দুরুদ শরীফের ফযীলতের বর্ণনা

উৎস:
ইসলাহী নেসাব: যাদুস সাঈদ
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (র:)
এক. দুরুদ শরীফের সবচে’ বড় ফযীলত এই যে, আল্লাহ তাআলা স্বয়ং নিজের দিকে এবং ফেরেশতাদের দিকে দুরুদ শরীফকে সম্পৃক্ত করেছেন। তিনি ইরশাদ করেছেন-’নিশ্চয় আল্লাহ ও ফেরেশতাগণ নবীর উপর দুরুদ পাঠ করে থাকেন।’ (সূরা আহযাব-৫৬)
দুই. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-’জুমু্আর দিন যে ব্যক্তি আমার উপর দুরুদ পাঠ করে, সে দুরুদ আমার নিকট পেশ করা হয়।’ (সহীহ আল মুস্তাদরাক লিল হাকিম)
তিন. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-’কোন ব্যক্তি যখন আমার উপর সালাম পাঠায়, তখন আল্লাহ তাআলা আমার রূহকে আমার নিকট ফিরিয়ে দেন, এমনকি আমি তার সালামের উত্তর দেই।’
চার. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-’কিয়ামতের দিন আমার সর্বাধিক নিকটবর্তী ঐ ব্যক্তি হবে, যে অধিকহারে আমার উপর দুরুদ পাঠ করতে থাকবে।’
(তিরমিযী, ইবনু হিব্বান)
পাঁচ. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-’আল্লাহ তাআলার অনেক ফেরেশতা এ কাজের জন্য নির্ধারিত আছেন যে, তারা ঘোরাফেরা করতে থাকেন, আর আমার উম্মতের যে ব্যক্তি আমার উপর সালাম পাঠায়, তা আমার নিকট পৌঁছিয়ে থাকেন।’
(নাসায়ী, ইবনু হিব্বান, সহীহ আল মুস্তাদরাক লিল হাকীম)
ছয়. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-’আমি হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালামের সাথে সাক্ষাত করি, তখন তিনি আমাকে সুসংবাদ শোনান যে, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-যে ব্যক্তি আপনার উপর দুরুদ পাঠাবে, আমি তার উপর রহমত পাঠাবো এবং যে ব্যক্তি আপনার উপর সালাম পাঠাবে, আমি তার উপর শান্তি অবতীর্ণ করবো। এ কথা শুনে আমি শুকরিয়ার সিজদা আদায় করি। (সহীহ আল মুস্তাদরাক লিল হাকিম)
সাত. হযরত উবাই ইবনে কা’আব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, আমি নিবেদন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার উপর অধিকহারে দুরুদ পাঠ করতে চাই, কী পরিমাণ দুরুদ পাঠের নিয়ম করে নেবো? তিনি ইরশাদ করলেন- যে পরিমাণ তোমার মন চায়। আমি বললাম-এক চতুর্থাংশ (অর্থাৎ, অবশিষ্ট তিন চতুর্থাংশ অন্যান্য দুআ পাঠ করবো।) তিনি বললেন- যতটুকু তোমার মন চায়। তবে যদি আরো বাড়িয়ে দাও তাহলে তোমার জন্য অধিক ভালো হবে। আমি নিবেদন করলাম- অর্ধেক? তিনি বললেন- যতটুকু তোমার ইচ্ছা, তবে আরো যদি বাড়াও, তাহলে আরো উত্তম। আমি বললাম-তাহলে পুরোটা কেবল দুরুদই পাঠ করবো। তিনি বললেন-তাহলে তোমার সমস্ত চিন্তার জন্য যথেষ্ট হবে এবং তোমার গুনাহসমূহও মাফ হবে।’ (সহীহ আল মুস্তাদরাক লিল হাকীম)
আট. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-’যে ব্যক্তি আমার উপর আন্তরিক ইখলাসের সাথে একবার দুরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তার উপর দশবার রহমত নাযেল করবেন, তার দশটি গুনাহ মাফ হবে, দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে এবং তার আমলনামায় দশটি নেকী লেখা হবে।’ (নাসায়ী, মু’জামে কাবীর, তাবরানী)
নয়. অন্য এক বর্ণনায় আছে-’দুরুদ পাঠকারীর উপর আল্লাহ তাআলা সত্তরটি রহমত নাযিল করেন এবং ফেরেশতাগণ তার জন্য সত্তরবার দু’আ করে।’
দশ. কা’বুল আহবার (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে আল্লাহ তাআলা হযরত মূসা আলাইহিস সালামের নিকট ওহী পাঠান যে, তুমি কি চাও যে, কিয়ামতের দিন তোমার পিপাসা না লাগুক? তিনি বললেন-হাঁ। তখন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করলেন-তাহলে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর অধিকহারে দুরুদ পাঠ করো।’ (ইসবাহানী হাদীসটি বর্ণননা করেছেন)
এগার. হযরত আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-’যে ব্যক্তি আমার উপর অধিকহারে দুরুদ পাঠ করবে, সে আরশের ছায়ায় থাকবে।’ (দায়লামী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন)
বার. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-’যে ব্যক্তি আমার কবরের নিকট আমার উপর দুরুদ শরীফ পাঠ করে, তা আমি নিজে শুনি, আর যে আমার থেকে দূরে দুরুদ পাঠ করে, তা আমার নিকট পৌঁছিয়ে দেওয়া হয়। অর্থাৎ, ফেরেশতাদের মাধ্যমে।’
(শুয়াবুল ঈমানে’ ইমাম বাইহাকী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন)
তের. ‘দুররে মুখতারে’ ইসবাহানী থেকে বর্ণনা করা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-’যে ব্যক্তি আমার উপর দুরুদ পাঠ করে আর তার দুরুদ কবুল হয়, তার আশি বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যায়।’
চৌদ্দ. ‘শিফা’ কিতাবে আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-’যে মুসলমান আমার উপর দুরুদ পাঠ করে, ফেরেশতা সেই দুরুদ আমার নিকট পৌঁছায় এবং তার নাম নিয়ে বলে যে, অমুক এমন এমন বলে, অর্থাৎ, এভাবে দুরুদ পাঠ করে। (ফাযায়েলে দুরুদ ও সালাম)
পনের. আবূ ইয়া’লা বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-’আমার উপর অধিকহারে দুরুদ পাঠ করো, নিশ্চয় তা তোমাদের জন্য পবিত্রতার কারণ। অর্থাৎ, দুরুদের কারণে সব ধরনের গুনাহ থেকে এবং যাহেরী, বাতেনী, জানী ও মালী সবধরনের পবিত্রতা লাভ হয়।’ (ফাযায়েলে দুরুদ ও সালাম)
ষোল. ইমাম আহমাদ (রহঃ) ও ইমাম ইবনে মাজাহ (রহঃ) বর্ণনা করেন যে, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-’যে ব্যক্তি আমার উপর দুরুদ পাঠ করে, ফেরেশতা তার উপর দুরুদ পাঠ করে, অর্থাৎ, তার জন্য রহমতের দুআ করে, ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ সে আমার উপর দুরুদ পাঠ করতে থাকে। এখন তোমাদের ইচ্ছা, চাইলে কম দুরুদ পাঠ করো, চাইলে বেশী দরুদ পাঠ করো।’ এ হাদীসের উদ্দেশ্য হলো, অধিকহারে দুরুদ পাঠ করা উচিত।
(ফাযায়েলে দুরুদ ও সালাম)
সতের. ইমাম তাবরানী ‘আওসাতে’ বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-’যে ব্যক্তি কোন কিতাবের মধ্যে আমার উপর দুরুদ পাঠাবে, যতদিন পর্যন্ত ঐ কিতাবে আমার নাম থাকবে, ততদিন পর্যন্ত সর্বদা ফেরেশতাগণ তার জন্য রহমতের দু’আ করতে থাকবে। (ফাযায়েলে দুরুদ ও সালাম)
আঠার. ইমাম মুস্তাগফিরী (রহঃ) বর্ননা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-’যে ব্যক্তি প্রতিদিন একশ’বার দুরুদ পাঠ করবে, তার একশ’টি প্রয়োজন পুরো করা হবে। যার ত্রিশটি দুনিয়ার এবং বাকীগুলো আখিরাতের। (ফাযায়েলে দুরুদ ও সালাম)
ঊনিশ. ইমাম তাবরানী বর্ণনা করেন-’যে ব্যক্তি সকালে আমার উপর দশবার এবং বিকালে দশবার দুরুদ পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন সে আমার শাফায়াত লাভ করবে।’
বিশঃ আবু হাফস ইবনে শাহীন (রহঃ) হযরত আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-’যে ব্যক্তি আমার উপর হাজার বার দুরুদ পাঠ করবে, সে ব্যক্তি জান্নাতে তার জায়গা দেখার পূর্বে মৃত্যুবরণ করবে না। (সি’আয়া)
একুশ. ইমাম দায়লামী (রহঃ) হযরত আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-’কিয়ামতের বিপদাপদ থেকে ঐ ব্যক্তি অধিক নিরাপদে থাকবে, যে ব্যক্তি দুনিয়াতে আমার উপর অধিকহারে দুরুদ পাঠাতে থাকবে। (সি’আয়া)
Leave a Reply