উৎস:
ইসলাহী নেসাব: যাদুস সাঈদ
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (র:)

’হে আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ! আপনারই জন্য অফুরন্ত প্রশংসা। আপনার নবী ও রাসূলের উপর অধিকহারে সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক। তার বংশধর ও সাহাবীগণের উপর অবিরাম ধারায় সন্ত্তষ্টি বর্ষিত হোক।’

হামদ ও সালাতের পর অধমের একবার ‘কীরানা’ কসবায় সফর করার সুযোগ হয়। সে সফরে জামেউল আখলাক ওয়াল বারাকাত হাফেয সাঈদ আহমাদ সাহেব (সাল্লামাহুল্লাহু তাআলা)-এর সাথে মোলাকাতের সময় তিনি বাসনা ব্যক্ত করেন যে, দুরুদ শরীফের ফযীলত সম্পর্কিত একটি একটি পুস্তিকা রচনা করে দিলে খুব ভালো হতো। অধম তখন এতদসম্পর্কিত অন্যান্য লেখকদের পুস্তিকাসমূহ যথেষ্ট হওয়ার ওযর তুলে ধরি। কিন্তু প্রত্যেকের ’মযাক’ বা রুচি ভিন্ন হয়ে থাকে বিধায় বিশেষ যে পদ্ধতিতে পুস্তিকা রচনার বিষয় তার মনে ছিলো, সেরুপ পুস্তিকা রচনার জন্য আবারো পীড়াপীড়ি করেন। আমি চিন্তা করলাম যে, এর দ্বারা একজন বুযুর্গ ব্যক্তির কথা পুরা হবে, যা জরুরী না হলেও উত্তম তো অবশ্যই। তাছাড়া পাঠকবৃন্দেরও এতে উপকার হবে-তাই আল্লাহর নামে এটি লিখতে আরম্ভ করি। দরুদ শরীফ যেহেতু সৌভাগ্যের প্রত্যাশীদের আখিরাতের পাথেয়, তাই এদিকে লক্ষ্য করে এবং হাফেয সাহেবের নামের সঙ্গে মিল রেখে এর নাম ‘যাদুস সাঈদ’ বা ‘সৌভাগ্যবানের পাথেয়’ রাখা হলো। আল্লাহ তাআলা এ পুস্তিকাকে কবুল করে আমার জন্যও একে সৌভাগ্যের পাথেয় বানিয়ে দিন।

এ পুস্তিকায় একটি ভূমিকা, দশটি পরিচ্ছেদ এবং একটি উপসংহার রয়েছে। ভূমিকায় যে সমস্ত কিতাব থেকে হাদীস নকল করা হয়েছে, সেগুলোর সাংকেতিক নামের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। (অনুবাদের সময় সাংকেতিক নামের স্থলে পুরা নাম ব্যবহার করা হয়েছে বিধায় ভূমিকার অনুবাদ বাদ দেওয়া হয়েছে-অনুবাদক)। পরিচ্ছেদসমূহে বিভিন্ন মূল বিষয় আলোচনা করা হয়েছে। উপসংহারে একটি উৎসাহবর্ধক ছন্দবদ্ধ দুরুদ শরীফ রয়েছে।

দরুদ শরীফ পাঠের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে

এক. আল্লাহ ইরশাদ করেন-
’হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর রাসূলের উপর দুরূদ ও সালাম পাঠ করো।
(সূরা আহযাব-৫৬)
দুই. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-’জুমুআর দিন আমার উপর অধিকহারে দুরুদ পাঠ করো। কারণ, আমার নিকট দুরুদ পেশ করা হয়।’
(আবূ দাউদ. নাসায়ী, ইবনু মাজা, ইবনু হিব্বান)
তিন. ‘তোমরা আমার উপর অধিক হারে দুরূদ পাঠ করতে থাকো, কারণ, তা তোমাদের জন্য পরিত্রান লাভের উপায়।’ (আবূ ইয়ালা মুসেলী)
চার. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-’যার সম্মুখে আমার নাম উল্লেখ করা হবে, তার আমার উপর দুরুদ পাঠ করা উচিত।’ (নাসায়ী, মু’জামে আওসাত তাবরানী, আবূ ইয়া’লা মুসেলী, আমালুল ইয়াউমি ওয়াল লাইলাতি-লি-ইবনিস সুন্নী)
পাঁচ. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-’যে ব্যক্তি আমার নাম উল্লেখ করবে, তার উচিত আমার উপর দুরুদ পাঠ করা। (আবূ ইয়া’লা মুসেলী)
ছয়. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-’তোমরা আমার উপর দুরুদ পাঠ করতে থাকো। তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, তোমাদের দুরুদ আমার নিকট পৌঁছে থাকে।’
(নাসায়ী, গুলশানে রহমত)

দুরুদ পরিত্যাগকারীর প্রতি কঠোর ধমকি এসেছে

এক. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-’যে মজলিসে আল্লাহ তাআলার যিকির এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর দুরুদ পাঠ করা না হয়, কিয়ামতের দিন ঐ মজলিস, মজলিসের লোকদের জন্য আক্ষেপের কারণ হবে। যদিও তারা সওয়াবের কারণে জান্নাতে প্রবেশ করুক না কেন।’ (ইবনু হিব্বান, আবূ দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী)
দুই. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- ‘বড় বখীল ঐ ব্যক্তি, যার সম্মুখে আমার নাম নেওয়া হলো, আর সে আমার উপর দুরুদ পাঠ করলো না।’ (তিরমিযী, ইবনু হিব্বান)
তিন. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-’ধ্বংস হোক ঐ ব্যক্তি, যার সম্মুখে আমার নাম নেওয়া হলো, আর সে দুরুদ পাঠ করলো না।’ (তিরমিযী)
চার. ইবনু মাজাহ ‘হাসান সনদে’ এবং হাফেয আবু নুয়াইম ‘হুলইয়া’ গ্রন্থে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-’যে ব্যক্তি আমার উপর দুরুদ পাঠ করা ভুলে গেলো, সে জান্নাতের পথ থেকে হারিয়ে গেলো।’ (ফাযায়েলে দুরুদ ও সালাম)