উৎস:
ইসলাহী নেসাব: ফুরুউল ঈমান
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (র:)

দুনিয়া পরিত্যাগ করা
‘জাবির (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার একটি মৃত ছাগলের বাচ্চার নিকট দিয়ে অতিক্রম করেন। বাচ্চাটির কান কাটা ছিলো। তিনি বললেন, তোমাদের কেউ কি এক দিরহামের বিনিময়ে এ ছাগলের বাচ্চাটির মালিক হওয়া পছন্দ করবে? তারা বললেন, আমরা তো এটি সামান্য কোন জিনিসের বিনিময়ে নেওয়াও পছন্দ করবো না। তিনি বললেন, খোদার কসম! এটি যেমন তোমাদের নিকট মূল্যহীন, দুনিয়া আল্লাহ তাআলার নিকট তার চেয়ে অধিক মূল্যহীন।’ (মুসলিম)
হযরত আমর ইবনে আউফ (রাযিঃ) থেকেও বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘খোদার কসম! আমি তোমাদের উপর অভাব- অনটনের আশংকা করি না, বরং আমি তো এই আশংকা করি যে, তোমাদের উপর দুনিয়া এমন প্রশস্ত হয়ে যাবে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর হয়েছিলো। ফলে তোমরা তার প্রতি অনুরাগী হবে, যেমন পূর্বের লোকেরা অনুরাগী হয়েছিলো। ফলে দুনিয়া তোমাদেরকে ধ্বংস করবে। যেমন তাদেরকে সে ধ্বংস করেছে।’ (বুখারী, মুসলিম)
হযরত আবদুল্লাহ বিন আমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-

‘নিশ্চয়ই ঐ ব্যক্তি সফল হলো, যে মুসলমান হলো এবং তাকে জীবিকা নির্বাহ পরিমাণ রিযিক দেওয়া হলো এবং আল্লাহ প্রদত্ত রিযিকের উপর সে তুষ্টও থাকলো।’ (মুসলিম)
হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
‘হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতের জন্য অবসর হয়ে যাও। আমি তোমার অন্তরকে ঐশ্বর্য দিয়ে ভরে দিবো এবং তোমার অভাবকে বন্ধ করে দিবো। আর যদি তুমি এমন না করো, তাহলে তোমার হাতকে ব্যস্ততা দিয়ে ভরে দিবো এবং তোমার অভাব বন্ধ করবো না।’ (আহমাদ, ইবনে মাজা)
সুহাইল ইবনে আসআদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘দুনিয়ার মূল্য যদি আল্লাহর নিকট মাছির পাখার সমানও হতো, তাহলে কোন কাফির একঢোক পানিও পেতো না।’ (আহমাদ, তিরমিযী, ইবনে মাজা
আবু মূসা আশআরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘যে ব্যক্তি দুনিয়াকে ভালোবাসলো, সে তার আখিরাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করলো। আর যে ব্যক্তি আখিরাতকে ভালোবাসলো, সে তার দুনিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করলো। তাই ধ্বংসশীল জিনিসের উপর স্থায়ী জিনিসকে প্রাধান্য দাও।’ (আহমাদ, বাইহাকী)
কা’আব ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘যদি দু’টি ক্ষুধার্ত বাঘকে ছাগল পালের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হয় তারাও ঐ পরিমাণ ক্ষতি করবে না, পদ ও সম্পদের লোভ যেই পরিমাণ মানুষের দ্বীনের ক্ষতি করে।’ (তিরমিযী, দারামী)
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে-
‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি চাটাইয়ের উপর শুয়ে (ছিলেন সেখান থেকে) উঠলে তার পবিত্র দেহে চাটাইয়ের দাগ লেগেছিলো, তখন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) নিবেদন করলেন-হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যদি আমাদেরকে অনুমতি দেন, তাহলে আমরা কিছু বিছিয়ে দেবো। তিনি বললেন-দুনিয়ার সাথে আমার কী সম্পর্ক? আমার ও দুনিয়ার তো এমন দৃষ্টান্ত, যেমন-কোন আরোহী ব্যক্তি কোন গাছের নীচে ছায়া নেওয়ার জন্য দাঁড়ালো, তারপর তা ছেড়ে সামনে চলে গেলো।’ (আহমাদ, তিরমিযী, ইবনে মাজা)
আবু উমামা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘আমার প্রভু আমার নিকট এ প্রস্তাব পেশ করেছিলেন যে, পবিত্র মক্কার ভূমি স্বর্ণের বানিয়ে দেই। আমি আরজ করলাম। না হে প্রভু! আমি একদিন পেট ভরে খাবো, আর একদিন অনাহারে থাকবো। যেদিন অনাহারে থাকবো, সেদিন আপনার নিকট কান্নাকাটি করবো এবং আপনাকে স্মরণ করবো। আর যেদিন পেট ভরে খাবো সেদিন আপনার প্রশংসা করবো ও শোকর আদায় করবো।’ (আহমাদ)
উপরোক্ত হাদীসসমূহ ছাড়াও দুনিয়ার নিন্দা, পদ, প্রভাব ও সম্পদের নিন্দা এবং দুনিয়া বিরাগী হওয়া, অল্পে তুষ্টি, আখিরাতের অন্বেষা ও প্রচারবিমুখিতার ফযীলত সম্পর্কে এত অধিক সংখ্যক সুস্পষ্ট ও বিশুদ্ধ হাদীস রয়েছে, যেগুলো আয়ত্ত করা অসম্ভব।

জাগতিক উন্নতি প্রত্যাশীদের চিন্তার সংশোধন এবং প্রশংসনীয় উন্নতি ও নিন্দনীয় উন্নতির বিশ্লেষণ
এ যুগে উন্নতি উন্নতি বলে অনেক চিৎকার করা হয়। অথচ যখন অনুসন্ধান করা হয় তখন তার স্বরুপ দীর্ঘ আশা, পদ ও প্রতিপত্তির লোভ এবং সম্পদের লালসা বের হয়। কোন ঈমানদার এ ব্যাপারে সংশয়-সন্দেহ করতে পারে না যে, এ উন্নতির উৎসাহ দেওয়া মূলতঃ করুণার আধার সুবিজ্ঞ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র ও মহান শিক্ষার পরিপন্থী পথে উদ্বুদ্ধ করা। যদিও তারা নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির উদ্দেশ্যে এ কৃত্রিম উন্নতির পক্ষে এমন চটকদার বক্তৃতা দেয় যে, তার ফলে সহজ-সরল মানুষেরা ধোঁকা খায়। তারা বলে যে, ইসলামের উন্নতিই আমাদের মূল লক্ষ্য। কিন্ত্ত যুগের গতির চাহিদা এই যে, বাহ্যিক জাঁকজমক ছাড়া ইসলামের মহত্ত্বও শ্রেষ্ঠত্ব মানুষের চোখে বিশেষতঃ বিজাতীদের চোখে ধরা পড়ে না। তাই জাগতিক উন্নতিরও প্রয়োজন রয়েছে।
বন্ধুগণ! কেবলই প্রলেপ লাগানো চটকদার এ বক্তৃতা। কারণ, প্রথমতঃ এ কথাই ভুল যে, জাগতিক জাঁকজমক ছাড়া কারো চোখে ইসলাম মূল্যবান হতে পারে না। ইসলামের এমন খোদাপ্রদত্ত রুপ-সৌন্দর্য রয়েছে যে, সাদামাটা অবস্থায়ও তা মনোহরী। বরং সাদামাটা অবস্থায় তার রুপ অধিকতর বিকশিত হয়। আর জাকঁজমকের ফলে তা ঢাকা পড়ে যায়। সাহাবীদের যুগ থেকে নিয়ে এ সময় পর্যন্ত ইতিহাস ও জীবন-চরিত খুঁজে দেখুন। যে ব্যক্তির মধ্যেই পূর্ণ ইসলাম রয়েছে, স্বপক্ষের ও বিপক্ষের সবাই তার প্রভাব-প্রতিপত্তি ও শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করেছে। আর প্রদর্শনী ও কৃত্রিমতা ছাড়া আমাদের যে মূ্ল্য হয় না, এর কারণ এটাই যে, আমাদের ইসলাম শক্তিশালী ও পরিপূর্ণ নয়। তাই তার ছিদ্র পথগুলো অহেতুক সাজসজ্জা দিয়ে বন্ধ করতে থাকি। বর্তমানেও আল্লাহ পাকের এ ধরনের কামেল লোক যেখানেই রয়েছে, তাদের মর্যাদা ও মূল্য স্বচক্ষে গিয়ে দেখে আসুন।
এ যুগেরই ঘটনা। হযরত মাওলানা সায়্যিদুনা শাহ মুহাম্মাদ ফজলুর রহমানের দরবারে বড় বড় আমীর-উমারা ও শাসকদের উপস্থিতি এবং তার প্রতি এদের অপরিসীম আদব-শ্রদ্ধা কারো অজানা নয়। সেখানে তো কোন বাহ্যিক শান-শওকাত ছিলো না। এ সাদামাটা ইসলামই তো সেখানে ছিলো, যার আকর্ষণ ছিলো অপরিসীম।
আরেফ সিরাযী (রহঃ) এর নিম্নের কবিতাটি যেন এ বিষয়টিকেই তুলে ধরছে-
‘প্রেমাষ্পদের রুপ-সৌন্দর্য আমাদের অসম্পূর্ণ প্রেমের মুখাপেক্ষী নয়। রুপসী চেহারার জন্য প্রসাধনী ও সাজসজ্জার প্রয়োজন হয় না।’
ইসলামের উন্নতি তাদের মূল লক্ষ্য, আর জাগতিক উন্নতি তার একটি মাধ্যম ও উপায় মাত্র- তাদের এ দাবী তখনই মানা সম্ভব হতো, যখন এ দাবীদাররা দুনিয়ার ব্যাপারে যে পরিমাণ গুরুত্বারোপ করে, দ্বীনের ব্যাপারে ততোধিক বা তার সমান না হলেও তার অর্ধেক বা এক-চতুর্থাংশ গুরুত্বারোপ করতো। আমরা তো দেখি যে, তারা জাগতিক ব্যাপারে এতই নিমগ্ন যে, তারা না আল্লাহর খবর রাখে, না রাসূলের কথা স্মরণ করে। না আকীদা বিশ্বাসের চিন্তা করে, না হুকুম-আহকামের পরোয়া করে।
তাদের অবস্থা তো এই-
‘শয়নে-স্বপনে জীবনে-মরণে তাদের কেবলই দুনিয়ার চিন্তা।’
তাহলে আমরা কি করে তাদের দাবী মেনে নিতে পারি? তাদের কেউ কেউ আবার সাহাবীদের উন্নতিকে দৃষ্টান্তস্বরুপ তুলে ধরে। তাদের এ দৃষ্টান্তকে মেনে নিতে আমরা মনে-প্রাণে রাজি আছি। আসুন! তাদের দৃষ্টান্তকে সামনে রেখেই আমাদের ও আপনাদের মাঝে ফায়সালা হয়ে যাক।
জ্ঞান-গবেষণা ও ন্যায়বিচারের দৃষ্টিতে দেখুন যে, সাহাবাগণ কোন বিষয়ে উন্নতি করেছিলেন, ধর্মীয় বিষয়ে না জাগতিক বিষয়ে? তারা যদি রাষ্ট্র বিস্তারের চেষ্টা করে থাকেন, তা কি ব্যবসা-বাণিজ্য, চাষাবাদ, শিল্প-কারখানা ও উচ্চ মর্যাদার উন্নতির উদ্দেশ্যে ছিলো, নাকি নামায-রোযা, কুরআন-যিকির, দন্ডবিধি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ছিলো। সর্বাধিক সত্য ইতিহাস পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে এর সত্যায়ন করুন। উপরে মুহাজির সাহাবীদের আলোচনা করে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
অর্থঃ ‘তারা এমন লোক, যাদেরকে আমি পৃথিবীতে শক্তি-সামর্থ্য দান করলে তারা নামায কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করবে। প্রত্যেক কর্মের পরিণাম আল্লাহর এখতিয়ারভুক্ত।’ (সূরা হাজ্জ-৪১)
হাদীস ও সীরাত গ্রন্থ থেকে তাদের অবস্থা অনুসন্ধান করুন। এমন বিস্তর বিজয়ের পরও তারা কখনও পেট পুরে আহার করেননি। মন ভরে ঘুমাননি। তাদের দিন-রাত আল্লাহর ভয় ও যিকির-ফিকিরে অতিবাহিত হয়েছে। বরং জাগতিক প্রভূত প্রশস্ততার কারণে তারা ভীত-সন্ত্রস্ত ছিলেন এবং কান্নাকাটি করতেন। কোথায় সাহাবাগণের সেই উন্নতি! আর কোথায় এ যুগের বিপরীতমুখী উন্নতি!
‘সে পথ ও এ পথের এ বিশাল বৈষম্য লক্ষ্য করুন।’
আসল কথা হলো, লালসা ও কামনা চতুর্দিক থেকে তাদেরকে বেষ্টন করে নিয়েছে। তাদের স্বভাব-প্রকৃতি আরামপ্রিয় হয়েছে। ঐশ্বর্য, সচ্ছলতা ও উপভোগ সামগ্রীর সমাহার ঘটুক এই হলো তাদের বাসনা। দ্বীন ইসলামের নাম জাতীয় পরিচয় ও স্বকীয়তা রুপে অবশিষ্ট থাকুক। বাকী নামায-রোযার কোন ধার ধারা নেই। বরং এ সমস্ত বিধানের সঙ্গে তারা ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের আচরণ করে থাকে। বন্ধুগণ! এ কেমন ধর্ম!
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
অর্থঃ ‘আপনি বলুন! তোমাদের ঈমান তোমাদেরকে যে কাজের নির্দেশ দেয় তা বড়ই মন্দ। যদি তোমরা সত্যিই ঈমানদার হয়ে থাকো।’ (সূরা বাকারা-৯৩)

একটি সন্দেহের অপনোদন
কারো যেন এ সন্দেহ না হয় যে, আমি দুনিয়া উপার্জন করতে নিষেধ করছি, বা তার উপায়-উপকরণসমূহ যেমনঃ ইংরেজী পড়া, আধুনিক শিল্প আবিষ্কার করা ইত্যাদিকে হারাম বলছি। শরীয়তসম্মত দলীল ব্যতিরেকে নিছক হঠকারিতা করে এগুলোকে হারাম ফতওয়া দিয়ে আল্লাহর উপর মিথ্যারোপকারী হওয়া আমি কি করে পছন্দ করতে পারি? মোটেও এটা আমার উদ্দেশ্য নয়। খুব দুনিয়া কামাও, চাকুরী করো, জাগতিক উপায়-উপকরণ সংগ্রহ করো। বরং বাহ্যিক পরিতৃপ্তি বেশীর ভাগ সময় অভ্যন্তরীণ প্রশান্তির মাধ্যম হয়ে থাকে।
কবি বলেন-
‘জীবিকার অধিকারী লোক আল্লাহকে নিয়ে মগ্ন থাকে। যে জীবিকা নিয়ে পেরেশান, তার অন্তরও পেরেশান।’
আমার কথা হলো- দ্বীনকে ধ্বংস করো না। দ্বীনকে মূল্যহীন মনে করো না। দুনিয়া উপার্জনের ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধি-নিষেধ মেনে চলার চেষ্টা করো। দুনিয়াকে দ্বীনের উপর প্রাধান্য দিও না। যেখানে উভয় কূল রক্ষা হয় না সেখানে দুনিয়ার লাভকে জলাঞ্জলী দাও। দুনিয়াবী ইলম শিক্ষা করতে গিয়ে নামায, রোযা থেকে গাফেল হয়ো না। ইসলামী আকীদার উপর পরিপক্ক থাকো। মন্দ লোকের সান্নিধ্য থেকে দূরে থাকো। পুরোপুরি বাচঁতে না পারলে কমপক্ষে নিষ্প্রয়োজনীয় বন্ধুত্ব ও অহেতুক মেলামেশা করো না। আলেম ও নেককারদের সান্নিধ্য থেকে দূরে থেকো না।
আলেমদের নিকট গিয়ে নিজের আমল-আকীদাকে পরিশুদ্ধ করো। কোন সন্দেহ থাকলে জিজ্ঞাসা করো। অন্যায়ের প্রতি দৃষ্টি দিও না। নিজের সব কথা ও কাজ আল্লাহ তাআলা সর্বদা দেখছেন ও জানছেন তা বিশ্বাস করো। হিসাব ও প্রতিফলকে ভয় করো। বেশ-ভূষা ও পোশাক-আশাকে শরীয়তের নিয়ম মেনে চলো। অভাবী ও অসহায়দেরকে তুচ্ছ মনে করো না। তাদের সেবা এবং তাদের সঙ্গে সদাচরণ করাকে গর্বের বিষয় মনে করো। নিজেকে বিনয়ী ও বিনম্র রাখো। বড়দের সম্মান করো। কারো উপর অত্যাচার ও অন্যায় রাগ করো না। অন্তরে দয়ার গুণ সৃষ্টি করো। পাষাণ হৃদয় ও বেপরোয়া হয়ো না। হালাল উপায়ে যতটুকু পাও, তাতে সন্ত্তষ্ট থাকো। নিজের চেয়ে অধিক সম্পদশালীদেরকে দেখে লোভ-লালসা করো না। সাদামাটা জীবন যাপন করো। তাহলে অপচয় থেকে বাঁচতে পারবে এবং অধিক আমদানীর লোভ হবে না।
এমনিভাবে আরো যত ইসলামী নিয়ম চরিত্র আছে, সেগুলো পালন করো। আকীদা সঠিক রেখে, আমল-আখলাক মেনে চলে, ইসলামী বেশভূষা ধারণ করে লন্ডনে গিয়ে যদি ব্যারিষ্টার হয়ে আসো, মুন্সেফগিরী করো, ডেপুটি কালেক্টর ও জজের পদে ভূষিত হও তাহলে আমাদের চক্ষুও শীতল হবে, অন্তরও আনন্দিত হবে। অন্যথা এই হীন আনন্দে এমন না হয় যে, দুনিয়া উপার্জনের খাতিরে দ্বীন বরবাদ করলে।
‘হে আল্লাহ! আমাদেরকে সরল-সঠিক পথের দিশা দাও। তাদের পথ যাদেরকে তুমি পুরস্কৃত করেছো। যাদের উপর তোমার রাগ, ক্রোধ অবতীর্ণ হয়েছে এবং যারা বিপথগামী হয়েছে, তাদের পথে আমাদেরকে পরিচালিত করো না।’-আমীন
আলহামদুলিল্লাহ! অন্তরের সাথে সম্পৃক্ত ঈমানের এ ত্রিশটি শাখা ফযীলত ও আনুসাঙ্গিক আলোচনা সহ লিপিবদ্ধ করা হলো। এগুলোর বাইরে অন্তরের অন্য কোন গুণ যদি দেখো বা শোনো তাহলে চিন্তা করে দেখলে সেটাকে এ ত্রিশটারই কোন একটার অন্তর্ভুক্ত পাবে।
হে সত্যের অন্বেষীগণ! প্রাণপণ চেষ্টা করে এ সমস্ত গুণ দ্বারা নিজের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করো। অন্তর যদি ঠিক হয়ে যায়, তাহলে জিহ্বা ও অন্যান্য অঙ্গ পরিশুদ্ধ হওয়া খুব সহজ। যেমন হাদীস শরীফে এসেছে-
অর্থঃ ‘নিশ্চয়ই দেহের মধ্যে একটি অঙ্গ আছে, সে অঙ্গটি যখন পরিশুদ্ধ হয়, তখন পুরো দেহটিই পরিশুদ্ধ হয়। আর তা যখন বিকৃত হয়, তখন পুরো দেহই বিকৃত হয়। শোন! তা হলো, কলব।’
তবে এ গুণগুলো অর্জন হওয়ার আগ পর্যন্ত জিহ্বা ও অন্যান্য অঙ্গের আমলসমূহকে বেকার মনে করে ছেড়ে দিও না। সেগুলোও যথারীতি ফরয। তাছাড়া অনেক সময় বাহ্যিক পরিশুদ্ধির ফলে অভ্যন্তরও পরিশুদ্ধ হয়। এখন জিহ্বার সাথে সম্পৃক্ত শাখাসমূহ শুনে নাও।