আদাবুল মুআশারাত – ৭

উৎস:
ইসলাহী নেসাব: আদাবুল মুআশারাত
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (র:)
হাদীয়া দেওয়ার আদবসমূহ
আদব-৯৪: এ শিরোনামের অধীনে হাদীয়ার এমন কিছু আদব সংক্ষেপে লিপিবদ্ধ করছি, যেগুলো মেনে না চলার কারণে হাদীয়ার স্বাদ এবং তার প্রকৃত উদ্দেশ্য অর্থাৎ, ভালোবাসা বৃ্দ্ধি পাওয়া হাতছাড়া হয়ে যায়।
১. যাকে হাদীয়া দিবে, গোপনে দিবে। তারপর যাকে হাদীয়া দেওয়া হলো তার সমীচীন হলো, তা প্রকাশ করে দেওয়া। এখন অবস্থা তার উল্টা হয়ে গেছে যে, হাদীয়াদাতা প্রকাশ করার এবং গ্রহীতা গোপন করার চেষ্টা করে থাকে।
২. হাদীয়া যদি টাকা-পয়সা না হয়ে কোন দ্রব্য হয়, তাহলে যতদূর সম্ভব যাকে হাদীয়া দিবে তার পছন্দ জেনে নিয়ে তার পছন্দনীয় জিনিস দিবে।
৩. হাদিয়া দিয়ে বা হাদীয়া দেওয়ার পূর্বে নিজের কোন উদ্দেশ্য ব্যক্ত করবে না এতে স্বার্থপরতার সন্দেহ হয়ে থাকে।
৪. হাদীয়ার পরিমাণ এত বেশী না হওয়া উচিত যে, যাকে হাদীয়া দেওয়া হবে তার মনের উপর চাপ সৃষ্টি হয়। আর হাদীয়া যত কম হোক না কেন ক্ষতি নেই। অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন লোকদের দৃষ্টি পরিমাণের উপর থাকে না, ইখলাসের উপর থাকে। পরিমাণ বেশী হলে তাদের পক্ষ থেকে ফিরিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৫. যাকে হাদীয়া দেওয়া হচ্ছে, তিনি কোন কারণে তা ফিরিয়ে দিতে চাইলে তখন তা ফিরিয়ে নিবে এবং ফিরিয়ে দেওয়ার কারণ জেনে নিয়ে ভবিষ্যতে তার প্রতি লক্ষ্য রাখবে। কিন্তু তখন নেওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করবে না। তবে যে কারণে ফিরিয়ে দিচ্ছে তা বাস্তবসম্মত না হলে তা অবাস্তব হওয়ার কথা সাথে সাথে অবগত করানোয় দোষ নেই, বরং উত্তম।
৬. যাকে হাদীয়া দিবে তার নিকট নিজের নিষ্ঠা প্রমাণ না করা পর্যন্ত হাদীয়া দিবে না।
৭. যথাসম্ভব রেলওয়ে পার্সেল যোগে হাদীয়া পাঠাবে না। কারণ, এতে যাকে হাদীয়া দেওয়া হয় তার নানাপ্রকারের কষ্ট হয়ে থাকে।
চিঠিপত্রের আদবসমূহ
আদব ৯৫: এ শিরোনামের অধীনে চিঠিপত্রের কিছু আদব লিখছি-
১. চিঠির ভাষা, বিষয় ও লেখা খুব স্পষ্ট হওয়া উচিত।
২. প্রত্যেক চিঠিতে নিজের পূর্ণ ঠিকানা লেখা জরুরী। ঠিকানা মুখস্থ রাখা প্রাপকের দায়িত্ব নয়।
৩. চিঠিতে পূর্বের কোন চিঠির কোন বিষয়ের উদ্ধৃতি দিতে হলে ঐ বিষয়ের উপর দাগ টেনে পূর্বের চিঠিও সাথে পাঠিয়ে দিবে। যেন তা মনে করার জন্য চিন্তা করতে কষ্ট না হয। আর অনেক সময় তো ঐ বিষয়ই মনে পড়ে না। তাই সাথে পূর্বের চিঠি দিয়ে দিবে।
৪. এক চিঠিতে এতো অধিক প্রশ্ন করবে না যে, উত্তরদাতার উপর বোঝা হয়। চার-পাঁচটি প্রশ্নও অনেক। অবশিষ্ট প্রশ্ন প্রথমগুলোর উত্তর আসার পর পাঠিয়ে দিবে।
৫. কর্মব্যস্ত লোকের নিকট চিঠি পাঠালে তাকে অন্যের নিকট সংবাদ বা সালাম পৌছানোর দায়িত্ব দিবে না। একইভাবে নিজের কোন মুরুব্বীজনকেও এ কষ্ট দিবে না। সরাসরি তাদের নিকট চিঠি লিখে যা জানানোর নিজে জানাবে। আর যে কাজ প্রাপকের জন্য মোনাসেব নয়, এমন কিছুর ফরমায়েশ করা তো আরো বেয়াদবী।
৬. নিজের স্বার্থে বিয়ারিং চিঠি পাঠাবে না।
৭. বিয়ারিং উত্তরও চেয়ে পাঠাবে না। অনেক সময় পিয়ন এ ব্যক্তিকে পায় না, ফলে সে চিঠি ফেরত পাঠায়, তখন উত্তরদাতার ঘাড়ে অনর্থক জরিমানার বোঝা পড়ে।
৮. উত্তরদানের জন্য রেজিষ্ট্রি চিঠি পাঠানো অভদ্রতা। হেফাযতের ক্ষেত্রে তো তা অরেজিষ্ট্রি উত্তরপত্রের সমান হয়ে থাকে। অধিকন্তু তা প্রাপক নিয়ে অস্বীকার করতে পারে না। বলা বাহুল্য যে, চিঠি নিজের শ্রদ্ধাভাজনের নিকট পাঠানো হচ্ছে। তাই এর অর্থ যেন এই দাঁড়ালো যে, তার ব্যাপারেও মিথ্যা বলার সন্দেহ করা হচ্ছে। এটা কত বড় বেয়াদবীর কথা!
উপরে প্রায় একশ’টির মত আদব তুলে ধরা হলো। সামাজিক শিষ্টাচার সংক্রান্ত এ জাতীয় আরো কিছু আদব বেহেশতী যেওরের দশম অংশে লিখে দিয়েছি। সেগুলোও দেখে নিবে। তার মধ্যে থেকে কিছু আদব একটু পরেই নিম্নে উল্লেখ করা হবে।
এ সমস্ত আদবের সারকথা হলো, নিজের কোন কাজ, কথা বা অবস্থা দ্বারা অন্যের মনের উপর কোন চাপ, অস্থিরতা বা বিরক্তি সৃষ্টি করবে না। এটিই সদাচরণের মূল কথা। যে ব্যক্তি এ মূলনীতি সামনে রাখবে তার জন্য অধিক বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন পড়বে না। তাই এ তালিকা আর দীর্ঘ করা হলো না। তবে এ মূলনীতি মেনে চলার সাথে সাথে এ কাজটুকুও করতে হবে যে, প্রত্যেক কাজ ও কথার পূর্বে একটু চিন্তা করতে হবে যে, আমার এ আচরণ অন্যের কষ্টের কারণ হবে না তো? এভাবে চিন্তা করলে ভুল খুব কম হবে। এভাবে চলতে থাকলে কিছুদিন পর নিজের স্বভাবের মধ্যেই সঠিক রুচি ও প্রকৃতি জন্মাবে, তখন আর চিন্তাও করতে হবে না। এ সবকিছুই তখন সহজাত বিষয়ে পরিণত হবে।
বেহেশতী যেওর থেকে নেওয়া কিছু আদব
আদব- ৯৬: কারো সাথে সাক্ষাত করতে গেলে সেখানে এতো দীর্ঘ সময় বসো না বা এতো লম্বা সময় তার সাথে কথা বলো না যে, সে বিরক্ত হয়ে যায় বা তার কাজের ক্ষতি হয়।
আদব- ৯৭: তোমাকে কেউ কোন কাজের কথা বললে তা শুনে হাঁ বা না কিছু একটা অবশ্যই মুখে পরিষ্কার করে বলো। যেন যে ব্যক্তি কাজের কথা বললো তার মন একদিকে নিশ্চিত হয়। এমন যাতে না হয় যে, সে তো মনে করলো যে, তুমি শুনেছো অথচ তুমি শোনোনি। কিংবা সে মনে করলো যে, তুমি কাজটি করে দিবে অথচ তোমার করার ইচ্ছা নেই। তাহলে অনর্থক সে লোকটি তোমার উপর ভরসা করে থাকবে।
আদব- ৯৮: কারো বাড়ীতে মেহমান হলে তাকে কোন জিনিসের ফরমায়েশ করো না। অনেক সময় জিনিস তো হয় সামান্য, কিন্ত্ত সবসময় তো সবকিছু ঘরে থাকে না। ফলে বাড়ীওয়ালা তোমার ফরমায়েশ পুরা করতে না পেরে অনর্থক লজ্জিত হয়।
আদব- ৯৯: লোকসম্মুখে বসে থুথু ফেলো না, নাক পরিষ্কার করো না। প্রয়োজন হলে একদিকে সরে গিয়ে কাজ সেরে আসো।
আদব- ১০০: খাবার খাওয়ার সময় এমন জিনিসের নাম নিও না, যা শুনলে মানুষের ঘৃণা হয়। এতে নাজুক প্রকৃতির লোকদের কষ্ট হয়।
আদব- ১০১: রোগীর সম্মুখে বা তার পরিবারের লোকদের সম্মুখে এমন কথা বলো না, যার দ্বারা রোগীর জীবনের ব্যাপারে নিরাশা জন্মায়। এতে অনর্থক মন ভেঙ্গে যায়। বরং শান্ত্বনামূলক কথাবার্তা বলো যে, ইনশাআল্লাহ সব কষ্ট দূর হয়ে যাবে।
আদব- ১০২: কারো কোন গোপন কথা বলতে হলে এবং সে লোকও সেখানে উপস্থিত থাকলে চোখ বা হাত দ্বারা সেদিকে ইঙ্গিত করো না। এতে অনর্থক তার সন্দেহ সৃষ্টি হবে। আর এ কথা তখন, যখন সে কথা বলা শরীয়তের বিধানেও বৈধ হয়। আর যদি শরীয়তের দৃষ্টিতে তা বলা বৈধ না হয়, তাহলে এমন কথা বলা গুনাহ।
আদব- ১০৩: শরীর ও কাপড় দুর্গন্ধ হতে দিও না। ধোলাই করা অতিরিক্ত কাপড় না থাকলে পরিহিত কাপড়টাই ধুয়ে নাও।
আদব-১০৪: মানুষকে বসিয়ে রেখে সেখানে ঝাড়ু দেওয়াইয়ো না।
আদব- ১০৫: মেহমানের উচিত পেট ভরলে কিছু খাবার অবশ্যই দস্তরখানে রেখে দিবে। যেন বাড়ীওয়ালার এ সন্দেহ না হয় যে, মেহমানের খানা কম হয়েছে। তাহলে তারা লজ্জিত হবে।
আদব- ১০৬: পথের মধ্যে চৌকি, পিঁড়ি, কোন পাত্র, ইট ইত্যাদি রেখো না।
আদব-১০৭: হাসির ছলে শিশুদেরকে উপর দিকে ছুঁড়ে মেরো না। জানালা বা অন্যকিছুর সাথে ঝুলিয়ে দিও না, তাহলে পড়ে যেতে পারে।
আদব- ১০৮: গোপন জায়গায় কারো ফোড়া বা ঘা হলে তাকে জিজ্ঞাসা করো না যে, কোথায় হয়েছে?
আদব- ১০৯: আঁটি বা ছিলকা কারো মাথার উপর দিয়ে নিক্ষেপ করো না।
আদব- ১১০: কারো হাতে কিছু দিতে হলে দূর থেকে নিক্ষেপ করো না যে, সে হাত দিয়ে ধরে ফেলবে।
আদব- ১১১: যার সঙ্গে খোলামেলা সম্পর্ক নেই, তার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তার বাড়ীর অবস্থা জিজ্ঞাসা করো না।
আদব- ১১২: কারো দুশ্চিন্তা, অস্থিরতা বা রোগ-ব্যাধির কোন সংবাদ শুনলে ভালোভাবে যাচাই না করে কাউকে বলো না। বিশেষ করে তার আত্মীয়-স্বজনকে।
আদব- ১১৩: দস্তরখানে সালুন (বা অন্য খাবার) দেওয়ার প্রয়োজন হলে আহারকারীদের সম্মুখ থেকে সালুনের (খাবারের) পাত্র নিয়ে যেয়ো না। অন্য পাত্রে সালুন নিয়ে এসো।
আদব-১১৪: শিশুদের সামনে নির্লজ্জতার কোন কথা বলো না।
বেহেশতী যেওর থেকে নেওয়া আদবসমূহ শেষ হলো। এ পর্যন্ত উল্লেখিত বেশীর ভাগ আদব এমন ছিলো, যেগুলোর প্রতি সমকক্ষ বা বড়দের ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখা জরুরী। এখন দু’-চারটি আদব এমনও উল্লেখ করছি, যেগুলোর প্রতি বড়দের ছোটদের সঙ্গে লক্ষ্য রাখা উচিত বা জরুরী।
বড়দের জন্য জরুরী আদবসমূহ
আদব-১১৫: বড়দেরও খুব রুক্ষ মেযাজের হওয়া উচিত নয় যে, কথায় কথায় রাগ করবে। কথায় কথায় জ্বলে উঠবে। এটি নিশ্চিত কথা যে, অন্যেরা যেমন তোমার সঙ্গে অশোভন আচরণ করে, তুমিও যদি তোমার বড়দের সঙ্গে চলাফেরা করো, তাহলে তোমার থেকেও তাদের সঙ্গে অনেক অশোভন আচরণ হবে, একথা মনে করে কিছু ছাড় দিও। একবার, দু’বার নরমভাবে বুঝিয়ে দাও। এর দ্বারাও কাজ না হলে তার কল্যাণের নিয়তে কঠোর ও শক্ত আচরণেও দোষ নেই। তুমি যদি সবর না করো, তাহলে সবরের ফযীলত থেকে সর্বদা বঞ্চিত থাকবে। আল্লাহ যখন তোমাকে বড় বানিয়েছেন, তখন সব ধরনের লোক তোমার নিকট আসবে। তাদের মধ্যে বিভিন্ন প্রকৃতির এবং বিভিন্ন বুদ্ধির লোক থাকবে। সবাই এক সমান কি করে হবে?
নিম্নের হাদীসটি খুব মনে রাখা দরকার-
‘যে মুমিন মানুষের সাথে মেলামেশা করে এবং তাদের দেওয়া কষ্টে ধৈর্যধারণ করে, সে ঐ মুমিন থেকে উত্তম, যে মানুষের সাথে মেলামেশা করে না এবং তাদের দেওয়া কষ্টে ধৈর্যধারণ করে না।’
আদব-১১৬: যে ব্যক্তি সম্পর্কে লক্ষণ দ্বারা তোমার নিশ্চিত বিশ্বাস বা প্রবল ধারণা জন্মে যে, সে তোমার কথা কখনোই অমান্য করবে না তাহলে তাকে এমন কোন জিনিসের ফরমায়েশ করো না, যা শরীয়তের দৃষ্টিতে ওয়াজিব নয়।
আদব-১১৭: তোমার বলা ছাড়াই কেউ যদি তোমার আর্থিক বা শারীরিক খেদমত করে, তবুও লক্ষ্য রেখো যেন তার বিশ্রামের বা সুবিধার ব্যাঘাত না ঘটে। অর্থাৎ, তাকে বেশী জাগতে দিও না। তার সামর্থ্যের অধিক হাদীয়া নিও না। সে তোমাকে দাওয়াত করলে অনেক বেশী খাবার পাক করতে দিওনা। তোমার সাথে অনেক মানুষকে দাওয়াত দিতে দিওনা।
আদব-১১৮: কারো প্রতি ইচ্ছাপূর্বক অসন্তুষ্ট হতে হলে বা ঘটনাক্রমে এমনটি হয়ে গেলে পরের দিন তাকে খুশী করে দাও। তোমার থেকে বাস্তবিকই বাড়াবাড়ি হয়ে থাকলে অকপটে ভুল স্বীকার করে তার কাছে মাফ চেয়ে নাও। লজ্জা করো না। কিয়ামতের দিন সে আর তুমি এক সমান হয়ে যাবে।
আদব-১১৯: কথাবার্তা বলার সময় কারো অসমীচীন আচরণের কারণে মেযাজ বেশী চড়া হতে থাকলে তার সাথে সরাসরি কথা না বলা উত্তম। অন্য কোন যোগ্য ও বিজ্ঞ লোককে ডেকে তার মধ্যস্থতায় কথা বলবে। যেন তোমার চড়া মেযাজের প্রভাব তার উপর এবং তার অসমীচীন আচরণের প্রভাব তোমর উপর না পড়ে।
আদব-১২০: নিজের কোন খাদেম বা মুরীদকে নিজের এমন নিকটতম বানিও না যে, অন্যেরা তার চাপে থাকে, বা সে অন্যের উপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। একইভাবে সে যদি অন্যের কথা ও অবস্থা তোমার নিকট বলতে আরম্ভ করে তাহলে তাকে বারণ করে দাও। তা না হলে মানুষ তাকে ভয় করতে থাকবে। আর তুমি মানুষের প্রতি কুধারণা পোষণকারী হয়ে যাবে। একইভাবে সে যদি কারো পয়গাম বা সুপারিশ তোমার নিকট নিয়ে আসে, তাহলে কড়াভাবে নিষেধ করে দাও। যেন মানুষ তাকে মাধ্যম মনে করে তার তোষামোদ করতে আরম্ভ না করে। তাকে নজরানা দিতে আরম্ভ না করে। বা সে মানুষদেরকে ফরমায়েশ করতে আরম্ভ না করে। সারকথা এই যে, সব লোকের সম্পর্ক সরাসরি নিজের সাথে রাখবে। কোন ব্যক্তিকে মাধ্যম বানাবে না। হাঁ, নিজের খেদমতের জন্য এক-আধ ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট করে নাও, তাতে দোষ নেই। কিন্তু তাকে অন্যান্য লোকের ব্যাপারে বিন্দুমাত্রও দখল দিও না।
এমনিভাবে মেহমানদের বিষয় কারো উপর ছেড়ে দিও না। নিজেই সবার দেখাশুনা করো। খোঁজখবর নাও। যদিও এতে তোমার কষ্ট বেশী হবে। কিন্ত্ত অন্যদের তো আরাম ও সুবিধার ব্যবস্থা হলো। আর বড় তো কষ্ট সহ্য করার জন্যই হয়ে থাকে।
জনৈক কবি কত সুন্দর বলেছেন-
‘যেদিন তুমি চাঁদ হয়েছো, সেদিন কি তুমি জানো না যে, সারা বিশ্বের আঙ্গুল তোমার প্রতি উত্থিত হবে?’
এখন এ সমস্ত আদব ও নিয়ম-নীতিকে একটি অনিয়মের নিয়মের উপর খতম করছি। তা এই যে, এর মধ্যে কিছু আদব তো সবার জন্য এবং সর্বাবস্থায় প্রযোজ্য। আর কিছু আদব আছে এমন, যা থেকে এমন খাদেম এবং মাখদুম(গুরুজন) ব্যতিক্রম, যাদের সাথে অকৃত্রিম সম্পর্ক রয়েছে। কার সাথে অকৃত্রিম সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, আর কার সাথে ওঠে নাই, তা রুচি ও উপলব্ধির দ্বারা বুঝতে পারবে। তাই এ বিষয়ক আদব ও রুচিও উপলব্ধির উপর ছেড়ে দিচ্ছি। এখন এ পুস্তিকাকে কৃত্রিমভাবে আদব ও কৃত্রিম আদব সম্বলিত একটি কবিতা লিখে সমাপ্ত করছি।
‘প্রেমের পথ পুরোটাই আদবসমৃদ্ধ। তাই বন্ধুগণ! নফসকে আদবে সজ্জিত করো।’
থানাভোনে ১৩৩২ হিজরীর মুহাররম মাসের ৮ তারিখে যেদিন ‘আগলাতুল আওয়াম’ পুস্তিকা শেষ হয়েছে, সেদিন এ পুস্তিকাও শেষ হয়েছে। পুস্তিকাদ্বয়ের মধ্যে এক ঘন্টার কিছু বেশী এবং দু’ ঘন্টার কিছু কম সময়ের ব্যবধান হয়েছে।
Leave a Reply