পীরদের বিভিন্ন প্রথার বর্ণনা

উৎস:
ইসলাহী নেসাব: কসদুস সাবীল
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (র:)
বর্তমানে অধিকাংশ পীরের মধ্যে কিছু কিছু প্রথা প্রচলিত হয়ে আছে। তার মধ্যে কিছু প্রথা তো সম্পূর্ণরুপে শরীয়ত বিরোধী। যেমন, কবরের চতুর্দিকে ঘোরা। কবরকে চুম্বন করা। কবরের উপর চাদর দেওয়া। বুযুর্গদের নামে মান্নত করা। তাদের কাছে কিছু প্রার্থনা করা।
আর কিছু প্রথা আসলে জায়েয ছিলো, কিন্তু সেগুলোর সাথে বিভিন্ন নাজায়েয বিষয় মিলিত হওয়ার ফলে সেগুলোও নাজায়েয হয়ে গেছে। যেমন, ওরস করা, কাওয়ালী শোনা, খতম পড়া, বা মিলাদের মাহফিল করা-সাধারণ মানুষ এগুলো থেকে নিষেধ করাকে বা নিজে এগুলো না করাকে বুযুর্গীর পরিপন্থী মনে করে। এ সমস্ত প্রথা ও রুসুমের মধ্যে যে সমস্ত খারাপ দিক রয়েছে, সেগুলো আমি অধম বিস্তারিতভাবে ‘ইসলাহুর রুসুম’, ‘হক্কুস সিমা’, ‘তালীমুদ্দীন’ এর পঞ্চমখন্ড এবং ‘হিফযুল ঈমান’ কিতাবে লিখে দিয়েছি।
আর কিছু বিষয় রয়েছে এমন, যেগুলোকে বুযুর্গীর অন্তর্ভুক্ত বিষয় মনে করলে এবং এগুলোকে আল্লাহ পাকের নৈকট্য লাভের মাধ্যম ও উপায় মনে করলে তা জঘন্য বিদআত বলে গণ্য হবে। আর যদি এ ধরনের কোন ভুল বিশ্বাস বা ভ্রান্ত ধারণা না থাকে, তবে তা নিছক দুনিয়াবী কাজ বলে গণ্য হবে। যেমন বিভিন্ন আমল-শোগল করা বা হালাল পশুর গোশত না খাওয়া।
আর কিছু প্রথা রয়েছে এমন, যেগুলো ভুল বিশ্বাসযুক্ত না হলে ভালো বলে গন্য হবে। যেমন, ‘শাজারা’ পাঠ করা। কারণ, তার মধ্যে আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের ওয়াসেতায় দু’আ করা হয়। যা জায়িয হওয়া বিভিন্ন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু ‘শাজারা’ পাঠ করে যদি এরুপ মনে করা হয় যে, ‘শাজারায়’ উল্লেখিত ব্যক্তিদের নাম পাঠ করার দ্বারা এ লাভ হবে যে, তারা আমাদের ‘হালাতের’ প্রতি ‘তাওয়াজ্জুহ’ দিবেন। তাহলে তা হবে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও সূত্রহীন ভ্রান্ত আকীদা। যার নিষেধাজ্ঞা এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত-
অর্থাৎ, ’যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই, তার উপর আমল করো না।’ (সূরা বানী ঈসরাঈল-৩৬)
এর আরেকটি দৃষ্টান্ত হলো, তাসাওউফের কিতাবাদি অধ্যয়ন করা। তবে কেউ যদি এমন আলেম হন, যিনি ‘মা’কুলী ইলম’ যেমন ‘মানতিক’ ইত্যাদি এবং ‘মানকুলী ইলম’ অর্থাৎ, তাফসীর, হাদীস, ফিকহ ইত্যাদি ভালো করে অবগত এবং তিনি এমন বুযুর্গদের সুহবতে থেকেছেন, যারা আধ্যাত্মিকতার বিষয়ে ভালোভাবে অবগত-তিনি এ ধরনের কিতাব অধ্যয়ন করলে ক্ষতি নেই। আর এমন ব্যক্তি না হলে তার জন্য এ ধরনের কিতাব অধ্যয়ন করা দ্বীন-ঈমান ধ্বংসকারী। তাই তারা এ ধরনের কিতাব মোটেও দেখবে না। যেমন, মাওলানা রূমী (রহঃ)এর ‘মসনবী’, ‘দিওয়ানে হাফেয’ বা অন্যান্য বুযুর্গের মালফূয-বাণী-অর্থাৎ, যে সমস্ত কথা তারা বর্ণনা করেছেন এবং মুরীদরা সেগুলো সংকলন করে কিতাব বানিয়েছেন। যদি তাদের এ সমস্ত চিঠি ও বাণীর সংকলনের মধ্যে আধ্যাত্মিকতার ভেদ-কথা বা যে সমস্ত ‘কাইফিয়্যাত’ বা আধ্যাত্মিক অবস্থা ঐ সমস্ত বুযুর্গের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছিলো-সেগুলোর বর্ণনা থাকে তাহলে সেগুলো পড়বে না। বরং যে সমস্ত কিতাবের মধ্যে ঐ সমস্ত বুযুর্গের ঘটনাবলী রয়েছে, সেগুলোও পড়বে না। এ সমস্ত কিতাব সাধারণ লোকদের বুঝে আসবে না।
কিছু কিছু পুরুষ বা নারী মুরীদ হয়েও নিজের অভ্যাস ও অবস্থার সংশোধন করে না। তাই তাদের ব্যাপারেও কিছু জরুরী কথা লিখে দিচ্ছি। বাকী বিস্তারিত মাসআলার পরিপূর্ণ বর্ণনা দ্বীনের বিভিন্ন কিতাবের মধ্যে রয়েছে।
Leave a Reply