ভাড়ার বর্ণনা

উৎস:
ইসলাহী নেসাব: সাফাইয়ে মুয়ামালাত
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (র:)
মাসআলাঃ বাচ্চা ধারনের জন্যে মাদি ঘোড়ার সাথে পুরুষ ঘোড়ার যে মিলন ঘটানো হয় তার বিনিময় নির্ধারণ করা এবং নেওয়া হারাম। তবে চাপ ছাড়া, শর্ত ছাড়া এবং প্রচলন ছাড়া দয়া করে যদি কিছু দেয় তাহলে তা নেওয়া যাবে।
মাসআলাঃ দুধপান করার জন্যে গাভী বা মহিষ ভাড়া নেওয়া যে, এর থেকে দুধ দোহন করে নেবো এবং এতো ভাড়া দেবো-জায়েয নেই।
মাসআলাঃ এক ব্যক্তি অপর একজনকে বললো যে, তুমি তোমার অমুক জমিটি বীজ বপনের জন্যে আমাকে দিয়ে দাও এবং এর বদলে তুমি আমার জমিতে বীজ বপন করো এবং এটাকে জমির ভাড়া নির্ধারণ করলো-এটা জায়েয নয়।
এমন করতে হলে উভয় জমির জন্যে সমপরিমাণ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করবে। তারপর উভয়টার ভাড়া এক সমান হওয়ার কারণে কাটাকাটি করে নিবে। কেউ কাউকে টাকা দিতেও হবে না, এবং নিতেও হবে না। একইভাবে এক ঘরের বিনিময়ে অন্য ঘরে থাকা বা এক বাহনের পরিবর্তে অন্য বাহন ব্যবহার করাও জায়েয নেই।
মাসআলাঃ পারিশ্রমিকের ভিত্তিতে যারা কাজ করে তারা দু’প্রকারের। এক হলো, ঐ সমস্ত শ্রমিক, যারা নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তির কাজে আবদ্ধ নয়। বরং সবার কাজই নেয় এবং সবার কাজই শেষ করে তাদেরকে বুঝিয়ে দিয়ে পারিশ্রমিক নেয়। যেমন, রংমিস্ত্রি, ধোপা, দর্জি ইত্যাদি। এদেরকে ‘আজীরে মুশতারাক’ বলে।
দ্বিতীয় হলো, নির্দিষ্ট শ্রমিক, যে নির্দিষ্ট সময়ে এক ব্যক্তির কাজেই লেগে থাকে এবং মেয়াদ পুরা করে নিজের পারিশ্রমিকের হকদার হয়-তাকে চাকর বা ‘আজীরে খাস’ বলে।
মাসআলাঃ ’আজীরে মুশতারাক’ অর্থাৎ, যে শ্রমিক নির্দিষ্ট কারো কাজে আবদ্ধ থাকে না তার নিকট কোন জিনিস ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেখতে হবে যে, তার কাজের কারণে এ ক্ষতি হয়েছে কিনা? যদি তার কাজের কারণে ক্ষতি হয়ে থাকে-যেমন, ইস্ত্রি করার সময় কাপড় ছিড়ে গেছে বা দাড়িপাল্লা থেকে পড়ে মাল নষ্ট হয়ে গেছে তাহলে এর জরিমানা ঐ ‘আজীরে মুশতারাকের’ দায়িত্বে ওয়াজিব হবে। আর যদি ক্ষতি হওয়ার পেছনে তার কাজের কোন দখল না থাকে-যেমন, মাল চুরি হয়ে গেছে তাহলে তার উপর জরিমানা ওয়াজিব হবে না। তবে যদি তার হেফাযত না করার কারণে মাল চুরি হয়ে যায় তাহলে তার এ অসতর্কতার কারণে তার উপর জরিমানা ওয়াজিব হবে। অন্যান্য আমানতের যে বিধান এক্ষেত্রেও একই বিধান।
’আজীরে খাস’ অর্থাৎ, যে শ্রমিক নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট লোকের কাজে আটকা থাকে-তার নিকট কোন ক্ষতি হলে-চাই তা তার কাজের কারণে হোক বা অন্য কোন কারণে-যেমন, তার নিকট থেকে চুরি হয়ে গেছে বা তার হাত থেকে পড়ে ভেঙ্গে গেছে-তাহলে তার উপর জরিমানা ওয়াজিব হবে না। তবে যদি তার অসতর্কতার কারণে নষ্ট হয় তাহলে এ অসতর্কতার কারণে তার উপর জরিমানা ওয়াজিব হবে।
মাসআলাঃ নিজে আরোহণ করার জন্যে ঘোড়া ভাড়া এনে মালিকের অনুমতি ছাড়া অন্য কাউকে তাতে আরোহণ করানো জায়েয নেই।
মাসআলাঃ সাক্ষ্য দিয়ে পারিশ্রমিক নেওয়া জায়েয নেই।
মাসআলাঃ কারো মালিকানাধীন জমিতে বৃষ্টির পানি জমা হয়ে পুকুর হয়ে গেলে সে ঐ পানির মালিক হয়ে যায় না তাই জমি মালিকদের মধ্যে চামড়া ধৌতকারীদের থেকে ভাড়া নেওয়ার যে প্রচলন রয়েছে তা জায়েয নয়।
মাসআলাঃ যে পরিমাণ পারিশ্রমিক নির্ধারণ করা হয়েছে তার চেয়ে কম পারিশ্রমিকে অন্যের দ্বারা কাজ করিয়ে যে পারিশ্রমিক বাঁচে তা নিজে রেখে দেওয়া ‘আজীরে মুশতারাকের’ জন্যে জায়েয আছে। কিন্তু ’আজীরে খাসে’র জন্যে কম বেতনে অন্যের দ্বারা কাজ করিয়ে বেতনের অবশিষ্ট টাকা নিজে রেখে দেওয়া জায়েয নেই। তবে ’আজীরে মুশতারাক’কে যদি মালিক (কাজের অর্ডারদাতা) এ শর্ত দেয় যে, তুমি নিজ হাতে এ কাজ করবে অন্যের দ্বারা কাজ করাবে না, তখন অন্যের দ্বারা কাজ করানো জায়েয নয়।
মাসআলাঃ ভাড়া করা ঘোড়া বা গাড়ীতে যদি প্রচলিত নিয়মের অধিক পরিমাণ মালপত্র বহন করানো হয় তাহলে মালিকের অনুমতি শর্ত। মালিকের অনুমতি ছাড়া অতিরিক্ত মাল বহন করানো জায়েয নেই।
Leave a Reply