উৎস:
ইসলাহী নেসাব: আদাবুল মুআশারাত
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (র:)

আদাবুল মুয়াশারাত

আদব-১: যখন কোন ব্যক্তির নিকট সাক্ষাৎ করতে বা কিছু বলতে যাও, আর তার কোন ব্যস্ততার কারণে সুযোগ না থাকে-যেমন, সে কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করছে, বা ওযীফা পাঠ করছে, বা নির্জনে বসে কিছু লিখছে, বা শোয়ার প্রস্ত্ততি নিয়েছে, বা লক্ষণের ভিত্তিতে এ ধরনের অন্য কোন অবস্থা জানতে পারো, যার দ্বারা বোঝা যায় যে, ঐ ব্যক্তির নিকট গেলে বা তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে যথাসম্ভব তার ক্ষতি হবে, বা সে বিরক্ত হবে বা পেরেশান হবে-তাহলে এমন সময় তার সাথে সালাম-কালাম করো না। বরং ফিরে চলে যাও। আর যদি খুব বেশী জরুরী কথা থাকে, তাহলে আগে তাকে জিজ্ঞাসা করে নাও যে, আমি কিছু বলতে চাই। তারপর অনুমতিক্রমে কথা বলো। এতে বিরক্তি বা কষ্ট হয় না। আর না হয় অবসর সময়ের জন্য অপেক্ষা করো। যখন তাকে অবসর দেখতে পাও, তখন তার সাথে সাক্ষাত করো।

আদব-২: কারো অপেক্ষায় বসতে হলে এমন জায়গায় এবং এমনভাবে বসো না যে, সে জানতে পারে যে, তুমি তার জন্য অপেক্ষা করছো। এতে অনর্থক তার অন্তর বিক্ষিপ্ত হয়ে যায় এবং তার একাগ্রতায় বিঘ্ন ঘটে। বরং তার থেকে দূরে এবং তার দৃষ্টির আড়ালে বসো।
আদব-৩: এমন সময় মুসাফাহা করো না, যখন অন্যের হাত এমন কাজে আটকা থাকে যে, হাত খালি করতে তার কষ্ট হবে। বরং সালাম করেই ক্ষান্ত হও। এমনিভাবে ব্যস্ততার সময় বসার জন্য অনুমতির অপেক্ষায় থেকো না, বরং নিজের থেকেই বসে যাও।

আদব-৪: কিছু কিছু মানুষ আছে, যারা পরিষ্কারভাবে কথা বলে না। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ও ইশারা-ইঙ্গিতে কথা বলাকে আদব মনে করে। এতে করে সম্বোধিত ব্যক্তি অনেক সময় কথা বুঝতে পারে না বা ভুল বোঝে। ফলে তখন বা পরবর্তীতে পেরেশানী হয়। কথা খুব স্পষ্ট করে বলা উচিত।

আদব-৫: কোন কোন লোক বিনা প্রয়োজনে অন্য লোকের পিছনে গিয়ে বসে। এতে মন বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়। বা পিছনে নামাযের নিয়ত বাঁধে। এমতাবস্থায় সে নিজের জায়গা থেকে উঠতে চাইলে পিছনে নামায আদায়কারীর কারণে উঠতে পারে না। আটকে যায়। ফলে তার মনঃকষ্ট ও বিরক্তি হয়। এটা ঠিক নয়।

আদব-৬: কেউ কেউ মসজিদে এমন জায়গায় নামাযের নিয়ত করে যে, অতিক্রমকারীদের পথ বন্ধ হয়ে যায়। যেমন, দরজার সামনে বা পূর্ব দেওয়ালের সাথে একেবারে ঘেষে দাঁড়ায়। ফলে পিঠের দিক থেকে বের হওয়ারও সুযোগ থাকে না। সামনের দিক দিয়েও গুনাহের কারণে বের হতে পারে না। তাই এমন করবে না। বরং কেবলার দিকের দেওয়ালের নিকটে এক কোণায় নামায পড়বে।

আদব-৭:
কারো নিকট গেলে সালাম দিয়ে, কথা বলে, সামনাসামনি বসে বা যে কোন উপায়ে তাকে তোমার আগমনের কথা জানিয়ে দাও। তাকে না জানিয়ে আড়ালে এমন জায়গায় বসো না যে, সে তোমার আগমন সম্পর্কে জানতে না পারে। কারণ, হতে পারে যে, সে এমন কোন কথা বলতে চায়, যা তোমাকে জানাতে চায় না। তার সম্মতি ছাড়া তার গোপন বিষয় অবগত হওয়া গুনাহের কাজ। বরং কোন কথার সময় যদি এরুপ সম্ভাবনা থাকে যে, তুমি জানছো না মনে করে সে কথা বলছে, তাহলে তুমি সাথে সাথে সে জায়গা ছেড়ে চলে যাও। বা যদি তোমাকে ঘুমন্ত মনে করে এমন কথা বলতে আরম্ভ করে তাহলে অনতিবিলম্বে তোমার জেগে থাকার কথা প্রকাশ করে দাও। তবে হাঁ, যদি তোমার বা অন্য কোন মুসলমানের ক্ষতি করার কোন কথা হতে থাকে, তাহলে তা যে কোনভাবে শোন জায়েয আছে। যাতে করে ক্ষতি থেকে বাঁচা সম্ভব হয়।

আদব-৮: এমন কোন ব্যক্তির নিকট কিছু চেয়ো না, যার ব্যাপারে লক্ষণ দেখে নিশ্চিত বিশ্বাস হয় যে, তার কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও না করতে পারবে না। যদিও তা ধাররুপেই চাওয়া হোক না কেন। হাঁ, তবে যদি এ বিশ্বাস হয় যে, তার কষ্ট হবে না, বা কষ্ট হলে সে স্বাধীনভাবে না করে দিবে, তাহলে চাওয়ায় সমস্যা নেই। এই একই বিশ্লেষণ প্রযোজ্য হবে, কোন কাজে বলার ক্ষেত্রে বা কোন ফরমায়েশ করার ক্ষেত্রে বা কারো নিকট কারো পক্ষে সুপারিশ করার ক্ষেত্রে। বর্তমানে অনেকেই এতে লিপ্ত।

আদব-৯: কোন বুযুর্গের জুতা উঠাতে চাইলে পা থেকে জুতা খোলার সময় জুতা হাত দিয়ে ধরো না। এতে অনেক সময় ঐ ব্যক্তি পড়ে যায়।

আদব-১০: কোন কোন সময় কিছু কিছু খেদমত অন্যের দ্বারা নেওয়া পছন্দ হয় না। তখন এরকম খেদমত করার জন্য পীড়াপীড়ি করা উচিত নয়। এতে যার খেদমত করা হয়, তার কষ্ট হয়ে থাকে। আর কোন খেদমত অন্যের দ্বারা নেওয়া পছন্দ নয়, তা যার খেদমত করা হবে, তার পরিষ্কার নিষেধ করার দ্বারা বা লক্ষণ দেখে জানা যাবে।

আদব-১১: কারো পাশে বসতে হলে এতো গা ঘেঁষে বসো না যে, তার মন বিচলিত হতে থাকে, আবার এতো দূরেও বসো না যে, কথাবার্তা বলতে কষ্ট হয়।

আদব-১২:
কর্মরত ব্যক্তির নিকট বসে তার দিকে তাকিয়ে থেকো না। কারণ, এতে মন বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়। এবং মনের উপর চাপ অনুভব হয়। বরং এমন ব্যক্তির দিকে মুখ দিয়েও বসো না।