কবুল করুন আপনার আমানত

আল্লাহর নামে শুরু, যিনি অত্যন্ত দয়ালু, পরম করুনাময়।
কবুল করুন আপনার আমানত
মাওলানা মুহাম্মদ কালীম সিদ্দীকী
আমাকে মাফ করুন
হে আমার প্রিয় ভাই, আপনি আমাকে মাফ করুন। আমি নিজের পক্ষ হতে এবং সমস্ত মুসলিম বেরাদরির পক্ষ হতে মাফ চাই। কারণ মানব-জাতির সবচে’ বড় দুশমন শয়তানের ধোকায় পড়ে আমরা আপনার সবচে’ মূল্যবান সম্পদ আপনার কাছে পৌঁছে দিইনি। শয়তান১ পাপের পরিবর্তে পাপীর প্রতি ঘৃণা মানুষের অন্তরে বদ্ধমূল করে দিয়েছে এবং সারা পৃথিবীকে পরস্পর সঙ্ঘাত ও হানাহানির ক্ষেত্র বানিয়ে রেখেছে। এই গুরুতর ভুলের কথা চিন্তা করেই আমি আজ কলম হাতে নিয়েছি যে, আপনার হক ও আমানত আপনার কাছে পৌঁছে দেবো, দুনিয়ার কোন লোভ-লালসা ছাড়াই আপনাকে প্রেম ও মুহাব্বতের কথা এবং ইনসানিয়াত ও মানবতার কথা শোনাবো।
(টীকাঃ ১। শয়তান বা ইবলিসকে আল্লাহ আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। শুরুতে সে নূরের সৃষ্টি ফিরেশতাকুলের সঙ্গে থেকে আল্লাহর ইবাদত বন্দেগী করতো। পরে আল্লাহ তা’আলা হযরত আদমকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেন এবং ফিরেশতাদের আদেশ করেন আদমকে (সম্মানসূচক) সিজদা করতে। ফিরেশতা সঙ্গে সঙ্গে সে আদেশ পালন করেন, কিন্ত্ত ইবলিস সিজদা করতে অস্বীকার করে এই যুক্তিতে যে, আমি তো তার চেয়ে উত্তম; আমাকে আপনি আগুন থেকে তৈরী করেছেন, আর তাকে তৈরী করেছেন মাটি থেকে। এই নাফরমানি ও যুক্তিবাজির কারণে শয়তান জান্নাত থেকে বিতাড়িত হয়। তখন সে আবেদন করে, হে আল্লাহ, আপনি আমাকে মানুষের পুনরুত্থান-দিবস পর্যন্ত সুযোগ দিন। আল্লাহ বললেন, আচ্ছা, তোমাকে সুযোগ দেয়া হলো। তখন ইবলিস দম্ভ করে বললো, যার কারণে আমার এ পরিণতি, তার বংশধরদের দ্বারা আমি জাহান্নাম ভরে ফেলবো। অবশ্য ইবলিশ নিজেই বললো, তবে আপনার মুখলিছ ও ফরমাবরদার বান্দারা ছাড়া (তাদের আমি ভ্রষ্ট করতে পারবো না)। এই হলো শয়তানের পরিচয়, যা কোরআনে এসেছে।)
আমাদের সবার আসল মালিক, যিনি সবার দিলের অবস্থা জানেন, তিনি সাক্ষী, এ কথাগুলো পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে আসলে আমি পরম আন্তরিকতার সঙ্গে আপনার প্রতি সত্যিকার হামদর্দির হক আদায় করতে চাই। এ কথাগুলো আসলে মালিকের পক্ষ হতে পাঠানো আপনারই আমানত যা আমাদের কাছে পড়ে ছিলো, যা যথাসময়ে আপনার কাছে পৌঁছে না দেয়া ছিলো আমাদের গুরুতর অপরাধ। এ অপরাধবোধের কারণে বহুরাত আমার অনিদ্রায় অস্থিরতায় কেটেছে। মালিকের সামনে যখন হাযির হবো তখন কী জবাব দেবো, এ চিন্তায় বহুদিন থেকে আমি হয়রান পেরেশান।
একটি মুহব্বতপূর্ণ নিবেদন
বলতে সঙ্কোচ হয়, তবু বলি, আমার আন্তরিক কামনা এই যে, মুহব্বতপূর্ণ ও দরদভরা এ কথাগুলো আপনি মুহব্বতের নযরেই দেখবেন এবং পড়বেন। ঐ মহান মালিকের কথা একটু ভাবুন যিনি বিশ্বজগত সৃষ্টি করেছেন, যিনি বিশ্বজগতের পরিচালনা ও প্রতিপালন করছেন। যিনি মানবজাতিরও স্রষ্টা ও প্রতিপালক তার কথা একটু কৃতজ্ঞতার সঙ্গে চিন্তা করুন, যাতে আমার হৃদয় ও আত্মা এই স্বস্তি ও প্রশান্তি লাভ করতে পারে যে, আমি আমার রক্তবন্ধনের ভাই-বোনের কাছে তার আমানত অনেক বিলম্বে হলেও পৌঁছে দিয়েছি এবং মানুষ হিসাবে, সর্বোপরি ভাই হিসাবে কিছুটা হলেও আমি আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করেছি।
পৃথিবীতে জন্মলাভ করার পর যে মহাসত্যকে জানা ও মানা প্রতিটি মানুষের অপরিহার্য কর্তব্য এবং যে বিষয়ে একদিন তাকে মালিকের কাছে জওয়াব দিতে হবে সে মহাসত্যটি আমি আজ আপনাকে শোনাতে চাই, খুব দরদের সঙ্গে এবং খুব মায়া-মুহব্বতের সঙ্গে।
প্রকৃতির সবচে’ বড় সত্য
এই বিশ্বপ্রকৃতির সবচে’ বড় সত্য এই যে, সমস্ত বিশ্বজগতের স্রষ্টা, পরিচালক, নিয়ন্ত্রক ও মালিক শুধু এবং শুধু একজন। নিজের সত্তার ক্ষেত্রে, নিজের যাবতীয় গুণের ক্ষেত্রে এবং যাবতীয় ক্ষমতা ও অধিকারের ক্ষেত্রে তিনি এক ও অদ্বিতীয়। কোনকিছুতেই তার কোন শরীক নেই। তিনিই শুধুই প্রাণ দান করেন এবং প্রাণ হরণ করেন; তিনি ছাড়া আর কেউ না। তিনি সব শোনেন, সব দেখেন, সবার আবেদন-নিবেদন গ্রহণ করেন, শুধু তিনি, তিনি ছাড়া আর কেউ না। তার শক্তি ও কুদরত সর্বত্র বিস্তৃত, কোন কিছু তার কুদরতের বাইরে নয়। এই বিশ্বজগতে গাছের একটি পাতা, বা সৃষ্টির একটি কণাও তাঁর হুকুম ছাড়া নড়ে না; নড়তে পারে না।
প্রতিটি মানুষের অন্তরাত্মা তাঁর অস্তিত্বের সাক্ষ্য দেয়। মানুষ যে ধর্মেরই অনুসারী হোক, এমনকি হোক মূর্তিপূজারী, ভিতরে সে বিশ্বাস এটাই পোষণ করে যে, স্রষ্টা, পরিচালক, প্রতিপালক, নিয়ন্ত্রক, ও আসল মালিক তো শুধু সেই একক সত্তা।
মানুষের আকল-বুদ্ধি এছাড়া আর কিছু ভাবতেই পারে না যে, সমগ্র জগতের মালিক ও নিয়ন্ত্রক একজনই। কোন প্রতিষ্ঠান, কোন গ্রাম, শহর, দেশ যেমন কোন পরিচালক ছাড়া চলতে পারে না, তেমনি দু’জন পরিচালক হলেও তা অচল হয়ে পড়ে। তাহলে এই বিশাল বিশ্বজগত কোন পরিচালক ছাড়া কিভাবে চলতে পারে? কিংবা এর পরিচালক দু’জন বা কয়েকজন কিভাবে হতে পারে?
আল্লাহর একত্বের কোরআনী দলীল
কোরআন কোন মানুষের কালাম নয়, স্বয়ং আল্লাহর কালাম, এর সত্যতা প্রমাণের জন্য কোরআন বিশ্বের সামনে আশ্চর্য এক ঘোষণা দিয়েছে। আল্লাহ বলেন-
’আমি আমার বান্দার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছি তাতে যদি তোমরা সন্দিহান হও তাহলে তার অনুরুপ কোন একটি সূরাই পেশ করো; আর ডেকে নাও তোমরা তোমাদের সাহায্যকারীদের, আল্লাহ ছাড়া, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো।’ (আলবাকারাহ২ঃ২৩)
আজ চৌদ্দশবছর পর্যন্ত পৃথিবীর কোন জ্ঞানী, বিজ্ঞানী, দার্শনিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ এই কোরআনী চ্যালেঞ্জের জবাব দিতে পারেনি; পারবেও না কিয়ামত পর্যন্ত। কোরআনের অলৌকিকতার সামনে সবার মস্তক চিরঅবনত।
আমাদের মালিক তাঁর পাক কালামে নিজের একত্বের পক্ষে অনেক প্রমাণ পেশ করেছেন, যাতে আমাদের আকল-বুদ্ধি সহজে তা বুঝতে পারে। একটি প্রমাণ এই-
’যদি আসমান-যমীনে আল্লাহ ছাড়া কারো কোন মালিক ও শাসক থাকতো তাহলে অবশ্যই তা বিপর্যস্ত হয়ে পড়তো।’ (আলআম্বিয়া ঃ ২১ঃ২২)
কথা পরিষ্কার, একাধিক মালিক হলে কখনো না কখনো তাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দিতো। একজন বলতো, এখন দিন হবে, অন্যজন বলতো, না, রাত হবে। একজন বলতো, এখন দিন বড় এবং রাত ছোট হবে, অন্যজন বলতো এর উল্টো। দেবদেবীদের সত্যি যদি কোন অধিকার থাকতো এবং আল্লাহর কাজে তারা সামান্য অংশীদারও হতো তাহলে বৃষ্টির দেবতা হয়ত পূজায় তুষ্ট হয়ে বৃষ্টি দিতে চাইতো, আর বড় মালিকের পক্ষ হতে বলা হতো, না, এখন বৃষ্টি হবে না।
সত্য তো এই যে, বিশ্বজগতের এই নিখুঁত ও সুশৃঙ্খল ব্যবস্হাপনা সুস্পষ্ট সাক্ষ্য দেয়, এর মালিক ও পরিচালক একজন, শুধু একজন। তিনি যা ইচ্ছা করেন করতে পারেন। মানুষের ধারণা ও কল্পনা তাঁকে বেষ্টন করতে পারে না। তাঁর কোন ছবি আঁকা সম্ভব নয়। তিনি নিরাকার; তাঁর মত কোন কিছু নেই।
সমস্ত জগতকে তিনি মানুষের সেবা ও উপকারের জন্য সৃষ্টি করেছেন। চাঁদ-সূর্য, আগুন-পানি-বাতাস, জড়-উদ্ভিদ-প্রাণী সবকিছু মানুষের সেবায় নিয়োজিত। আর মানুষকে তিনি সৃষ্টি করেছেন শুধু তাঁর ইবাদত করার জন্য, তাঁর হুকুম ও আদেশ মেনে চলার জন্য, যাতে সে দুনিয়ার সমস্ত কাজকর্ম সঠিকভাবে এবং মালিকের পছন্দমতো সম্পন্ন করতে পারে, আর মালিক তার প্রতি রাজী-খুশী ও সন্তুষ্ট হন।
ইনছাফ ও বিবেক-বুদ্ধির দাবী তো এটাই যে, তিনিই যখন একমাত্র সৃষ্টিকর্তা, একমাত্র জীবনদানকারী ও মৃত্যুদানকারী; তিনিই যখন একমাত্র প্রতিপালক ও অন্নদাতা এবং জীবনের সমস্ত প্রয়োজন পূর্ণকারী; তিনি ছাড়া যখন কেউ নেই তখন একজন সত্যনিষ্ঠ মানুষের অপরিহার্য কর্তব্য হবে সারা জীবন ঐ মালিকের অনুগত হয়ে যাপন করা এবং জীবনের সর্ব-অঙ্গনের সববিষয় নিজের দয়ালু মালিকের মর্জিমত করা। যদি কেউ একমাত্র মালিকের আদেশ-নিষেধ মান্য করে এবং তার সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি অনুসরণ করে জীবন যাপন না করে তাহলে নিজেকে সে মানুষ বলে পরিচয় দেয়ারই উপযুক্ত নয়। (একটুকরো হাড়ের জন্য কুকুরও তো আপনার প্রতি বিশ্বস্ত থাকে!)
মৃত্যু এবং মৃত্যুর পরে
আমার মালিক, আপনার মালিক আমার জন্য এবং আপনার জন্য যে সত্য কিতাব পাঠিয়েছেন সেই কোরআনে অনেক সত্যের মধ্যে একটি মহাসত্য এভাবে তুলে ধরেছেন-
প্রতিটি প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে। তারপর তোমাদের সবাইকে আমার দিকে ফিরিয়ে আনা হবে। (আল-আনকাবূত, ২৯ঃ৫৭)
এখানে প্রথম কথা হলো মৃত্যু, আর তা এমনই সত্য যা সবযুগের, সবদেশের, সবধর্মের, সবশ্রেণীর মানুষ বিশ্বাস করে, করতে বাধ্য; ধর্মকে বিশ্বাস করে না এবং মালিককে স্বীকার করে না যে নাস্তিক, সেও এই মহাসত্যের সামনে মাথা নত করে; এমনকি পশুপ্রাণীও মৃত্যু বোঝে এবং মৃত্যু থেকে বাঁচতে চেষ্টা করে।
উপরের আয়াতে দ্বিতীয় যে মহাসত্যটির প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে, যদি সেটা মানুষের বুঝে এসে যায়, ব্যস, তাহলেই মানুষ প্রকৃত মানুষ হয়ে যাবে এবং সারা পৃথিবীর পরিবেশ বদলে যাবে। ঐ মহাসত্য এই যে, ‘মৃত্যুর পর আমারই কাছে তোমাদের ফিরিয়ে আনা হবে’ এবং দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনে যে যেমন কর্ম করবে, আখেরাতের অনন্ত জীবনে তেমনই প্রতিদান পাবে।
যদি মনে করো, মৃত্যুর পর মাটির সঙ্গে মিশে যাবে, আর দ্বিতীয়বার তোমাদের পয়দা করা হবে না তাহলে সেটা তোমাদের মহাভুল। এটাও সত্য নয় যে, মৃত্যুর পর তোমাদের আত্মা অন্য শরীরে প্রবেশ করবে, আর এভাবেই চলতে থাকবে। এ ভ্রান্ত চিন্তা কোনদিক দিয়েই মানববুদ্ধির কষ্টিপাথরে টেকে না।
প্রথম কথা এই যে, জন্মান্তরের এ ধারণা কোন বেদগ্রন্থে নেই। এর উল্লেখ পাওয়া যায় পরবর্তী কালে পুরাণে। এ ধারণার উৎপত্তি হয়েছে এভাবে যে, ধর্মের ঠিকাদারেরা যখন নিজেদের শ্রেণীস্বার্থ রক্ষার জন্য ধর্মের নামে বর্ণপ্রথার প্রবর্তন করলো এবং শূদ্রদেরকে সমাজের অস্পৃশ্য শ্রেণী সাব্যস্ত করলো, যাদের জীবনের একমাত্র কাজ হলো উচ্চবর্ণের সেবা দ্বারা নিজেদের জন্মপাপ মোচন করা, কিন্তু এই দলিত শ্রেণী যখন জানতে চাইলো, আমাদের সবার সৃষ্টিকর্তা তো এক, আর প্রত্যেক মানুষকে তিনি একই রকম নাক-কান ও চোখ-মুখ দিয়েছেন তাহলে কেন নিজেদের আপনারা বলেন উচ্চবর্ণ, আর আমাদের বলেন নীচবর্ণ, অস্পৃশ্য?
এর কোন জবাব তাদের কাছে ছিলো না। তো জবাব খুঁজতে গিয়েই তারা জন্মান্তরের উদ্ভট ধারনার আশ্রয় নিলো যে, গতজন্মের পাপের কারণে এ জন্মে তোমরা নীচবর্ণে ঠাঁই পেয়েছো।
এ দর্শনমতে সমস্ত আত্মা জন্মান্তর লাভ করে এবং নিজ কর্মের বিচারে শরীর পরিবর্তন করতে থাকে। খুব জঘন্য পাপ যারা করে তাদের আত্মা (পাপের তারতম্য বিচারে) বিভিন্ন পশুর শরীরে প্রবেশ করে। আরো জঘন্য পাপ যারা করে তাদের আত্মা গাছপালা, বৃক্ষলতা ইত্যাদির রূপ ধারণ করে। পক্ষান্তরে পূণ্যকর্মের মাধ্যমে মানুষ জন্মান্তরের চক্র থেকে মুক্তি লাভ করতে পারে।
জন্মান্তরবাদের অসারতা, তিনটি প্রমাণ
এ প্রসঙ্গে সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ কথা এই যে, বিজ্ঞানীদের বক্তব্য হলো, পৃথিবীতে সর্বপ্রথম উদ্ভিদ জন্ম নিয়েছে, তারপর বিভিন্ন প্রাণী। এর কোটি কোটি বছর পর মানুষের জন্ম হয়েছে। তো যখন পৃথিবীতে মানুষের জন্মই হয়নি এবং কোন মানবাত্মা তখনো কোন পাপই করেনি তখন কাদের দুর্ভাগা আত্মা এত অসংখ্য পশুপ্রাণী ও বৃক্ষলতার আকারে জন্মগ্রহণ করেছে?
দ্বিতীয় কথা, এ ধারণা সত্য হলে তো এর অনিবার্য ফল এই হওয়া উচিত ছিলো যে, পৃথিবীতে পশুপ্রাণীর সংখ্যা লাগাতার কমতে থাকেবে এবং যে সমস্ত আত্মা জন্মান্তরচক্র থেকে মুক্তি লাভ করবে তাদের সংখ্যা সঙ্কোচিত হতে থাকবে, অথচ বাস্তব অবস্থা এই যে, পৃথিবীতে মানুষ, প্রাণী, উদ্ভিদ সবকিছুই লাগাতার বিপুল পরিমাণে বেড়েই চলছে।
তৃতীয় কথা, পৃথিবীতে জন্মগ্রহণকারী ও মৃত্যুবরণকারীর সংখ্যায় বিরাট ব্যবধান দেখা যায়; মৃত্যুবরণকারীর চেয়ে জন্মগ্রহণকারীর সংখ্যা অনেক বেশী। মাঝে মধ্যে কোটি কোটি মশা-মাছি ও কীটপতঙ্গ জন্ম নেয়, অথচ মৃত্যুবরণকারী মানুষের সংখ্যা সে তুলনায় অনেক কম।
কোন কোন শিশু সম্পর্কে শোনা যায় যে, সে তার গত জন্মের নাম-ঠিকানা বলতে পারে এবং এটা যে তার দ্বিতীয় জন্ম তাও জানে।
সত্য কথা তো এই যে, বাস্তবতার সঙ্গে এসবের কোন সম্পর্ক নেই। এগুলো সাধারণত বিভিন্ন মানসিক ব্যাধি ও মনস্তাত্ত্বিক জটিলতার কারণে, কিংবা আত্মিক, সামাজিক ও পরিবেশগত ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার কারণে ঘটে থাকে। উপযুক্ত চিকিৎসা দ্বারা এসব রোগ-ব্যাধি সেরেও যায়। (আরো বড় কথা এই যে, মানুষকে পথভ্রষ্ট করার জন্য কখনো শয়তানও কোন শিশুর উপর ভর করে এরুপ ভেল্কি দেখিয়ে থাকে।)
মোটকথা, জীবন, জগত, আত্মা ও কর্মফল সম্পর্কে এমন একটা বুনিয়াদি ধর্মবিশ্বাস এরুপ নড়বড়ে চিন্তাভাবনার উপর কীভাবে দাঁড়াতে পারে?
আসলে মৃত্যুর পরই মানুষের সামনে এ সত্য প্রকাশ পাবে যে, মৃত্যুর মাধ্যমে মানুষ তার মালিকের কাছেই ফিরে যায় এবং পৃথিবীতে ভালো-মন্দ যা কিছু সে করেছে মালিক তার হিসাব নেবেন এবং শাস্তি বা পুরস্কারের ব্যবস্থা করবেন।
কর্মের ফল পাবে
মানুষ যদি তার দয়ালু মালিক ও প্রতিপালকের ইবাদত-উপাসনা করে এবং আদেশ-নিষেধ মান্য করে, মালিকের প্রেরিত নবীর বাতানো তরীকার উপর চলে নেক আমল করে তাহলে তো মালিকের দয়ায় সে জান্নাতে যাবে; জান্নাত হলো অনন্ত জীবনের সুখ-শান্তি ও অফুরন্ত নেয়ামতের স্থান। তাতে আরাম-আয়েশের এমন সব ব্যবস্থা ও উপকরণ রয়েছে যা দুনিয়ার মানুষ না কখনো চোখে দেখেছে, না কানে শুনেছে, না কারো কল্পনায় এসেছে। আর জান্নাতে সবচে’ বড় নেয়ামত ও আনন্দ হবে এই যে, দুনিয়াতে তো মানুষের দুর্বল চোখে এমন শক্তি ও যোগ্যতা ছিলো না যাতে সে মালিকের দেখা পায়, কিন্তু জান্নাতে মানুষ নিজের চোখে মালিকের দীদার ও দর্শনসৌভাগ্য লাভ করবে, যেমন পূর্ণিমার রাতে পূর্ণ চাঁদ দেখতে পায়, আর কোন সন্দেহ থাকে না। তখন বান্দার এত আনন্দ হবে যা আর কিছুতে হবে না।
আর যারা মন্দ কাজ করবে, দয়ালু মালিকের খোদাঈতে অন্যকিছুকে কোনভাবে শরীক করবে এবং মালিকের অবাধ্য হবে তারা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। অপরাধ ও মন্দকর্মের শাস্তি হিসাবে তারা জাহান্নামের ভয়ঙ্কর আগুনে জ্বলবে এবং বিভিন্ন রকম সাজা ভোগ করবে, যার খবর মালিক তার কিতাবে দিয়েছেন এবং মালিকের সত্য নবী হাদীছ শরীফে দিয়েছেন। সবচে’ বড় শাস্তি তো এই যে, দুনিয়াতে যেমন তেমনি আখেরাতেও তারা মালিকের দীদার ও দর্শন থেকে বঞ্চিত হবে।
পাপ তো আছে অনেক, তবে জঘন্যতম পাপ হলো শিরক। আমাদের মালিক কোরআনে বলেছেন, নেক আমল ছোট-বড় বিভিন্ন রকমের হয়, তদ্রূপ পাপও ছোট-বড় হয়, কিন্তু মালিক বলেছেন, যে পাপ এবং যে অপরাধ মানুষকে সবচে’ কঠিন আযাবের হকদার বানিয়ে দেয়, যা মালিক কখনো মাফ করেন না, যার কারণে বান্দা চিরকাল জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে, এমনকি আযাবের ভয়াবহতার কারণে সে মৃত্যু চাইবে, কিন্তু মৃত্যু আসবে না সেটা হলো শিরক।
শিরক মানে আল্লাহর যাত ও সত্তা, তাঁর কোন গুণ ও ছিফাত এবং তার অধিকার ও মালিকানার ক্ষেত্রে কাউকে, বা কোন কিছুকে তাঁর সঙ্গে শরীক করা; আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো সামনে মাথা নত করা, সিজদা-প্রণাম করা, আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে পূজা-উপাসনা ও ইবাদতের উপযুক্ত মনে করা, কাউকে জীবনদাতা, মৃত্যুদাতা, অন্নদাতা, উপকার ও ক্ষতির অধিকারী মনে করা, এগুলো সবই শিরক।
দেব-দেবী, বা পীর-ফকীর, সাধু-সন্ন্যাসী যাই হোক, তাকে কোন না কোনভাবে মালিকের সত্তা, গুণ ও অধিকহারে অংশীদার মনে করা, এটাই হলো শিরক। আর শিরক এমনই জঘন্য অপরাধ যা মালিক কখনো মাফ করবেন না, এছাড়া যে কোন অপরাধ তিনি ইচ্ছা করলে মাফ করে দেবেন।
বস্ত্তত আমাদের আকল-বুদ্ধি ও শিরককে এমনই জঘন্য অপরাধ মনে করে। মানুষও সবকিছু বরদাশত করতে পারে, কিন্তু কারো শরীকানা বরদাশত করতে পারে না। যেমন, স্ত্রী যত অন্যায় করুক স্বামী মাফ করতে পারে, যদি অন্য কোন পুরুষকে সে তার মনে স্থান না দেয়। কিন্তু স্ত্রী যত গুণবতী ও রুপবতী হোক, অন্য পুরুষের দিকে নযর দিলে সেটা সে বরদাশত করতে পারে না। মালিকের বিষয় তো বহু উর্ধ্বে; এ উদাহরণ দেয়া হলো শুধু শিরক-এর গুরুতরতা বোঝার জন্য।
স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার আর কতটুকু! তবু তার গায়রতের অবস্থা যদি এই হয় তাহলে আমাদের দয়ালু মালিক আল্লাহ যিনি বিশ্বজগত সৃষ্টি করেছেন মানুষের জন্য, যার ক্ষমতা ও কুদরত এবং দয়া ও করুণা অসীম, যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন শুধু তার ইবাদত করার জন্য, তিনি কীভাবে বরদাশত করবেন যে, মানুষ তাঁর ইবাদতের ক্ষেত্রে, তাঁর মালিকানা ও অধিকারের ক্ষেত্রে অন্যকেও শরীক করবে?
কোরআনে মূর্তিপূজার প্রতি ঘৃণা
মূর্তিপূজার প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করার জন্য কোরআনে একটি উদাহরণ পেশ করা হয়েছে, যা অবশ্যই চিন্তার দাবী রাখে-
আল্লাহকে ছেড়ে তোমরা যেগুলোকে ডাকো সেগুলো সবাই মিলে একটি মাছিও তো সৃষ্টি করতে পারে না। (সৃষ্টি করা তো দূরের কথা) মাছি যদি তাদের সামনে থেকে কোন কিছু (প্রসাদ) ছিনিয়ে নেয়, তারা তার কাছ থেকে তা উদ্ধারও করতে পারে না। পূজারী ও পূজিত উভয়েই দুর্বল। আসলে তারা আল্লাহর তেমন কদর করেনি যেমন কদর করা উচিত। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহাশক্তিশালী, মহা-পরাক্রমশালী। (আল-হজ্ব, ২২ঃ৭৩-৭৪)
কত সুন্দর উদাহরণ! মানুষ নিজেই তো কত দুর্বল! একবিন্দু নাপাক পানি থেকে তার সৃষ্টি; সেই দুর্বল মানুষের হাতে তৈরী মূর্তি তো আরো দুর্বল। যে যুক্তিতেই হোক, মানুষ কীভাবে নিজের হাতে তৈরী মূর্তির সামনে মাথা নত করে?! মূর্তিগুলোর যদি প্রাণ থাকতো, অবশ্যই তারা মানুষের এ নির্বুদ্ধিতার প্রতিবাদ করতো। মূর্তির যদি বাকশক্তি থাকতো তাহলে অবশ্যই বলতো, হে মানুষ, আল্লাহর শানে গোসতাখি করো না, আমাদের সামনে মাথা নত করো না। তোমরা দুর্বল, তোমাদের পূজায় আমাদের কোন লাভ নেই। আমরা তো আরো দুর্বল, আমাদের পূজায় তোমাদেরও ক্ষতি ছাড়া কোন লাভ নেই। আল্লাহর শান অনুযায়ী আল্লাহর কদর করো। একমাত্র তাঁরই ইবাদত করো, তাঁরই সামনে মাথা নত করো।
একটি নির্বোধ চিন্তা
কারো কারো মতে, ‘আমরা এগুলোর পূজা করি এজন্য যে, এরাই আমাদেরকে মালিকের পথ দেখিয়াছে এবং এদেরই মাধ্যমে আমরা মালিকের নৈকট্য ও করুণা লাভ করে থাকি।’
এটা তো এমনই হলো যে, টিকেটমাস্টার টিকেট দিয়েছে বলে ট্রেনে না উঠে টিকেটমাস্টারের সামনেই সিজদায় পড়ে থাকলো। ট্রেন তো চলে গেলো; এখন ঐ সিজদা দ্বারা কি সে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে? এটা তো হলো বোঝার জন্য উদাহরণ। আসলে কোনকিছুই শিরকের জঘন্যতা তুলে ধরার জন্য যথেষ্ট নয়।
কোন কোন ভাই বলে, ‘আমরা তো আসলে মালিকেরই পূজা করি, তবে ধ্যান ও নিমগ্নতাকে একাগ্র করার জন্য সামনে মূর্তি স্থাপন করি।’
এটাও বেশ ’লা-জওয়াব যুক্তি! খাম্বার দিকে তাকিয়ে আছেন, আর বলছেন, ‘আমি তো পিতাজীর ধ্যান করছি, শুধু ধ্যান স্থির রাখার জন্য খাম্বার দিকে তাকিয়ে আছি।’ কোথায় তোমার পিতাজী, আর কোথায় লম্বা খাম্বা! কোথায় নিজের হাতে গড়া মাটির মূর্তি, আর কোথায় মহাপরাক্রমশালী দয়াময় করুণাময় মালিকে জাহান! এতে কি ধ্যান ‘জমবে’ না বিক্ষিপ্ত হবে?
আসলে মানুষ আল্লাহর দেয়া আকল-বুদ্ধি ব্যবহার করে না, কিংবা ভুল ব্যবহার করে; নইলে অবশ্যই বুঝতে পারতো যে, কাউকে কোনভাবেই আল্লাহর বরাবরে, বা ধারেকাছে আনাটাই হলো শিরক এবং তা এমন জঘন্য অপরাধ যে, আল্লাহ কখনো তা মাফ করবেন না। পূজারী ও তার পূজিত মূর্তি চিরকালের জন্য জাহান্নামের ইন্ধন হবে।
শ্রেষ্ঠ পুণ্য হলো ঈমান
শিরক-এর বিপরীতে হলো ঈমান, যার অর্থ, একমাত্র মালিকের প্রতি বিশ্বাস এবং তাঁর একক মালিকানা ও অধিকারের প্রতি পরিপূর্ণ স্বীকৃতি। আর এই ঈমান হলো মানবজীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ পুন্য। মালিকের প্রতি ঈমান ও বিশ্বাসই হলো পরকালে মুক্তির একমাত্র পথ। দুনিয়ার সব ধর্মই বলে, সবকিছুই এখানে ছেড়ে যেতে হবে; মৃত্যুর পর মানুষের সঙ্গে যাবে শুধু ঈমান। আর তাকেই বলে ঈমানদার যে হকদারের হক ঠিক ঠিক আদায় করে। আর যে অন্যের হক নষ্ট করে তাকে বলে যালিম। মানুষের উপর সবচে’ বড় হক হলো তার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর। যেহেতু তিনিই একমাত্র স্রষ্টা এবং হায়াত-মউতের মালিক, যেহেতু তিনিই একমাত্র অন্নদাতা, প্রতিপালক ও পরিচালক সেহেতু একমাত্র তিনিই মানুষের ইবাদতের হকদার। সুতরাং একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা কর্তব্য। মালিকের দেয়া এ জীবন শুধু মালিকের সন্ত্তষ্টি ও আনুগত্যের পথেই যাপন করা কর্তব্য। ‘মালিক যে কিতাব নাযিল করেছেন শুধু সেই কিতাবের বিধান মেনে চলবো; মালিক যে নবী পাঠিয়েছেন শুধু তাঁর বাতানো পথেই চলবো, এরই নাম হলো ঈমান। আল্লাহকে একমাত্র মালিক বলে মানা ছাড়া এবং একমাত্র আল্লাহর আনুগত্য করা ছাড়া মানুষ কখনো ঈমানদার ও মুমিন হতে পারে না, বরং সে হবে বে-ঈমান, কাফের।
মালিকের সবচে’ বড় হক আদায় না করে মানুষের সামনে নিজের ঈমানদারি যাহির করার মানে এই যে, ডাকাতি করে মালদার হলো, আর দোকানদারকে বললো, ‘হিসাবে আপনার একটা টাকা বেশী এসে গেছে, সেটা ফেরত দিতে এসেছি, এই নিন’! এই ডাকাতের যেমন ঈমানদারি, মালিকের আনুগত্য ছেড়ে অন্য কারো ইবাদত করা তার চেয়ে জঘন্য ঈমানদারি ও ধার্মিকতা।
সত্য দ্বীন
মানবজীবনের সূচনা থেকে সত্য ধর্ম ও দ্বীনে হক ছিলো একটাই, আর ঐ দ্বীনের মূল কথা এই যে, যিনি একমাত্র সৃষ্টিকর্তা, একমাত্র পালনকর্তা, একমাত্র অন্নদাতা, একমাত্র মালিক, একমাত্র অধিকর্তা শুধু তাকে স্বীকার করো, শুধু তাঁর হুকুম মানো, শুধু তার আনুগত্য করো এবং তাঁর প্রেরিত সত্য নবীর তরীকায় জীবন যাপন করো।
কোরআনে আল্লাহ বলেছেন-
’দ্বীন তো আল্লাহর নিকট শুধু ইসলাম।’ (আলে ইমরান, ৩ঃ১৯)
আরো বলেছেন, ‘যে কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন গ্রহণ করবে, তার কাছ থেকে তা কবুল করা হবে না; আর আখেরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্তদের দলভুক্ত।’ (আলে ইমরান, ৩ঃ৮৫)
মানুষের দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতা এই যে, তার দৃষ্টি একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্তই দেখতে পায়, এর পরে আর কিছু দেখতে পায় না। তার কান একটি নির্ধারিত সীমা পর্যন্ত শুনতে পায়, এর পরে আর কিছু শুনতে পায় না। তার ঘ্রাণশক্তি, স্পর্শশক্তি, স্বাদগ্রহণের শক্তি, এসবই সীমাবদ্ধ; একটা সীমার পরে গিয়ে এগুলো আর কাজ করে না, (বা ভুল কাজ করে)। অথচ এগুলোই হচ্ছে আকল-বুদ্ধির কাছে তথ্যসরবরাহের মাধ্যম। তাই আকল-বুদ্ধির শক্তিও সীমাবদ্ধ। একটা নির্ধারিত সীমার বাইরে মানব-বুদ্ধি আর কাজ করে না, (বা ভুল কাজ করে)।
তো মালিকের পরিচয় কী? মানুষের কাছে তার মালিকের দাবী কী? মানুষের জন্য মালিক কোন জীবন পছন্দ করেন? মালিকের ইবাদত কীভাবে করতে হবে? মৃত্যুর সময় কী হবে? মৃত্যুর পরে কী হবে? জান্নাত-জাহান্নাম কী? জান্নাতে যাওয়ার পথ কী? জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায় কী? মানবজীবনের জন্য এগুলো সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন. কিন্তু এসব প্রশ্নের উত্তর মানুষের আকল-বুদ্ধির কাছে নেই, জ্ঞান, বোধ ও অভিজ্ঞতা এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না।
নবী-রাসূল, বা পয়গম্বর
মানুষের মালিক মানুষের এ দুর্বলতার প্রতি সদয় হয়ে তাকে সত্যের পথ দেখাতে নবী ও রাসূল পাঠিয়েছেন। মানুষেরই মধ্য হতে কিছু মহান ব্যক্তিকে এ মহান দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা দান করেছেন এবং ফিরিশতাদের মাধ্যমে তাঁদের উপর নিজের বাণী, বার্তা ও পায়গাম অবতীর্ণ করেছেন। আর নবী-রাসূলগণ মানুষকে মালিকের পছন্দ অনুযায়ী জীবনযাপনের পথ ও পন্থা এবং মালিকের ইবাদত বন্দেগি করার সঠিক নিয়ম-তরীকা বাতিয়েছেন। ঊর্ধ্বজগতের ঐসব সত্য তাদের সামনে প্রকাশ করেছেন যা মানুষ নিজের আকল-বুদ্ধি দ্বারা বুঝতে পারতো না। যুগে যুগে বিভিন্ন জাতির মধ্যে প্রেরিত এ মহান ব্যক্তিগণই হলেন নবী, রাসূল, বা পয়গম্বর। অবতারও বলা যায়, তবে ‘মালিকের বার্তাবাহক’ শুধু্ এই অর্থে; ‘ভগবান মানবের রূপ ধারণ করে ধরণীতে অবতরণ করেছেন’, এ অর্থে কিছুতেই নয়। এটা মিথ্যা বিশ্বাস ও জঘন্য পাপ, যা মানুষকে আল্লাহর ইবাদত থেকে সরিয়ে মূর্তিপূজার চোরাবালিতে নিয়ে ডোবায়।
প্রত্যেক জাতি ও সম্প্রদায়ে নবী-রাসূল এসেছেন। মানুষকে তাঁরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার দাওয়াত দিয়েছেন; একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করার কথা বলেছেন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অনুযায়ী জীবন যাপনের যে বিধান (শারী’আত) আল্লাহর পক্ষ হতে তাঁরা এনেছেন তা পালন করার আদেশ দিয়েছেন। কোন নবী-রাসূলই এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদতের কথা, বা তাঁর সঙ্গে অন্য কাউকে শরীক করার কথা বলেনি বরং তাঁরা শিরকের জঘন্যতা সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করেছেন। মানুষ তাদের কথা বিশ্বাস করেছে এবং সত্যের পথ অনুসরণ করেছে।
মূর্তিপূজার শুরু
এখন প্রশ্ন হলো মূর্তিপূজা তাহলে কোত্থেকে এলো এবং কীভাবে শুরু হলো? উত্তর এই যে, স্বাভাবিকভাবেই নবী-রাসূল ও গয়গম্বর বা ‘অবতার’দের প্রতি মানুষের অন্তরে ভক্তি-ভালোবাসা ছিলো। কারণ তাঁদেরই মাধ্যমে তারা মালিকের পরিচয় এবং সত্যপথের দিশা পেয়েছে।
নবী-রাসূল এবং তাঁদের অনুসারী পুণ্যাত্মাদের মৃত্যুবরণ করা ছিলো স্বাভাবিক। যখন যার সময় হবে তখনই সে মৃত্যুবরণ করবে; মুহূর্ত আগেও না, মুহুর্ত পরেও না। (মৃত্যু নেই শুধু আল্লাহর পবিত্র সত্তার।) তো নবী-রাসূল ও তাঁদের অনুগামী পুণ্যাত্মাগণ নিজ নিজ সময়ে যখন মৃত্যুবরণ করলেন, মানুষ তাঁদের মৃত্যুতে খুব শোকার্ত হলো, আর শয়তান সুযোগ পেয়ে গেলো। সে তো মানুষের দুশমন, আর মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য আল্লাহ তাকে শক্তি দিয়েছেন মানুষকে প্ররোচনা ও কুমন্ত্রনা দেয়ার, যাতে বোঝা যায়, কে মালিককে মানে, আর কে শয়তানের কথা শোনে।
শয়তান ভালো মানুষ সেজে মন্ত্রনা দিলো যে, তোমরা তো নবী-রাসূল (ও সাধুলোকদের) ভালোবাসো, আর এখন তাঁদের বিচ্ছেদে কষ্ট পাচ্ছো! তো আমি তাঁদের মূর্তি বানিয়ে দিই, যাতে অন্তত মূর্তিগুলো দেখে কিছুটা সান্ত্বনা পাও।
শয়তান মূর্তি বানালো, মানুষও সান্ত্বনা পেলো। কিন্তু শয়তানের তো গন্তব্য ছিলো বহুদূর। তাই সে নতুন মন্ত্রনা দিলো যে, নবী-রাসূল ও সাধুলোকেরা ছিলেন আল্লাহর প্রতি প্রিয়পাত্র। তো এই মূর্তিগুলোকে ‘ভক্তি’ জানানোর মাধ্যমে তোমরাও আল্লাহর প্রিয় হতে পারো এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারো।
মানুষের অন্তরে মূর্তিগুলোর প্রতি ‘দুর্বলতা’ তো ছিলোই; তাই তারা ভাবলো, কথা তো মন্দ নয়! ব্যস, শুরু হলো ভক্তিনিবেদন, আর ভক্তির স্বভাবই হলো বাড়াবাড়ি ও সীমালঙ্ঘন, (যদি তাতে আসমানের দিকনির্দেশনা না থাকে)
এভাবে শেষ পর্যন্ত মানুষ মূর্তির সামনে মাথা নত করা ও পূজা করা শুরু করলো। মানুষ, যার সিজদা-ইবাদতের একমাত্র হকদার ছিলেন লা-শরীক আল্লাহ, শয়তানের প্ররোচনায় সেই মানুষ শিরক ও মূর্তি-পূজার জালে আটকা পড়ে গেলো। (তখনকার ধার্মিক লোকেরা মানুষকে সর্বনাশের পথ থেকে ফিরিয়ে রাখার চেষ্টা অবশ্যই করেছেন, কিন্তু তাঁদের সম্পর্কে বলা হলো, এরা সেকেলে এবং পুরনো চিন্তার মানুষ!)
ইনসান, যাকে আল্লাহ এই যমীনে নিজের খলীফা বানিয়ে মহামর্যাদা দান করেছিলেন, যখন নিজেকে এভাবে লাঞ্ছিত ও অপদস্থ করলো তখন সে আল্লাহর গযবের উপযুক্ত হয়ে গেলো এবং জাহান্নাম তার ঠিকানা হয়ে গেলো। তারপরো আল্লাহ বিভিন্ন নবী ও পয়গম্বর পাঠালেন, আর মানুষকে তাঁরা মূর্তিপূজা থেকে এবং সর্বপ্রকার শিরক ও যুলুম-অনাচার এবং যাবতীয় নৈতিক অপরাধ থেকে বিরত থাকার উপদেশ দিলেন। কিছু লোক নবীর কথা মানলো, আর কিছু লোক মানলো না, যারা মানলো তাদের প্রতি আল্লাহ সন্ত্তষ্ট হলেন, আর যারা মানলো না, আল্লাহর পক্ষ হতে দুনিয়াতেই তাদের উপর আযাব ও বরবাদির ফায়ছালা হয়ে গেলো, আখেরাতের চিরস্থায়ী আযাব ও বরবাদি তো আছেই।
নবী-রাসূলদের তালীম ও শিক্ষা
একের পর এক নবী-রাসূল আসতে থাকলেন। তাঁদের সবার দ্বীন ও দাওয়াতের বুনিয়াদ ছিলো এক ও অভিন্ন, অর্থাৎ আল্লাহকে এক বলে বিশ্বাস ও স্বীকার করো। আল্লাহর সত্তা, গুণ, মালিকানা ও অধিকারে কাউকে শরীক সাব্যস্ত করো না। তাঁর ইবাদত ও আনুগত্যে কাউকে অংশীদার করো না। তাঁর প্রেরিত সকল নবী-রাসূলকে সত্য বলে বিশ্বাস করো।
ফেরেশতাদের সম্পর্কে বিশ্বাস করো যে, তাঁরা আল্লাহর এক পবিত্র সৃষ্টি, তাঁদের পানাহার নেই, নিদ্রা ও ক্লান্তি নেই। সর্ববিষয়ে তাঁরা মালিকের আনুগত্য করেন; তাঁর অবাধ্যতা করেন না। তাঁরা আল্লাহর ‘আল্লাহত্ব’ এবং তাঁর পরিচালনার মধ্যে কোনরকম হস্তক্ষেপ করেন না; করতে পারেনও না।
আল্লাহ তার বিশেষ ফিরেশতার মাধ্যমে নবী-রাসূলদের উপর যে অহী ও কিতাব অবতীর্ণ করেছেন সেগুলো সত্য বলে বিশ্বাস করো।
আর বিশ্বাস করো যে, মৃত্যুর পর তোমাদের পুনর্জীবিত করা হবে এবং আল্লাহর সামনে হাযির করা হবে, আর পাপ-পূণ্যের বিচার করা হবে। বিশ্বাস করো যে, তাকদীর সত্য এবং তাকদীরের ভালো-মন্দ যা কিছু তা আল্লাহরই পক্ষ হতে।
নবী ও রাসূল তাঁর কাউমকে বলতেন, আমি যে শারী’আত ও বিধান নিয়ে এসেছি তার উপর আমল করো; তাতেই তোমাদের শান্তি ও মুক্তি। আল্লাহর প্রেরিত সকল নবী-রাসূল সত্যবাদী ছিলেন। তাঁদের উপর অবতীর্ণ কিতাব সত্য ছিলো। নবী-রাসূলদের (প্রতি বিশ্বাসের) ক্ষেত্রে আমরা কোন পার্থক্য করি না।
বস্ত্তত নবী-রাসূল, কারো দাওয়াত ও শিক্ষায় এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো পূজা করার কথা নেই; কোথাও শিরক-এর লেশমাত্র নেই। সুতরাং তাদের সত্যবাদী হওয়া সম্পর্কেও কোন সন্দেহ নেই?! তবে হাঁ, যে সকল মহাপুরুষের শিক্ষায় মূর্তিপূজা, বা বহু উপাস্যের কথা পাওয়া যায়, হয় তাঁরা নবী-রাসূলই নন, নতুবা তাঁদের শিক্ষা বিকৃতির শিকার হয়েছে। এ সত্য অস্বীকার করার উপায় নেই যে, মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পূর্বে যত নবী ও রাসূল এসেছেন তাঁদের জীবনবৃত্তান্ত, তাঁদের ধর্ম ও শিক্ষা বিরাট পরিবর্তন ও বিকৃতির শিকার হয়েছে।
শেষনবী হযরত মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
এটি একটি অনস্বীকার্য ঐতিহাসিক সত্য যে, পূর্ববর্তী প্রত্যেক নবী ও রাসূলের যবানে এবং তাঁদের উপর অবতীর্ণ কিতাবে শেষ নবী সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে এবং পরিষ্কার ভাষায় বলা হয়েছে যে, তিনি যখন আসবেন তখন পুরোনো সব শারী’আত রহিত হয়ে যাবে। সুতরাং তখন ঐসব ধর্ম-বিধান ত্যাগ করে শুধু তাঁর আনীত কিতাব ও শারী’আতই মেনে চলতে হবে।
ইসলামের সত্যতার এটাও অকাট্য প্রমাণ যে, পূর্ববর্তী ধর্মগ্রন্থগুলো সীমাহীন রদবদেলের শিকার হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহর ইচ্ছায় শেষনবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণীগুলো অক্ষত রয়েছে, যাতে কেউ বলতে না পারে যে, আমরা কিছু জানতাম না। বেদ-এ নরাশংস, পুরাণে কল্কিঅবতার, বাইবেলে ফারকালীত ও বৌদ্ধ ধর্মে শেষ বুদ্ধ নামে তাঁকে স্মরণ করা হয়েছে। এমনকি তাঁর জন্মস্থান, জন্মকাল ও বিভিন্ন গুণ-বৈশিষ্ট্য সম্পর্কেও সুস্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে।
তাঁর পবিত্র জীবন
এখন থেকে প্রায় সাড়ে চৌদ্দশ’বছর পূর্বে সর্বশেষ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজাযের প্রসিদ্ধ শহর মক্কায় জন্মগ্রহণ করেছেন। জন্মের কয়েক মাস আগেই তাঁর আব্বা আব্দুল্লাহ ইনতিকাল করেন। তাঁর আম্মা হযরত আমেনাও বেশী দিন বেঁচে ছিলেন না। প্রথমে দাদা আব্দুল মুত্তালিব এবং তার মৃত্যুর পর চাচা আবু তালিব তাঁকে লালন-পালন করেছেন। তিনি আপন পুণ্যস্বভাব ও গুণবৈশিষ্ট্যের কল্যাণে মক্কায় সবার ‘চোখের তারা’ হয়ে উঠেন। একদিকে তিনি বড় হতে লাগলেন অন্যদিকে তাঁর প্রতি মানুষের ভক্তি-ভালোবাসাও বৃদ্ধি পেতে লাগলো। তাঁকে ছাদিক ও আমীন (সত্যবাদী ও বিশস্ত) নামে ডাকা হতে লাগলো। মানুষ তাদের মূল্যবান সম্পদ তাঁর কাছে আমানত রাখতো। তাঁকে দিয়ে নিজেদের ঝগড়া-বিবাদের ফায়ছালা করাতো।
হযরত ইবরাহীম (আলাইহিস-সালাম) এক আল্লাহর ইবাদতের জন্য মক্কায় যে ঘর তৈরী করেছিলেন তা হলো বাইতুল্লাহ (আল্লাহর ঘর, কা’কা)। কোরাইশ ছিলো কা’বাঘরের যিম্মাদার। একসময় কা’বাঘর মেরামতের প্রয়োজন দেখা দেয়। কা’বার দেয়ালে রয়েছে একটি পবিত্র পাথর, যার নাম ‘হাজরে আসওয়াদ’ (কালো পাথর)। প্রত্যেক গোত্রপ্রধান দাবী করলো, এটা পুনস্থাপনের সৌভাগ্য সে-ই অর্জন করবে। প্রয়োজনে লড়াই হবে; কোন আপস হবে না। এক বিচক্ষণ বৃদ্ধ ব্যক্তি বললেন, আল্লাহর ঘর মেরামত নিয়ে রক্তপাত করা ভালো নয়। এককাজ করো, আগামীকল যিনি সবার আগে ‘হারাম’-এ আসবেন তিনি এ বিবাদের মীমাংসা করবেন। সবাই তাঁর সিদ্ধান্ত মেনে নেবে। (বাইতুল্লাহকে ঘিরে যে খোলা চত্বর সেটা হলো মাতাফ, বা তাওয়াফের স্থান, তারপরে হলো নামাযের স্থান, সেটা হলো হারাম, বা মসজিদুল হারাম। মাতাফেও জামাআতের কাতার দাঁড়ায়)
দেখা গেলো, সবার আগে হারামে যিনি এলেন তিনি হলেন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। সবাই একসঙ্গে বলে উঠলো, ইনি তো আলআমীন, আমরা তাঁর ফায়ছালা মেনে নিলাম।
তিনি একটি চাদর আনালেন এবং তাতে হাজরে আসওয়াদ রেখে বললেন, প্রত্যেক গোত্রের প্রধান কাপড়ের কিনার ধরে পাথর বহন করুন। পরে তিনি স্বহস্তে পাথরটি তার জায়গায় স্থাপন করলেন। এভাবে তাঁর অসাধারণ বিচক্ষণতায় একটি অনিবার্য রক্তপাত থেকে কোরাইশ বেঁচে গেলো।
যে ঘরের নামে ছিলো বাইতুল্লাহ সেই ‘কা’বাঘরে তখন বিভিন্ন দেব-দেবীর ৩৬০টি মূর্তি ছিলো। সারা আরবে তখন শিরক ও কুফুর তো ছিলোই, তার উপর ছিলো হানাহানি ও রক্তপাত, লুটতরাজ, নারী ও দাস-দাসীদের প্রতি অমানবিক অত্যাচার। কন্যাসন্তানকে জ্যান্ত কবর দেয়া হতো। এমন কোন পাপাচার ও ব্যভিচার ছিলো না যা তখন মক্কায় ছিলো না।
মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বয়স যখন চল্লিশবছর পূর্ণ হলো, তখন আল্লাহ তা’আলা ফিরেশতা হযরত জিবরীল (আলাইহিস সালাম)-এর মাধ্যমে তাঁর উপর কোরআন নাযিল করা শুরু করেন এবং তাঁকে নবী ও রাসূলরুপে নির্বাচন করার সুসংবাদ দান করেন, আর তাকে আদেশ করেন যেন মানুষকে তিনি এক আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যের দিকে ডাকেন।
সত্যের আওয়ায
আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার বাইতুল্লাহর নিকটবর্তী ছাফা নামের পাহাড়ে উঠে সেই আওয়ায দিলেন, আসন্ন বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করার জন্য যে আওয়ায দেয়ার তখন প্রচলন ছিলো। আওয়ায শুনে লোকেরা দ্রুত একত্র হলো। কারণ, সেটা ছিলো সত্যবাদী, বিশস্ত, ঈমানদার ব্যক্তির আওয়ায। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আমি যদি বলি, এই পাহাড়ের পিছনে বড় এক সৈন্যদল আসছে তোমাদের উপর হামলা করার জন্য তাহলে কি তোমরা বিশ্বাস করবে?
সবাই একআওয়াযে বললো, ‘কে আছে যে আপনার কথায় বিশ্বাস করবে না?! আপনি তো কখনো মিথ্যা বলেন না। তাছাড়া পাহাড় থেকে আপনি ঐ দিকটি দেখতে পাচ্ছেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি না।’ তখন তিনি তাদেরকে জাহান্নামের আগুন ও আযাব সম্পর্কে হুঁশিয়ার করে শিরক ও মূর্তিপূজা ত্যাগ করার এবং এক আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্য, তথা ইসলামের দাওয়াত দিলেন।
মানবস্বভাবের একটি দুর্বলতা
শুরু থেকেই মানুষের স্বভাবের মধ্যে একটা বড় দুর্বলতা চলে আসছে যে, বাপদাদা ও পূর্বপুরুষের ভুল কাজ ও ভুল চিন্তাকেও মানুষ অন্ধবিশ্বাসে সঠিক ও নির্ভুল মনে করে থাকে। বুদ্ধি ও বিবেক ও যুক্তি-প্রমাণের যতই বিরোধী হোক, মানুষ তার বংশ, গোত্র বা পরিবারের আচার-প্রথা কিছুতেই ছাড়তে চায় না, বরং ’ঐতিহ্য’ বলে আকড়ে ধরে থাকতে চায়। এমনকি এর বিপক্ষে কোন কিছু শুনতেও সে প্রস্ত্তত নয়।
কঠিন পরীক্ষা ও প্রতিবন্ধকতা
এ কারণেই দীর্ঘ চল্লিশবছর বয়স পর্যন্ত মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অশেষ ভক্তিশ্রদ্ধা করা সত্ত্বেও এবং তিনি চিরসত্যবাদী ও চিরবিশ্বস্ত, এটা জানা সত্ত্বেও মক্কার লোকেরা রাসূল হিসাবে তাঁর এবং তাঁর দ্বীনের প্রবল শত্রু হয়ে গেলো। যতই তিনি মানুষকে শিরকের বিরুদ্ধে এবং তাওহীদের দিকে ডাকতেন মানুষ ততই তাঁর বিরুদ্ধে শত্রুতায় উঠে পড়ে লাগতো। এমনকি যারা তাঁর সত্য দাওয়াতের প্রতি ঈমান আনতো সেই বিশ্বাসী মুমিনদের উপরও তারা চরম নির্যাতন চালাতো। গলায় রশি বেঁধে তাঁদের টানাহেঁচড়া করতো, জ্বলন্ত অঙ্গারের উপর ফেলে রাখতো, চাবুক মেরে রক্তাক্ত করে ফেলতো। তেমনি এক ছাহাবী ছিলেন হাবসী দাস বেলাল। তিনি ছিলেন কোরাইশের নেতা উমাইয়ার গোলাম। সে তাঁকে দুপুরের গরম বালুর উপর ফেলে রাখতো, আর বুকের উপর ভারী পাথর রেখে দিতো, তবু তিনি বলতেন, আহাদ! আহাদ!! আল্লাহু আহাদ!!! আল্লাহ এক, তাঁর কোন শরীক নেই।
হযরত সুমাইয়া ছিলেন কোরাইশ-প্রধান আবুজেহেলের ক্রীতদাসী। ঐ নরপশু তাঁর লজ্জাস্থানে বর্শা দ্বারা আঘাত করে তাঁকে শহীদই করে ফেললো! এ ভাগ্যবতী নারীই হলেন ইসলামের প্রথম শহীদ।
এত যে যুলুম-অত্যাচার ও নির্যাতন-নিপীড়ন, তবু নবীজীর অনুসারী ছাহাবাগণ ছিলেন সত্যের উপর অবিচল। নবীজী নিজেও ছিলেন ধৈর্যের পাহাড়। সবাইকে তিনি সান্ত্বনা দিতেন, আর আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতেন, আর মানুষের হিদায়াতের জন্য দু’আ করতেন।
একবার তিনি মক্বার লোকদের বিষয়ে নিরাশ হয়ে নিকটবর্তী শহর তায়েফে গেলেন, কিন্তু তায়েফীরা এই মহান ও দরদী মানুষটির প্রতি অপমানের চূড়ান্ত করে ছাড়লো। তারা শহরের দুষ্ট ছেলেদের তাঁর পিছনে লেলিয়ে দিলো, আর ওরা পাথর মেরে মেরে তাঁকে একদম ‘লহুলাহান’ (লহুলাহান মানে রক্তাক্ত) করে ফেললো। অসহ্য যন্ত্রনায় যখন তিনি বসে পড়তেন, দুষ্টরা তাঁকে উঠিয়ে দিতো, আর পাথর মারতো।
এ অবস্থায় তিনি শহরের বাইরে গিয়ে আশ্রয় নিলেন, তখনো তিনি তাদের জন্য বদদু’আ করেননি, বরং মালিকের কাছে দু’আ করেছেন যে, ‘এরা তো বোঝে না, হে আল্লাহ, তুমি এদের বুঝ দাও।’
সামাজিক বয়কট
সত্যের বাণী প্রচার করার ‘অপরাধে’ নবীজী, তাঁর হাশেমী পরিবার এবং তাঁর অনুসারী ছাহাবা সবাইকে সামাজিক বয়কট করা হলো, আমাদের দেশে যাকে বলে একঘরে করা। এমন ব্যবস্থাও করা হলো যে, তাঁদের কাছে একদানা খাদ্য বা এককাতরা পানিও যেন যেতে না পারে। তাতেও যখন কিছু হলো না তখন তারা নবীজীকে হত্যার চক্রান্ত করলো, আর তিনি আল্লাহর হুকুমে তাঁর প্রিয় শহর মক্কা ত্যাগ মদীনায় গমন করলেন। এটাকে বলে নবীজীর হিজরত। এর মানে হলো দ্বীন ও ঈমান বাঁচানোর জন্য জন্মভূমি ত্যাগ করা। মক্কার লোকেরা মদীনায়ও নবীজীকে শান্তিতে থাকতে দেয়নি। বারবার সৈন্যদল প্রস্ত্তত করে তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে।
সত্যের জয়
এখন, কিংবা তখন, জয় চিরকাল সত্যেরই হয়। নবীজীর জীবনেও সত্যেরই জয় হলো। দীর্ঘ তেইশ বছরের কঠিন মেহনত মুজাহাদা ও সংগ্রাম-সাধনার পর তিনি মানুষের হৃদয়রাজ্যে শিরকের অন্ধকার দূর করে ঈমানের আলো জ্বালতে সক্ষম হলেন। তাঁর নিঃস্বার্থ দাওয়াত পুরো আরবজাতিকে ইসলামের সুশীতল ছায়ার নীচে নিয়ে এলো। এভাবে জাহেলিয়াতের সমাজে এক ইনকিলাব ও বিপ্লব সৃষ্টি হলো। মূর্তিপূজা বিলুপ্ত হলো। সর্বপ্রকার পাপ ও পাপাচার দূর হলো এবং শ্রেণীবৈষম্যের স্থলে মানুষে মানুষে সাম্য ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হলো। সবাই এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ও অনুগত হলো। ভাই মনে করে ভাইয়ের হক আদায় করা শুরু করলো। এভাবে সমগ্র আরবে শান্তির রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হলো।
শেষ অছিয়ত
ওয়াফাতের মাত্র কয়েক মাস আগে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোয়া লাখ অনুগামী ছাহাবীকে নিয়ে হজ্ব করলেন এবং সমস্ত মানুষকে আখেরি অছিয়ত করলেন। তাতে তিনি একথাও বললেন, হে লোকসকল, হিসাবের দিন আমার সম্পর্কেও তোমাদের জিজ্ঞাসা করা হবে যে, আমি কি আল্লাহর পয়গাম এবং তাঁর দ্বীন তোমাদের কাছে ঠিকমত পৌঁছিয়েছি? তো তোমরা কী জওয়াব দেবে? সবাই বললেন, নিঃসন্দেহে আপনি তা ঠিক ঠিক পৌঁছে দিয়েছেন এবং আমানতের হক পূর্ণরুপে আদায় করেছেন।
তখন আল্লাহর নবী আসমানের দিকে আঙুল উঠিয়ে তিনবার বললেন, হে আল্লাহ, সাক্ষী থাকুন! হে আল্লাহ, সাক্ষী থাকুন!! হে আল্লাহ, সাক্ষী থাকুন!!!
তারপর তিনি বললেন, এ হলো দ্বীনে হক, সত্য ধর্ম। যাদের কাছে এটা পৌঁছেছে তারা যেন তা ঐ লোকদের কাছে পৌঁছে দেয় যাদের কাছে পৌঁছেনি।
তিনি আরো বললেন, আমি আখেরি রাসূল; আমার পরে কোন রাসূল বা নবী আসবে না। আমিই আখেরী নবী, তোমরা যার প্রতীক্ষায় ছিলে, যার সম্পর্কে তোমরা সবকিছু জানো।
কোরআনে আল্লাহ বলেছেন-
যাদের আমি কিতাব দিয়েছি তারা তাঁকে তেমনি চেনে যেমন চেনে আপন পুত্রদের, যদিও তাদের একটি দল জেনে বুঝেও সত্যকে গোপন করে। (আল বাকারাহ, ২ঃ১৪৬)
প্রতিটি মানুষের মুক্তির একমাত্র পথ
এখন কেয়ামত পর্যন্ত যত মানুষই আসবে, সবার অপরিহার্য দ্বীনী ও ইনসানী দায়িত্ব হবে ‘লা-শরীক’ আল্লাহর ইবাদত করা এবং একমাত্র তাঁরই আনুগত্য করা; তাঁর সঙ্গে অন্য কাউকে এবং কোন কিছুকে কোনভাবেই শরীক না করা।
তারপর আখেরী নবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সত্য বলে বিশ্বাস করা এবং তাঁর আনীত দ্বীন ও শারী’আতের উপর জীবন যাপন করা।
তারপর কেয়ামত ও আখেরাত বিশ্বাস করা। পুনরুত্থান, হিসাব ও বিচার এবং জান্নাত-জাহান্নাম সত্য বলে বিশ্বাস করা। আরো বিশ্বাস করা যে, বিচার-দিবসে আল্লাহই হবেন সর্বক্ষমতার একমাত্র মালিক। সেখানেও তাঁর কোন শরীক থাকবে না।
ইসলামে মোটামুটি এটাই হলো ঈমান। এই ঈমান ও বিশ্বাস গ্রহণ করাই আখেরাতে চিরশান্তির জান্নাত লাভের একমাত্র উপায়। এই ঈমান ও বিশ্বাস ছাড়া যার মৃত্যু হবে, চিরকাল জাহান্নামের আগুনে তাকে জ্বলতে হবে।
কিছু জিজ্ঞাসা ও সংশয়
এখানে কারো চিন্তায় প্রশ্ন জাগতে পারে যে, মৃত্যুর পর জান্নাত-জাহান্নমের যে কথা বলা হয় তা তো দেখা যায় না; তাহলে কিভাবে আমরা তা সত্য বলে জানবো?
এক্ষেত্রে একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, সমস্ত আসমানী কিতাবেই জান্নাত-জাহান্নামের অবস্থা বয়ান করা হয়েছে, যা প্রমান করে যে, আখেরাত ও জান্নাত-জাহান্নামের বিশ্বাস হচ্ছে এক সার্বজনীন সত্য।
বিষয়টি আমরা উদাহরণের সাহায্যেও বুঝতে পারি। মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় যদি বলা হতো, আরেকটি জগত তোমার অপেক্ষায় রয়েছে, যেখানে তোমার জন্য ‘দুধের ঝর্ণা’ প্রবাহিত হবে। ঐ জগত তোমার বর্তমান জগতের চেয়ে লক্ষকোটি গুণ বড় ও প্রশস্ত। সেখানে তুমি এমন অসংখ্য জিনিস দেখতে পাবে যা এখন কল্পনাও করতে পারো না।
তো জানা কথা যে, মাতৃগর্ভে এসব কথা তার বিশ্বাস হবে না, বরং মনে হবে, বানানো গল্প। কিন্তু পরে ধীরে ধীরে সে দেখতে পাবে, সবই তো সত্য! তো আখেরাতের তুলনায় এই পুরা দুনিয়া-জাহান যেন একটি মাতৃগর্ভ। মৃত্যুর মাধ্যমে এখান থেকে বের হওয়ার পর মানুষ যখন আখেরাতের জগতে চোখ খোলবে তখন নিজের চোখের সামনে সবকিছু সত্য ও বাস্তবরুপে দেখতে পাবে।
ঐ জগতের জান্নাত-জাহান্নাম ও অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে এমন এক চিরসত্যবাদী মহান ব্যক্তি খবর দিয়েছেন যার বিরুদ্ধে তাঁর জানের দুশমনও মিথ্যার অভিযোগ আনতে পারেনি। এবং খবর দিয়েছে আলকোরআন, যার অলৌকিকত্ব আপনপর সবাই অবনত মস্তকে মেনে নিয়েছে।
কারো মনে দ্বিতীয় খটকা এই হতে পারে যে, যখন সমস্ত নবী-রাসূল এবং তাদের আনীত কিতাব শারী’আত সত্য তাহলে যে কোন একটি ধর্ম মানলে চলবে না কেন? ইসলাম অপরিহার্য হবে কেন?
এখন তো এর জবাব খুবই সহজ। দেখুন, ভারতে একটি পার্লামেন্ট এবং একটি অনুমোদিত সংবিধান রয়েছে। এখানে যত প্রধানমন্ত্রী বিগত হয়েছেন সবাই ছিলেন ভারতের বৈধ ও আইনসম্মত প্রধান-মন্ত্রী। দেশের প্রয়োজনে তারা যখন যে আইন ও সংশোধনী পাশ করেছেন তা সবই ভারতের আইন ও সংবিধানের অংশ। তা সত্ত্বেও সবাই স্বীকার করবেন যে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকার আইন ও সংবিধানে যে পরিবর্তন ও সংশোধনই আনবেন তাতে সংবিধানের পুরোনোত ধারা-দফা অবশ্যই রহিত হয়ে যাবে এবং ভারতের প্রতিটি নাগরিকের কর্তব্য হবে সংশোধিত আইন ও সংবিধান মান্য করা।
এখন যদি কেউ বলে, শ্রীমতি ইন্দিরাগান্ধী ছিলেন ভারতের সত্য প্রধানমন্ত্রী; আমি শুধু তার সময়ের আইন ও সংবিধান মানি; নতুন কোন আইন ও সংশোধনী স্বীকার করি না। তো নিঃসন্দেহে সে হবে সরকারের প্রতি বিদ্রোহী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধী। পূর্ববর্তী সমস্ত আসমানী কিতাব ও মাযহাব সম্পর্কেও একই কথা। নিজ নিজ সময়ে ঐগুলো সত্য শিক্ষাই দান করেছে এবং প্রত্যেক নবী-রাসূলই ছিলেন আল্লাহর পক্ষ হতে প্রেরিত, যার প্রতি আনুগত্য ছিলো বাধ্যতামূলক। কিন্ত্ত এখন তাঁদেরকে এবং তাঁদের আনীত দ্বীন ও কিতাবকে সত্য বলে বিশ্বাস তো করতে হবে, তবে আখেরী নবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর অবশ্যই ঈমান আনতে হবে এবং তাঁর উপর অবতীর্ণ আখেরী কিতাব ও আখেরী শারী’আতের উপর আমল করাই হবে প্রত্যেক মানুষের অপরিহার্য কর্তব্য।
অনুমোদিত দ্বীন ও ধর্ম শুধু একটি
সুতরাং একথা মোটেই সত্য নয় যে, প্রত্যেক ধর্মই তার অনুসারীকে আল্লাহর পথে নিয়ে যায়। পথ হয়ত ভিন্ন, তবে গন্তব্য অভিন্ন। না, শুনতে নির্দোষ মনে হলেও এটা কিছুতেই সত্য কথা নয়। সত্য কথা এই যে, সত্য সবসময় এক ও অভিন্ন; মিথ্যা হতে পারে অনেক। আলো মাত্র একটি; অন্ধকার হতে পারে অনেক।
সত্য ধর্ম আল্লাহর নিকট শুধু একটি। শুরু থেকেই সত্য ধর্ম মাত্র একটি; আর তা হলো ইসলাম। সুতরাং-
’ঐ একজনকেই মানো এবং ঐ একজনেরই মানো’
এটাই হলো ‘আল-ইসলাম’। দ্বীনের কখনো পরিবর্তন হয়নি। সময় ও সম্প্রদায়ের অবস্থা অনুযায়ী শারী’আত ও বিধানের শুধু পরিবর্তন হয়েছে এবং সেটাও একমাত্র আল্লাহর নির্দেশিত পথে, তাঁরই প্রেরিত নবী ও রাসূলের মাধ্যমে। মানবের মূল যখন এক, মানবের মালিক যখন এক তখন মালিকের দিকে চলার পথও হবে এক ও অভিন্ন। কোরআন বলেছে-
দ্বীন তো আল্লাহর নিকট শুধু ইসলাম। (আলে ইমরান, ৩ঃ১৯)
আরেকটি প্রশ্ন এই হতে পারে যে, মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে আল্লাহর প্রেরিত সত্য নবী এবং সর্বশেষ নবী, এর প্রমাণ কী? জওয়াব তো পরিষ্কার যে, প্রথম কথা হলো, আল্লাহর কালাম কোরআন তো নিজের সত্যতা অকাট্য প্রমান দ্বারা সবাইকে মেনে নিতে বাধ্য করেছে। আজ পর্যন্ত কেউ তো তার দাবী রদ করতে পারেনি। সেই সুপ্রমাণিত চিরসত্য কোরআন ঘোষণা করেছে যে, মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রেরিত সত্য নবী এবং সর্বশেষ নবী।
দ্বিতীয়ত তাঁর জীবনের আদি-অন্ত পৃথিবীর সামনে রয়েছে। তাঁর সমগ্র জীবন হচ্ছে ইতিহাসের খোলা কিতাব। পৃথিবীর আর কোন মানবের জীবন তাঁর মত এমন করে ইতিহাসের আলোর মধ্যে সংরক্ষিত নেই। তাঁর প্রতি এবং ইসলামের প্রতি বিদ্বেষী কোন ঐতিহাসিকও এ কথা বলেনি যে, তিনি তাঁর জীবনে কখনো কোন মিথ্যা বলেছেন। তিনি তাঁর নিজের শহরে, নিজের পরিবার ও গোত্রের মাঝে চল্লিশটি বছর যাপন করেছেন। তারা তাঁর সত্যতা ও বিশ্বস্ততার সাক্ষী দিয়েছে। তো যে মহোত্তম ব্যক্তি নিজের ব্যক্তি-জীবনে কখনো একটি মিথ্যাও বলেননি, তিনি দ্বীনের নামে, আপন রব্ব ও মালিকের নামে কীভাবে মিথ্যা বলতে পারেন?! কেনই বা বলবেন?!
তিনি নিজেই বলেছেন, আমি শেষ নবী, আমার পরে আর কোন নবী আসবে না।
সব ধর্মগ্রন্থে সর্বশেষ ঋষি, কল্কিঅবতার সম্পর্কে যে সব ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে এবং তাঁর যত লক্ষণ ও বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়েছে তা শুধু মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ক্ষেত্রেই প্রযুক্ত হয়, আর কারো ক্ষেত্রে নয়।
পন্ডিত বেদপ্রকাশ উপাধ্যায়ের সিদ্ধান্ত
তিনি লিখেছেন, যে হিন্দু ইসলাম ও তার নবীকে মানবে না সে তো হিন্দুও হতে পারে না। কারণ, হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থগুলোতে পরিষ্কার বলা হয়েছে, ‘কল্কিঅবতার’ ও নরাশংস পৃথিবীতে আসবেন। তখন তাঁকে স্বীকার করতে হবে এবং তাঁর দ্বীন মেনে নিতে হবে। সুতরাং আপন ধর্মগ্রন্থে বিশ্বাসী কোন হিন্দু যদি আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মান্য না করে মারা যায় তবে তার জন্য তো অনন্ত নরকবাস অবধারিত। সেখানে সে আল্লাহর দীদর ও দর্শন থেকে বঞ্চিত হবে এবং তাঁর চিরস্থায়ী আযাব-গযবের পাত্র হবে।
ঈমানের প্রয়োজন
মৃত্যুর পরবর্তী জীবনে তো বটেই, এমনকি দুনিয়ার জীবনেও ঈমান ও ইসলাম হচ্ছে মানুষের নিজেরই প্রয়োজন। কারণ, ঈমান ছাড়া, ইসলাম ছাড়া তার আত্মা শান্তি পায় না; তার আত্মার পিপাসা দূর হয় না। সুতরাং নিজের আত্মার শান্তি ও প্রশান্তির জন্যই মানুষের অবশ্যই কর্তব্য হলো এক মালিকের ইবাদত ও আনুগত্য করা। আপন মালিকের দুয়ার ছেড়ে যে অন্যের দুয়ারে ধরণা দিতে থাকে সে তো পশুরও অধম। কুকুরও তো মনিবের দুয়ারে পড়ে থাকে এবং তারই সঙ্গে আশার সম্পর্ক জুড়ে রাখে। সুতরাং সে কেমন মানুষ যে নিজের সত্য মালিককে ভুলে যায়, আর দুয়ারে দুয়ারে হাত পাতে, ধরণা দেয়?
তবে ঈমানের আসল প্রয়োজন হবে মৃত্যুর পরবর্তী জীবনে, যেখান থেকে মানুষ আর কখনো ফিরে আসবে না। (এমনকি আযাবে অতিষ্ঠ হয়ে) মৃত্যু কামনা করবে, কিন্ত্ত মৃত্যু আসবে না। তখন অনুপাত অনুশোচনাতেও কোন কাজ হবে না। মানুষ যদি দুনিয়া থেকে ঈমান ছাড়া চলে যায় তাহলে চিরকাল তাকে জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে। দুনিয়ার আগুনের সামান্য একটি স্ফুলিঙ্গও যদি শরীরে এসে পড়ে, আমরা অস্থির হয়ে পড়ি। তাহলে জাহান্নামের আগুন কীভাবে সহ্য হবে, যা দুনিয়ার আগুনের চেয়ে সত্তরগুণ বেশী প্রচন্ড হবে?! যখন চামড়া ঝলসে যাবে তখন তার স্থানে অন্য চামড়া দেয়া হবে। এভাবে লাগাতার এই সাজা ভুগতে হবে।
অত্যন্ত চিন্তার বিষয়
আমার প্রিয় ভাই! কে জানে কখন মৃত্যুর সময় এসে পড়ে! যে শ্বাস ভিতরে যায় তা বাইরে আসার ভরসা নেই, আর যে নিঃশ্বাস বাইরে আসে তা ভিতরে যাওয়ারও ভরসা নেই। মৃত্যুর আগেই সুযোগ। আমলের এই সুযোগের মধ্যেই নিজের সর্বপ্রথম ও সবচে’ বড় দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হোন। ঈমান ছাড়া না এই দুনিয়ার জীবন সফল, আর না মৃত্যু-পরবর্তী অনন্তকালের জীবন।
আগামীকাল তো সবাইকে আপন মালিকের কাছে যেতে হবে। তখন সবার আগে ঈমান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা হবে। হাঁ আমার পেয়ারে ভাই! আপনার ঈমান সম্পর্কে আমার পেরেশানির নিজস্ব একটি স্বার্থও রয়েছে। তা এই যে, কাল হিসাবের দিন আপনি যেন না বলে বসেন, ‘আমার কাছে তো রবের কথা, মালিকের কথা পৌঁছানোই হয়নি।’
আপনার এ কথা বলার অধিকার আছে। কারণ ঈমানের দাওয়াত ছিলো আপনার প্রাপ্য আমানত, যা মালিকের পক্ষ হতে আমার কাছে, প্রত্যেক মুসলমানের কাছে গচ্ছিত ছিলো এবং আপনার কাছে সেটা পৌঁছে দেয়া ছিলো আমার, আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। আজ অনেক বিলম্বে হলেও সে দায়িত্ব আমি আদায় করলাম। এখন আর আপনার একথা বলার অধিকার নেই যে, আমাকে কেউ কিছু বলেনি।
আমি আশা করি, এই সত্য কথাগুলো আপনার অন্তরের গভীরে রেখাপাত করেছে। সুতরাং আসুন হে ভাই, সত্যের সন্ধানকারী হৃদয় ও আত্মার অধিকারী হে আমার প্রিয় বন্ধু, আসুন ঐ মালিককে সাক্ষী রাখি যিনি অন্তরের গোপনতম অবস্থাও জানেন; তাকে সাক্ষী রেখে খাঁটি ও বিশুদ্ধ অন্তরে স্বীকার করি এবং অঙ্গীকার করি-
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, (ইবাদত ও আনুগত্যের উপযুক্ত কেউ নেই। তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই।)
আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল।
আমি তাওবা করছি কুফুর থেকে, শিরক থেকে (কাউকে, বা কোন কিছুকে কোনভাবে আল্লাহর সঙ্গে শরীক বানানো থেকে) এবং সর্বপ্রকার গোনাহ থেকে। আমি অঙ্গীকার ও প্রতিজ্ঞা করছি, সৃষ্টিকর্তা সত্য মালিকের সমস্ত হুকুম আমি মানবো এবং তাঁর প্রেরিত সত্য নবীর আনুগত্য করবো।
দয়াময়, করুণাময় মালিক আমাকে এবং আপনাকে মৃত্যু পর্যন্ত এই অঙ্গীকারের উপর স্থির অবিচল রাখুন, আমীন।
আমার প্রিয় ভাই! যদি মৃত্যু পর্যন্ত এই ঈমান ও বিশ্বাস অনুযায়ী জীবন অতিবাহিত করতে পারেন এবং ঈমানের উপর মৃত্যুবরণ করতে পারেন তাহলে অবশ্যই বুঝতে পারবেন, সত্যের এ দাওয়াত পৌঁছে দিয়ে আপনার এ ভাই ভ্রাতৃত্ব ও মুহব্বতের কত বড় হক আদায় করছে।
ঈমানের পরীক্ষা
এই ঈমান ও ইসলাম গ্রহণ করার কারণে আল্লাহ না করুন, আপনার উপর পরীক্ষাও নেমে আসতে পারে, যেমন সেই প্রথম যুগে নবীর অনুসারীদের ক্ষেত্রে ঘটেছে এবং যুগে যুগে আল্লাহর বহু নেক বান্দার জীবনে ঘটেছে; তবে জয় সবসময় সত্যেরই হয়েছে এবং সত্যেরই হবে। আপনার জীবনেও জয় সত্যেরই হবে। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় যদি সারা জীবন পরীক্ষার মধ্য দিয়েই পার হতে হয় তাহলে একথা চিন্তা করে চূড়ান্ত ছবর ও ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে যে, দুনিয়ার জীবন তো খুব অল্প সময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ; মৃত্যূর মাধ্যমে শুরু হবে অনন্ত জীবন। ঐ জীবনে জান্নাত এবং তার অফুরন্ত সুখশান্তি লাভ করার জন্য এসব পরীক্ষা তো কিছুই না।
আপনার কর্তব্য
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা; ঈমানের এই সত্য দাওয়াত হচ্ছে প্রত্যেক মুসলমানের নিকট আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ হতে গচ্ছিত একটি পবিত্র আমানত, যার হকদার ও পাওনাদার হলো ঐ প্রতিটি মানব-সন্তান যে আদি পিতা-মাতার সূত্রে রক্ত-সম্পর্কে আপনার ভাই, যার কাছে এখনো এ দাওয়াত পৌঁছেনি, (বা কবুল করার কিসমত হয়নি।) সুতরাং আপনার ঈমানী কর্তব্য হলো একমাত্র আল্লাহর সন্ত্তষ্টির জন্য আপন ভাইকে ভালোবেসে হামদর্দির সঙ্গে হকের দাওয়াত পৌঁছে দেয়া, যাতে সে আল্লাহর আযাব-গযব থেকে, জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে যায় এবং চিরস্থায়ী সুখশান্তির জান্নাতের অধিকারী হয়ে যায়। আপনার অন্তরে যেন ঐ দরদ-ব্যথার অনুভূতি জাগরুক থাকে যা বুকে নিয়ে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবনভর পথহারা মানুষের কাছে সত্যের এ দাওয়াত পৌঁছিয়েছেন। আপনিও নবীওয়ালা দরদে দরদী হোন; আপনিও ঘরে ঘরে, দুয়ারে দুয়ারে ঈমানের, ইসলামের এ দাওয়াত পৌঁছে দিন। আপনার পথ-ভোলা ভাই যেন সত্যের পথ বুঝতে পারে, গ্রহণ করতে পারে, সে জন্য আপনিও আপনার নবীর মত মাওলার দরবারে রোনাযারি ও মুনাজাত করুন।
এমন মানুষ কি নিজেকে মানুষ বলে পরিচয় দিতে পারে যার সামনে তার অন্ধ ভাই দৃষ্টিশক্তি থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে আগুনে পড়তে যাচ্ছে, অথচ একটি বারও মুখ ফুটে সে বললো না, ‘ভাই, সাবধান! সামনে আগুন!!’
ইনসানিয়াত ও মানবতার দাবী তো এই যে, শুধু সাবধানই করবে না, বরং হাত ধরে তাকে আগুনের পথ থেকে ফিরিয়ে রাখবে এবং যতক্ষণ সাধ্য আছে কোনভাবেই তাকে আগুনে পড়তে দেবে না। হাতে ধরবে, পায়ে ধরবে, অনুনয় করবে, তিরস্কার করবে, মিনতি জানাবে, তবু তাকে সর্বনাশের পথ থেকে ফিরিয়ে রাখবে। হাঁ, তবে সবসময় প্রজ্ঞাপূর্ণ আচরণ করতে হবে, যেন ভুল বুঝতে না পারে, যেন ভুল বুঝে আরো অবুঝ না হয়ে পড়ে। নিঃস্বার্থতার সঙ্গে, দরদ-ব্যথা ও মায়ামমতার সঙ্গে এবং প্রজ্ঞা ও হিকমতের সঙ্গে যে কথা বলা হয় তা অন্তরে অবশ্যই রেখাপাত করে এবং আবেদন সৃষ্টি করে, হোক তা অতি কঠিন হৃদয়।
যদি আপনার উছিলায় একজন মানুষও ঈমানের সম্পদ পেয়ে যায় এবং মালিকের দুয়ারে পৌঁছে যায়, এর চেয়ে সৌভাগ্যের বিষয় আর কী হতে পারে?! আল্লাহ তা’আলা ঐ ব্যক্তির প্রতি খুবই খুশি হন যে কোন মানুষকে কুফুর ও শিরকের বেড়াজাল থেকে উদ্ধার করে ঈমানের আলোকিত পথে নিয়ে আসে; নিয়ে আসার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে।
আপনার সন্তান যদি বিদ্রোহ করে শত্রুর কাছে চলে যায় এবং তার ইশারায় চলতে থাকে, আর কোন নেক মানুষ যদি আদরে সোহাগে বুঝিয়ে সুঝিয়ে তাকে আপনার কাছে ফিরিয়ে আনে তাহলে ঐ ভালো মানুষটির প্রতি আপনি কত খুশী হবেন! আল্লাহ তো তাঁর ঐ বান্দার প্রতি এর চেয়ে লক্ষ গুণ বেশী খুশী হন যে তাঁর পথভোলা বান্দাকে ঈমানের দাওয়াত দিয়ে তাঁর কাছে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে।
ঈমান গ্রহণ করার পর
ঈমান গ্রহণ করার পর যখন আপনি মালিকের সাচ্চা ও খাঁটি বান্দা হয়ে গেলেন, তো এখন আপনার উপর প্রতিদিন পাঁচওয়াক্ত ছালাত (ছালাত মানে নামায; ছিয়াম মানে রোযা। হজ্জ ও যাকাত যেমন আরবী শব্দ এবং কোরআন-হাদীসের শব্দ তেমনি ছালাত ও ছিয়াম হচ্ছে কোরআন-হাদীসের আরবী শব্দ। সুতরাং কোরআনের শব্দই আমাদের ব্যবহার করা কর্তব্য) ফরয হয়ে গেলো। আপনি ছালাত শিখুন এবং ছালাত পড়ুন। ছালাত দ্বারা আপনার রুহ ও আত্মা শান্তি লাভ করবে এবং অন্তরে আল্লাহর মুহব্বত বাড়বে। মালদার হলে শারী’আতের নির্ধারিত নিয়মে প্রতিবছর যাকাত আদায় করুন। এটা আপনার উপর মালিকের পক্ষ হতে গরীবের হক। তারপর রামাযানের পূর্ণ মাস দিনে ছিয়াম রাখুন। আর যদি শারী’আতে বর্ণিত সামর্থ্য থাকে তাহলে জীবনে একবার হজ্ব আদায় করুন। এগুলো ইসলামের মৌলিক বিধান ও বুনিয়াদি ফরয।
খবরদার! সাবধান!! হুঁশিয়ার!!! আপনার মাথা যেন আল্লাহ ছাড়া কারো সামনে নত না হয়। কুফুর ও শিরকের যত রকমের প্রকাশ ও অভিব্যক্তি রয়েছে সেগুলো থেকে পূর্ণরুপে অবশ্যই অবশ্যই বেঁচে থাকুন, যাতে এত কষ্টে অর্জিত ঈমান খতরায় না পড়ে যায়। মিথ্যা বলা, ধোকা দেয়া, প্রতারণা করা, অপবাদ দেয়া, অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়া, জানমাল-ইজ্জত আবরুর হক নষ্ট করা, সুদ-ঘুষ-জুয়া, মদ ও মাদকদ্রব্য গ্রহণ করা, শূকরের গোশত এবং যে কোন হারাম গোশত খাওয়া; এককথায় আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূল যা কিছু হারাম করেছেন তা সবই আপনার জন্য হারাম। তা থেকে অবশ্যই বেঁচে থাকতে হবে। তদ্রূপ আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূল যা কিছু হালাল করেছেন সেগুলোকে অবশ্যই হালাল মনে করতে হবে।
মালিকের পক্ষ হতে যে পাক কালাম দান করা হয়েছে, কোরআন শরীফ, তা বুঝে বুঝে পড়তে হবে। পাক-পবিত্রতার মাসায়েল ও বিধান শিখতে হবে।
সবসময় খাঁটি মনে দু’আ করতে হবে, ‘হে আমার মালিক, আমাকে, আমার পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়স্বজনকে, আমার বন্ধুবান্ধবকে এবং দুনিয়ার সমস্ত মানুষকে ঈমানের সঙ্গে জীবিত রাখো, ঈমানের সঙ্গে মৃত্যুদান করো।’
ঈমানই হচ্ছে মানবসমাজের প্রথম ও শেষ আশ্রয়। যেভাবে আল্লাহর প্রিয় পয়গম্বর হযরত ইবরাহীম আলাইহিস-সালাম ঈমানের বলে বলীয়ান হয়ে জ্বলন্ত আগুনে ঝাঁপ দিয়েছিলেন, অথচ আগুন তাঁর সামান্য ক্ষতিও করতে পারেনি, এ যুগেও আল্লাহর কুদরতে ঈমানের শক্তি আগুনকে বানাতে পারে ফুলবাগিচা!
আলহামদু লিল্লাহ, সমাপ্ত হলো।
Leave a Reply