দুরুদ শরীফ সংক্রান্ত ঘটনার বর্ণনা

উৎস:
ইসলাহী নেসাব: যাদুস সাঈদ
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (র:)
এক. ‘মাওয়াহিবে লাদুন্নিয়্যা’ কিতাবে তাফসীরে কুশাইরী থেকে বর্ণনা করেছে যে, কিয়ামতের দিন একজন মুমিনের নেকীর ওজন কম হবে, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আঙ্গুলের মাথার সমান একটি কাগজের টুকরা বের করে নিক্তিতে রেখে দিবেন, ফলে নেকীর পাল্লা ভারী হয়ে যাবে। তখন ঐ মুমিন ব্যক্তি বলবে-আমার মা-বাবা আপনার উপর কুরবান হোক, আপনি কে? আপনার সুরত ও সীরত কত সুন্দর! তিনি বলবেন-আমি তোমার নবী। এটি দুরুদ, যা তুমি আমার উপর পাঠ করেছিলে। আমি তোমার প্রয়োজনের সময় তা পরিশোধ করলাম।
(হাশিয়ায়ে হিসন)
দুই. বিখ্যাত তাবেয়ী ও খলিফায়ে রাশিদ উমর বিন আবদুল আযীয (রহঃ) নিজের পক্ষ থেকে রওযা শরীফে হাযির হয়ে সালাম করার জন্য শাম থেকে মদীনায় বিশেষ দূত পাঠাতেন।
(হাশিয়ায়ে হিসন, ফতহুল কাদীর)
তিন. ‘রওযাতুল আহবাব’ কিতাবে ইমাম শাফিয়ী (রহঃ)এর বিখ্যাত শাগরিদ ইমাম ইসমাঈল ইবনে ইবরাহীম মুযনী থেকে বর্ণনা করেছেন যে, আমি ইমাম শাফিয়ী (রহঃ)কে তার ইন্তিকালের পর স্বপ্নে দেখি। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি যে, আল্লাহ তাআলা আপনার সঙ্গে কী আচরণ করেছেন? তিনি বললেন-আমাকে মাফ করে দিয়েছেন এবং হুকুম দিয়েছেন-আমাকে যেন সসম্মানে বেহেশতে নিয়ে যাওয়া হয়। আর এ সবই একটি দুরুদ শরীফের বরকত-যা আমি পাঠ করতাম। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, সেই দুরুদ কোনটি? তিনি বললেন-দুরুদটি এই-
চার. ‘মানাহিজুল হাসানাত’ কিতাবে ইবনে ফাকিহানীর কিতাব ‘ফাজরে মুনীর’ থেকে বর্ণনা করেছে যে, শাইখ সালিহ মূসা নামক এক অন্ধ বুযুর্গ ছিলেন। তিনি তার অতীতের একটি ঘটনা আমার নিকট বর্ণনা করেন যে, একবার একটি জাহাজ ডুবে যাচ্ছিলো। আমিও ঐ জাহাজে ছিলাম। তখন আমার তন্দ্রার ভাব হলো। ঐ অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে নিম্নের এই দুরুদটি শিক্ষা দিয়ে ইরশাদ করেন যে, জাহাজের লোকেরা যেন এ দুরুদ শরীফটি এক হাজার বার পাঠ করে। তিনশ’ বার পাঠ করার পূর্বেই জাহাজ মুক্তিলাভ করে। দুরুদ শরীফটি এই-’কামুসের’ লেখক শাইখ মাজদুদ্দীনও ঘটনাটি তার নিজের সনদ সহকারে উল্লেখ করেছেন।
(ফাযায়েলে দুরুদ ও সালাম)
পাঁচ. এক পুস্তিকায় উবাইদুল্লাহ বিন কাওয়ারীর থেকে বর্ণনা করেছে যে, একজন লিপিকার আমার প্রতিবেশী ছিলো। সে মারা গেলো, আমি তাকে স্বপ্নে দেখলাম। জিজ্ঞাসা করলাম, আল্লাহ তাআলা তোমার সাথে কিরুপ আচরণ করেছেন? সে বললো, আমাকে মাফ করে দিয়েছেন। আমি কারণ জিজ্ঞাসা করলাম। সে বললো-যখন আমি কিতাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র নাম লিখতাম, তখন ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ও লিখতাম। ফলে আল্লাহ তাআলা আমাকে এমন কিছু দান করেছেন, যা কোন চোখ দেখেনি, কোন কান শোনেনি এবং কোন অন্তর কল্পনাও করেনি। (গুলশানে জান্নাত)
ছয়. ‘দালাইলুল খাইরাত’ কিতাব রচনার কারণ প্রসিদ্ধ আছে যে, সফরের মধ্যে লেখকের ওযুর পানির প্রয়োজন পড়ে, কিন্তু বালতি-রশি কিছুই সাথে ছিলো না বিধায় তিনি পেরেশান ছিলেন। একটি মেয়ে এ অবস্থা দেখে পেরেশানীর কারণ জিজ্ঞাসা করে। কারণ জানতে পেরে সে কূপের মধ্যে থুথু নিক্ষেপ করে, ফলে পানি কূপের পাড় পর্যন্ত উতলে ওঠে। লেখক বিস্মিত হয়ে এর কারণ জিজ্ঞাসা করেন। মেয়েটি বলে যে, এটি দুরুদ শরীফের বরকত। তারপর তিনি এ কিতাব রচনা করেন।
সাত. শাইখ যারওয়াক লিখেছেন যে, ‘দালাইলুল খাইরাত’ কিতাবের লেখকের কবর থেকে মেশক ও আম্বরের ঘ্রাণ আসে। আর এসব কিছু দুরুদ শরীফের বরকত।
আট. নির্ভরযোগ্য একজন বন্ধু এই লেখককে লক্ষ্নৌর একজন লিপিকারের ঘটনা বর্ণনা করেছে যে, তার অভ্যাস ছিলো, সকালবেলা যখন লিখতে আরম্ভ করতো, তখন প্রথমে একটি নোট বইয়ে একবার দুরুদ শরীফ লিখতো। (নোট বইটি এ কাজের জন্যই সে বানিয়েছিলো।) তারপর কাজ আরম্ভ করতো। তার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসলে আখিরাতের চিন্তায় ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে সে বলতে থাকে যে, ‘সেখানে আমার কি অবস্থা হবে! ইতিমধ্যে একজন ‘মাজযূব’ (আল্লাহর পাগল) সেখানে আসে এবং বলে যে, ‘বাবা! ভয় পাচ্ছো কেন? ঐ নোট বইটি ‘সরকারের’ সামনে পেশ করা হয়েছে এব তা মঞ্জুর হয়েছে।’
নয়. মাওলানা ফয়যুল হাসান সাহেব সাহারানপুরী (রহঃ)এর জামাই আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, যেই ঘরে মাওলানা সাহেবের ইন্তেকাল হয়েছে, সেখান থেকে এক মাস পর্যন্ত আতরের ঘ্রাণ আসতে থাকে। হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ কাসেম সাহেব (রহঃ)এর নিকট এ ঘটনা বর্ণনা করলে তিনি বলেন যে, এটি দুরুদ শরীফের বরকত। মাওলানা সাহেবের নিয়মিত আমল ছিলো যে, প্রতি জুমুআর রাতে জাগ্রত থেকে দুরুদ শরীফের আমল করতেন।
দশ. আবূ যুর’আ (রহঃ) এক ব্যক্তিকে স্বপ্নে দেখেন যে, তিনি আসমানে ফেরেশতাদের সঙ্গে নামায পড়ছেন। তার নিকট এই উঁচু মর্যাদা লাভের কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন-আমি দশ লাখ হাদীস লিখেছি। হাদীসের মধ্যে যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র নাম আসতো, তখন আমি দুরুদ শরীফ লিখতাম, যার ফলে এ মর্যাদা লাভ হয়েছে।
(ফাযায়েলে দরুদ ও সালাম)
এগার. ইমাম শাফিয়ী (রহঃ)এর আরো একটি ঘটনা আছে যে, তার মৃত্যুর পর তাকে একজন স্বপ্নে দেখে তার ক্ষমা প্রাপ্তির কারণ জিজ্ঞাসা করে। উত্তরে তিনি বলেন যে, নিম্নের এ পাঁচটি দুরুদ জুমুআর রাতে আমি পড়তাম-এই দুরুদ শরীফকে ‘পঞ্চ দুরুদ’ বলে।
(ফাযায়েলে দুরুদ ও সালাম)
বারো. শাইখ ইবনে হাজার মাক্কী (রহঃ) নকল করেছেন যে, একজন নেককার লোককে একজন স্বপ্নে দেখে তার অবস্থা জিজ্ঞাসা করে। সে বলে যে, আল্লাহ তাআলা আমার উপর দয়া করেছেন এবং আমাকে মাফ করে দিয়েছেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করিয়েছেন। কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে সে বলে যে, ফেরেশতারা আমার গুনাহ এবং আমার দুরুদ গণনা করে, তখন আমার দুরুদের সংখ্যা অধিক বের হয়। তখন আল্লাহ তাআলা বলেন-এতটুকুই যথেষ্ট। এর আর হিসাব নিও না। তাকে বেহেশতে নিয়ে যাও। (ফাযায়েলে দুরুদ ও সালাম)
তেরো. শাইখ ইবনে হাজার মাক্কী (রহঃ) লেখেন যে, একজন নেককার লোক নিয়ম বানিয়ে নিয়েছিলেন যে, তিনি প্রত্যেক রাতে শোয়ার সময় নির্দিষ্ট সংখ্যক দুরুদ শরীফ পাঠ করতেন। এক রাতে তিনি স্বপ্নে দেখেন যে, জনাব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নিকট তাশরীফ এনেছেন। তার পুরো বাড়ী আলোকিত হয়ে গেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন-’ঐ মুখ আনো, যা অনেক দুরুদ পাঠ করে, আমি তাকে চুম্বন করবো।’ লোকটি সলজ্জভাবে গাল এগিয়ে দিলো। তিনি তার গালে চুম্বন করলেন। তারপর তার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। তখন সারা ঘরে মেশকের ঘ্রাণ বিরাজ করছিলো। (ফাযায়েলে দুরুদ ও সালাম)
চৌদ্দ. শাইখ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহঃ) ‘মাদারিজুন্নুবুওয়াত’ কিতাবে লিখেছেন যে, হযরত হাওয়া (আঃ) যখন সৃষ্টি হন, তখন হযরত আদম (আঃ) তার দিকে হাত বাড়াতে চাইলেন। ফেরেশতারা বললেন যে, বিবাহ সম্পন্ন না হওয়া এবং মহর পরিশোধ না করা পর্যন্ত ধৈর্য ধরুন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন-মহর কি? ফেরেশতারা বললেন-রাসূলে মকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর তিন বার দরুদ পাঠ করা। এক বর্ণনায় বিশ বারের কথা এসেছে।
Leave a Reply