উৎস:
ইসলাহী নেসাব: আগলাতুল আওয়াম
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (র:)

আযান, ইকামত ও ইমামতী:

মাসআলা-১: প্রসিদ্ধ আছে যে, নামাযের আযান মসজিদের বামদিকে এবং ইকামত মসজিদের ডান দিকে দিতে হবে। শরীয়তে এর কোন ভিত্তি নেই।
মাসআলা-২: প্রসিদ্ধ আছে যে, মুক্তাদি পাগড়ী বাঁধা থাকলে এবং ইমাম শুধু টুপি পরিহিত থাকলে নামায মাকরূহ হয়। এটি নিছক ভিত্তিহীন কথা। তবে যে ব্যক্তি শুধু টুপি পরে বাজারে এবং বন্ধু-বান্ধবের সমাবেশে যেতে সংকোচ বোধ করে, তার জন্য পাগড়ী ছাড়া নামায পড়া মাকরূহ। সে ইমাম হোক চাই মোক্তাদী হোক।
মাসআলা-৩: কিছু লোক আযানের সম্মুখ দিয়ে বা দু’আর সম্মুখ দিয়ে যাওয়া নাজায়িজ মনে করে। এর কোন ভিত্তি নেই।
মাসআলা-৪: অহংকারী সাধারণ লোকদের মধ্যে প্রসিদ্ধ আছে যে, যে ইমামের বাড়ীতে পর্দা নেই, তার পিছনে নামায হয় না। কিন্তু ভালো করে মনে রাখতে হবে যে, আপত্তিকারীদের স্ত্রীরা যদি একজন নামাহরামের সামনেও যায়, তাহলে তাদেরকেও বেপর্দা বলা হবে। সে ক্ষেত্রে ইমাম ও মুক্তাদী সবাইকে সমান গণ্য করা হবে।
মাসআলা-৫: কাউকে কাউকে প্লেগ রোগ দেখা দিলে আযান দিতে দেখা গেছে যে, এরও কোন ভিত্তি নাই।

নামায, জামাআত ও খুতবা:

মাসআলা-১: প্রসিদ্ধ আছে যে, চৌকির উপর নামায পড়লে বান্দর হয়ে যায়। এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন কথা।
মাসআলা-২: প্রসিদ্ধ আছে যে, চন্দ্র ও সূর্য গ্রহনের সময় পানাহার করা নিষেধ। এ কথারও কোন ভিত্তি নেই। তবে সে সময়টি আল্লাহর দিকে বিশেষভাবে মনোযোগী হওয়ার সময়। এ কারণে পানাহার পরিহার করা ভিন্ন কথা। কিন্তু দুনিয়ার যাবতীয় কাজ-কর্ম এমনকি গুনাহর কাজ পর্যন্ত করতে থাকবে, আর শুধুমাত্র পানাহার পরিত্যাগ করবে, এটি শরীয়ত পরিবর্তন করা এবং বিদআত।
মাসআলা-৩: কতক মহিলা নামায পড়ে জায়নামাযের কোণা একথা মনে করে উল্টিয়ে ফেলা জরুরী মনে করে যে, শয়তান এর উপর নামায পড়বে। এর কোনটিরই ভিত্তি নেই।
মাসআলা-৪: অধিকাংশ সাধারণ মানুষের অভ্যাস হলো, অসুস্থ মানুষ যখন জামায়াতে শরীক হয়, তখন সমস্ত কাতারের শেষ মাথায় বামদিকে বসে। কাতারের মাঝে দাঁড়ানোকে যেন তারা খারাপ মনে করে। এ কাজটি একান্তই ভিত্তিহীন।
মাসআলা-৫: কতক মানুষের ধারণা এই যে, তাহাজ্জুদ নামাযের পর ঘুমানো উচিত না। এতে তাহাজ্জুদ চলে যায়। এর কোন ভিত্তি নেই। আর অনেক মানুষ এ কারণেই তাহাজ্জুদ নামায থেকে বঞ্চিত যে, তারা তাহাজ্জুদের পর ঘুমানোকে নিষিদ্ধ মনে করে, ওদিকে ভোর পর্যন্ত জাগাও কঠিন। মনে রাখতে হবে যে, তাহাজ্জুদের পর ঘুমানো দুরস্ত আছে।
মাসআলা-৬: প্রসিদ্ধ আছে যে, অন্ধকারে নামায পড়া নাজায়েয। এটি নিছক ভুল কথা। তবে এতটুকু ধারণা অবশ্যই থাকতে হবে যে, কেবলার দিক থেকে যেন সরে না যায়।
মাসআলা-৭: কতক মহিলা বলে যে, যদি কয়েকজন মহিলা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে নামায পড়ে তাহলে আগে-পিছে দাঁড়ানো ঠিক নয়। এটা একেবারেই ভুল কথা।
মাসআলা-৮: কতক লোক বলে যে, তিলাওয়াতের সেজদা করে উভয় দিকে সালামও ফিরাবে। এটিও নিছক ভুল কথা।
মাসআলা-৯: সাধারণ লোকদের মধ্যে প্রসিদ্ধ আছে যে, ইশার নামাযের পূর্বে ঘুমালে ইশার নামায কাযা হয়ে যায়। অর্থাৎ, এরপর নামায পড়লে কাযার নিয়্যত করবে। এটি সম্পূর্ণ ভুল কথা। তবে বিনা ওযরে ইশার নামাযের পূর্বে ঘুমানো ঠিক না। অর্ধেক রাতের পর নামাযের ওয়াক্ত মাকরূহ হয়ে যায়, ঘুমাক চাই না ঘুমাক।
মাসআলা-১০: মহিলাদের মধ্যে প্রসিদ্ধ আছে যে, মহিলারা পুরুষদের পূর্বে নামায পড়বে। এটি নিছক ভুল কথা।
মাসআলা-১১: কতিপয় মহিলা মনে করে যে, তিলাওয়াতের সিজদা দু’টি হওয়া উচিত, অর্থাৎ, একটি আয়াত পড়লে দু’টি সেজদা ওয়াজিব হয়। এটি সম্পূর্ণ ভুল কথা।
মাসআলা-১২: সাধারণ লোকদের মধ্যে প্রসিদ্ধ আছে যে, নামাযের মধ্যে ডান পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল নড়ে গেলে নামায নষ্ট হয়ে যায়। এটা নিছক ভুল কথা। তবে বিনা প্রয়োজনে আঙ্গুল সরানো খুবই দোষণীয়।
মাসআলা-১৩: কতিপয় সাধারণ লোক বলে থাকে যে, সুন্নাত নামাযের পর কথা বলবে না, যদিও ঘোড়ার খুরের নিচে দেবে যাক না কেন। এ কথার কোন ভিত্তি নেই। বরং এ কথার উপর আমল করায় আকীদা নষ্ট তো হয়ই, তাছাড়া অনেক সময় শরীয়তের কোন ওয়াজিব কাজও ছুটে যায়। যেমন কেউ মাসআলা জিজ্ঞাসা করলো বা কোন কাজে সাহায্য চাইলো।
মাসআলা-১৪: কতক লোককে দেখেছি যে, রেলগাড়িতে আরোহণ করে কোন ওযর ছাড়াই বসে নামায পড়াকে বা কেবলামুখী না হয়ে নামায পড়াকে জায়েয মনে করে। মনে রাখতে হবে যে, রেলগাড়ীতে হুকুম পরিবর্তন হয় না। এবং এতে তেমন কোন জটিলতাও নেই। সামান্য সমস্যা তো বাড়ীতে নামায পড়তেও অনেক সময় দেখা দেয়। এমনিভাবে নামাযী মহিলারা গরুর গাড়ীতে বসে বসে নামায পড়ে ফেলে। মনে রাখতে হবে যে, যেখানে গাড়ী দাঁড় করানোতে কোন বিপদের আশংকা নেই সেখানে গাড়ী থেকে নেমে মাটিতে নামায পড়তে হবে। পর্দার জন্য বোরকাই যথেষ্ট।
মাসআলা-১৫: কতক সাধারণ মানুষ এমন অসুস্থতায়ও নামায ছেড়ে দেয়, যার মধ্যে শরীর ও কাপড় পাক থাকা মুশকিল হয়। তারা মনে করে যে, এমতাবস্থায় নামায জায়েয হওয়ার কোন সুরত নাই। এ ধারণা একান্তই ভুল। এমতাবস্থায় আলেমদের নিকট মাসআলা জিজ্ঞাসা করে নামায পড়া জরুরী। এমতাবস্থায়ও নামায হয়। যখন শরীর ধুতে খুব বেশী কষ্ট হয়, বা রোগ বৃদ্ধির ভয় থাকে এবং পরিবর্তন করার মত অতিরিক্ত কাপড় না থাকে তখন এ অবস্থাতেই নামায দুরুস্ত হয়ে যায়।
মাসআলা-১৬: অনেক সাধারণ মানুষকে পাবন্দীর সাথে এটাও করতে দেখেছি যে, যখন জুমুআর নামায পড়তে আসে, তখন প্রথমে অল্প সময় মসজিদে বসে তারপর সুন্নাত পড়ে। যদিও মসজিদের নিকট থেকেই আসুক না কেন বা শ্বাস নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজন না থাকুক-এর কোন ভিত্তি নেই। তাছাড়া কিছু সময় দাঁড়িয়ে থাকার দ্বারাও শ্বাস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বসেই শ্বাস নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে এমনটি জরুরী নয়।
মাসআলা-১৭: প্রসিদ্ধ আছে যে, যাদের ফজর নামাজের সুন্নাত রয়ে যাবে, তাদের সুন্নাত নামায দুরুস্ত হওয়ার জন্য শর্ত হলো, সূর্যোদয় পর্যন্ত সেখানেই বসে থাকতে হবে। এটাও ভুল কথা। বরং অন্য কোন কাজে লিপ্ত হওয়া এবং সূর্যোদয়ের পর তা আদায় করাও জায়েয আছে।
মাসআলা-১৮: কতক সাধারণ লোক বলে থাকে যে, মসজিদের বাতি নিজে নিভাবে না। এটি ভুল কথা। বরং বাতির প্রয়োজন না থাকলে নিভিয়ে ফেলাই উচিত। তা না হলে অপচয় হবে, তাছাড়া নির্জনে বাতি জ্বালিয়ে রাখা নিষেধও রয়েছে।
মাসআলা-১৯: অনেক সাধারণ লোক জামাআতের কাতারবন্দীর সময় পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি মিলিয়ে কাতার সোজা করে। অথচ কাঁধ ও পায়ের গোড়ালী সোজা করে কাতার সোজা করা উচিত।
মাসআলা-২০: অনেক সাধারণ মানুষকে পাবন্দীর সাথে এরুপ করতে দেখেছি যে, জুমুআর প্রথম খুতবা শোনার সময় উভয় হাতকে বেঁধে রাখে এবং দ্বিতীয় খুতবা শোনার সময় উভয় হাত রানের উপর রেখে দেয়। এটিও ভিত্তিহীন কাজ।
মাসআলা-২১: অধিকাংশ সাধারণ মানুষ জুমুআর খুতবায় হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র নাম শুনে সশব্দে দুরুদ শরীফ পড়ে। এটি জায়িয নেই। মুখ দ্বারা দুরূদ শরীফ পড়বে না। হাঁ, মনে মনে পড়ায় দোষ নেই।
মাসআলা-২২: কিছু কিছু সাধারণ লোক নামাযের মধ্যে বাম কনুই খোলা থাকলে নামায ত্রুটিপূর্ণ হয় বলে মনে করে থাকে। বিশেষভাবে বাম কনুইকে এর জন্য নির্দিষ্ট করা ভুল। বরং ডান হোক, চাই বাম হোক, যে কোনটি খোলা থাকলে নামায অবশ্যই মাকরুহ হবে।