উৎস:
ইসলাহী নেসাব: তা’লীমুদ্দীন
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (র:)

মন্দ চরিত্রের আলোচনা

মন্দ চরিত্রসমূহ হলো-কামভাব, জিহ্বার আপদসমূহ, ক্রোধ, দ্বেষ, হিংসা, দুনিয়ার মোহ, কৃপণতা, হুব্বে জাহ বা পদমর্যাদার লোভ, রিয়া বা প্রদর্শন প্রবৃত্তি, উজব অর্থাৎ, আত্মশ্লাঘা ও অহংকার। আল্লাহর পথের পথিকের জন্য এ সমস্ত মন্দ চরিত্র দূর করা জরুরী। এগুলোকেও কয়েকটি পরিচ্ছেদে আলোচনা করছি। প্রথম প্রকারের বিষয়গুলোর মত এগুলোও ইহইয়াউল উলূম গ্রন্থ থেকে বর্ণনা করা হচ্ছে।

‘শাহওয়াত’ বা কামভাবের বর্ণনা

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
অর্থঃ ‘এবং যারা শাহওয়াত অর্থাৎ, কামনার অনুসরণ করে তারা চায় যে, তোমরাও সত্য পথ ছেড়ে চরমভাবে পথভ্রষ্ট হও।’ (সূরা নিসা-২৭)

শাহওয়াতের মর্মঃ শাহওয়াতের মর্ম সুস্পষ্ট যে, মনের কুকামনাই হলো, ‘শাহওয়াত’।

ব্যবস্থাপত্রঃ মনের কামনার বিরুদ্ধে সাধনা করতে হবে। সাধনার পন্থা ও উপায়ের বিবরণ দ্বিতীয় অধ্যায়ে বিস্তারিত আলোচিত হয়েছে।

জিহ্বার আপদসমূহের বর্ণনা

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
অর্থঃ ‘সে যে কথাই উচ্চারণ করে, তাই গ্রহণ করার জন্যে তার কাছে সদা প্রস্ত্তত প্রহরী রয়েছে।’ (সূরা কাফ-১৮)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
অর্থঃ ‘যে নীরব থাকলো, সে মুক্তি পেলো।’ (আহমাদ, তিরমিযী)

জিহ্বার বিপদ অনেক রয়েছে। যথা-অনর্থক কথা বলা। শরীয়তবিরোধী কথা বলা। অন্যায় তর্ক-বিতর্ক করা। ঝগড়া করা। ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে ও রং দিয়ে কথা বলা। গালাগালি করা। কারো উপর অভিশম্পাত করা। গান-বাদ্য করা। এমন ঠাট্রা করা, যার দ্বারা অন্যে কষ্ট পায়, বা অধিক পরিমাণ ঠাট্রা-মশকরা করা। কারো গোপন কথা প্রকাশ করে দেওয়া। মিথ্যা ওয়াদা করা। মিথ্যা কথা বলা। মিথ্যা শপথ করা। মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া। গীবত করা। কুটনামী করা। দুই পক্ষের নিকট গিয়ে দুই রকম কথা বানিয়ে বলা। কারো অধিক পরিমাণে প্রশংসা বা তোষামোদ করা। আল্লাহ তাআলার জাত ও সিফাত তথা সত্তা ও গুণাবলী সম্পর্কে নিছক ধারণার উপর ভিত্তি করে কথা বলা। আলেমগণের নিকট অনর্থক কথা জিজ্ঞাসা করা।

ব্যবস্থাপত্রঃ যে কোন কথা বলার পূর্বে সামান্য সময় চিন্তা করবে যে, এ কথার দ্বারা মহান শ্রবণকারী ও মহান দ্রষ্টা আল্লাহ তাআলা তো অসন্ত্তষ্ট হবেন না? তাহলে ইনশাআল্লাহ তাআলা গুনাহের কোন কথা মুখ দিয়ে বের হবে না।

‘গযব’ বা ক্রোধের বর্ণনা

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
অর্থঃ ‘কাফিরগণ যখন তাদের মনের মধ্যে জাহেলিয়াতের ক্রোধ আনলো।’
(সূরা ফাত্হ-২৬)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
অর্থঃ ‘রাগ করো না।’ (বুখারী)

ক্রোধের মর্মঃ প্রতিশোধ গ্রহণের জন্যে হৃদয়ের রক্ত বলক মেরে উঠা।

ব্যবস্থাপত্রঃ এ কথা চিন্তা করবে যে, আমার উপর আল্লাহ তাআলার কুদরত অনেক বেশী। আমি তার নাফরমানীও করে থাকি। তিনিও যদি আমার সঙ্গে এই একই রকম ক্রোধের আচরণ করেন, তাহলে আমার কি অবস্থা হবে? আরো চিন্তা করবে যে, আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা ছাড়া কোন কিছুই ঘটে না। তাই আমি আল্লাহর ইচ্ছায় বাধা দেওয়ার কে? মুখে ‘আউযুবিল্লাহ’ পড়বে। দাঁড়ানো থাকলে বসে পড়বে, আর বসা থাকলে শুয়ে পড়বে। ঠান্ডা পানি দ্বারা ওযু করবে। এতেও ক্রোধ প্রশমিত না হলে, যার সাথে ক্রোধের উদ্রেক হয়েছে, তার থেকে দূরে সরে যাবে বা তাকে দূরে সরিয়ে দিবে।

‘হিকদ’ বা বিদ্বেষের বর্ণনা

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
অর্থঃ ‘ক্ষমার গুণ গ্রহণ করো, সৎকাজের আদেশ করো এবং অজ্ঞদের থেকে দূরে থাকো।’
(সূরা আ’রাফ-১৯৯)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
অর্থঃ ‘তোমরা পরস্পরে বিদ্বেষ পোষণ করো না।’ (বুখারী, মুসলিম)

বিদ্বেষের মর্মঃ ক্রোধের সময় প্রতিশোধ গ্রহণ করতে না পেরে ক্রোধ সংবরণ করার ফলে-যার উপর ক্রোধের উদ্রেক হয়েছিলো তার উপর-মনে এক প্রকারের চাপ সৃষ্টি হয়ে থাকে, তাকে ‘বিদ্বেষ’ বলে।

ব্যবস্থাপত্রঃ যে ব্যক্তির উপর ক্রোধ সৃষ্টি হয়েছে তার অপরাধ মাফ করে তার সঙ্গে কষ্ট করে হলেও মেলামেশা করবে। এভাবে কিছুদিনের মধ্যে মন থেকে বিদ্বেষ বের হয়ে যাবে।

‘হাসাদ’ বা হিংসার বর্ণনা

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
অর্থঃ ‘এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে, যখন সে হিংসা করে (আমি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি)।’(সূরা ফালাক-৫)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
অর্থঃ ‘তোমরা পরস্পরে হিংসা করো না।’ (বুখারী)

হিংসার মর্মঃ কারো ভালো অবস্থা সইতে না পারা এবং তার এই ভালো অবস্থা নষ্ট হয়ে যাওয়ার কামনা করা।

ব্যবস্থাপত্রঃ কৃত্রিমভাবে হলেও ঐ লোকের খুব প্রশংসা করবে। তার সঙ্গে খুব সদাচরণ ও বিনম্র ব্যবহার করবে। এগুলো করার দ্বারা ঐ ব্যক্তির অন্তরে তোমার ভালোবাসা জন্মাবে। ফলে সেও তোমার সঙ্গে একইরুপ আচরণ করতে থাকবে। এতে তোমার অন্তরে তার ভালোবাসা সৃষ্টি হবে এবং হিংসা বিদূরিত হবে।

‘হুব্বে দুনিয়া’ বা দুনিয়ার মুহাব্বতের বর্ণনা

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
অর্থঃ ‘দুনিয়ার জীবন ধোঁকার সামগ্রী ছাড়া আর কিছু নয়।’ (সূরা আলে ইমরান-১৮৫)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
অর্থঃ ‘দুনিয়া মুমিনের কারাগার এবং কাফিরের বেহেশত।’ (মুসলিম)

দুনিয়ার মর্মঃ যে জিনিসের মধ্যে নফসের প্রাপ্তি রয়েছে, আর আখেরাতে তার ভালো কোন ফল নেই তাই দুনিয়া।

ব্যবস্থাপত্রঃ মৃত্যুর কথা বেশী বেশী স্মরণ করবে। লম্বা সময়ের জন্য পরিকল্পনা ও সাজ-সরঞ্জাম করবে না।

‘বুখল’ বা কৃপণতার বর্ণনা

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
অর্থঃ ‘আর যে কৃপণতা করে, সে নিজের সঙ্গেই কৃপণতা করে।’ অর্থাৎ, কৃপণতার ক্ষতি তার উপরই বর্তায়।’ (সূরা মুহাম্মাদ-৩৮)

রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
অর্থঃ ‘কৃপণ ব্যক্তি আল্লাহর থেকে দূরে, জান্নাত থেকে দূরে, মানুষ থেকে দূরে, জাহান্নামের নিকটবর্তী।’ (তিরমিযী)

কৃপণতার মর্মঃ যে জিনিস ব্যয় করা শরীয়তের দিক থেকে বা ভদ্রতার দিক থেকে জরুরী, তাতে সংকীর্ণতা করা।

ব্যবস্থাপত্রঃ মালের মুহাব্বত মন থেকে বের করবে। দুনিয়ার মুহাব্বতের ‘ব্যবস্থাপত্রে’ যেটা উল্লেখ করা হয়েছে। মালের মুহাব্বত মন থেকে বের করার পন্থাও ঐটিই।

‘হির্‌স’ বা লোভের বর্ণনা

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
অর্থঃ ‘এবং কাফিরদেরকে দুনিয়ার ভোগবিলাসের যে সমস্ত সামগ্রী দিয়েছি, আপনি সেগুলোর দিকে ভ্রূক্ষেপও করবেন না।’ (সূরা হিজর-৮৮)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
অর্থঃ ‘মানুষ বৃদ্ধ হয় আর তার দু’টি জিনিস যুবক হয়, অর্থাৎ শক্তিশালী হয়-সম্পদের লোভ এবং বেঁচে থাকার লোভ।’ (বুখারী ও মুসলিম)

লোভের মর্মঃ ধনসম্পদ ইত্যাদিতে অন্তর লিপ্ত হওয়া।

ব্যবস্থাপত্রঃ ব্যয়ের পরিমাণ কমিয়ে দিবে, যাতে অধিক আমদানীর চিন্তায় না পড়ে। ভবিষ্যতে কী হবে এ নিয়ে চিন্তা করবে না। একথা চিন্তা করবে যে, লোভী ব্যক্তি সর্বদা লাঞ্ছিত হয়।

হুব্বে জাহ বা পদমর্যাদার লোভের বর্ণনা

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
অর্থঃ ‘ঐ আখিরাতের ঘর আমি তাদেরকে দান করবো, যারা দুনিয়াতে বড়ত্ব চায় না এবং বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায় না, আর উত্তম পরিণতি পরহেযগারদের জন্য।’
(সূরা কাসাস-৮৩)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
অর্থঃ ‘দু’টি ক্ষুধার্ত বাঘকে ছাগল পালের মধ্যে ছেড়ে দিলে ছাগল পালের যে ক্ষতি করে, তার চেয়ে অধিক ক্ষতিকর মানুষের সম্পদ ও ধর্মীয় পদমর্যাদার লোভ।’ (তিরমিযী)

পদমর্যাদার লোভের মর্মঃ মানুষের মন বশে আসা, যার ফলে মানুষ এর সম্মান ও আনুগত্য করবে।

ব্যবস্থাপত্রঃ এ কথা চিন্তা করবে যে, যারা আমার সম্মান করছে, আনুগত্য করছে, না তারা বেঁচে থাকবে, না আমি বেঁচে থাকবো। তাহলে এমন কল্পনানির্ভর ধ্বংসশীল বস্ত্তর উপর খুশী হওয়া বোকামী। দ্বিতীয় ব্যবস্থা হলো, এমন কোন কাজ করবে, যা শরীয়তবিরোধী নয়, কিন্ত্ত সামাজিকভাবে তার মর্যাদার পরিপন্থী। এতে করে মানুষের চোখে সে লাঞ্ছিত হবে। কিন্ত্ত ধর্মীয় বিষয়ে মানুষ যাদেরকে মেনে চলে, যাদের অনুসরণ করে তাদের এমন করা ঠিক নয়, এতে ধর্মীয় কাজে ভাটা পড়বে।

‘রিয়া’ বা প্রদর্শন প্রবৃত্তির বর্ণনা

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
অর্থঃ ‘তারা মানুষকে দেখায়।’ (সূরা নিসা-৪২)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
অর্থঃ ‘নিশ্চয়ই সামান্য রিয়াও শিরক।’ (ইবনু মাজা)

রিয়ার মর্মঃ আল্লাহ তাআলার ইবাদতে এরুপ ইচ্ছা পোষণ করা যে, মানুষের চোখে আমার মর্যাদা বৃদ্ধি পাক।

ব্যবস্থাপত্রঃ পদমর্যাদার লোভকে অন্তর থেকে বের করে দিবে। কারণ, ‍রিয়া তারই একটি শাখা। যে সমস্ত ইবাদত জামাআতের সাথে করার হুকুম নেই, সেগুলো গোপনে আদায় করবে, আর যেগুলো প্রকাশ করা জরুরী সেগুলোর ক্ষেত্রে পদমর্যাদার লোভ দূর করাই যথেষ্ট।

আমার সাইয়েদ, আমার মুরশিদ হযরত মাওলানা আলহাজ হাফিয ইমদাদুল্লাহ (দাঃবাঃ) এর আরেকটি ব্যবস্থাপত্র এই দিয়েছেন যে, যে ইবাদতের মধ্যে রিয়া হবে, সে ইবাদত অধিক পরিমাণে করতে থাকবে। তখন কেউ আর এদিকে ভ্রূক্ষেপও করবে না এবং তার নিজেরও এদিকে মনোযোগ থাকবে না। ঐ ইবাদত কিছু দিনের মধ্যে তার অভ্যাসে এবং অভ্যাসে থেকে ইবাদত ও ইখলাসে পরিণত হয়ে যাবে।

‘তাকাব্বুর’ বা অহংকারের বর্ণনা

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
অর্থঃ ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা অহংকারীদেরকে ভালোবাসেন না।’ (সূরা নাহল-২৩)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন –
অর্থঃ ‘ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণও অহংকার রয়েছে।’ (মুসলিম)

তাকাব্বুরের মর্মঃ পূর্ণতার গুণাবলীতে নিজেকে অন্যদের চেয়ে বড় মনে করা।

ব্যবস্থাপত্রঃ আল্লাহ তাআলার বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব স্মরণ করবে, তাহলে তার মোকাবেলায় নিজের গুণ ও পূর্ণতাকে অতি সামান্য দেখতে পাবে। যাকে নিজের চেয়ে বড় মনে করে তার সঙ্গে সম্মান ও বিনয়ের আচরণ করবে, যাতে করে এটা তার অভ্যাসে পরিণত হয়।

‘উজুব’ বা আত্মশ্লাঘার বর্ণনা

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

অর্থঃ ‘যখন তোমাদের সংখ্যাধিক্য তোমাদেরকে বিমুগ্ধ করেছিলো।’ (সূরা তাওবা-২৫)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-

অর্থঃ ‘আর ধ্বংসাত্মক বিষয়সমূহ হলো-সেই কুবাসনা, যার অনুসরণ করা হয় এবং ঐ কার্পণ্য, যা মেনে চলা হয় এবং মানুষ নিজেকে নিজে ভালো মনে করা, আর এটি হলো, এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক।’ (বাইহাকী)

উজুবের মর্মঃ নিজের পূর্ণতাকে নিজের বলে মনে করা এবং তা ছিনিয়ে নেওয়ার ভয় করা।

ব্যবস্থাপত্রঃ নিজের পূর্ণতাকে আল্লাহর দান মনে করবে এবং তার অমুখাপেক্ষী মহাক্ষমতাকে স্মরণ করে ভয় করবে যে, হয়তো তিনি এটা আমার থেকে ছিনিয়ে নিবেন।

‘গুরুর’ বা ধোঁকার বর্ণনা

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

অর্থঃ ‘মারাত্মক প্রবঞ্চক (শয়তান) যেন তোমাদেরকে আল্লাহর ব্যাপারে ধোঁকায় না ফেলো।’
(সূরা লুকমান-৩৩)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-

অর্থঃ ‘ধোঁকার ঘর অর্থাৎ, দুনিয়া থেকে পৃথক থাকা।’ (বাইহাকী)

ধোঁকার মর্মঃ যে বিশ্বাস নফসের খাহেশের অনুকূল এবং মন তার দিকে ধাবিত হয়, কোন সন্দেহ বা শয়তানের ধোঁকার ফলে তার উপর মন নিশ্চিন্ত হওয়া।

ব্যবস্থাপত্রঃ সবসময় নিজের আমল ও হালতকে কুরআন, হাদীস এবং খাঁটি আল্লাহওয়ালাদের কথা ও কাজের সঙ্গে মিলাতে থাকবে।

উপরোক্ত মন্দ চরিত্রসমূহ দূর করা হলে অন্যান্য মন্দ চরিত্রও বিদূরীত হবে।

আত্মার এ সমস্ত উত্তম চরিত্র ও মন্দ চরিত্রকে জনৈক বুযুর্গ সংক্ষেপে এবং সুন্দররুপে দু’টি চতুর্পদীর মধ্যে সন্নিবেশিত করে দিয়েছেন। যা মুখস্থ করার মত এবং ওযীফা বানানোর উপযুক্ত। চতুর্পদী দু’টি এই-

অর্থঃ আপন রবের নৈকট্য পেতে চাও যদি তুমি নয়টি গুণ দ্বারা শোভিত করো আপন অন্তরভূমি সবর, শোকর, অল্পে তুষ্টি, ইলম ও ইয়াকীন আত্মসমর্পণ, ভরসা পোষণ ও সন্ত্তষ্ট জীবন।

অর্থঃ আয়নার মতন উজ্জ্বল বরণ মন যদি তুমি চাও, মনভূমি হতে এ দশ রিপু তবে বের করে দাও। লোভ-লালসা, দীর্ঘ আশা, ক্রোধ, মিথ্যা, গীবত, বখিলী, রিয়া, হিংসা, বিদ্বেষ ও অহংবোধ।

জানা উচিত যে, ‘মুরাকাবা’র মাকামের সাথে সম্পৃক্ত আরো দু’টি জিনিস রয়েছে। একটি হলো, ‘মুশারাতা’-যার সম্পর্ক ‘মুরাকাবা’র পূর্বের সঙ্গে। দ্বিতীয়টি হলো, ‘মুহাসাবা’-যার সম্পর্ক ‘মুরাকাবা’র পরের সঙ্গে।

‘মুশারাতা’ হলো, প্রতিদিন ভোরে উঠে কিছুময় নির্জনে বসে নিজের মনকে খুব করে বুঝাবে যে, দেখো মন! অমুক অমুক কাজ করবে, আর অমুক অমুক কাজ করবে না। তারপর হলো, ‘মুরাকাবা’ অর্থাৎ, নফসের সঙ্গে কৃত এ অঙ্গীকারের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখবে। তারপর দিন শেষে শোয়ার পূর্বে ‘মুহাসাবা’ করবে, অর্থাৎ, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যত কাজ করেছে, সেগুলোকে খুঁটে খুঁটে মনে করবে। যে সমস্ত নেক কাজ করেছে সেগুলোর জন্য আল্লাহর শোকর আদায় করবে এবং যে সমস্ত মন্দ কাজ হয়েছে বা নেক কাজের মধ্যে মন্দের মিশ্রণ হয়েছে, সেগুলোর কারণে নিজের নফসকে তিরস্কার করবে, শাসাবে এবং ধমকাবে। শুধু ধমকানো ও শাসানো যথেষ্ট না হলে উপযুক্ত কিছু শাস্তি নির্ধারণ করে তা বাস্তবায়ন করবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

অর্থঃ ‘প্রত্যেকের দেখা উচিত যে, সে আগামীকালের (কিয়ামত) জন্য কী পাঠালো?’
(সূরা হাশর-১৮) (ইহইয়াউল উলূম)