُوْا» وَرُبَّمَا قَالَ: حَتّىٰ يَشْبَعُوْا» رواهُ الترمذيُّ وقال: حديثٌ حسنٌ .
২/১২৭৪। উম্মু ‘উমারা আল-আনসারিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন একদিন তার নিকট গেলেন। তার সামনে তিনি খাবার রাখলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমিও খাও। তিনি বললেন, আমি তো রোজাদার। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, রোজাদারের সামনে যখন খাবার আহার-কারীদের খাওয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত বা পেট ভরে না খাওয়া পর্যন্ত তার (রোজাদারের) জন্য ফেরেশতারা ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকেন। (ইমাম তিরমিযী হাদিসটিকে হাসান বলেছেন)
3/1275 وَعَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه:أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم جَاءَ إِلَى سَعْدِ بنِ عُبَادَةَ رضي الله عنه فَجَاءَ بِخُبْزٍ وَزَيْتٍ، فَأَكَلَ، ثُمَّ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم: «أَفْطَرَ عِنْدَكُمُ الصَّائِمُونَ ؛ وَأَكَلَ طَعَامَكُمُ الأَبرَارُ، وَصَلَّتْ عَلَيْكُمُ المَلاَئِكَةُ». رواه أَبُو داود بإسناد صحيح
৩/১২৭৫। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সায়াদ ইবনে উবাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর নিকট উপস্থিত হলেন। তিনি রুটি ও (জয়তুনের) তেল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মুখে পেশ করলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা ভক্ষণ করে এই দো‘আ পড়লেন,
‘আফত্বারা ইন্দাকুমুস স্বা-য়িমূন, অআকালা ত্বাআমাকুমুল আবরার, অস্বাল্লাত আলাইকুমুল মালাইকাহ।’
অর্থাৎ রোজাদারগণ তোমাদের নিকট ইফতার করল। সৎ ব্যক্তিগণ তোমাদের খাবার ভক্ষণ করল এবং ফেরেশতাগণ তোমাদের (ক্ষমার) জন্য দো‘আ করলেন। (আবূ দাউদ বিশুদ্ধে সূত্রে)
كِتَابُ الْاِعْتِكاَفِ
ই‘তিকাফ (ইবাদত-উপাসনার জন্য একান্তে অবস্থান করা)
بَابُ فَضْلِ الْاِعْتِكَافِ
রমযান মাসে ই‘তিকাফ সম্পর্কে
1/1276 عَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَعْتَكِفُ العَشْرَ الأَوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ . متفقٌ عَلَيْهِ
১/১২৭৬। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশকে ই‘তিকাফ করতেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)
2/1277 وَعَنْ عَائِشَة رَضِيَ اللهُ عَنهَا: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَعْتَكِفُ العَشْرَ الأوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ، حَتَّى تَوَفَّاهُ اللهُ تَعَالَى، ثُمَّ اعْتَكَفَ أَزْوَاجُهُ مِنْ بَعْدِهِ . متفقٌ عَلَيْهِ
২/১২৭৭। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশকে মহান আল্লাহ তাঁকে মৃত্যুদান করা পর্যন্ত ই‘তিকাফ করেছেন। তাঁর (তিরোধানের) পর তাঁর স্ত্রীগণ ই‘তিকাফ করেছেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)
3/1278 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَعْتَكِفُ فِي كُلِّ رَمَضَانَ عَشْرَةَ أَيَّامٍ، فَلَمَّا كَانَ العَامُ الَّذِي قُبِضَ فِيهِ اعْتَكَفَ عِشْرِينَ يَوْماً . رواه البخاري
৩/১২৭৮। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক রমযান মাসের (শেষ) দশদিন ই‘তিকাফ করতেন। তারপর যে বছরে তিনি মারা যান, সে বছরে বিশ দিন ই‘তিকাফ করেছিলেন।’ (বুখারী)
Leave a Reply