উৎস:
ইসলাহী নেসাব: তা’লীমুদ্দীন
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (র:)

ঈমানের শাখাসমূহ:

১. আল্লাহর উপর ঈমান আনা।
২. আল্লাহ ছাড়া অন্য সব কিছুকে ধ্বংসশীল মনে করা।
৩. তার ফেরেশতাদের উপর, কিতাবসমূহের উপর, নবীগণের উপর, ভাগ্যের উপর এবং কিয়ামতের উপর ঈমান আনা।
৪. আল্লাহ তাআলার সাথে ভালোবাসা রাখা।
৫. অন্যলোকের প্রতি একমাত্র আল্লাহর জন্য ভালোবাসা রাখা বা বিদ্বেষ পোষণ করা।
৬. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি নিঃস্বার্থভাবে নিষ্কলুষ ভালোবাসা রাখা।
৭. তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। দরূদ শরীফ পাঠ করা এরই অন্তর্ভুক্ত।
৮. হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের অনুসরণ করা।
৯. ‘ইখলাস’ তথা একমাত্র আল্লাহকে খুশী করার জন্য আমল করা। ‘রিয়া’ তথা যশ-খ্যাতি লাভ ও প্রদর্শনের মনোভাব এবং ‘নিফাক’ তথা কপটতা পরিত্যাগ করা ইখলাসেরই অন্তর্ভুক্ত।
১০. আল্লাহকে ভয় করা. তার রহমতের আশাবাদী হওয়া।
১১. গুনাহ থেকে তাওবা করতে থাকা।
১২. আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতসমূহের শোকর আদায় করা।
১৩. অঙ্গীকার পুরা করা।
১৪. কুপ্রবৃত্তি দমন করতে এবং বিপদ-আপদে ধৈর্যধারণ করা।
১৫. আল্লাহর ফয়সালার উপর সন্ত্তষ্ট থাকা।
১৬. বিনয় ও নম্রতা অবলম্বন করা।
১৭. লজ্জা করা।
১৮. বড়দেরকে সম্মান করা এবং ছোটদের প্রতি স্নেহশীল হওয়া।
১৯. অহংকার ও আত্মগরিমা পরিত্যাগ করা।
২০. হিংসা ও বিদ্বেষ পরিহার করা।
২১. রাগ দমন করা। উল্লেখ, এগুলোও বিনয়ের অন্তর্ভুক্ত।
২২. আল্লাহর একত্ববাদের কালিমা অর্থাৎ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলতে থাকা।
২৩. পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করা। এর নিম্ন পরিমাণ দশ আয়াত, মধ্যম একশ’ আয়াত এবং উত্তম এর অধিক তেলাওয়াত করা।
২৪. ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা এবং শিক্ষা দেওয়া।
২৫. দু’আ করা।
২৬. যিকির করা। ইস্তিগফার করা তথা গুনাহ মাফ চাওয়াও যিকিরের অন্তর্ভুক্ত।
২৭. অর্থহীন কাজ ও কথা থেকে দূরে থাকা।
২৮. যাবতীয় নাপাকী থেকে পবিত্র থাকা।
২৯. সতর ঢাকা।
৩০. ফরয ও নফল নামায পড়া।
৩১. যাকাত প্রদান করা এবং নফল সাদকা করা।
৩২. দাস-দাসী মুক্ত করা।
৩৩. দান করা। ক্ষুধার্তকে অন্ন দেওয়া ও মেহমানদারী করা, বদান্যতারই অন্তর্ভুক্ত।
৩৪. ফরয ও নফল রোযা রাখা।
৩৫. ই’তিকাফ করা।
৩৬. কদরের রাত তালাশ করা।
৩৭. হজ্জ ও উমরাহ করা। বাইতুল্লাহর তওয়াফ করা।
৩৮. এমন দেশ ও সংসারকে পরিত্যাগ করা, যেখানে নিজের দ্বীনের উপর অটল থাকা যাবে না। হিজরত করা এরই অন্তর্ভুক্ত।
৩৯. আল্লাহর নামে কৃত মান্নত পুরা করা।
৪০. শপথ করে তার উপর টিকে থাকা। (কসম বা শপথ ভঙ্গ করলে) কসম, শপথ ইত্যাদির কাফফারা আদায় করা।
৪১. বিবাহ করে পবিত্র জীবন লাভ করা।
৪২. পরিবার-পরিজনের হক আদায় করা।
৪৩. মা-বাবার সাথে সদ্ব্যবহার করা।
৪৪. সন্তানকে প্রতিপালন করা এবং সঠিক শিক্ষা দান করা।
৪৫. আত্মীয়দের হক আদায় করা।
৪৬. দাস-দাসীর মনিবের আনুগত্য করা এবং মনিবের দাস-দাসীদের প্রতি দয়া করা।
৪৭. ন্যায়বিচারের সঙ্গে শাসন চালানো।
৪৮. মুসলমানদের জামাআতের অন্তর্গত থাকা।
৪৯. মুসলমান শাসকের আনুগত্য করা।
৫০. মানুষের মধ্যে সংশোধন ও সমঝোতার কাজ করা।
৫১. খারেজী সম্প্রদায় ও বিদ্রোহীদের সাথে লড়াই করা।
৫২. নেক কাজে সহযোগিতা করা। সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করা এরই অন্তর্ভুক্ত।
৫৩. ‘হদ’ তখা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তির বিধান বাস্তবায়ন করা।
৫৪. শর্তসমূহ পাওয়া গেলে দ্বীন প্রচার করা। দারূল ইসলাম তথা মুসলিম দেশের সীমান্ত রক্ষা করা এর অন্তর্ভুক্ত।
৫৫. আমানত আদায় করা। যুদ্ধলব্ধ সম্পদের পঞ্চমাংশ প্রদান করা এর অন্তর্ভুক্ত।
৫৬. অভাবী ব্যক্তিকে ঋণ প্রদান করা।
৫৭. প্রতিবেশীর সাথে সদাচরণ করা।
৫৮. লেনদেন ‍উত্তমভাবে করা।
৫৯. নিজের হক আদায় করার ক্ষেত্রে কঠোরতা না করা।
৬০. হালাল পন্থায় সম্পদ উপার্জন করা। উপযুক্ত ক্ষেত্রে সম্পদ ব্যয় করা।
৬১. অপচয় ও অপব্যয় অর্থাৎ, শরীয়ত পরিপন্থীভাবে অনর্থক সম্পদ নষ্ট না করা।
৬২. সালামের জওয়াব দেওয়া।
৬৩. হাঁচিদাতার জন্য দু’আ করা, অর্থাৎ, ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলা।
৬৪. মানুষকে কষ্ট না দেওয়া।
৬৫. খেল-তামাশা থেকে বিরত থাকা।
৬৬. কষ্টদায়ক জিনিস পথ থেকে সরিয়ে ফেলা।

গুনাহের কিছু পার্থিব ক্ষতি:

১. ইলমে দ্বীন থেকে বঞ্চিত হওয়া।
২. রিযিক কমে যাওয়া।
৩. আল্লাহর প্রতি আতংকভাব হওয়া।
৪. মানুষের প্রতি আতংক সৃষ্টি হওয়া, বিশেষতঃ নেক মানুষের প্রতি।
৫. অধিকাংশ কাজে জটিলতা সৃষ্টি হওয়া।
৬. অন্তরে একপ্রকারের অন্ধকারাচ্ছনতা বিরাজ করা।
৭. মনে ও দেহে দু্র্বলতা আসা।
৮. ইবাদত থেকে বঞ্চিত হওয়া।
৯. হায়াত কমে যাওয়া।
১০. ধারাবাহিকভাবে পাপ কাজ চলতে থাকা।
১১. তাওবার ইচ্ছা দুর্বল হয়ে যাওয়া।
১২. কিছুদিনের মধ্যে গুনাহের খারাবী অন্তর থেকে বের হয়ে যাওয়া।
১৩. পাপ কাজে আল্লাহর দুশমনদের উত্তরাধিকারী হওয়া।
১৪. আল্লাহর নিকট লাঞ্ছিত হওয়া।
১৫. গুনাহের ক্ষতি অন্য মাখলুকের উপর পৌঁছা, ফলে গুনাহগারের প্রতি তাদের অভিশাপ করা।
১৬. বুদ্ধি-বিবেক লোপ পাওয়া।
১৭. গুনাহগার ব্যক্তির উপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অভিশাপ হওয়া।
১৮. ফেরেশতাদের দু’আ থেকে বঞ্চিত হওয়া।
১৯. ফল-ফসলে ঘাটতি হওয়া।
২০. মান-সম্মান চলে যাওয়া।
২১. আল্লাহর বড়ত্ব তার অন্তর থেকে বেরিয়ে যাওয়া।
২২. নেয়ামতসমূহ ছিনিয়ে নেওয়া।
২৩. বিপদের উপর বিপদ হওয়া।
২৪. সম্মান ও প্রশংসার উপাধি ছিন্ন হয়ে তার পরিবর্তে লাঞ্ছনা ও হেয়তার উপাধি পাওয়া।
২৫. শয়তান চেপে বসা।
২৬. মন অস্থির থাকা।
২৭. মৃত্যুর সময় কালিমা মুখে না আসা।
২৮. আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া। যার ফলে তাওবা ছাড়া মৃত্যুবরণ করা।

নেক কাজের কিছু পার্থিব উপকার:

১. রিযিক বৃদ্ধি পাওয়া।
২. বিভিন্ন প্রকারের বরকত হওয়া।
৩. কষ্ট ও পেরেশানী দূর হওয়া।
৪. উদ্দেশ্য সাধন সহজ হওয়া।
৫. জীবন মধুময় হওয়া।
৬. বৃষ্টি হওয়া।
৭. সবধরনের বিপদ কেটে যাওয়া।
৮. আল্লাহ তাআলা সাহায্যকারী হওয়া।
৯. নেককারদের অন্তর শক্তিশালী ও দৃঢ় রাখার জন্য ফেরেশতাদের প্রতি হুকুম হওয়া।
১০. প্রকৃত সম্মান লাভ হওয়া।
১১. মর্যাদা লাভ হওয়া।
১২. অন্তরসমূহে ভালোবাসা সৃষ্টি হওয়া।
১৩. পবিত্র কুরআন তার জন্য রোগ নিরাময়ের কারণ হওয়া।
১৪. অর্থসম্পদের ক্ষতি হলে তার উত্তম বিনিময় লাভ হওয়া।
১৫. ক্রমান্বয়ে নেয়ামত বৃদ্ধি পাওয়া।
১৬. সম্পদ বৃদ্ধি পাওয়া।
১৭. অন্তরে প্রশান্তি ও পরিতৃপ্তি সৃষ্টি হওয়া।
১৮. ভবিষ্যৎ বংশধরের উপকার পৌঁছা।
১৯. ‍দুনিয়ার জীবনে অদৃশ্য সুসংবাদ লাভ হওয়া।
২০. মৃত্যুর মসয় ফেরেশতাদের সুসংবাদ শোনানো।
২১. অভাবের সময় সাহায্য পাওয়া।
২২. সন্দেহ-সংশয় দূর হওয়া।
২৩. শাসন ক্ষমতা টিকে থাকা।
২৪. আল্লাহর রাগ প্রশমিত হওয়া।
২৫. হায়াত বৃদ্ধি পাওয়া।
২৬. অভাব ও অনাহার থেকে বাঁচা।
২৭. অল্প জিনিসে অধিক বরকত হওয়া।