পীরের প্রয়োজনীয়তা ও তার পরিচয়

উৎস:
ইসলাহী নেসাব: কসদুস সাবীল
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (র:)
যাহেরী আমল তথা দেহের বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঙ্গে সম্পৃক্ত আমল ও তার মাসআলা-মাসায়েল শিক্ষা করার জন্য শিক্ষকের প্রয়োজন হয়, এটাই নিয়ম। উস্তাদ ছাড়া এসব কাজ সঠিকভাবে হয় না। কিন্তু বাতেনী আমলের ফরয, ওয়াজিব, হারাম, মাকরূহ-যেগুলো তাসাওউফ ও তরীকতের মধ্যে বর্ণনা করা হয়-সেগুলোর ইলম হাসেল করা এবং সে অনুপাতে আমল করার জন্য উস্তাদের প্রয়োজন তার চেয়ে অধিক। এ সমস্ত বিষয়ের উস্তাদকে পরিভাষায় শাইখ, মুরশিদ বা পীর বলা হয়।
আধ্যাত্মিক ব্যাধি ও মন্দ চরিত্রসমূহ বোঝা এবং সেগুলোর চিকিৎসা ও সংশোধন করা সাধারণতঃ শাইখ ছাড়া সম্ভব হয় না। তাই যে ব্যক্তি এ পথে পা রাখবে, তার জন্য শাইখ ও মুরশিদের সন্ধান করা জরুরী। সন্ধান করে এ ধরনের শাইখ পেলে তার শরণাপন্ন হবে এবং পরিপূর্ণরুপে তার শিক্ষা ও নির্দেশনা মেনে চলবে। দ্বিতীয় হেদায়াতে তাওবার যে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে-কেউ যখন সে অনুপাতে আমল করতে আরম্ভ করবে-তখন সে বুঝবে যে, তাওবাকে সঠিক ও পরিপূর্ণ করতেও জায়গায় জায়গায় পীর ও মুরশিদের প্রয়োজন পড়ে। একজন কামেল শাইখের পথপ্রদর্শন ছাড়া তাওবা পরিপূর্ণ হওয়া জটিল ব্যাপার।
কামেল পীরের পরিচয়ঃ
যার মধ্যে নিম্নে বর্ণিত বিষয়সমূহ বিদ্যমান থাকবে, সেই কামেল পীর-
১. জরুরত পরিমাণ তার মধ্যে ইলমে দ্বীন থাকতে হবে।
২. তার আকীদা-বিশ্বাস, আমল-আখলাক ও স্বভাব-চরিত্র শরীয়তসম্মত হতে হবে।
৩. দুনিয়ার লোভ না থাকতে হবে। কামেল হওয়ার দাবী না করতে হবে। কারণ, এটিও দুনিয়ারই একটি দিক।
৪. কোন কামেল পীরের নিকট কিছুদিন থেকেছে।
৫. সমকালীন ন্যায়পন্থী আলেম ও দরবেশগণ তাকে ভালো জানে।
৬. সাধারণ লোকের তুলনায় বিশেষ লোক অর্থাৎ, দ্বীনদার-সমঝদার লোকেরা তার অধিক ভক্ত।
৭. তার অধিকাংশ মুরীদ শরীয়তের পাবন্দী করে এবং তাদের মধ্যে দুনিয়ার প্রতি লোভ নেই।
৮. সে আন্তরিকভাবে নিজের মুরীদদেরকে শিক্ষা দান করে এবং তাদের সংশোধন কামনা করে। মুরীদদের মধ্যে খারাপ কিছু দেখলে বা শুনলে তাকে ধড়-পাকড় করে। মুরীদদেরকে তাদের মর্জি মত ছেড়ে দেয় না।
৯. তার নিকট কিছুদিন বসার দ্বারা দুনিয়ার ভালোবাসায় স্বল্পতা এবং আল্লাহর ভালোবাসায় বৃদ্ধি উপলব্ধি হয়।
১০. সে নিজেও যিকির-শোগল করে। কারণ, আমল করার পাকাপোক্ত সংকল্প ছাড়া তা’লীমে ফায়দা হয় না।
যার মধ্যে উপরোক্ত আলামতসমূহ বিদ্যমান থাকবে, তার মধ্যে এগুলো তালাশ করবে না যে, তার দ্বারা কোন কারামত বা অলৌকিক ঘটনা প্রকাশ পায় কিনা। গোপন বা ভবিষ্যত এর বিষয় সে জানতে পারে কিনা। সে যে দু’আ করে তা কবুল হয় কিনা। আধ্যাত্মিক শক্তি দ্বারা সে কিছু করে দেয় কিনা। কারণ, পীর বা ওলী হওয়ার জন্য এগুলো থাকা জরুরী নয়। এমনিভাবে এটাও দেখবে না যে, তার তাওয়াজ্জুহতে মানুষ ছটফট করে কিনা। কারণ, এসব বিষয় বুযুর্গ হওয়ার জন্য জরুরী নয়। মূলতঃ এ ধরনের প্রভাব নফসের সাথে সম্পৃক্ত, যা অনুশীলন করলে বৃদ্ধি পায়। যে ব্যক্তি পরহেযগার নয়, এমনকি মুসলমানও নয়, সেও এগুলো করতে পারে। তাছাড়া তাওয়াজ্জুহ দেওয়ার দ্বারা খুব বেশী লাভ হয় না। কারণ তাওয়াজ্জুহের প্রভাব স্থায়ী হয় না। তাওয়াজ্জুহের এতটুকু ফায়দা রয়েছে যে, যে মুরীদের মধ্যে যিকিরের কোন প্রতিক্রিয়াই হয় না, তাকে পীর কিছুদিন তাওয়াজ্জুহ দিলে তার মধ্যে যিকিরের প্রভাব-প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে থাকে। এমন নয় যে, অহেতুক লুটোপুটি খেতে থাকবে, ছটফট করতে থাকবে।
Leave a Reply