উৎস:
ইসলাহী নেসাব: কসদুস সাবীল
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (র:)

অবসর আলিম ব্যক্তির ওযীফা:

(ক) অবসর কাল অল্পদিনের হলেও, যার ন্যূনতম মেয়াদ ছয় মাস-কিছুদিন নিজের পীরের কাছে অবস্থান করে যিকির করবে। এ শ্রেণীর আলেমের জন্য এতটুকু ওযীফাই যথেষ্ট যে, তাহাজ্জুদ নামাযের পর বারো তাসবীহ, অর্থাৎ, দুইশ’বার ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, চারশ’বার ‘ইল্লাল্লাহ’, ছয়শ’বার ‘আল্লাহ আল্লাহ’-প্রথম আল্লাহ শব্দের শেষে ‘পেশ’ এবং দ্বিতীয়টির শেষে ‘জযম’ দিয়ে যিকির করবে এবং শুধু ‘আল্লাহ’ একশ’বার। এই মোট তের তাসবীহ হলো। কিন্তু এটি বারো তাসবীহ নামে পরিচিত। এই বারো তাসবীহ সামান্য আওয়ায ও ‘যরব’ বা ধাক্কার সাথে আদায় করবে। কিন্তু ভালো করে বুঝে নেওয়া উচিত যে, সশব্দে যিকির করা এবং ‘যরব’ বা ধাক্কা লাগানোতে কোন সওয়াব নেই, বরং এতে সওয়াব হবে বলে বিশ্বাস করা বিদআত।
হাদীস শরীফের এই নিষেধাজ্ঞা-
অর্থাৎ, ‘তোমরা নিজেদের প্রতি নম্রতা প্রদর্শন করো, কারণ, তোমরা তো কোন বধির বা দূরবর্তী কাউকে ডাকছো না।’

আমার মতে ঐ ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, যখন সওয়াবের বিশ্বাস নিয়ে সশব্দে যিকির করবে। আর কোন কোন আলেম এ হাদীসের ব্যাখ্যা এই দিয়েছেন যে, এত চিৎকার করে যিকির করবে না, যার দ্বারা মানুষের কষ্ট হয়। যেমন, ঘুমন্ত লোকদের কষ্ট হয়। আর ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) যে জোরে যিকির করতে নিষেধ করেছেন, তার কারণও উপরে বর্ণিত বিষয়সমূহই। তা নাহলে জোরে যিকির করা জায়েয।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যামানায় নামায শেষ হওয়ার আলামত এই ছিলো যে, মানুষ সশব্দে ‘আল্লাহ আকবার’ বলে উঠতো। এমনিভাবে হাদীসের বিভিন্ন কিতাবে বেতের নামাযের পর ‘সুবহানাল মালিকিল কুদ্দুস’ বলার সময় আওয়াজ উঁচু করার হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এভাবে জোরে যিকির করার ফায়দা এই যে, এতে করে অন্য চিন্তা ও ওয়াসওয়াসা কম আসে। কারণ, এর ফলে যিকিরের আওয়ায কানে আসে, যে কারণে মন সহজে সেদিকে ধাবিত থাকতে পারে। আর এ ফায়দা অল্প আওয়াযে যিকির করার দ্বারাও লাভ হয়। একইভাবে ‘যরব’ বা ধাক্কা লাগানোর মধ্যেও কোন সওয়াব নেই। এর মধ্যেও চিকিৎসা শাস্ত্রের বিধান মতে একটি ফায়দা রয়েছে। তা হলো, শক্ত ধাক্কার ফলে মনে তাপ সৃষ্টি হয়। এই তাপের ফলে মন নরম হয়। মন নরম হলে যিকিরে প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এই প্রভাব ও প্রতিক্রিয়ার ফলে আল্লাহ তাআলার আনুগত্যের চিন্তা এবং আল্লাহ তাআলার মুহাব্বত পয়দা হয়। আল্লাহর আনুগত্যের চিন্তা এবং আল্লাহর মুহাব্বত এ দু’টি জিনিস ইসলামে লক্ষ্য ও কাংক্ষিত বস্তু। তাই ‘যরব’ বা ধাক্কা দেওয়া শরীয়তে উদ্দেশ্য বস্তু নয়, তবে উপরোক্ত দুই উদ্দীষ্ট বস্তু এর দ্বারা লাভ হয় বিধায় এটি উপায় ও মাধ্যমের পর্যায়ের উদ্দেশ্যে পরিণত হয়েছে। তবে অধিক জোরে ‘যরব’ লাগানোর ফলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে। তাই মধ্যম পর্যায়ে ‘যবর’ লাগাবে, এর অধিক নয়।

আরেকটি বোঝার বিষয় হলো, তাসাওউফের কিতাবসমূহের মধ্যে যিকির করার সময় মাথা ডানে-বামে ঝুকানোর কথা লিখেছে। এ ব্যাপারে জানা উচিত যে, পূর্বের যুগের লোকেরা শক্তিশালী ছিলো এবং তাদের মস্তিষ্ক সবল ছিলো, ফলে তারা এ ঝাকুনি সহ্য করতে পারতে। বরং শক্তিশালী হওয়ার ফলে এরুপ ঝাকুনি ছাড়া তাদের মধ্যে যিকিরের আছর বা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতো না। যার ফলে সজোরে ‘যরব লাগানোর উদ্দেশ্যে মাথা ডান দিকে নিয়ে ‘যরব’ বা ধাক্কা লাগানোর তাদের প্রয়োজন পড়তো। কিন্তু বর্তমান যুগের লোকেরা দুর্বল। সাধারণ ’যরবেই’ তাদের অন্তরে আছর পয়দা হয়। তাই বর্তমানে এমন করবে না। অন্যথায় মাথা খারাপ হওয়ার ভয় আছে। এ যুগের লোকদের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, ‘লা-ইলাহা’ বলতে সারা শরীর ধীরে ধীরে ডান দিকে একটু ঝুকিয়ে দিবে এবং ‘ইল্লাল্লাহ’ বলার সময় বাম দিকে নিয়ে আসবে। শরীরকে এতটুকু পরিমাণ নাড়নোর উদ্দেশ্যও হলো, এক অবস্থায় যিকির করতে একঘেয়েমি লাগে, পক্ষান্তরে শরীর নাড়ানোর ফলে কিছুটা আরামবোধ হয়। তা নাহলে এতটুকুরও প্রয়োজন ছিলো না। উপরন্তু ‘যরব’ লাগানোর সময় মাথা ঝাকুনি দেওয়ারও প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র এতটুকুই যথেষ্ট যে, ‘যরব’ লাগানোর সময় ‘ইল্লা’-এর ‘হামযা’ উচ্চারণকালে একটু চাপ দিয়ে উচ্চারণ করবে। ‘হামযা’ উচ্চারণের স্থান থেকে সীনা নিকটবর্তী হওয়ার ফলে ‘হামযা’ উচ্চারণ করতে চাপ দিলে সীনা পর্যন্ত তার প্রভাব পড়বে। একইভাবে অন্যান্য যিকিরের সময়েও এ নিয়মেই ‘যরব’ লাগাবে। আর শরীর ঝাকানো এরচেয়ে কম হলেও চলবে। এ সমস্ত বিবরণ ছিলো বারো তাসবীহ সংক্রান্ত। বারো তাসবীহের যিকির করার পর ঘুমের চাপ থাকলে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিবে। আর ঘুম না আসলে ইচ্ছা হলে ঐ বারো তাসবীহ যিকিরের মধ্য থেকে কোন একটি যিকির আরো অধিক পরিমাণে করবে, আর ইচ্ছা হলে কর্মমুক্ত থাকবে।
(খ) ফজর নামাযের পর কু্রআন শরীফ তেলাওয়াত করবে এবং মুনাজাতে মকবুল এক মঞ্জিল পড়বে।
(গ) তারপর নির্জনে বসে বারো হাজার থেকে চব্বিশ হাজার বার পর্যন্ত যতবার সম্ভব অল্প আওয়াজে মথ্যম পর্যায়ের ‘যরব’ বা ধাক্কাসহ ‘আল্লাহ’ ‘আল্লাহ’ যিকির করবে। (প্রত্যেক আল্লাহ শব্দের শেষে ‘জযম’ হবে)। দুপুরে কিছু সময় ঘুমিয়ে নেবে।
(ঘ) যোহর নামাযের পর আছর নামায পর্যন্ত বারো হাজার থেকে চব্বিশ হাজার বার সহজে যত বার সম্ভব হয় পূর্বের নিয়মে ‘আল্লাহ’ ‘আল্লাহ’ যিকির করবে।
(ঙ) আসর নামাযের পর পীর সাহেবের কোন কাজ না থাকলে তার কাছে বসে থাকবে। আর পীর সাহেব কোন কাজে ব্যস্ত থাকলে বা সেখানে উপস্থিত না থাকলে বা মনে পীর সাহেবের নিকট বসার বিশেষ আগ্রহ না থাকলে মাঠ, জঙ্গল, বাগান বা নদীর দিকে ঘুরতে বের হবে। পীর সাহেব উপস্থিত থাকলে তার অনুমতি নিয়ে যাবে। ঘুরতে বের হয়ে সাধারণ মুসলমানদের কবর এবং আল্লাহর ওলীদের মাযারও যিয়ারত করবে।
(চ) মাগরিব নামাযের পর এক ঘন্টা/আধ ঘন্টা যতক্ষণ মনোযোগ থাকে মৃত্যু এবং মৃত্যু পরবর্তী হিসাব-কিতাব ইত্যাদি যা যা হবে, সেগুলোর ‘মোরাকাবা’ করবে।

মৃত্যুর মোরাকাবা:

মৃত্যুর মোরাকাবা করার পদ্ধতি এই যে, নির্জনে বসে মৃত্যুর পর যা যা ঘটবে, সেগুলো স্মরণ করবে এবং মনে করবে যে, এখনই এসব কিছু আমার উপর দিয়ে সংঘটিত হচ্ছে।
অধিকহারে আল্লাহর যিকির করার ফলে আল্লাহর মুহাব্বত এবং মৃত্যুর মোরাকাবার ফলে দুনিয়ার প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হবে। আল্লাহর এই মুহাব্বত এবং দুনিয়ার প্রতি এই ঘৃণাই তার সফলতার জন্য যথেষ্ট হবে, ইনশাআল্লাহ।

(ছ) এর বাইরে যে সময় বাঁচবে, তার মধ্যে উঠতে-বসতে, চলতে-ফিরতে দুরূদ শরীফ পড়তে থাকবে, বা অন্য যে কোন যিকির ভালো লাগবে, সেই যিকির করতে থাকবে।
প্রসিদ্ধ ‘পাছে আনফাস’-এর অর্থ ও উদ্দেশ্যও এই যে, কোন মুহূর্ত যেন আল্লাহর ইয়াদ থেকে খালি না যায়। এই ইয়াদ যে কোন যিকিরের মাধ্যমেই হতে পারে। ‘পাছে আনফাস’-এর যে পদ্ধতি প্রসিদ্ধ আছে, সুনির্দিষ্টভাবে সে পদ্ধতিতেই তা হতে হবে, এমনটি জরুরী নয়। বরং তার বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে এটিও একটি পদ্ধতি।

এভাবে যিকির করতে করতে যদি নিজের মধ্যে একাগ্রতা সৃষ্টি হতে দেখে এবং দিনে দিনে তা বৃদ্ধি পেতে থাকে, মনে বিভিন্ন চিন্তার উদ্রেক কম হতে থাকে এবং যিকিরে মন বসতে থাকে তাহলে আমার মতে ‘শোগল’ করার জরুরত নেই।

সদা-সর্বদা পরহেযগারীর প্রতি যত্নবান থাকা এবং নিয়মিত উপরে বর্ণিত ‘মুরাকাবা’ করতে থাকা তার জন্য যথেষ্ট হবে। সারাজীবন এটিই করতে থাকবে। আখেরাতে তো এর ফল নিশ্চিত পাবেই-এবং ফল পাওয়ার আসল ওয়াদা তো আখেরাতেই-তবে আল্লাহ তাআলার মঞ্জুর হলে দুনিয়াতেও তার অন্তরে অপূর্ব ও অবাককর ইলম ও মারেফাত এবং নতুন নতুন ভাব ও কাইফিয়্যাত জন্ম নিবে। কখনো আবেগ-উদ্দীপনা, কখনো প্রেম-প্রীতি এবং কখনো ভয়-ভীতির কাইফিয়্যাত ও ভাবের উদয় হবে। শরীয়তের বিধি-বিধানের রহস্যাবলী উদঘাটিত হবে। আল্লাহ তাআলার প্রতি তার আচরণ এবং তার প্রতি আল্লাহর আচরণ সঠিক হবে। তার দ্বারা এমন কোন কাজ ঘটলে-যার জন্য তাকে সতর্ক করা প্রয়োজন-সে বিষয়ে সতর্ক করা হবে। এবং সেও বুঝতে পারবে যে, এ কাজটি আমার দ্বারা সঠিকভাবে পালন হয়নি। এ সবের মধ্যে যে স্বাদ রয়েছে, তার সামনে বিশ্বজগতের রাজত্বও মূল্যহীন। এ সমস্ত অবস্থাকেই তাসাওউফের পরিভাষায় ‘হালাত’ বলা হয়।

প্রত্যেকের ‘হালাত’ ও আধ্যাত্মিক অবস্থা যেহেতু নতুন ও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে, তাই তার সবগুলো লিখে বর্ণনা করা সম্ভব নয়। এমন অবস্থা দেখা দিলে পীর সাহেবের নিকট আসা জরুরী। তিনি এ সমস্ত হালাতের হাকীকত বা মর্ম বলতে সক্ষম। ‘হালাতের’ ভিত্তিতে প্রয়োজন হলে মুরীদের যিকির-শোগলের মধ্যে পীর সাহেব যথোচিত পরিবর্তন করেন। পীরের নিকট অবস্থান করায় আরো যে সমস্ত ফায়দা রয়েছে, সেগুলো এই হেদায়াতের শেষে বর্ণনা করা হবে। এ সমস্ত বিষয় অবগত হওয়াকে ‘কাশফে ইলাহী’ বলা হয়। ‘কাশফে কাউনী’ (অর্থাৎ, গোপন বিষয় জানতে পারা এবং ভবিষ্যতের ব্যাপার প্রকাশ পাওয়া) স্বাদের দিক থেকেও ‘কাশফে ইলাহী’র সমান নয় এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের দিক থেকেও সমান নয়।

মুসা আলাইহিস সালাম ছিলেন ‘কাশফে ইলাহী’র মধ্যে বড়, আর খিযির আলাইহিস সালাম ছিলেন ‘কাশফে কাউনী’র মধ্যে বড়। এ দু’জনের মধ্যে কার মর্যাদা বড়, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এখন প্রশ্ন হতে পারে যে, মূসা আলাইহিস সালামের মর্যাদা যখন বড় তাহলে আল্লাহ তাআলা তাকে হযরত খিযির আলাইহিস সালামের নিকট যাওয়ার নির্দেশ দিলেন কেন?
এ প্রশ্নের উত্তর হলো, হযরত খিযির আলাইহিস সালামের নিকট পাঠানোর দ্বারা এ কথা শিক্ষা দেওয়া উদ্দেশ্য ছিলো যে, কথা বলার সময় নিশ্চিন্তে ও নির্দ্বিধায় কোন কথা বলে ফেলবে না। বরং চিন্তা-ভাবনা করে কথা বলবে। কারণ, হযরত মূসা আলাইহিস সালামের নিকট কোন এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করেছিলো যে, বর্তমান সময়ে দ্বীনের সবচেয়ে বড় আলেম কে? তিনি বলেছিলেন-’সবচেয়ে বড় আলেম আমি’।

তার এ কথা এদিক থেকে ঠিক ছিলো যে, ইলম জরুরী, তা সবচেয়ে বেশী আমি জানি। কিন্তু তিনি কথাটি এমন বলেছিলেন, যার দ্বারা শ্রোতা বিভ্রান্তিতে পড়তে পারতো যে, সব ধরনের ইলম জানার দাবী তিনি করেছেন। তাই আল্লাহ তাআলা তাকে দেখিয়ে দিলেন যে, ‘কাশফে কাউনীর’ মধ্যে খিযির আলাইহিস সালাম তোমার চেয়ে অধিক জ্ঞানী। যদিও তার এ ‘কাশফ’ মর্যাদার দিক থেকে ‘কাশফে ইলাহী’র সমকক্ষ নয়। তবুও সাধারণভাবে এ কথা বলা তো ভুল প্রমাণিত হলো যে, ‘আমি সবচেয়ে বেশী জানি।’

তাই উত্তরে এ কথা বলা দরকার ছিলো যে, ‘কাশফে কাউনীর’ মধ্যে আমি সর্বাধিক জ্ঞানী নই। যার ’কাশফে ইলাহী’ হয়, তাকে যদি পীর-মুরীদির কাজ এবং মানুষের আত্মার সংশোধনের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়, তাহলে তাকে ‘কুতবুল ইরশাদ’ বলে। আর যার ‘কাশফে কাউনী’ হয়, তাকে যদি মানুষের দুনিয়ার কাজের খেদমত ন্যস্ত করা হয়, তবে তাকে ‘কুতবুত তাকবীন’ বলে।
এর বাইরে যে সময় বাঁচবে তাতে মন লাগিয়ে মুখে উচ্চারণ করে কোন-না কোন যিকির করতে থাকবে। চাইলে দরূদ শরীফ পড়বে-আর আমার মতে এটাই সর্বোত্তম-চাইলে ইস্তিগফার পড়বে, চাইলে কালিমায়ে তায়্যিবা পড়বে, চাইলে অন্য যে কোন যিকির করবে। মোটকথা, যাতে মন লাগবে তাই পড়তে থাকবে। এ সময়গুলোতে শুধু মনে মনে যিকির করবে না, বরং মুখেও উচ্চারণ করতে থাকবে। কারণ, অনেক সময় এতে ধোঁকার সৃষ্টি হয়, অন্তরে যে, আল্লাহর স্মরণ নাই সেদিকে খেয়াল থাকে না। আরো মারাত্মক হলো, কখনো এরুপ ধোঁকা হয়ে থাকে যে, আল্লাহকে ভুলে গিয়ে এরুপ মনে করে থাকে যে, আমি আল্লাহর স্মরণে ডুবে গিয়ে ‘আত্মহারা’ হয়ে গেছি।
(জ) দু’টি জিনিস থেকে বেঁচে থাকার প্রতি সর্বদা যত্নশীল হবে। প্রথমত, কোন মুহুর্তে যেন আল্লাহর ইয়াদ দিল থেকে দূর হতে না পারে। যার উপায় হলো, সর্বদা যিকির করতে থাকবে।
দ্বিতীয়ত, খুব সতর্কতার সাথে সগীরা ও কবীরা সব ধরনের গুনাহ থেকে বেঁচে থাকবে। মন, মুখ, হাত, পা, চোখ, কান মোটকথা সর্বাঙ্গের গুনাহ থেকে বেঁচে থাকবে।

আল্লাহর ইয়াদ না থাকার কারণে যেমন দিলের নূর চলে যায়, তেমনিভাবে গুনাহের কারণেও দিলের নূর চলে যায় এবং আল্লাহর সাথের সম্পর্কের অবনতি ঘটে, দূরত্ব সৃষ্টি হয়। যা অতি বড় ক্ষতির কারণ। ঘটনাচক্রে অসতর্কতার ফলে বা নফসের প্ররোচনায় কোন গুনাহের কাজ হয়ে গেলে সাথে সাথে অত্যন্ত লজ্জিত হয়ে কাকুতি-মিনতী করে তাওবা করবে এবং আল্লাহ তাআলার কাছে কৃত গুনাহের জন্য মাফ চাবে। কিছু কিছু গুনাহের কারণে এ পথের সবিশেষ ক্ষতি হয়ে থাকে। সেগুলো হলো-
এক. ‘রিয়া’-অর্থাৎ, মানুষকে দেখানোর নিয়তে কোন আমল করা।
দুই. ’তাকাব্বুর-অর্থাৎ, নিজেকে বড় মনে করা। মানুষের মধ্যে যখন তাকাব্বুর ও অহংকার থাকে তখন এর কারণে দ্বীনী বা দুনিয়াবী গুণ ও পূর্ণতা নিয়ে সে গর্ব করে, কখনো অহমিকায় লিপ্ত হয়।
তিন. কারো গীবত-শেকায়েত করা, কাউকে তিরস্কার করা, কারো উপর আপত্তি করা। বরং অধিকাংশ অপ্রয়োজনীয় ও অনর্থক কথা বলার কারণেও দিলের নূর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর এ কারণেই আল্লাহর পথের পথিকদের জন্য মানুষেদের সাথে অপ্রয়োজনীয় মেলামেশা করা উচিত নয়।
চার. নামাহরাম কোন নারী বা বালকের দিকে কুদৃষ্টিতে তাকানো বা মনে মনে তার কল্পনা করা।
পাঁচ. অন্যায়ভাবে বা সীমাতিরিক্ত রাগ করা, বা কারো সঙ্গে কর্কশ ও কঠোরভাবে কথা বলা।