চুল সংক্রান্ত বিধান

উৎস:
ইসলাহী নেসাব: সাফাইয়ে মুয়ামালাত
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (র:)
মাসআলাঃ পুরো মাথায় কানের লতি পর্যন্ত বা তার চেয়ে নীচ পর্যন্ত চুল রাখা বা পুরো মাথা নেড়ে করা সুন্নাত। চুল কাটানোও দুরস্ত আছে। তবে পুরো মাথার চুল কাটিয়ে সামনের দিকে কিছুটা বড় রাখা-যেমন কিনা বর্তমান যুগের ফ্যাশন হয়েছে-জায়েয নেই। কিছু অংশ নেড়ে করে কিছু অংশ চুল রাখা দুরস্ত নয়। এতে জানা গেলো যে, বর্তমানে বাবরী রাখা……বা মাথার সামনের অংশের চুল গোল করে কাটানোর যে রীতি চালু হয়েছে তা দুরস্ত নয়।
মাসআলাঃ চুল অনেক বড় করলে মহিলাদের মতো বেনী বাঁধা দুরস্ত নয়।
মাসআলাঃ মহিলাদের জন্যে নেড়ে করা এবং চুলা কাটানো হারাম। হাদীসে এ জন্যে লানত এসেছে।
মাসআলাঃ ঠোঁটের সমান করে মোচ কাটা সুন্নাত। আর চেঁছে ফেলার ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে। কেউ কেউ বিদআত বলেছেন, কেউ কেউ অনুমতি দিয়েছেন। তাই না চাঁছাই সতর্কতা।
মাসআলাঃ মোচের উভয় দিক লম্বা করা জায়েয আছে তবে ঠোঁটের উপরের অংশ লম্বা করা যাবে না।
মাসআলাঃ দাড়ি চাঁছা এবং কাটা হারাম। তবে এক মুঠের অধিকটুকু কাটা জায়েয আছে। একইভাবে সুন্দর ও সমান করার জন্যে দু’-একটা চুল বেড়ে গেলে সেগুলো সামান্য সামান্য কেটে সমান করা জায়েয আছে।
মাসআলাঃ গালের পশম বড় হয়ে গেলে সেগুলো সমান করা জায়েয আছে। এমনিভাবে ভ্রুর পশম এলোমেলো হলে সামান্য সামান্য কাটা জায়েয আছে।
মাসআলাঃ কন্ঠনালীর পশম চাঁছা উচিত নয়। তবে ইমাম আবু ইউসুফ (রহঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, এতেও কোন সমস্যা নেই।
মাসআলাঃ থুতির উভয় দিকের এবং ঠোঁটের নীচের পশম চাঁছা ফকীহগণ বিদআত লিখেছেন। তাই এগুলো চাঁছা উচিত নয়। একইভাবে ঘাড়ের চুল চাঁছাও ফকীহগণ বিদআত লিখেছেন।
মাসআলাঃ সৌন্দর্যের জন্যে সাদা চুল উপড়ানো নিষিদ্ধ। তবে মুজাহিদের জন্যে শত্রুর উপর প্রভাব বিস্তার করার উদ্দেশ্যে সাদা চুল উঠানো উত্তম।
মাসআলাঃ নাকের পশম উপড়ানো উচিত না, কেঁচি দিয়ে কেটে ফেলা উচিত।
মাসআলাঃ বুক ও পিঠের পশম চাঁছা জায়েয আছে তবে তা আদবের পরিপন্থী এবং অনুত্তম।
মাসআলাঃ বগলের লোম চিমটা ইত্যাদি দিয়ে তুলে ফেলবে তবে ক্ষুর দিয়ে চাঁছাও জায়েয আছে।
মাসআলাঃ পুরুষের জন্যে নাভীর নীচের লোম ক্ষুর দ্বারা চাঁছা উত্তম। নাভীর নীচ থেকে আগে চাঁছতে আরম্ভ করবে। ঔষধ দিয়ে তুলে ফেলাও দুরস্ত আছে। মহিলাদের জন্যে ক্ষুর ব্যবহার না করে চিমটা দিয়ে তুলে ফেলা সুন্নাত।
মাসআলাঃ এছাড়া দেহের অন্যান্য লোম চাঁছা এবং রাখা উভয়টি জায়েয আছে।
মাসআলাঃ হাত-পায়ের নখ কাটা সুন্নাত। তবে মুজাহিদের জন্যে শত্রুভূমিতে মোচ এবং নখ না কাটা উচিত।
মাসআলাঃ হাতের নখ এ ধারাবাহিকতায় কাটা ভালো-ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুল থেকে আরম্ভ করে কনিষ্ঠাঙ্গুলি পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে কেটে যাবে, তারপর বাম হাতের কনিষ্ঠাঙ্গুলি থেকে আরম্ভ করে ধারাবাহিকভাবে কেটে ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলিতে এসে শেষ করবে। পায়ের আঙ্গুলের ক্ষেত্রে ডান পায়ের কনিষ্ঠাঙ্গুলি থেকে আরম্ভ করে ধারাবাহিকভাবে কেটে বাম পায়ের কনিষ্ঠাঙ্গুলিতে শেষ করবে। এ ধারাবাহিকতায় কাটা উত্তম, এর বিপরীত করাও ঠিক আছে।
মাসআলাঃ কাটা নখ ও চুল মাটিতে পুঁতে রাখা উচিত। পুঁতে না রাখলে সংরক্ষিত কোন জায়গায় ফেলে দেওয়ায়ও জায়েয আছে। তবে নাপাক ও নোংরা জায়গায় ফেলবে না, এতে রোগ সৃষ্টি হওয়ার আশংকা রয়েছে।
মাসআলাঃ দাঁত দিয়ে নখ কাটা মাকরুহ। এতে শ্বেত রোগের সৃষ্টি হয়।
মাসআলাঃ গোসল ফরয অবস্থায় চুল কাটা, নখ কাটা এবং নাভীর নীচের লোম পরিষ্কার করা মাকরূহ।
মাসআলাঃ প্রতি সপ্তাহে একবার নাভীর নীচের লোম, বোগল তলের পশম, মোচ, নখ ইত্যাদি কাটা এবং গোসল করে পরিষ্কার হওয়া উত্তম। সবচেয়ে ভালো জুমুআর দিনে জুমুআর নামাযের পূর্বে এগুলো সেরে নামাযে যাওয়া। প্রতি সপ্তাহে না হলে পনের দিন পরে হলেও করবে। সর্বোচ্চ চল্লিশদিন পর করবে। এর চেয়ে বেশি দেরী করার অনুমতি নেই। যদি চল্লিশ দিন চলে যায় আর এগুলো পরিষ্কার না করে তাহলে গুনাহগার হবে।
Leave a Reply