উৎস:
ইসলাহী নেসাব: ফুরুউল ঈমান
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (র:)

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম (রহঃ) হযরত আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন-রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘তিনটি জিনিস এমন রয়েছে, সেগুলো যে ব্যক্তির মধ্যে পাওয়া যাবে, সে ঈমানের স্বাদ উপভোগ করবে। আল্লাহ ও রাসূল তার নিকট সর্বাধিক প্রিয় হবে এবং যাকে ভালোবাসবে কেবল আল্লাহর জন্যই ভালোবাসবে, অন্য কোন কারণ এর পিছনে থাকবে না।’
ইমাম আবু দাউদ ও তিরমিযী বর্ণনা করেন যে, ‘আল্লাহর জন্য ভালোবাসা এবং বিদ্বেষ পোষণ করা ঈমানের অন্তর্ভুক্ত।’

আল্লাহর রাসূলকে সর্বাধিক ভালোবাসা

কেউ অবাক হতে পারে যে, আল্লাহ ও রাসূলকে সর্বাধিক ভালোবাসা কি করে সম্ভব? যদি সম্ভব হয়ও, তাহলে হয়তো বা সারা পৃথিবীতে দু’চারজন ব্যক্তিই এ রকম পাওয়া যাবে। তাহলে তো সারা পৃথিবীর বাকী সবাই বেঈমান সাব্যস্ত হয়। বিজ্ঞ আলেমগণ বিভিন্নভাবে এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। তবে অধমের মতে নিম্নমানের একজন মুসলমানেরও আল্লাহ পাকের মেহেরবাণীতে এ সম্পদ অর্জিত রয়েছে। এটি পরীক্ষা করে দেখার উপায় হলো, সর্বনিম্ন একজন মুসলমান সবচেয়ে বেশী যাকে ভালোবাসে, যেমন-তার সন্তান বা স্ত্রী-এমন কেউ যদি ঐ ব্যক্তির সম্মুখে আল্লাহ ও রাসূলের শানে চরম ধৃষ্টতা পোষণ করে, তাহলে কখনোই সে তা সহ্য করতে পারবে না। সম্ভাব্য সকল উপায়ে সে এর প্রতিশোধ গ্রহণ না করে ক্ষ্যান্ত হবে না। আল্লাহ ও রাসূলের সঙ্গে এ পর্যায়ের ভালোবাসা যদি নাই থাকতো, তাহলে এ আবেগ ও উদ্দীপনা কি করে তার মধ্যে সৃষ্টি হলো? এবং তার প্রিয় স্ত্রী বা সন্তানের ভালোবাসা কেন স্থবির হলো, পরাজিত হলো? এতে জানা গেলো যে, আল্লাহ ও রাসূলের সঙ্গে এ পর্যায়ের ভালোবাসা সকল মুসলমানেরই রয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ।
এখন প্রশ্ন দাঁড়ায় যে, তাহলে আল্লাহ ও রাসূলের নাফরমানী হয় কেন? এর কারণ হলো-এ ভালোবাসা মানুষের অন্তরের অন্তঃস্থলে প্রতিষ্ঠিত থাকে। সব সময় তা ফুটে বের হয় না। কোন উদ্বুদ্ধকারী কারণ দেখা দিলে তখন তার আপাদমস্তকে আল্লাহ ও তার রাসূলের ভালোবাসার নূর বিস্তার লাভ করে। উদ্বুদ্ধকারী সেই কারণ দূরীভূত হলে ভালোবাসাও অন্তঃপুরে চলে যায়।

কেবল আল্লাহর জন্য ভালোবাসা পোষণ করা

আল্লাহর জন্য ভালোবাসা পোষণ করার অর্থ হলো, এতে দুনিয়ার কোন স্বার্থ না থাকা। ভালোবাসার রস-রুচির অধিকারী ব্যক্তিগণ বলেন যে, এমনকি সওয়াবও উদ্দেশ্য না হতে হবে। এতেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। আমাদের নিত্যদিনের ঘটনাতেই বিষয়টি সহজে বুঝে আসতে পারে। যেমন, আপনি আপনার উস্তাদ বা পীরের জন্য অত্যাধিক উৎকৃষ্ট কোন জিনিস যদি উপঢৌকন রুপে নিয়ে যান, তখন আপনার দুনিয়ার কোন স্বার্থ বা সওয়াবের চিন্তা মনে আসবে না। কেবলই ঐ বুযুর্গের মনকে খুশী করাই আপনার লক্ষ্য হবে। আমার মতে এ অর্থে কেবল আল্লাহর জন্য ভালোবাসা পোষণ করা কোন বিস্ময়কর ব্যাপার নয়। বরং বাস্তবে তা বহুল পরিমাণে পাওয়া যায়।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্মান প্রদর্শন করা ও তার অনুসরণ করা

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালোবাসার মধ্যে তাকে সম্মান প্রদর্শন করা, তার উপর দুরুদ পাঠ করা এবং তার জীবন পদ্ধতির অনুসরণ করাও অন্তর্ভুক্ত।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
অর্থঃ ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নবীর কন্ঠস্বরের উপর তোমাদের কন্ঠস্বর উঁচু করো না এবং তার সাথে উঁচু স্বরে কথা বলো না।’ (সূরা আল হুজরাত-২)
এ আয়াতে রাসূলকে সম্মান করার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞ আলেমগণ বলেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র বাণী হাদীস শরীফেরও এই একই আদব রক্ষা করতে হবে। অর্থাৎ, তার পাঠদানকালে নীচু আওয়াজে কথা বলতে হবে।
আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করেন-
অর্থঃ ‘এবং তোমরা তাকে (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে) ভক্তি করো।’

আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করেন-
অর্থঃ ‘আল্লাহ ও তার ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি রহমত প্রেরণ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরা নবীর জন্য রহমতের দু’আ করো (অর্থাৎ, দরুদ পড়ো) এবং তার প্রতি সালাম প্রেরণ করো।’
(সূরা আল-আহযাব-৫৬)

আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করেন-
অর্থঃ ‘রাসূল তোমাদের যা কিছু (নির্দেশ) দেন, তা তোমরা শক্ত করে ধরো এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে দূরে থাকো।’ (সূরা হাশর-৭)
এ আয়াতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মেনে চলার হুকুম দেওয়া হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘তোমাদের কেউ অতক্ষণ পর্যন্ত নিজের ঈমানকে পরিপূর্ণ করতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার মনের কামনাকে আমার হুকুমের অধীন করবে।’ (তারগীব ও তারহীব)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেন-
‘তোমরা আমার সুন্নাত এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে নিজেদের উপর আবশ্যক রুপে গ্রহণ করো। দাঁত দিয়ে কামড়িয়ে ধরো এবং নতুন বিষয় থেকে বিরত থাকো। কারণ, প্রত্যেক নতুন বিষয় বিদআত (যা শরীয়তের দলীল দ্বারা প্রমাণিত নয় তাই বিদআত)। আর প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহী। (তিরমিযী)