হুকুকুল ইসলাম – ২

উৎস:
ইসলাহী নেসাব: হুকুকুল ইসলাম
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (র:)
মাতা-পিতার হকসমূহ
উপরোক্ত ব্যক্তিগণ তো দ্বীনী নেয়ামতসমূহের মাধ্যম ছিলেন, তাই তাদের হক আদায় করা কর্তব্য ছিলো। আর কিছু লোক এমন রয়েছে, যারা দুনিয়াবী নেয়ামতসমূহের মাধ্যম। তাদের হকসমূহও শরীয়তে প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত। যেমন, মাতা-পিতা-আমাদের অস্তিত্বলাভ ও প্রতিপালন তাদের মধ্যস্থতায় হয়েছে তাই তাদেরও হক আদায় করতে হবে। তাদের হকসমূহ এই-
১. তাদেরকে কষ্ট দিবে না। এমনকি তাদের পক্ষ থেকে কোন বাড়াবাড়ি হলেও না।
২. কথায় ও কাজে তাদের সম্মান করবে।
৩. শরীয়ত সমর্থিত বিষয়সমূহে তাদের আনুগত্য করবে।
৪. তাদের প্রয়োজন হলে অর্থ দিয়ে তাদের খেদমত করবে, এমনকি তারা কাফের হলেও।
মাতা-পিতার মৃত্যুর পর তাদের হকসমূহ
১. তাদের জন্য মাগফিরাত ও রহমতের দু’আ করতে থাকবে। নফল ইবাদত ও দানের সওয়াব পৌঁছাতে থাকবে।
২. তাদের বন্ধু-বান্ধব ও প্রিয়জনদের সাথে আর্থিক সহযোগিতা, শারীরিক সেবা ও সদাচরণ করবে।
৩. তাদের ঋণ থাকলে পরিশোধ করবে।
৪. মাঝে মাঝে তাদের কবর যিয়ারত করবে।
দাদা-দাদী ও নানা-নানীর হকসমূহ
শরীয়তের দৃষ্টিতে মাতা-পিতার যে বিধান, দাদা-দাদী ও নানা-নানীরও সেই একই বিধান। তাই মাতা-পিতার যে সমস্ত হক রয়েছে, তাদেরও হক তাই মনে করতে হবে। একইভাবে খালা ও মামা মায়ের মত এবং চাচা ও ফুফূ বাবার মত। হাদীস শরীফে এরুপ ইঙ্গিত রয়েছে।
সন্তানের হকসমূহ
যেভাবে সন্তানের উপর মাতা-পিতার হক রয়েছে, তেমনিভাবে মাতা-পিতার উপরও সন্তানের হক রয়েছে। সেগুলো এই-
১. নেককার নারী বিবাহ করা, যেন সুসন্তান জন্ম হয়।
২. শিশুকালে আদর-স্নেহের সাথে তাদের প্রতিপালন করা। সন্তানকে আদর করার ফযীলতও হাদীসে এসেছে। বিশেষ করে মেয়ে সন্তানের কারণে মন ছোট না করা। তাদের প্রতিপালনের অনেক ফযীলত হাদীসে এসেছে। ধাত্রী দ্বারা দুধপান করানোর প্রয়োজন হলে চরিত্রবান ও দ্বীনদার ধাত্রী খুঁজে নিবে। কারণ, দুধের প্রভাব সন্তানের চরিত্রে পড়ে থাকে।
৩. তাদেরকে দ্বীনি ইলম ও আদব শিক্ষা দেওয়া।
৪. বিবাহের উপযুক্ত হলে তাদেরকে বিবাহ করানো। মেয়ের স্বামী মারা গেলে পুনরায় বিবাহ হওয়া পর্যন্ত নিজের বাড়ীতে আরামের সাথে তার থাকার ব্যবস্থা করা। তার প্রয়োজনীয় খরচাদি বহন করা।
দুধমায়ের হকসমূহ
দুধপান করানোর কারণে ধাত্রীও মায়ের মত। ইসলামে তাদেরও হক রয়েছে। সেগুলো এই-
১. তার সাথে আদব ও শ্রদ্ধার আচরণ করবে।
২. তার অর্থের প্রয়োজন পড়লে এবং নিজের সামর্থ্য থাকলে কার্পণ্য করবে না।
৩. সামর্থ্য থাকলে তার খেদমতের জন্য দাস-দাসী (বা চাকর-চাকরানীর) ব্যবস্থা করবে।
৪. দুধমা যেহেতু খেদমতের হকদার, আর তার স্বামী তার নিকট খেদমতের হকদার তাই তার স্বামীর সাথেও সদাচরণ করবে।
সৎমায়ের হকসমূহ
সৎমা যেহেতু বাপের জীবনসঙ্গিনী, আর শরীয়তে বাপের বন্ধুর সঙ্গে সদাচরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাই সৎমায়েরও কিছু হক রয়েছে। মা-বাবার মৃত্যুর পর তাদের যে সমস্ত হকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সৎমায়ের জন্য সেগুলোই যথেষ্ট।
ভাইবোনের হকসমূহ
হাদীস শরীফে আছে যে, বড় ভাই বাপতুল্য। তাই ছোট ভাই হলো সন্তানতুল্য। অতএব, মা-বাবা ও ছেলেমেয়ের মাঝে যেরুপ হকসমূহ রয়েছে, তাদের মাঝেও সেরুপ হকসমূহই থাকবে। বড় বোন ও ছোট বোনের বিষয়টিও এর সাথেই তুলনা করতে হবে।
আত্মীয়-স্বজনের হকসমূহ
একইভাবে অন্যান্য আত্মীয়ের হকও শরীয়তে এসেছে। সেগুলোর সারকথা এই-
১. নিজের মাহরাম আত্মীয়-স্বজন অভাবী হলে এবং উপার্জনে অক্ষম হলে জীবনধারণ পরিমাণ তাদের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা সন্তানের ভরণপোষণের ন্যায় ওয়াজিব। এছাড়া অন্যান্য মাহরাম আত্মীয়ের ভরণপোষণ তো ওয়াজিব নয়, তবে কিছু সেবাযত্ন করা জরুরী।
২. মাঝে মাঝে তাদের সাথে সাক্ষাত করবে।
৩. তাদের থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করবে না। বরং তাদের পক্ষ থেকে কিছু কষ্ট পেলেও ধৈর্য ধরা উত্তম।
৪. কোন নিকটতম মাহরাম আত্মীয়ের যদি সে মালিক হয় তাহলে সে আত্মীয় সাথে সাথে সে আযাদ হয়ে যায়।
Leave a Reply