উৎস:
ইসলাহী নেসাব: সাফাইয়ে মুয়ামালাত
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (র:)

মাসআলাঃ অনেক সময় বেচা-কেনা অসম্পূর্ণ থাকে, এর দু’টি অবস্থা রয়েছে-
১. শুধুমাত্র দাম জিজ্ঞাসা করে বেচা-কেনা সম্পন্ন না করে পণ্যটি দেখানোর জন্যে নিয়ে যাওয়া হয়-একে ‘কাবয আলা সাউমিশ শিরা’ বলে।
এমতাবস্থায় পণ্যটি যদি ক্রেতার নিকট নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে বাজার মূল্য পরিশোধ করতে হবে। ধার্যকৃত মূল্য ধর্তব্য হবে না। পণ্যটি যদি ‘মিসলী’ হয়, অর্থাৎ তার অনুরুপ পণ্য পাওয়া যায়, তাহলে তাই দিতে হবে। যেমন, চাল, গম ইত্যাদি। এগুলোর অনুরুপ পণ্য পাওয়া সম্ভব।
২. দ্বিতীয় হলো, বেচা-কেনা সম্পন্ন হওয়ার পর ক্রেতা বা বিক্রেতা বললো যে, যদিও বেচা-কেনা সম্পূর্ণ হয়েছে, কিন্তু আমাকে একদিন, দু’দিন বা সর্বোচ্চ তিন দিন সময় দিতে হবে। এ সময়ের মধ্যে এ বেচা-কেনা চুক্তি বাস্তবায়ন করার বা চুক্তি প্রত্যাহার করার উভয় অধিকারই থাকবে। একে ‘খিয়ারে শর্ত’ বলে। এটিও জায়েয। এর হুকুম এই যে, এ সময়ের মধ্যে যদি বেচা-কেনা চুক্তিকে ভেঙ্গে দেয় তাহলে বেচা-কেনা চুক্তি ভেঙ্গে যাবে। আর যদি ঠিক রাখে বা চুপ থাকে আর নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, তাহলে বেচা-কেনা চুক্তি চূড়ান্ত হয়ে যাবে। এখন উভয়ের সম্মতি ছাড়া আর ফেরত দিতে পারবে না।
আর যদি নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে বস্তুটি ক্রেতার নিকট নষ্ট হয়ে যায় বা ভেঙ্গে যায়, তাহলে তার বিনিময় দেওয়া ক্রেতার জন্যে ওয়াজিব হবে।

এক্ষেত্রে ফেরত দেওয়ার অধিকার ক্রেতা নিয়ে থাকলে তখন তো ধার্যকৃত মূল্য দিতে হবে, আর যদি এ অধিকার বিক্রেতা নিয়ে থাকে, তাহলে ঐ জিনিসের বাজার মূল্য বা তার ‘মিসল’ তথা অনুরুপ সামগ্রী দেওয়া ওয়াজিব হবে।

মাসআলাঃ তিন দিনের মধ্যে ফেরত দেওয়ার অধিকার গ্রহণের পর বেচা-কেনা ঠিক রাখতে চাইলে দ্বিতীয় পক্ষকে তা অবহিত করা জরুরী নয়। সময় অতিক্রান্ত হলেই বিক্রয় চুক্তি চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। আর যদি বিক্রয় চুক্তি ভেঙ্গে দিতে চায় তাহলে নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে দ্বিতীয় পক্ষকে অবহিত করা জরুরী। অন্যথায় বিক্রিয় চুক্তি বহাল থাকবে।
মাসআলাঃ যে ব্যক্তি নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে ফেরত দেওয়ার অধিকার গ্রহণ করেছে, সে যদি নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে মরে যায়, তাহলে এ বেচা-কেনা চূড়ান্ত হয়ে যাবে। তার উত্তরাধিকারীদের এ বেচা-কেনা ভেঙ্গে দেওয়ার অধিকার থাকবে না।
মাসআলাঃ ক্রেতা ও বিক্রেতা ছাড়া তৃতীয় কোন ব্যক্তির মতের উপর যদি বেচা-কেনা মওকুফ রাখে তাহলে তাও জায়েয আছে।

বিক্রিত বস্ত্তর মধ্যে দোষ বের হওয়ার বর্ণনা

হাদীসঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-যে ব্যক্তি কোন দোষযুক্ত জিনিস বিক্রি করলো, আর তার দোষের কথা বললো না, সে ব্যক্তি সবসময় আল্লাহর গযবের মধ্যে থাকবে-বা বলেছেন যে, ফেরেশতাগণ সর্বদা তার উপর অভিশম্পাত করতে থাকবে।

মাসআলাঃ কোন জিনিস ক্রয় করার পর ক্রেতা যদি তার মধ্যে কোন দোষ দেখতে পায়, তাহলে ঐ জিনিস রাখা বা না রাখা তার ইচ্ছা। তবে বিক্রির সময় যদি বিক্রেতা বলে দেয় যে, এর মধ্যে যা কিছু দোষ-ত্রুটি আছে তার দায়-দায়িত্ব আমার নয়। তোমার ইচ্ছা হলে কিনবে, ইচ্ছা না হলে কিনবে না। এর পরও ক্রেতা যদি রাজি হয়ে কিনে থাকে, তাহলে তার মধ্যে যতো দোষই বের হোক না কেন ক্রেতার সে জিনিস ফিরিয়ে দেওয়ার অধিকার থাকবে না। যদিও সব দোষের নাম পৃথক পৃথকভাবে উল্লেখ করা না হয়।