উৎস:
ইসলাহী নেসাব: তা’লীমুদ্দীন
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (র:)

সামাজিকতা ও পানাহার সংক্রান্ত আদব

১. তরকারীতে মাছি পড়লে মাছিটি তরকারীর মধ্যে ডুবিয়ে তারপর ফেলে দাও। তারপর মন চাইলে সে তরকারী খাও। মাছির এক পাখায় রোগ ও অপরটিতে প্রতিষেধক থাকে। বিষাক্ত পাখাটি মাছি আগে ডুবায়। অপর পাখাটি ডুবানোর দ্বারা তার প্রতিষেধক হয়ে যায়।
২. বিসমিল্লাহ বলে খেতে আরম্ভ করো। ডান হাত দ্বারা খাও। নিজের সামনে থেকে খাও। তবে পাত্রে কয়েক প্রকারের খাবার জিনিস-যেমন, কয়েক প্রকারের ফল, মিষ্টান্ন-থাকলে তখন যেটা ইচ্ছা এবং যে দিক থেকে ইচ্ছা নিয়ে খাও।
৩. যে জিনিস খেতে হাতের সব কয়্টা আঙ্গুল ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না তা তিন আঙ্গুল দিয়ে উঠিয়ে খাও এবং আঙ্গুল চেটে খাও। পাত্রের তরকারী শেষ হয়ে গেলে তাও পরিষ্কার করে খাও, এতে বরকত হয়।
৪. হাত থেকে খাদ্য পড়ে গেলে তা উঠিয়ে পরিষ্কার করে খাও। অহংকার করো না, এটি আল্লাহপ্রদত্ত নেয়ামত। সবার ভাগ্যে জোটে না।
৫. খাবার বিনয়ের সাথে খাও। অহংকারীদের ন্যায় ঠেস লাগিয়ে খেয়ো না।
৬. খাদ্যের পরিমাণ কম আর মানুষের সংখ্যা বেশী হলে সবাই অল্প অল্প খাও। এরুপ যেন না হয় যে, একজন পেট পুরে খেলো, আর অন্যজন ক্ষুধার কষ্ট করলো।
৭. খেজুর, আঙ্গুর, মিষ্টি ইত্যাদি জাতীয় জিনিস কয়েক ব্যক্তি এক সাথে খেলে একটি একটি করে নিবে। এক সঙ্গে দু’-দু’টি করে নেওয়া অভদ্রতা ও লালসার প্রমাণ।
৮. পিয়াজ, কাঁচা রসুন বা অন্য কোন দুর্গন্ধময় জিনিস খেয়ে জনসমক্ষে যেয়ো না।
৯. খাদ্যবস্ত্ত মেপে পাকাও। হিন্দু নারীদের ন্যায় অমাপা নিয়ো না যে, আট দিনের জিনিস চার দিনে শেষ হয়ে যায়। কিন্ত্ত অবশিষ্টগুলোর পরিমাপ করো না, এতে বেবরকতি হয়।
১০. খাওয়া শেষ করে রিযিকদাতা আল্লাহ তাআলার শোকর আদায় করো। একইভাবে পানি পান করে শোকর আদায় করো।
১১. খাওয়ার আগে ও পরে হাত ধোও, কুলি করো।
১২. অত্যাধিক গরম খাবার খেয়ো না, এতে ক্ষতি হয়।
১৩. মেহমানের আদর-আপ্যায়ন করো। একদিন কিছুটা আড়ম্বরপূর্ণ খাবার খাওয়াও। তিন দিন পর্যন্ত মেহমানের হক রয়েছে। মেহমানের জন্যও মেজবানের বাড়ীতে এঁটে বসা শোভা পায় না যে, মেজবান বিরক্ত হয়ে যায়।
১৪. সকলে একত্রে খাবার খাও, এতে বরকত হয়।
১৫. খাওয়া শেষ হলে প্রথমে দস্তরখান উঠাও, দস্তরখান রেখে নিজে উঠে যাওয়া আদবের পরিপন্থী। তোমার সাথীর খাওয়া শেষ হওয়ার আগেই তোমার খাওয়া শেষ হলেও তাকে সঙ্গ দাও। অল্প অল্প খেতে থাকো। তুমি উঠে যাওয়ার ফলে যেন সে ক্ষুধার্ত অবস্থায় উঠে না যায়। আর কোন কারণে উঠতেই হলে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নাও।
১৬. মেহমানকে বাড়ীর দরজা পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া সুন্নাত।
১৭. পানি এক শ্বাসে পান করো না, তিন শ্বাসে পান করো এবং শ্বাস গ্রহণের সময় পাত্র মুখ থেকে সরিয়ে ফেলো। ‘বিসমিল্লাহ’ বলে পানি পান করো এবং পান করে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলো।
১৮. মশকের সাথে মুখ লাগিয়ে পানি পান করো না। একইভাবে যে পাত্র থেকে হঠাৎ বেশী পরিমাণ পানি বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে, বা সাপ-বিচ্ছু আসার সম্ভাবনা রয়েছে, তাতেও মুখ লাগিয়ে পান করো না।
১৯. বিনা প্রয়োজনে দাঁড়িয়ে পানি পান করো না।
২০. স্বর্ণ-চাঁদির পাত্রে পানাহার করা হারাম।
২১. পানি পান করে অন্যদেরকেও দিতে হলে প্রথমে তোমার ডানের জনকে তারপর তার ডানের জনকে দাও। এভাবে পালা শেষ করা উচিত।
২২. পাত্রের ভাঙ্গা দিক থেকে পানি পান করো না।
২৩. সন্ধ্যার সময় শিশুদেরকে বাইরে বের হতে দিও না। রাতের বেলা ‘বিসমিল্লাহ’ বলে দরজা বন্ধ করো এবং ‘বিসমিল্লাহ’ বলে পাত্র বন্ধ করো। শোয়ার সময় বাতি নিভিয়ে দাও।
২৪. পানাহারের বস্ত্ত কারো থেকে নিতে হলে ঢেকে নিয়ে যাও।
২৫. ঘুমানোর সময় আগুন উন্মুক্ত রেখো না। নিভিয়ে ফেলো বা ভালো করে চাপা দাও।

পোশাক-পরিচ্ছদ ও সাজ-সজ্জা

১. পুরুষদের জন্য পায়ের গিরার নিচে জামা-পায়জামা বা লুঙ্গি পরা নিষেধ। একইভাবে রেশম বা জরির কাপড় পরাও নিষেধ। তবে চার আঙ্গুল চওড়া লেস, পাইড় ইত্যাদি জায়িয, এর চেয়ে অধিক নিষেধ।
২. এক জুতা পরে হেঁটো না। মাথা থেকে পা পর্যন্ত এক কাপড় দ্বারা এমনভাবে জড়িও না যে, চলাফেরা করতে বা দ্রুত হাত বের করতে কষ্ট হয়। যেমন, কেউ কেউ শীতকালে চাদর বা কম্বল দ্বারা নিজেকে জড়ায়। এমনভাবে কাপড় পরো না, যার দ্বারা উঠাবসা করতে ‘সতর’ খুলে যায়।
৩. ডান দিক থেকে কাপড় পরতে শুরু করো, যেমন-ডান হাতা প্রথমে পরো, এভাবে অন্যান্য ক্ষেত্রেও।
৪. কাপড় পরে আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া এভাবে আদায় করলে অনেক গুনাহ মাফ হয়-
‘সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহর জন্য, যিনি আমাকে আমার কোনরুপ শক্তি-সামর্থ্য ছাড়া এ পোশাক পরালেন এবং এ রিযিক দান করলেন।’
৫. ধনীদের কাছে বেশী বসার দ্বারা দুনিয়ার প্রতি আসক্তি বৃদ্ধি পায়। উন্নতমানের পোশাক পরার চিন্তা হয়। উত্তম হলো-কাপড়ে তালিকাযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তাকে পুরাতন মনে না করে।
৬. পোশাক-পরিচ্ছদের ক্ষেত্রে এ পরিমাণ সাজসজ্জা ও উন্নত হওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করবে না যে, মানুষ আঙ্গুল উঁচিয়ে দেখাতে থাকে। এটি প্রদর্শন ও অহংকার। আবার একেবারে নোংরা ও নিম্নমানের পোশাকও পরবে না। কারণ, এটা নেয়ামতের নাশোকরি। সাদামাটাভাবে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করবে।
৭. স্বজাতির বেশ পরিত্যাগ করে ভিন জাতির পোশাক-পরিচ্ছদ গ্রহণের প্রতি এমন ঘৃণা থাকা উচিত, যেমন-পুরুষের মেয়েলি পোশাক ব্লাউজ ও লেহেঙ্গা পরার প্রতি ঘৃণা থাকে।
৮. নারীদের জন্য পাতলা কাপড় পরিধান করা যেন উলঙ্গ ঘুরে বেড়ানো।
৯. কাপড়ের দৈর্ঘ্যের সুতা রেশমের ও প্রস্থের সূতা সুতির হলে কোন অসুবিধা নেই।
১০. পুরুষের জন্য স্বর্ণের আংটি পরা হারাম। তবে রুপার আংটি পরায় দোষ নেই। তবে তার ওজন সাড়ে চার মাশা ওজনের চেয়ে কম হতে হবে।
১১. বাজনাধারী গহনা যেমন, নুপুর ইত্যাদি পরিধান করা নিষেধ।
১২. কয়েক জোড়া করে জুতা রাখো, এতে অনেক উপকার রয়েছে। প্রথমে ডান পায়ে জুতা পরিধান করো। খোলার সময় প্রথমে বাম পায়েরটা খোলো।
১৩. জুতা পরিধানকালে হাতের সাহায্য নিতে হলে-যেমন, জুতা চাপা হলে বা ফিতা বাঁধতে হলে হাতের সাহায্য নিতে হয়-এমতাবস্থায় দাঁড়িয়ে জুতা পরো না। যেখানে জুতা চুরি হওয়ার ভয় রয়েছে। সেখানে জুতা উঠিয়ে নিজের কাছে রেখো।
১৪. নিম্নোক্ত বিষয়গুলো সুস্থ স্বভাবের দাবী-খৎনা করা, মোচ কাটা, নাভীর নিচের পশম পরিষ্কার করা, নখ কাটা এবং বগলের তলের পশম কাটা। চল্লিশ দিনের অধিক কাল এ সকল পশম ও নখ রাখার অনুমতি নেই।
১৫. সাদা চুলে খেজাব(কলপ) করা মুস্তাহাব। তবে কালো খেজাবের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে।
১৬. পুরুষদের জন্য নারীদের পোশাক এবং নারীদের জন্য পুরুষদের বেশ-ভূষা ধারণ করা হারাম।
১৭. কারো ‍চুল যুক্ত করে নিজের চুল বড় করা এবং দেহে আঁকা হারাম এবং অভিশাপের কারণ।
১৮. কুসুম ও জাফরান রংয়ের কাপড় পরা পুরুষদের জন্য নিষেধ।
১৯. দাড়ি একমুষ্টির অধিক না হলে কাটা নিষেধ, তবে দুয়েকটি লম্বা থাকলে তা সমান করায় দোষ নেই।
২০. মাথায় চুল থাকলে সেগুলো পরিষ্কার ও পরিপাটি করে রাখো। তেল লাগাও। একইভাবে দাড়ির ক্ষেত্রে। তবে সবসময় চুল আঁচড়ানো নিয়ে ব্যস্ত থাকা বেহুদা কাজ।
২১. চুল পাকতে আরম্ভ করলে সেগুলো উপড়িও না। শিশুদের মাথা নেড়ে করে দেওয়া চুল রাখার চেয়ে ভালো।
২২. মেয়েদের জন্য হাতে মেহেদী লাগানো ভালো, আর তা না হলে নখেই লাগাবে।
২৩. শোয়ার সময় তিন তিন বার করে উভয় চোখে সুরমা লাগাও।
২৪. বাড়ী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখো। বরং বাড়ীর সম্মুখেও আবর্জনা জমা করো না।
২৫. মাঝে মাঝে সুগন্ধি ব্যবহার করো।
২৬. ঘরে ছবি রেখো না।
২৭. তাস, জুয়া, দাবা ইত্যাদি খেলা, কবুতর উড়ানো, গানবাদ্যে লিপ্ত থাকা এ সবই নিষিদ্ধ।

চিকিৎসা বিষয়ক নিয়ম-কানুন

১. ঔষধ-পথ্য ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে, বরং উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।
২. রোগীকে পানাহারের জন্য বেশী চাপ দিও না।
৩. ঔষধে হারাম জিনিস ব্যবহার করো না।
৪. শরীয়ত পরিপন্থী তাবীজ-কবজ ও ঝাড়-ফুঁক কখনোই ব্যবহার করো না।
৫. বদনজর লাগলে-যার নজর লাগার সম্ভাবনা রয়েছে, তার মুখ, কনুইসহ দুই হাত, দুই পা, দুই রান ও পেশাব-পায়খানার জায়গা ধোয়ায়ে পানি জমা করে সে পানি যাকে নজর লেগেছে তার মাথার উপর ঢেলে দাও। আল্লাহ চাইলে সুস্থ হয়ে যাবে।
৬. যতদূর সম্ভব পাকস্থলীর সুস্থতা ও যত্নের প্রতি গুরুত্ব দাও। এতে পুরো দেহ ভালো থাকে। আর পাকস্থলী অসুস্থ হলে পুরো দেহে রোগ ছড়িয়ে পড়ে।
৭. যে সমস্ত রোগের প্রতি মানুষের ঘৃণা হয়, এ ধরনের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি মানুষদের থেকে দূরে থাকাই ভালো, যেন তাদের কষ্ট না হয়।
৮. কুলক্ষণ ইত্যাদি বিশ্বাস করা এক ধরনের শিরকী কাজ।
৯. জ্যোতিষী, গণকী ও জিন্নাতের আমল ঈমান ধ্বংসকারী।

ঘুম সংক্রান্ত আদব

১. ভয়ংকর স্বপ্ন দেখলে বাম দিকে তিনবার থুথু নিক্ষেপ করো, তিনবার ‘আউযুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজীম’ পড়ো এবং পার্শ্ব পরিবর্তন করে শোও। কারো কাছে সে স্বপ্নের কথা বলো না, ইনশাআল্লাহ কোন ক্ষতি হবে না।
২. স্বপ্ন বলতে হলে এমন ব্যক্তির কাছে বলো, যে বুদ্ধিমান এবং তোমার হিতাকাংখী। যেন স্বপ্নের খারাপ ব্যাখ্যা না দেয়। কারণ, বেশীর ভাগ ব্যাখ্যানুপাতে ফল হয়।
৩. মিথ্যা স্বপ্ন বানিয়ে বলো না, এটি মারাত্মক গুনাহ।

সালামের আদব

১. পরস্পরে সালাম আদান-প্রদান করো। এতে ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়।
২. পরিচিতদেরকে বিশেষভাবে সালাম দিও না, বরং যে কোন মুসলমানের সাথে সাক্ষাৎ হলে তাকে সালাম দাও।
৩. আরোহী পথিককে, পথিক উপবিষ্টকে, অল্পসংখ্যক অধিক সংখ্যককে এবং অল্পবয়সী অধিক বয়সীকে সালাম দেওয়া উচিত।
৪. যে ব্যক্তি আগে সালাম দেয়, সে অধিক সওয়াব পায়।
৫. একাধিক মানুষের মধ্য থেকে একজন সালাম দিলে সবার পক্ষ থেকে যথেষ্ট হয়ে যায়। একইভাবে কয়েকজনের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি উত্তর দিলে যথেষ্ট হয়ে যায়।

গৃহে প্রবেশের অনুমতি গ্রহণের আদব

১. কারো সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তাকে অবহিত না করে এবং তার অনুমতি না নিয়ে তার ঘরে প্রবেশ করো না, যদিও তা পুরুষদের ঘর হয়। তিনবার ডাকার পরও অনুমতি না পেলে ফিরে এসো। একইভাবে নিজের বাড়ীতেও আওয়াজ না দিয়ে প্রবেশ করো না, হতে পারে কেউ বেপর্দা রয়েছে। তবে কোন ব্যক্তি যদি সাধারণ মজলিসে বসে থাকে, তার নিকট যাওয়ার জন্য অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই।
২. তোমার ডাকের উত্তরে বাড়ীওয়ালা যদি জিজ্ঞাসা করে-‘কে?’ তাহলে ‘আমি’ বলো না। বরং নিজের নাম বলো, যেমন বললে-‘আমি যায়েদ।’

মুসাফাহা, মুআনাকা ও দাঁড়ানোর আদব

১. মুসাফাহা করার দ্বারা দিল পরিষ্কার হয় এবং গুনাহ মাফ হয়।
২. মুহাব্বতের সাথে মুআনাকা করায় দোষ নেই। তবে কামভাবের সাথে মুআনাকা করা হারাম।
৩. কোন বুযুর্গ বা সম্মানী ব্যক্তির আগমণকালে তার সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে যাওয়ায় দোষ নেই। তবে তিনি বসে পড়লে সবার বসে যাওয়া উচিত। সম্মানিত ব্যক্তি বসে থাকা আর খাদেমরা হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকার মধ্যে কাফিরদের সাদৃশ্য রয়েছে। এটিও অহংকার। তবে অধিক অকৃত্রিম সম্পর্ক হলে এবং বারবার উঠার দ্বারা সম্মানী ব্যক্তির কষ্ট হলে, তাহলে উঠবে না।

বসা, শোয়া ও চলাফেরার আদব

১. পায়ের উপর পা উঠিয়ে এমনভাবে শোয়া, যার দ্বারা বেপর্দা হয়- নিষেধ, তবে শরীর অনাবৃত না হলে দোষ নেই।
২. দম্ভভরে হেঁটো না। আসন দিয়ে বসায়- যদি অহংকারবশতঃ না হয়-দোষ নেই।
৩. চিৎ হয়ে শুইয়ো না।
৪. এমন ছাদের উপর শুইয়ো না, যার বেষ্টনী নেই। কারণ, সেখান থেকে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
৫. শরীরের কিছু অংশ রোদে আর কিছু অংশ ছায়ায় রেখে বসো না।
৬. প্রয়োজনবশতঃ কোন মহিলা বাইরে বের হলে পথের কিনারা দিয়ে চলবে। মাঝ দিয়ে চলবে না।

বসার আদব

১. বিনা প্রয়োজনে পথের ধারে বসো না। আর ‍যদি প্রয়োজনবশতঃ বসতে হয়, তাহলে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখো-
ক. পরনারীকে দেখো না।
খ. কোন পথচারীকে কষ্ট দিও না।
গ. পথচারীর রাস্তা সংকীর্ণ করো না।
ঘ. কোন ব্যক্তি সালাম দিলে তার উত্তর দাও।
ঙ. ভালো কাজের কথা বলতে থাকো।
চ. মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করতে থাকো।
ছ. কারো উপর জুলুম হতে দেখলে উঠে গিয়ে সাহায্য করো।
জ. কেউ পথ ভুলে গেলে তাকে পথ বলে দাও।
ঝ. কারো বাহনে আরোহণ করতে বা সামানাপত্র উঠাতে সাহায্য করার প্রয়োজন হলে তাকে সাহায্য করো।

২. কাউকে তার জায়গা থেকে তুলে দিয়ে নিজে সে জায়গায় বসো না।
৩. যদি কোন ব্যক্তি নিজের জায়গা থেকে উঠে যায় এবং পুনরায় দ্রুত ফিরে এসে বসার ইচ্ছা রাখে, তাহলে সে জায়গা তারই হক। অন্যের সেখানে বসা উচিত নয়।
৪. সভাপ্রধানের সমীচীন-কোন প্রয়েোজনে সভা ছেড়ে উঠে গিয়ে পুনরায় এসে বসতে হলে-উঠার সময় রুমাল পাগড়ী ইত্যাদি কোন জিনিস সেখানে রেখে যাওয়া, যেন সভায় উপস্থিতগণ বুঝতে পারে যে, তিনি ফিরে আসবেন।
৫. যে দুই ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে এক জায়গায় বসেছে তাদের মাঝে তাদের অনুমতি ছাড়া বসো না।
৬. কোন ব্যক্তি তোমার সাথে সাক্ষাৎ করতে এলে তোমার নিজের জায়গা থেকে একটু সরে গিয়ে তাকে বসতে দেওয়া উচিত। যদিও বসার আরো জায়গা থাকে। এতে আগন্ত্তকের প্রতি সম্মান প্রদর্শন হয়।
৭. কারো পিঠের দিকে পিঠ দিয়ে বসো না। কারো দিকে পিঠ দিয়ে বসো না।
৮. কোন বৈঠকে গেলে যেখানে জায়গা পাও, সেখানে বসে যাও। সবার ঘাড় টপকে বিশেষ জায়গায় যেও না।
৯. হাঁচি আরামদায়ক, তাই হাঁচি দেওয়ার পর ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলবে, আর শ্রবণকারী ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলবে। হাঁচিদাতা পুনরায় ‘ইয়াহদিকুমুল্লাহ ওয়া য়ুসলিহ বালাকুম’ বলবে।
১০. কারো বার বার হাঁচি আসতে থাকলে বারবার ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলা জরুরী নয়।
১১. হাঁচি এলে মুখের উপর কাপড় বা হাত রাখবে এবং নিম্নস্বরে হাঁচি দিবে।
১২. যতদূর সম্ভব হাই আটকিয়ে রাখবে। আর না আটকালে মুখ ঢেকে নিবে।
১৩. অধিক জোরে হেসো না।
১৪. মজলিসে মুখ গম্ভীর করে বসে থেকো না। উপস্থিত লোকদের সাথে হাসিমুখে কথা বলো। তাদের সাথে মিলে মিশে থাকো। যে ধরনের কথা হয় তাতে অংশ নেও। তবে শর্ত হলো, শরীয়ত পরিপন্থী কোন কথা না হতে হবে।

আরো কিছু আদব

১. এক মুসলমানের উপর অন্য মুসলমানের হক এই-
ক. সাক্ষাৎ হলে সালাম দাও।
খ. ডাকলে সাড়া দাও।
গ. দাওয়াত দিলে গ্রহণ করো।
ঘ. হাঁচি দিয়ে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বললে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলো।
ঙ. অসুস্থ হলে সেবা-শুশ্রূষা করো।
চ. মরে গেলে জানাযায় শরীক হও।
ছ. যা নিজের জন্য পছন্দ করো তা তার জন্যও পছন্দ করো।

২. নিজের বাড়ীতে গিয়ে বাড়ীর লোকদেরকে সালাম দাও।
৩. চিঠি লিখে তার উপর মাটি ছিটিয়ে দাও।
৪. লিখতে লিখতে লেখার বিষয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে থাকলে কানের পিঠে কলম দাও। এতে বিষয়বস্ত্ত স্মরণ হয়।
৫. নিজের ছোট বাচ্চাদেরকে আদর-যত্ন করাতেও সওয়াব রয়েছে।
৬. অন্যের কাপড় দিয়ে হাত মুছো না। তবে সে খারাপ মনে না করলে কোন দোষ নেই। যেমন, তোমার দেওয়া কাপড়ই সে পরছে, এমতাবস্থায় সাধারণতঃ সে খারাপ মনে করবে না।
৭. কারো দিকে পা ছড়িয়ে দিয়ে বসো না।
৮. কারো সঙ্গে মিলিত হলে খোলা মনে মেশো, বরং হাসিমুখে মেশো, এতে সে খুশী হবে।
৯. সবচেয়ে ভালো নাম ‘আবদুল্লাহ’ ও ‘আবদুর রহমান’।
১০. এমন নাম রেখো না, যার দ্বারা গর্ব ও বড়ত্ব ফুটে উঠে, আবার এমন নামও রেখো না, যার অর্থ খারাপ।
১১. ‘বান্দায়ে হাসান’, ‘বান্দায়ে হুসাইন’ এ জাতীয় নাম রেখো না।
১২. কালকে মন্দ বলো না, কারণ, কাল তো কিছু করতে পারে না, তাই কথাটি আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
১৩. ‘উড়ো কথা’ বলার সময় সাধারণত বলা হয় যে, ‘মানুষ বলে থাকে’ আর শ্রোতা তা নির্ভরযোগ্য খবর বলে মনে করে। তাই এরুপ বলতে নিষেধ করা হয়েছে যে, ‘মানুষ এরুপ বলে থাকে।’ মোটকথা, ভিত্তিহীন কথা বলবে না।
১৪. এরুপ বলো না যে, ‘যদি আল্লাহ চায় এবং অমুক ব্যক্তি চায়’, বা ‘উপরে আল্লাহ নিচে তুমি’ বরং এরুপ বলো যে, ‘যদি আল্লাহ চায় তারপর অমুক চায়।’
১৫. ফাসিকদের জন্য বেশী সম্মানের শব্দ বলো না।
১৬. খারাপ গান-কবিতা বলা তো খারাপই, জায়িয গান-কবিতাতেও এত বেশী লিপ্ত হওয়া খারাপ, যার দ্বারা দ্বীন ও দুনিয়ার প্রয়োজনীয় কাজের ক্ষতি হয় বা তাতেই লিপ্ত হয়ে পড়ো।
১৭. অধিক কৃত্রিমভাবে চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলো না। বেশী বাড়িয়ে কথা বলো না।
১৮. নিজের ওয়াজ মত নিজে আমল না করার বিপদ মারাত্মক।
১৯. মধ্যম পন্থায় কথা বলবে। এত অধিক সংক্ষিপ্ত করবে না যে, অর্থই বুঝে আসে না এবং এত অধিক দীর্ঘও করবে না যে, মানুষ বিরক্ত হয়ে যায়।
২০. যেমনিভাবে নারীদের জন্য সতর্কতা জরুরী যে, কানে পরপুরুষের কথা যেন না আসে, তেমনিভাবে পুরুষদের জন্যও পরনারীর সামনে সুললিত কন্ঠে গান-কবিতা ইত্যাদি আবৃত্তি থেকে সতর্ক থাকা ওয়াজিব। কারণ, নারীদের মন কোমল হয়ে থাকে। এতে খারাপ পরিণতির আশংকা রয়েছে।
২১. গান-বাজনা অন্তরকে কলুষিত করে। কারণ, মনের মধ্যে খারাপ দিকটিই প্রবল। গানবাদ্যের দ্বারা এ অবস্থা উত্তেজিত ও শক্তিশালী হয়। আর যার দ্বারা হারাম কাজ সৃষ্টি হয় তাও হারাম।

যবানের হেফাযত

১. কবি বলেন-
‘চিন্তা-ভাবনা ছাড়া কথা বলো না। ভালো কথাও যদি বলো, একটু চিন্তা-ভাবনা করে বললে কি সমস্যা?
২. কোন কোন সময় চিন্তা-ভাবনা ছাড়া কথা বলায় এমন কথা বের হয়ে যায়, যা জাহান্নামে নিয়ে যায়। চিন্তা-ভাবনা করে কথা বললে এ ধরনের বিপদ থেকে নিরাপদে থাকবে।
৩. গালি দেওয়া ফাসিকদের কাজ।
৪. কাউকে কাফির, ফাসিক, মালাউন, খোদার দুশমন বা বেঈমান বলো না। যদি সে ব্যক্তি এরুপ না হয়, তাহলে এসব কিছু যে বলবে তার উপর ফিরে আসবে। একইভাবে এরুপ বলা যে, অমুকের উপর খোদার মার পড়ুক, খোদার লা’নত হোক, খোদার গজব পড়ুক বা জাহান্নামে যাক-কোন মানুষকে বলুক, জীবজন্ত্তকে বলুক বা নিষ্প্রাণ বস্ত্তকে বলুক-ঠিক নয়।
৫. যদি কোন ব্যক্তি তোমাকে শক্ত কথা বলে, তাহলে তুমিও ঐ পরিমাণ বলতে পারো, তার চেয়ে বেশী বললে উল্টা তুমি গুনাহগার হবে।
৬. অনেক মানুষ বলে থাকে যে, ‘আল্লাহ তাআলা রহম করুন, দয়া করুন, মানুষরা বড় গাফিলতির মধ্যে আছে, নির্ভীকভাবে গুনাহ করে থাকে’ ইত্যাদি। এটি যদি আক্ষেপ ও মায়া নিয়ে বলা হয় তাহলে কোন ক্ষতি নেই। আর যদি আত্মশ্লাঘা ও আত্মম্ভরিতা নিয়ে বলা হয়, তাহলে সেই প্রথমে এ অভিযোগের ক্ষেত্র প্রমাণিত হবে, যা সে অন্যদের উপর আরোপ করছে।
৭. কখনো দ্বিমুখী আচরণ করো না, যাদের দলে গেলে তাদের মত কথা বললে। কথায় আছে, ‘যমুনায় গেলে যমুনার দাস, আর গঙ্গায় গেলে গঙ্গার দাস।’
৮. কখনোই কূটনামী করো না।
৯. সত্য কথা বলো। মিথ্যা কথা কখনোই বলো না। তবে দু’ব্যক্তির মাঝে আপোষ করানোর জন্য মিথ্যা বলায় দোষ নেই।
১০. তোষামোদের উদ্দেশ্যে কারো মুখের উপর প্রশংসা করো না। একইভাবে অনুপস্থিতিতে প্রশংসা করার ক্ষেত্রেও বাড়িয়ে বলো না বা নিশ্চিত দাবী করো না। কারণ, প্রকৃত অবস্থা তো আল্লাহই জানেন, বরং এরুপ বলো যে, আমার জানামতে অমুক এ রকম। আর তাও তখন বলো, যখন বাস্তবেও তাকে এমন জানো।
১১. কখনো গীবত করো না। এতে গুনাহ হওয়া ছাড়াও জাগতিক বহুবিধ ফেৎনা-ফাসাদ সৃষ্টি হয়। গীবত বলা হয়-কারো অনুপস্থিতিতে তার সম্পর্কে এমন কিছু বলা যা সে শুনলে কষ্ট পাবে, যদিও তা বাস্তবে ঐ ব্যক্তির মধ্যে আছে। আর যদি ঐ বিষয়টি তার মধ্যে না থাকে তাহলে তা গীবতের চেয়েও মারাত্মক, অর্থাৎ অপবাদ।
১২. যদি নফস বা শয়তানের প্ররোচনায় হঠাৎ কোন গুনাহের কাজ হয়ে যায় তাহলে তা লোকদের নিকট বলে বেড়িও না।
১৩. কারো সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হয়ো না। যদি দেখো যে, প্রতিপক্ষ হক কথা মানছে না, তাহলে চুপ হয়ে যাও। আর অন্যায়ের উপর থেকে কথা বাড়ানো তো খুবই অন্যায়। শুধুই মানুষদেরকে হাসানোর জন্য মিথ্যা কথা বানিয়ে বলার অভ্যাস করো না।
১৪. যে কথায় দ্বীন বা দুনিয়ার কোন ফায়দা নেই, তা মুখ থেকে বের করো না।
১৫. যদি কারো দ্বারা কোন ভুল-ভ্রান্তি বা গুনাহের কাজ হয়ে যায়, সমবেদনা নিয়ে তাকে বুঝানো তো ভালো কাজ, কিন্ত্ত নিছক তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে তিরস্কার করা বা লজ্জা দেওয়া অন্যায়। উপদেশদাতার ঐ বিপদে আক্রান্ত হওয়ার ভয় করা উচিত।
১৬. গীবত যেমন মুখ দিয়ে হয়, তেমনি অঙ্গভঙ্গির দ্বারাও হয়, বরং এটি আরো জঘন্য। যেমন-(অন্যের নকল করে) টেরা চোখে দেখা, খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলা।
১৭. বেশী হেসো না, এতে মন মরে যায়। অর্থাৎ, মনের মধ্যে কাঠিন্য ও উদাসিনতা চলে আসে। চেহারার উজ্জলতা নষ্ট হয়ে যায়।
১৮. যে ব্যক্তির গীবত হয়ে গেছে এবং কোন কারণে তার থেকে মাফ নেওয়া মুশকিল, তাহলে নিরুপায় অবস্থায় তার প্রতিকার এই যে, ঐ ব্যক্তির জন্য এবং নিজের জন্য আল্লাহর কাছে মাফ চাও। বলো-
‘হে আল্লাহ! আমাকে ও তাকে মাফ করুন।’
১৯. মিথ্যা ওয়াদা করো না। এমনকি শিশুদেরকে ভুলানোর জন্যও মিথ্যা বলো না যে, তোমাকে মিষ্টি দেবো, বিস্কুট দেবো। যদি এমন বলো, তাহলে দেওয়ারও নিয়ত রেখো।
২০. কাউকে আনন্দ দেওয়ার জন্য রসিকতা করায় দোষ নেই, কিন্ত্ত এতে দু’টি বিষয় লক্ষ্য রেখো, এক. মিথ্যা বলো না। দুই. তার মনে কষ্ট দিও না। অর্থাৎ, সে যদি অপছন্দ করে তাহলে রসিকতা করো না।
২১. বংশকৌলিন্য বা অন্যের সম্পদ দিয়ে গরিমা করো না।

কর্তব্য সম্পাদন ও সেবা-যত্ন করা

১. মা-বাবার খেদমত করো, যদিও তারা কাফির হয় এবং তাদের আনুগত্য করো, যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ ও রাসূলের বিরুদ্ধে না বলে।
২. কারো মা-বাবাকে মন্দ বলা, যার উত্তরে সে তোমার মা-বাবাকে মন্দ বলে, তোমার নিজের মা-বাবাকে মন্দ বলার শামিল।
৩. মা-বাবার মৃত্যুর পর তার সাথে সম্পৃক্তদের সঙ্গে সদাচরণ করাকে মা-বাবার খেদমত করারই পরিপূর্ণতা মনে করবে।
৪. আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সদাচরণ করো। যদিও তারা তোমার সাথে অসদাচরণ করে।
৫. কর্তব্য সম্পাদনের জন্য নিজের আত্মীয়তা সম্পর্কে খোঁজ-খবর নাও।
৬. খালার হকও মায়ের হকের ন্যায়।
৭. মা-বাবা অসন্ত্তষ্ট হয়ে মারা গেলে তাদের জন্য সর্বদা দু’আ করতে থাকো এবং মাফ চাইতে থাকো। আল্লাহ তাআলার কাছে আশা করা যায় যে, তিনি তাদেরকে সন্ত্তষ্ট করে দিবেন।
৮. চাচার হক পিতার হকের তুল্য।
৯. বড় ভাইয়ের হক বাপের হকের তুল্য।
১০. সন্তান প্রতিপালনের সওয়াব তো আছেই, তবে মেয়েদের প্রতিপালনের মর্যাদা অধিক।
১১. যে ব্যক্তি বেশী বেশী উপার্জন করে বিধবা ও গরীবদের খোঁজ-খবর নেয়, তাদের অভাব মোচন করে, সে জিহাদ করার সমপরিমাণ সওয়াব পায়।
১২. নিজের বা অন্যের ইয়াতিমের দায়্ত্বি বহন করলে বেহেশতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে একত্রে থাকার সৌভাগ্য লাভ হবে।
১৩. জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা দেয়াও সন্তানের অন্যতম হক।
১৪. প্রতিবেশীকে কোন প্রকার কষ্ট দিও না, বরং যতদূর সম্ভব উপকার করো।
১৫. পরস্পরের প্রতি এমনভাবে সমবেদনা প্রকাশ করো, যেমন কবি বলেছেন-
অর্থঃ ‘একটি অঙ্গ বেদনা কাতর হলে, অন্যান্য অঙ্গও স্থির থাকতে পারে না।’

১৬. অভাবী ব্যক্তির অভাব মোচনে যতদূর সম্ভব চেষ্টা করো। নিজের সামর্থ্য না থাকলে অন্যের কাছেই সুপারিশ করো। তবে শর্ত হলো, যার কাছে সুপারিশ করছো, তার যেন ক্ষতি বা কষ্ট না হয়।
১৭. জালেমকে জুলুম করা থেকে বিরত রেখে তার কল্যাণ করো। আর মজলুমের সাহায্য করা তো খুবই জরুরী।
১৮. কারো মধ্যে কোন দোষ দেখলে তা গোপন করো, গেয়ে বেড়িও না।
১৯. কাউকে কষ্টে বা অভাবে দেখলে যতদূর সম্ভব তার সাহায্য করো।
২০. কাউকে তুচ্ছ মনে করো না।
২১. কারো জানমাল ও সম্মানের ক্ষতি মেনে নিও না।
২২. কাউকে দুঃখ দিও না।
২৩. নিজের জন্য যা পছন্দ করো, অন্যের জন্য তাই পছন্দ করো।
২৪. যেখানে শুধু তিনজন লোক রয়েছে, সেখানে দু’জন তৃতীয়জনকে বাদ দিয়ে কানে কানে কথা বলবে না। কারণ, সে মনে করবে, আমার সম্পর্কেই বলাবলি করছে, ফলে সে ব্যথিত হবে। হাঁ, যদি কোন জরুরী কথা বলতেই হয়, তাহলে অন্য কাউকে ডেকে এনে তাদের দু’জনকে পৃথক করে দিয়ে অপর দু’জন পৃথকভাবে কথা বলবে।
২৫. সবার কল্যাণ কামনা করো।
২৬. সৃষ্টিজীবের প্রতি দয়া ও করুণা করো।
২৭. ছোটদের প্রতি দয়া ও বড়দেরকে শ্রদ্ধা করো, বিশেষভাবে বৃদ্ধদেরকে।
২৮. তোমার সামনে কারো গীবত করা হলে যতদূর সম্ভব তাকে বাধা দাও এবং যার গীবত করা হচ্ছে তার পক্ষ থেকে উত্তর দাও।
২৯. কারো মধ্যে কোন দোষ দেখতে পেলে নম্রতার সঙ্গে তাকে জানিয়ে দাও। অন্যথায় অন্য কেউ এটা দেখে তাকে লজ্জা দিবে।
৩০. নিজের বন্ধু ও সাথীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করো।
৩১. প্রত্যেককে তার মর্যাদা অনুযায়ী সম্মান করো, সবার সাথে এক সমান ব্যবহার করো না।
৩২. বড়ই পাষাণ হৃদয়ের কথা যে, তুমি পেট ভরে খাবে আর তোমার প্রতিবেশী অনাহারে থাকবে।
৩৩. স্বার্থের বন্ধুত্ব মূল্যহীন। কেবলই আল্লাহর ওয়াস্তে নিঃস্বার্থভাবে বন্ধুত্ব রাখো।
৩৪. যার সাথে তোমার ভালোবাসা আছে, তাকেও তা জানিয়ে দাও, এতে তার মধ্যেও ভালোবাসা জন্মাবে এবং তার নাম-পরিচয় জেনে নাও। এতে ভালোবাসা আরো বৃদ্ধি পাবে।
৩৫. যার সাথে বন্ধুত্ব করবে, তার দ্বীন, বেশ-ভূষা ও চিন্তা-চেতনা সম্পর্কে আগে জেনে নাও। অন্যথায় তার সাহচর্যের প্রভাবে তুমি নষ্ট হয়ে যাবে।
৩৬. ঘটনাচক্রে কারো সাথে মনোমালিন্য হলে তিনদিনের মধ্যে রাগ ছেড়ে দাও এবং তার সঙ্গে মিলে যাও। এর চেয়ে অধিককাল কথাবার্তা বন্ধ রাখা গুনাহ। যে আগে মিলিত হবে সে অধিক সওয়াব পাবে।
৩৭. কারো সম্পর্কে কুধারনা করো না। কারো দোষ তালাশ করো না। পরস্পরে হিংসা করো না। বিদ্বেষ পোষণ করো না। সম্পর্ক ছিন্ন করো না। লোভ করো না। সবাই ভাইয়ের মত থাকো।
৩৮. দুই ব্যক্তির মধ্যে মনোমালিন্য হলে তাদের মাঝে মিল করে দাও।
৩৯. কেউ ভুল স্বীকার করলে এবং মাফ চাইলে তার অপরাধ মাফ করে দাও।
৪০. যে কোন কাজ চিন্তা-ভাবনা করে করো। পরিণতি সম্পর্কে ভেবে-চিন্তে ধীরস্থিরভাবে কাজ করো, তাড়াহুড়ার ফলে বেশীর ভাগ কাজ নষ্ট হয়ে যায়। তবে ‘ভাল কাজের ব্যাপারে ইস্তেখারার প্রয়োজন নেই।’
৪১. জ্ঞানী তাকে মনে করো, যে অভিজ্ঞ।
৪২. সব বিষয়ে মধ্যপন্থা অবলম্বন করো।
৪৩. কেউ তোমার থেকে পরামর্শ চাইলে তুমি যেটাকে ভালো মনে করো তারই পরামর্শ দেও।
৪৪. প্রয়োজন পরিমাণ এবং শৃংখলার সাথে ব্যয় করা যেন অর্ধেক জীবিকা, মানুষের দৃষ্টিতে প্রিয় হওয়া যেন অর্ধেক জ্ঞান এবং উত্তমভাবে কোন বিষয়ে প্রশ্ন করা যেন অর্ধেক বিদ্যা।
৪৫. মানুষের সাথে নরম ব্যবহার ও সদাচার করো।
৪৬. মানুষের সাথে মেশা, তাদের কাজে লাগা এবং তাদের দেওয়া কষ্টে ধৈর্য ধরা ও অবিচল থাকা নিরাপদে জান বাঁচিয়ে বসে থাকা এবং কারো কাজে না আসার চেয়ে উত্তম। তবে যদি একদম অসহ্য হয় তাহলে তো অপারগতা।
৪৭. যতদূর সম্ভব ক্রোধ দমন করো।
৪৮. বিনয়ের সাথে থাকো, কখনো অহংকার করো না।
৪৯. মানুষের থেকে নিজের ভুল-ত্রুটি মাফ করিয়ে নাও, তা নাহলে কিয়ামতের দিন বড় বিপদ হবে।
৫০. অন্যদেরকেও নেক কাজের কথা বলতে থাকো। মন্দ কাজে নিষেধ করতে থাকো। তবে যদি কথা মানার আশা মোটেই না থাকে, বা কষ্ট দিবে এ আশংকা হয়, তাহলে চুপ থাকা জায়েয, কিন্ত্ত মন দিয়ে মন্দ কাজকে ঘৃণা করো।